সেলিনা জাহান প্রিয়ার গল্প: ‘অ-মানব’- (২০তম পর্ব)

 

`অ-মানব’-২০তম পর্ব

—————————–সেলিনা জাহান প্রিয়া

 

সেবিকা বলল – কেন জানি আপাকে খুব বিশ্বাস হয় । জিবনে কাউকে না কাউকে বিশ্বাস করতে হয় । বিশ্বাস না করলে চলব কি ভাবে ।
পাগল সেবিকার দিকে চেয়ে বলে – সব কিছুর একটা সীমানা থাকা উচিৎ । হউক সেটা বিশ্বাস তারও সীমানা থাকা চাই । কারো কথা বিশ্বাস করার পূর্বে দেখতে হবে যে এর আগে এমন বিশ্বাস কেউ কি করেছে । আর যারা করেছে তারা কি পেয়েছে ।
— এই ধারনা গুলো কোথায় পাওয়া যায় ।
— দেখুন মানুষের চিন্তা ভাবনা প্রায় সব সময় সমান তালে চলে । সেই সব চিন্তা মানুষ অন্যদের দরকারে লিখে গেছে । তাই বেশি করে মানুষ কে পড়তে হবে। আপনি একজন মুসলিম ধর্মে বিশ্বাসী । আর সব চেয়ে মজার ব্যাপার হল কি জানেন
আপনার পবিত্র বিশ্বাস হল একটি কিতাব । আর এই কিতাবে প্রথম যে কথাটি তার রাসুল কে মাবুদ বলেছে তা হল ~ পড় তোমার প্রভুর নামে যে তোমাকে সৃষ্টি করেছে জমাট রক্ত থেকে ”
— সেবিকা বলল , আপনি অনেক জানেন । তাই আপনার কাছে আসা ।
নাজ ও নাদিয়া চুপ করে পাগলের কথা শুনছে । পাগল বলল – বল তোমার কথা ।
— আপনি ঐ দিন হয়ত হাসপাতালে একটা ফর্মের পিছনে আমার কিছু লেখা ছিল
তা পড়েছেন ।
— হা চোখের সামনে চলে এসেছে । আপনি তাঁকে ৭ দিন সময় দিয়েছেন বিয়ে করার
জন্য ।
— হ্যা । কিন্তু ঐ ডাক্তার সাব এখন আমাকে আর বিয়ে করতে চায় না। আমি ওকে
অনেক বিশ্বাস করেছি । ঐ ডাক্তারের কাছে আমি আমার জীবনের সব কিছু
ই দিয়েছি । যখন যা বলেছে । আমি ওর সব কথা নিজের মত করে শুনেছি ।
গত তিন বছর আমাকে সেও পাগলের মত ভালবাসত । কিন্তু আজ কাল
কিছু দিন হল সে আমাকে কোন ভাবেই সহ্য করে না। খন আমার সাথে কথা
বলে না। আমি শুনলাম আগামি মাসে ওর বিয়ে । আর ও বদলি নিয়েছে ।
সিলেট থেকে । আমি ওকে না পেলে মরা ছারা কোন উপায় নেই ।
— আপনার বিষয় টা কি আপনার পরিবার কে জানিয়েছেন ।
— হ্যা জানিয়েছি । ওকে নিয়ে আমাদের গ্রামের বাড়ি নরসিংদী রায়পুর পর্যন্ত
গিয়েছি । ও সাত দিন ছিল আমাদের গ্রামের বাড়িতে । গ্রামের বাড়িতে
সবাই জানে যে আমাকে ঐ ডাক্তার বিয়ে করবে ।।
— পাগল একটু হেসে বলে দেখুন মানুষ যদি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে তখন পাগল হয় ।
ঠিক কি না।
— হ্যা পাগল হওয়া ছারা তো আর কোন পথ নেই ।
— হ্যা এই তো পথে আসছেন । আপনি পড়ে পাগল না হয়ে পাগল এখন হতে হবে ।
মনে রাখবেন পাগলের কোন লজ্জা সরম ভয় , খুদা নিদ্রা নাই । ঠিক কিনা ।
— হ্যা একদম ঠিক । কিন্তু আমি তো পাগল না।
— হে আপনি পাগল না। কিন্তু ও যদি আপনাকে বিয়ে না করে তবে কি আপনি
পাগল হবেন না। পাগল না হলে তো আত্ম হত্যাও করতে পারবেন না।
