শেকড় সন্ধানী ডেনিশ নাগরিক মিন্টোকে স্বজন দাবি করছেন অন্তত ৩০ টি পরিবার!

সৈয়দ আকতারুজ্জামান রুমী, পাবনা প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

শেকড় সন্ধানী বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ডেনিশ নাগরিক মিন্টো কারস্টেন সোনিক এর স্বজন হিসেবে ৩০ টি পরিবার খোঁজ খবর নিতে শুরু করেছেন। তার মধ্যে ১৩টি পরিবার মিন্টোর সাথে সাক্ষাৎ করছেন। বিব্রতকর পরিস্থিতি পার করছেন এখন মিন্টো। তাকে স্বজন দাবি করছেন যে সকল পরিবারকে মিন্টোর পক্ষ থেকে ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরাবর দরখাস্ত দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডেনমার্কের নাগরিক এনিটি হোলমিহেভ নামের এক চিকিৎসককে বিয়ে করে সংসার জীবন শুরু করেন। তাদের দাম্পত্য জীবনে এক ছেলে ও মেয়ে জন্ম নেয়। জীবনের শুরুত তেমন সমস্যার সৃষ্টি না হলেও বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথেই তিনি সব সময় হীনমন্যতায় ভুগতেন। পরিবারের লোকজনের সাথে খুবই দুর্ব্যবহার করতেন। মাঝে মধ্যেই মেজাজ খিটমিটে হয়ে যেত, তার কোনো কিছুই ভালো লাগতো না। অবশেষে পরিবারের সবার সিদ্ধান্তে ড্যানিশ স্ত্রীকে সাথে নিয়ে ছোট বেলার একটি ছবিকে অবলম্বন করেই ছুটে আসেন নাড়ীর টানে পাবনায়। গত দু সপ্তাহ ধরে বাবা-মা কিংবা স্বজনদের খোঁজে পাবনা শহর সহ নগরবাড়ি এলাকায় চষে বেড়াচ্ছেন এই দম্পতি।

তথ্য সুত্রে আরো জানা যায়, ১৯৭৭ সালে মাত্র ছয় বছর বয়সে পাবনার নগড়বাড়ী ঘাটে হারিয়ে যান মিন্টো। সেখান থেকে চৌধুরী কামরুল হোসেন নামের কোনো এক ব্যক্তি মিন্টোকে পৌঁছে দেন ঢাকার ঠাটারি বাজারের এক আশ্রমে। সেখান থেকে ১৯৭৮ সালের ১২ এপ্রিল ওলে ও বেনফি নামের ডেনিশ দম্পতি দত্তক নিয়ে মিন্টোকে ডেনমার্ক নিয়ে যান । কেটে যায় ৪০ বছর।
অবশেষে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে সস্ত্রীক পাবনায় এসেছেন মিন্টো কারস্টেন সনিক। কিছুদিন আগে ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন তিনি পাবনায় স্বাধীন বিশ্বাস নামের এক ব্যক্তির সাথে। আত্মপরিচয় অনুসন্ধানে চলে আসেন বাংলাদেশে। পাবনায় এসে উঠেছেন শহরের একটি হোটেলে। আজ ছেলেবেলার কোনো স্মৃতিই মনে নেই তার। তিনি জানেন না বাংলা ভাষা। তবে, পেশায় চিত্রশিল্পী মিন্টোর গায়ের রং জানান দেয় তার বাঙালী নৃতাত্ত্বিক পরিচয়। নাটা’ই ছেঁড়া ঘুরির মতো জীবনে সব সময়ই তাড়া করে ফিরেছে বাবা মায়ের পরিচয় জানার আকুতি। অসম্ভব এই অভিযাত্রায় জয়ী হবার সম্ভাবনা ক্ষীণ, তবু সর্বশেষ প্রচেষ্টা টুকুই সান্তনা যেন তার কাছে।

ইতোমধ্যে ১৩ টি পরিবার চাইছেন ডিএন এ টেষ্ট এর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে তাদের স্বজনকে ফিরে পেতে। এ জন্য সরকারি সহযোগিতাও কামনা করছেন তারা। যেমন তাদের মধ্যে, পাবনার আতাইকুলা থানার খালিশপুর গ্রামের ময়েজউদ্দিন ও তার বোন খদিজা এবং নাতি পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মামুন। শনিবার সকালে তারা মিন্টোর অবস্থান রত হোটেলে গিয়ে দেখা করার পর আবেগ তাড়িত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ার ঘঁনা বাসায় গিয়ে জানাবার পর আজ মিন্টোর বোন বলে দাবি দার খাদিজা ছুটে যান ফুলের তোড়া হাতে বড় ভাই ময়েজউদ্দিনকে সাথে নিয়ে। কিন্তু মিন্টোর সহযোগি বন্ধু স্বাধীন বিশ্বাস বলেন, যদিও মিন্টো হারানো স্বজনের সন্ধানে এসে একদিকে আশার আলো দেখতে পেয়েছেন। অনুরুপ মিন্টো ভীষণ ব্যাথিত হয়ে পড়েছেন। কেন না মিন্টোকে স্বজন হিসেবে দাবি করে এ পর্যন্ত ১৩টি পরিবার এসে স্ব -শরীরে সাক্ষাৎ করেছে। গতকাল রোববার দুপুর পর্যন্ত বেড়ার নাকালিয়া ও প্যাচাখোলা এলাকা থেকেও এসেছিলো অপর দুটি পরিবার। এ ছাড়া শনিবার সকালে এসে ঘুরে গেছেন আতাইকুলা থানার খালিশপুর গ্রামের ময়েজউদ্দিন এবং এ দিন বিকেলে তারা বেড়া থানা পুলিশের মাধ্যমে একটি পরিবার এর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন।
এ ছাড়াও তার কাছে ঢাকা, নাটোর,খুলনা, যশোর, ঝিনাইদহ জেলার অন্তত ২০/২২ জন ফোন করে যোগাযোগ করছেন। আমরা সবাইকে বলেছি, আপনারা সকলে স্থানীয় চেয়ারম্যান এর মাধ্যমে বর্ণনা সহ আপনাদের ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি সহ জেলা প্রশাসক বরাবর দরখাস্ত দেন। জেলা প্রশাসন তথ্যাদি প্রাথমিক ভাবে যাচাই বাছাই শেষে যে সকল পরিবারকে মনে করবে যে তাদের সাথে ডিএন এ টেষ্ট করা দরকার তাদের সাথেই কেবল মাত্র ডিএনএ টেষ্ট করে দেখা হবে । প্রকৃত পক্ষে কে তার স্বজন মিন্টোই বা তার স্বজনকে কে পেলো কী না।

আত্মপরিচয়ের শেকড় সন্ধানী মিন্টো স্বজনদের দেখা পেয়ে জন্মভূমি থেকে সুখস্মৃতি নিয়ে ফিরবেন এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!