টাঙ্গাইল জেলার খেতাব প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধারা

সম্পাদকীয় ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

বীর প্রসবিনী ও স্বর্ণ প্রসবিনী টাঙ্গাইল। এই টাঙ্গাইল যুগ যুগান্তর ব্যাপী জন্ম দিয়েছে অনেক কৃতিবিদ, ধারণ করেছে অনন্য সমৃদ্ধিশালী ইতিহাস ও ঐতিহ্য ভান্ডার। দেশের বিভিন্ন খ্যাতিমান ব্যক্তিগণ ভিন্ন ভিন্ন বিশেষণে বিশ্বেষিত করেছেন টাঙ্গাইলকে। কারণ ফকির-সন্ন্যাস বিদ্রোহ, কৃষক প্রজা বিদ্রোহ, নীল বিদ্রোহ, বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা আন্দোলনে রয়েছে এই অঞ্চলের সন্তানদের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা।

যে কোনো ভালো, উল্লেখযোগ্য, ব্যতিক্রমধর্মী ও অসাধারণ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ খেতাব বা পুরস্কার প্রদানের ইতিহাস দীর্ঘ দিনের। খেতাব রাষ্ট্রীয়, জাতীয় বা সরকারী পর্যায়ের হতে পারে আবার বেসরকারী পর্যায়েরও হতে পারে। জনগণের রায়ে এক ধরণের খেতাবের প্রচলন দেখা যায়, ঐতিহ্যগত ভাবে খেতাব প্রাপ্ত পদক ও রিবন পরিধানের মাধ্যমে নামের প্রথমে বা শেষে খেতাব উল্লেখ করে খেতাব প্রাপ্তির প্রমাণ দিয়ে থাকে। পদক প্রবর্তন হওয়ার আগে অন্য অনেক কিছুর মাধ্যমেও পুরস্কার বা খেতাবের স্বীকৃতি দেয়া হতো। এছাড়াও অতীত থেকেই খেতাব প্রাপ্তরা বিভিন্ন ধরণের সম্মান ও বৈষয়িক সুবিধা পেয়ে আসছে।

খেতাব বিভিন্ন কারণে প্রদান করা হয়। শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, বিজ্ঞান, অর্থনীতি, সাহস বা বীরত্ব, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, সমাজসেবা, দেশ সেবা, সুশাসন ইত্যাদি যে কোনো ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য খেতাব বা পুরস্কার দেয়া হয়।

মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য টাঙ্গাইল জেলার যে সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা খেতাব প্রাপ্ত হয়েছেন। তাদের নিয়েই এই প্রবন্ধ। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের স্বাধীনতা সংগ্রামের বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ডিসেম্বর ৬৭৬ জনকে বীরত্ব খেতাব প্রদান করেন। তাদের মধ্যে ৭ জনকে বীর শ্রেষ্ঠ। ৬৮ জনকে বীর উত্তম। ১৭৫ জনকে বীর বিক্রম এবং ৪২৬ জনকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করেন। টাঙ্গাইল জেলায় কেউ বীর শ্রেষ্ঠ খেতাব পাননি।

বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম-

বীর উত্তম খেতাব পেয়েছেন একজন। তিনি কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম ডাক নাম বজ্র। তবে বাঘা সিদ্দিকী নামে সর্বাদিক পরিচিত। পিতা আবদুল আলীম সিদ্দিকী। মাতা লতিফা সিদ্দিকী। সংগঠক, পরিচালক, মুক্তিযুদ্ধের বীর নায়ক, রাজনীতিক, সমাজসেবী ও লেখক। শিক্ষা বি.এ অনার্স। স্বাধীনতার ইতিহাসে গবেষকেরা আবদুল কাদের সিদ্দিকীকে শ্রেষ্ঠ বীরের মর্যাদা দেন। কাদের সিদ্দিকীর মত বাঙ্গালী বীর এর জন্ম টাঙ্গাইলে। ২৫ মার্চ ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের রাতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ঢাকা শহরে জনতার উপর অর্তকিত হামলা করে। এই যুদ্ধে কাদের সিদ্দিকী ও তাঁর দল অংশগ্রহণ করেন। টাঙ্গাইল জেলা এলাকার কাদের সিদ্দিকীর একটি বিশাল বাহিনী গড়ে উঠে। কাদের সিদ্দিকীর নামানুসারে এই ‘বাহিনী কাদেরিয়া’ বাহিনী নামে পরিচিত লাভ করে। কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান কার্যালয় ছিল সখিপুর, দ্বিতীয় কার্যালয় স্থাপন করেন ভূঞাপুর।

১৬ আগস্ট ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল থানার ধলাপাড়ায় পাকিস্তানী সৈন্যের বিরুদ্ধে সম্মুুখযুদ্ধে কাদের সিদ্দিকী আহত হন। প্রথমে দেশের অভ্যন্তরে ও পরে ভারতে তাঁর চিকিৎসা হয়।

কাদের সিদ্দিকী ও তাঁর বাহিনী অনেক দলে বিভক্ত হয়ে ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, ঢাকা ও সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানী সৈন্য ও তাদের তাবেদার বাহিনী রাজাকার, আল শামস্, আল বদর বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা হামলা ও সম্মুখযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ সাহসিকতার পরিচয় দেন। বিদেশী পত্র- পত্রিকায় কাদের সিদ্দিকীকে স্বঘোষিত জেনারেল আখ্যায়িত করা হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ কৃতিত্বের জন্য আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত হন।