—- পাগল হলে কি ওকে পাব ।
—- আরে বোকা মেয়ে এই পাগল সেই পাগল সেই পাগল না। যদি আপনি
আমার কথা শুনেন তাহালে আপনি ডাক্তার কে পাবেন ।
— হা ওকে পাওয়ার জন্য আমি সব করতে পারি ।
— দেখুন ওকে পাওয়ার জন্য আপনি সব করতে পারবেন না। এটা আপনার
মুখের কথা । একটা মেয়ে মানুষ চাইলেই বাজারের মাঝ খানে দারিয়ে নাচতে
পারে না। আমি যেটা বলছি সেটা করলে ই হবে । আজ একটা কথার উত্তর দেন
ঐ ডাক্তার আপনার সাথে প্রেম করার জন্য যা যা বলেছে । যত স্বপ্ন দেখিয়েছে
সব মিথ্যা কি না ।
— হা আজ তো তাই দেখছি সব মিথ্যা ।
—- পাগল বলল আসলেই সব মিথ্যা না। কারন আপনি লিখা পড়া না করে প্রেম
করেছেন । সবার প্রেম করার আগে একটু লেখা পড়া করা দরকার । লাইলি
মজনু হবার জন্য আমাদের নাটক সিনেমা আর কিছু কবিরা দায়ি । তারা প্রেম
কে এমন ভাবে উপস্থাপন করে । যেন প্রেম করলে ভাত খেতে হয় না। কিন্তু
আমি খুব অবাক হই । সব ছেলে রা বা সব মেয়ে রা প্রেম কি বুঝার আগেই
একজন অন্য জনের কাছে বিক্রি হয়ে যায় । যাই হউক আপনি কিন্তু ডাক্তার কে
চান । ডাক্তার ভাবছে প্রেম করব একশত । প্রেম করতে তো কাবিনামা লাগে
না। বদমাইশ কে আমি প্রেমের সরল পথ দেখাব ।।
নাজ পাগলের কথা শুনে তারাতারি তার ঘরে যায় । নাদিয়া বলে মানুষ এত খারাপ হয় । একজন ডাক্তার । পাগল বলে ডাক্তার রা কি মানুষ না। মানুষের মধ্য আছে লোভ । আর মানুষের লোভ মানুষের শান্তি নষ্ট করে । পাগল বলল আপনার নাম জানা হল না।
— সেবিকা বলল আমার নাম দিলরুবা আর ডাক্তারের নাম জীবন ভুঁইয়া ।
— পাগল বলল আজ হল আপনার প্রথম কাজ । ডাক্তার কে বলবেন তুমি
আমাকে বিয়ে না করলে আগামি ৭ দিনের মধ্য কি কি হবে তার একটা তালিকা লিখে দিবেন । আর বলবেন এই তালিকা একটা কপি আপনার বান্ধবির কাছে আছে ।
আর বলবেন আপনার বান্ধবি হল একজন সাংবাদিক জাতিয় পত্রিকায় কাজ করে ।
চা খেতে থাকেন । রাত ৮ টায় আমি তালিকা দিয়ে আসব আনাকে । আপনি আমার তালিকা দেখে হাতে লিখবেন । এবং তাঁকে দিবেন । কাজ শুরু হলে ও আপনাকে নিয়ে হয়ত বেড়াতে যেতে চাইবে । আপনি রাজি হবেন । এই কয় দিন ও যা বলবে টা সবেই মিথ্যা । দিলরুবা কোন কিছু বিশ্বাস করবেন না। আর আপনি যে ওকে অবিশ্বাস করছেন তাও তাঁকে বুঝতে দিবেন না। এখন বিদায় দেখা হবে রাতে আপনার হাসপাতালে ।
সেবিকা দিলরুবা চলে যায় । নাজ একটু চিন্তায় পড়ে গেল । নাদিয়া বলল নাজ তকে আপা ডাকছে । নাজ তার নাজু আপার সামনে নাজু বলতে লাগলো কোচিং রেখে কোথাও যাও শুনি ।
