কর্মীদের সঙ্গে দেওয়াল ভাঙার বার্তা রাহুলের

অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

ইন্দিরা গাঁধীর নামাঙ্কিত স্টেডিয়ামে বসেছে দু’দিনের প্লেনারি অধিবেশন। গ্যালারির সব থেকে পিছনের সারিতে বসে কংগ্রেসের সাধারণ কর্মীরা। হঠাৎই সে দিকে চলে গেলেন রাহুল গাঁধী। নিজস্বীর আবদার আর হাজারো অভিযোগ নিয়ে কর্মীরা ছেঁকে ধরলেন দলের সভাপতিকে।

তার পরেই ফিরে এসে সমাপ্তি বক্তৃতায় রাহুল যা বললেন, সামনের সারির নেতাদের অনেকেরই তাতে মুখ ভার হল। রাহুলের কথায়, ‘‘অনেকের ভাল না লাগলেও কথাটা বলতে হবে। পিছনে যে কর্মীরা বসে আছেন, দেশ বদলের শক্তি তাঁদের হাতেই। অথচ তাঁদের আর সামনের সারির নেতাদের মধ্যে দেওয়াল! আমার প্রথম কাজ, এই দেওয়ালটা ভাঙা।’’

ফারাকটা চোখে পড়েছিল গত কালই। অতীতের কোনও অধিবেশনের মতো মঞ্চে রাখা হয়নি একজন নেতাকেও। মঞ্চ ফাঁকা রাখার রহস্যটি আজ ফাঁস করলেন রাহুল। বললেন, ‘‘ফাঁকা রেখেছি সেই যুবকদের জন্য, যাঁদের যোগ্যতা আছে। প্রবীণদেরও জায়গা থাকবে।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর সংযোজন, ‘‘কেউ প্যারাসুটে চড়ে নেমেই টিকিট পাবেন, আর ১০-১৫ বছর ধরে প্রাণ দিয়ে দলের কাজ করার পরেও নেতাদের ‘খুশি’ করতে না পারায় কাউকে টিকিট দেওয়া হবে না— না-না-না-না-না! এমনটা আর চলবে না। গুজরাতে এক ছোট্ট পরীক্ষাতেই নরেন্দ্র মোদী সি-প্লেন চড়েছেন। কর্মীদের শক্তি দিলে এ বারে সাবমেরিনে ডুববেন!’’

বার্তা স্পষ্ট, চলতি সপ্তাহেই ওয়ার্কিং কমিটি-সহ যে নতুন টিম গড়বেন রাহুল, তাতে অনেক প্রবীণকে সরিয়ে আনা হবে নতুন মুখ। রাহুলের বলার আগে আজই গুলাম নবি আজাদের মতো নেতা নতুন কমিটি গঠনের দায়িত্ব সভাপতির হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব পাশ করিয়ে নেন ধ্বনিভোটে।

কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার মতে, কাল সনিয়া দিয়েছিলেন জোটের বার্তা। কিন্তু বাকি বিরোধীরা তখনই রাহুলের নেতৃত্ব মানবে, যখন কংগ্রেসের সংগঠন বাড়বে, আসন বাড়াবে। তাই রাহুলের এখন কাজ, শ্লথ হয়ে যাওয়া প্রবীণদের বদলে উৎসাহে ভরা নবীনদের সামনে এনে শক্তি বাড়ানো।

দল, এমনকী দলের বাইরে থাকা যুবদেরও তাই টানতে চাইছেন রাহুল। কংগ্রেস সভাপতির কথায়, ‘‘গত ভোটে মোদীর গাড়িকে গতি দিয়েছিলেন যুবরা। এখন তাঁরা দেখছেন নীরব, ললিতকে নিয়ে নরেন্দ্র মোদী গাড়ি চালিয়ে বেরিয়ে গিয়েছেন! এরা এখন আর মোদীর পাশে নেই। এই যুবদের চাই কংগ্রেসে।’’ সেই সঙ্গেই দলকে একজোট করতে বার্তা, ‘‘এখন ৬-৭ মাস কোনও ঝগড়া নয়। করতে হলে ভোটের পরে!’’ হাততালিতে ফেটে পড়ল স্টেডিয়াম। সভাশেষে সত্যিই নেতা ও কর্মীদের মাঝে ব্যারিকেড ভেঙে গেল। কর্মীরা ছুটে গেলেন রাহুলের কাছে। ফের নিজস্বী, হাত মেলানো, ধন্যবাদ।

তার মধ্যেই অনেকের মনে শঙ্কা— রাহুল সত্যিই পারবেন তো দেওয়ালটা ভাঙতে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!