আপনজন কেউ আসেনি অভাগী সেই মেয়েটি এখন সেভহোমে

রনি ইমরান, পাবনা, বিশেষ প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

‘মায়ের আঁচলের দেখা পেলনা আশ্রমের বারান্দায় শিকলে বেঁধে রাখা সেই মানসিক রোগী লুবনা। লুবনাকে রাজশাহীর সেভহোমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শিকলে বাঁধা মেয়েটি এমন শিরোনামে দেশব্যাপী নিউজটি প্রচার হওয়ার পর। চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থেকে লুবনার স্বজনদের খোঁজ পাওয়া যায়। খোঁজ পাওয়ার পর চট্টগ্রামের স্থানীয় সাংবাদিকরা লুবনার ব্যাপারে তাদের জানায় কিন্তু স্বজনরা তাচ্ছিল্য করেন এবং লুবনাকে চেনেনা বলে অস্বীকার করেন। এদিকে আগে থেকেই মমতাময়ী মা সকল বাধন ছিন্ন করে নতুন ঘর বাধার আশায় মেয়েকে শিকলে বেঁধে চলে গেছে। একবারের জন্য মেয়েটিকে দেখতে মমতার আঁচল নিয়ে ফিরেও আসেনি সে। অন্য দিকে চন্দনাইশ হাজীপাড়ায় তার নিকট আত্মীরা লুবনাকে অস্বীকার করেছে। এমন অবস্থায় স্বজনহীন অসহায় এই মেয়েটির সম্পর্কে পাবনা জেলা প্রশাসক কবির মাহমুদ জানতে পারেন এবং একজন অবিভাবক এর মতো গুরুত্ব সহকারে তা আমলে নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২১ আগস্ট কোটের আর্দেশ অনুযায়ী লুবনাকে পাবনা শ্রী শ্রী অনুকূল চন্দ্র ঠাকুরের আশ্রম থেকে রাজশাহীর সেভ হোমে নিয়ে যাওয়া হয়। পাবনা জেলা সমাজ সেবা অফিসের প্রবেশন অফিসার মো: পল্লব ইবনে শায়েখ লুবনা কে আশ্রম থেকে নিয়ে যায় রাজশাহীর সেভ হোমে। পল্লব ইবনে শায়েখ জানায়, তাকে সেভ হোমে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি এদিকে মানসিক হাসপাতাল কতৃপক্ষের সাথেও যোগাযোগ করা হচ্ছে। হাসপাতালে সিট খালি হলেই লুবনাকে সেখানে ভর্তি করা হবে। এক পর্যায়ে মেয়েটি যখন সুস্থ হয়ে যাবে তখন তার পরিবার বা স্বজনদের কে আইনি পক্রিয়ার মাধ্যমে আনার চেষ্টা করা হবে। যদি তারা না আসে তবে অসহায় এই মেয়েটির সেভ হোমেই হবে আশয়স্থল । তাই এই প্রক্রিয়া।

পাবনা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ বলেন, ঘটনাটা খুবই কষ্ট দায়ক একজন মমতায়ী মা কিভাবে তার আদরে সন্তানকে এভাবে ফেলে যেতে পারেন! আর স্বজনরাই বা কেন অস্বীকার করছেন এটা মনবিক নয়।

দৈনিক জনকণ্ঠ পাবনার সাংবাদিক কৃষ্ণ ভৌমিক বলেন, মেয়েটার বিষয়ে প্রথম জানতে পারি আমার স্বহধর্মীনির কাছে থেকে। শুনে খুবই কষ্ট লেগেছে।

আমি একজন প্রতিবেদকের মাধ্যমে তার স্বজনদের যাতায়াতে খরচ দেওয়া ওফার করলেও তারা আসেনি। এটা খুব কষ্টের। উল্লেখ্য, লুববনার বাবা মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে গেছে অনেক আগেই। লুবনার মা গতদুই মাস আগে লুবনাকে পাবনা বিশেষায়িত মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করাতে নিয়ে আসে। কিন্তু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় শেষমেশ আর ভর্তি করাতে পারেনি । হোটেল থাকার সামর্থ না থাকায় শ্রী শ্রী অনুকুল চন্দ্র ঠাকুরের আশ্রমের বারান্দায় আশ্রয় নেয় মা মেয়ে দুইজন। কিন্তু সকালে আলো ফোটার আগেই মেয়েকে শিকলে বেঁধে রেখে পালিয়ে যায় মা। এমন অবস্থা গত দুই মাস আশ্রম কতৃপক্ষ যুবতী মেয়েটিকে নিয়ে বড় বিপাকে পড়ে যায়। তখন কৈতুরী বেগম নামের এক নারী মায়ের আদরে তার দেখাশোনা করেন।
স্থানীয় সাংবাদিকরা বিষয়টি জানার পর তা প্রচার করতে শুরু করে এবং এর পেক্ষিতে খবর পৌঁছে যায় লুবনার নানা বাড়ির চট্টগ্রামের চন্দনাইশের হাজীপাড়াতে। সেখানে তার আত্মীয় প্রিয়জনের এমন সংবাদে উওলা না হয়ে তাচ্ছিল্য করে এড়িয়ে যায়। এমনকি লুবনাকে চেনে বলে স্বীকার করেন। এমন এক পরিস্থিতিতে সেভহোম ছাড়া কোনো দরজা আর খোলা ছিলো না হতভাগী মেয়েটির জন্য। মূলত লুবনার মা মেয়েকে রেখে যেতেই মরিয়া ছিলেন কারণ দ্বিতীয় বিয়ে করতে চলেছেন মা।

জীবনের গল্পগুলা মাঝে মাঝে করুন বাস্তবতার সম্মুখীন করে। আপন মানুষও তখন দূরে ঠেলে দেয়। বাবা মা স্বজনহীন তারপরে লুবনা ভারসাম্যহীন। কাথায় আছে, যখন মাথার উপর ছাঁদ থাকেনা তখন গোটা আকাশটাই ছাঁদ হয়ে যায় – লুবনার ভাগ্যটাই এমন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!