— আপা আমি কোথাও যাই না। নাজু একটা চর দিয়ে বলল । আমার সাথে মিথ্যা বলছ তুমি । নাদিয়া এসে বলল আপু কিচু বল না । ভাইয়া আজ ওকে চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়েছে যে জীবন কেমন । যদি এর পর ভাল না হয় তবে তার কপাল । নাদিয়া বলল – নাজ তুমি কোথায় যাও কি কর । আমার কাছে সব খবর আছে। আপুর সাথে কথা বলে দেখি যদি আপু ভাল মনে করে তাহলে আমার আগেই তকে বিয়ে দিয়ে দিব । কাল আমাকে কোচিং এ নিয়ে যাইস । নাজ চুপ চাপ অন্য ঘরে চলে যায় । নাদিয়া জানালা দিয়ে পুকুর দিকে তাকিয়ে থাকে । পুকুরে পার গুলো খুব সুন্দর
করে বেধেছে । শিমুল গাছের পাতা গুলো শীতে ঝরে গেছে । চোখ ফিরিয়ে জানালা দিয়ে চেয়ে দেখে পাগলের সাথে সেই কুকুর টা বাসার গেইটের সামনে । কুকুর টা সব সময় পাগলের কাছে কাছেই থাকে । নাদিয়া চিন্তা করে এই মানুষ টা আসলেই কে । কোন কিছু নিয়ে চিন্তা করে না। সব কিছুর মাঝে কেমন একটা সুন্দর ব্যাখ্যা দেয় ।
জানালা থেকে মুখ সরিয়ে পাগল মানুষটার কাছে হেঁটে হেঁটে যায় ।
— পাগল মানুষ টার দিকে চেয়ে বলে ভাইয়া বাহিরে যাবেন ।
— হা দিলরুবা কে একটু সাহায্য করি ।
— আমি সাথে যাব ।
— আমি তো হেঁটে হেঁটে যাব ।
— আমি আপনার সাথে হেঁটেই যাব ।
— আপু কে বলে নাও । যদি যেতে দেয় তবেই এসো ।
— আপু তোমার সাথে গেলে না করবে না। আজ তোমার জন্য একটা
দারুন জিনিস রান্না করেছে ।
— হা গন্ধ পেলাম । মনে হয় পায়েস ।
— ঠিক বলেছ । আপুর হাতের পায়েস খুব মজা । অবশ্য দুলা ভাই কেন জানি পছন্দ
করে না।
— আচ্ছা কেন করে না জানতে চাও । চল হাঁটতে হাটেতে বলি ।
দু জন মিলেই হাঁটছে । নাদিয়া বলল -আচ্ছা ভাইয়া অনেক দূর তো রিক্সা নিচ্ছেন
না কেন ।
— আমার কাছে টাকা নেই ।
— আমার কাছে আছে ।
— আমার কাজে তুমি টাকা ব্যয় করবে কেন ।
— আপনি একটা ভাল কাজ করছেন । তাই ।দুজন মিলে রিক্সায় উঠল । নাদিয়া
বলল দুলা ভাই পায়েস কেন খায় না।
— তোমার দুলা ভাই একবার পায়েস খেয়ে একটু আসুস্থ হয়ে ছিল । ঐ ভয় এখনো আছে । কারো মধ্যে একবার ভয় চলে আসলে । সেই ভয় সহজে তাঁর জীবন থেকে যায় না । মানুষের সব কিছুতেই ভয় কাজ করে । তবে অনেক মানুষ কে আজ এই ভয় পাপ কাজ হতে বিরত রেখেছে । জগতের সকল ধর্মের মধ্য প্রথমে ভাল কাজের কথা বলা আছে আর মন্দ কাজের জন্য তাদের পরকাল বা পুনঃজন্ম হবে তখন তকে
কঠিন সাজা পেতে হবে । সরল মানুষ তারাই যারা ভয় পায় । এবং সরল মানুষরা জিবনে সুখ পায় ।
— ভাইয়া কি সুন্দর করে কথা বল তুমি । তোমার কাছে অনেক কিছু শেখার আছে ।
— চলে আসলাম নাদিয়া তুমি এই কাগজ টা দিলরুবার কাছে দিয়ে এসো । আর তোমার ফোন নাম্বার টা । দরকার হলে যেন ফোন করে ।
নাদিয়া দিলরুবার রুমে গিয়ে একটা কাগজ দিতেই । দিল রুবা হাতে নিয়ে পড়তে থাকে । দিলরুবা কাগজটা পড়ে একটা হাসি দেয় । আসলেই তো । অনেক সুন্দর একটা আইডিয়া ।

চলমান———–———

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!