ঈশ্বরদীতে কাপড় ব্যবসায়ী হত্যা রহস্য উদঘাটন: ছোট ভাইয়ের সাথে স্ত্রীর পরকীয়া এবং সম্পত্তির লোভে এই হত্যাকান্ড

খায়রুল বাশার, ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

ঈশ্বরদীর বহুল আলোচিত কাপড় ব্যবসায়ী শাকিল আহমেদ ওরফে ভোলা (৩৫) হত্যাকান্ডের ঘটনায় পুলিশ হত্যা রহস্য উদঘাটন ও আসামী গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়েছে। বুধবার পাবনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম এক প্রেস ব্রিফিং এ ছোট ভাইয়ের সাথে স্ত্রীর পরকীয়া এবং এককভাবে সম্পত্তি ভোগের লালসায় কাপড় ব্যবসায়ী শাকিল আহমেদকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

শাকিল হত্যায় জড়িত স্ত্রী মিম খাতুন (২০) এবং আপন ছোট ভাই সাব্বির (২২) কে পুলিশ সন্দেহজনক ভাবে ঘটনার রাতেই গ্রেফতার করে। ইতোমধ্যে স্ত্রী মিম ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে বলে জানা গেছে। এই হত্যার রহস্য নিয়ে প্রথমে পুলিশ কোন ক্লুই খুঁজে পাচ্ছিল না। পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবির, থানার ওসি আসাদুজ্জামান আসাদ এবং ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ হাদিউল ইসলামসহ পুলিশের একটি চৌকশ টিম তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রথমে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ২জন আসামীকে গ্রেফতার করে। পরে থানায় জিজ্ঞাসাবাদে নিহত শাকিলের স্ত্রী ও ভাই হত্যার সাথে জড়িত থাকার বিষযটি স্বীকার করেছে বলে জানা গেছে।

পুলিশ সুপার জানান, বিয়ের পর হতেই নিহত শাকিলের স্ত্রী মিমের সাথে ছোট ভাই সাব্বিরের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এছাড়াও শাকিলের সাথে বাবা-মা ও একমাত্র ছোট ভাইয়ের জমিজমা ও পুকুরে মাছ চাষের ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধ ছিলো। স্ত্রী মিম ও সাব্বির এর পরকীয়ার বিষয়টিও শাকিল আঁচ করতে পারে। যেকারণেএকই বাড়ীতে অবস্থান করিয়া আলাদাভাবে সংসার শুরু করে এবং বিষযটি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে শাকিল গত ১৯ মে স্ত্রীকে নিয়ে শহরের রূপনগর কলেজ পাড়া মহল্লায় জনৈক আহসান হাবীবের বাড়ীর ২য় তলায় ভাড়াটিয়া হিসাবে উঠে। কিন্তু সাব্বির গোপনে একটি মোবাইল ফোন মিমকে দেয়, যা মিম লুকিয়ে রেখে শুধু সাব্বিরের সাথে গোপনে কথা বলতো এবং বাড়ী ফাঁকা পেলে ঘনিষ্টভাবে মিশতো। এক পর্যাযে ভাবি ও দেবর শাকিলের প্রতি ক্ষিপ্ত হয় এবং শাকিলকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী স্ত্রী মিম ২৭ মে রাতে পানির সাথে তিনটি ঘুমের ট্যাবলেট গুড়া করে মিশিয়ে দেয়। ওষুধের প্রভাবে ২৮ মে শাকিল সারাদিন শুধু ঘুমাতে থাকে। সন্ধ্যার পরে সাব্বির গোপনে শাকিলের বাসায় যায়। শাকিল তখনো ঘুমের ঔষধের প্রভাবে ঘুমাচ্ছিল। সাব্বির এবং মিম পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সোফাসেটের কুশন বালিশ নিয়ে শোবার ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত অবস্থায় নাকে-মুখে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে শাকিলকে হত্যা করে। অতিরিক্ত ঘুমের ঔষধ খাওয়ানোর ফলে শাকিল তেমনভাবে প্রতিরোধ করতে পারেনি।

পুলিশ আরো জানায়, আসামী মিম ও সাব্বির ভিকটিম শাকিলকে হত্যার বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার লক্ষ্যে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আসামী সাব্বির ওড়না দিয়ে মিমের দুই পা, শাকিলের পাঞ্চাবী দিয়ে মিমের দুই হাত এবং মিমের পরিহিত ওড়না দিয়ে মুখ বেঁধে বাহিরের দরজার নিকট রেখে ঘরের দরজা বাইরে থেকে ছিটকিনি লাগিয়ে চলে যায়। এসময় সাব্বির মিমের সাথে গোপনে কথা বলার জন্য তাকে দেয়া মোবাইল ফোনটি নিয়ে যায়।

প্রসঙ্গত: গত ২৮ মে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঈশ্বরদী বাজারের এক কাপড় ব্যবসায়ী ও মুলাডুলি ইউনিয়নের প্রতিরাজপুরের দুবলিয়া গ্রামের ইব্রাহিম হোসেনের পুত্র শাকিলের লাশ ভাড়া বাসা হতে উদ্ধার করা হয়।

এসময় পূর্বপরিকল্পিত নাটকের বর্ণনা দিয়ে স্ত্রী মিম জানায়, ২জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি শাকিলের ভাড়া বাসায় এসে ডাকাডাকি করলে সে ঘরের দরজা খুলে দেয়। অজ্ঞাতনামারা জোরপূর্বক ঘরের মধ্যে ঢুকে মিমকে ২টি থাপ্পর মারে এবং বুকের নিচে একটি লাথি মারলে সে অজ্ঞান হয়ে যায়। মিম রাত ৯টার দিকে জ্ঞান ফিরে দেখতে পায়। তখন তার হাত,পা ও মুখ কাপড় দ্বারা বাঁধা এবং ঘরের দরজা বাহির থেকে আটকানো। মিম তার হাত-পা বাঁধা অবস্থায় প্রতিবেশিদের সাহায্য পাওয়ার আশায় প্রায় ১ ঘন্টা ধরে পা দিয়ে ঘরের দরজা ও ওয়ারড্রপে লাথি মেরে শব্দ করতে থাকে। রাত ১০ টার দিকে বাড়ীর মালিকের স্ত্রী নাজমা বেগম শব্দ শুনে শাকিলের দরজার বাহির থেকে ছিটকিনি খুলো মিমের হাত,পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় পরে থাকতে দেখেন। পরে আত্মিয়-স্বজনকে ঘটনা জানালে তারা ঘটনাস্থলে এসে দেখে শাকিলকে মৃত অবস্থায় সামনে নিয়ে স্ত্রী মীম বসে আছে। এসময় তারা দ্রুত ঈশ্বরদী থানাকে অবহিত করেন।

এ ঘটনায় নিহত শাকিলের মামা কোরবান আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!