জাতীয় পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কোন চুড়ান্ত তালিকা তৈরি বা সংরক্ষিত হয়নি। এই কারণে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক সংখ্যা বলা কঠিন। অনেকেই স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধার আনুমানিক সংখ্যা তিন লক্ষের উপরে বা নিচে বলে থাকেন। বাংলাদেশের বর্তমান তালিকা ভূক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা হচ্ছে ১,৬৭,৭০৮ জন। এর মধ্যে টাঙ্গাইল জেলার মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা হচ্ছে ৮,১৬২ জন। অনেকের মতে এই সংখ্যা দশ হাজারের মতো।

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় রণাঙ্গনকে ১১ টি ভাগে ভাগ করা হয়। মুক্তিযোদ্ধারা এই ১১ টি রণাঙ্গনের অধীনে যুদ্ধ করেন। তবে তখন কয়েক জন তেজী ও সাহসী ব্যক্তির ব্যক্তিগত চেষ্টায় ও উদ্যোগে কয়েকটি ব্যক্তিগত বাহিনী বা দল গড়ে উঠে। এর মধ্যে কাদেরিয়া বাহিনী সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী ছিল। সতের হাজার মুক্তিযোদ্ধা তাঁর অধীনে যুদ্ধ করেন। তিনি সি.এন.সি’র মর্যাদা লাভ করেন। বাহাত্তর হাজার সেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তোলেন। প্রায় চল্লিশ হাজার দেশ প্রেমিক লোক তাকে সমর্থন দান করেন। বাংলাদেশের ভিতর থেকে কাদের সিদ্দিকীর বাহিনী তাদের নিজস্ব নিয়মে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এরা সাড়ে তিনশ’র বেশি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে এবং সহস্রাধিক পাকিস্তানী সৈন্য খতম করে। এ বাহিনীর নাম শোনা মাত্রই পাক-হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগিদের বুকে কাঁপন ধরত। প্রায় ১৫০০০ বর্গমাইল এলাকা কাদেরিয়া বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল। তিনি মুক্ত এলাকায় ট্রেনিং ক্যাম্প এবং হাসপাতাল স্থাপন করেন। তিনি ভারতের মানকার চর গমন করেন এবং সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শিবির স্থাপন করেন।
কাদের সিদ্দিকী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আর্দশে বিশ্বাসী এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে টাঙ্গাইল জেলার গভর্নর নির্ধারিত হন। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্ব-পরিবারে নিহত হন। তখন এর প্রতিবাদে কাদের সিদ্দিকী দেশ ত্যাগ করে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেন। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে বাসাইল ও সখিপুর আসন থেকে এম.পি নির্বাচিত হন। বর্তমান কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি।

বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত হয়েছেন ৯ জন। এই ৯ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা হলেন-

হাবিবুর রহমান হাবিব বীর বিক্রম

১৯৭১ সালের ৯ আগস্ট রাতে সাতটি ছোট-বড় জাহাজ হঠাৎ টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর ধলেশ্বরী নদীর সিরাজকান্দি ঘাটে নোঙর করে। এ খবর দ্রুত পৌঁঁছাল স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে। দলনেতা ছিলেন হাবিবুর রহমান। তাঁরা সবাই কাদেরিয়া বাহিনীর । জানতে পারেন নোঙর করা জাহাজে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে। মাটিকাটায় তাঁরা অবস্থান নিয়েছিলেন। ১১ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে জাহাজগুলো তাঁদের অবস্থানের কাছাকাছি চলে আসে। ২ ইঞ্চি মর্টারের গোলা আঘাত করে সারেঙের কেবিন ও পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থানে। নিমেষে হতাহত হয় বেশ কজন পাকিস্তানি সেনা। বেঁচে যাওয়া বাকি পাকিস্তানি সেনারা প্রতিরোধের চেষ্টা না করে স্পিডবোটে করে পালিয়ে যায়। সামনের দুটি ও পেছনে থাকা বাকি জাহাজও সাহায্যে এগিয়ে না এসে পালাতে থাকে। এই জাহাজে ২১ কোটি টাকার অস্ত্র গোলা-বারুদ ছিল। এখান থেকে ৭৭৫ নৌকা অস্ত্র, বারুদ মুক্তিযোদ্ধারা নিয়ে যায়। বাকী গোলা-বারুদ জাহাজে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এখান থেকে মোঃ হাবিবুর রহমান ‘জাহাজ মারা হাবিব’ নামে পরিচিতি লাভ করেন।

দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালের মার্চে ছুটিতে থাকা অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন প্রতিরোধ যুদ্ধে। পরে কাদেরিয়া বাহিনীতে যোগ দেন। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর এলাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন।

মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্ব বিশেষত, মাটিকাটার যুদ্ধে অসাধারণ দক্ষতা প্রদর্শনের জন্য হাবিবুর রহমানকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করা হয়েছে।
হাবিবুর রহমানের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার জামুরিয়া ইউনিয়নের সাধুর গলগা গ্রামে। ১৯৯৮ সালে তিনি মারা গেছেন। তাঁর বাবার নাম মো. কলিমুদ্দিন, মা সৈয়দুন্নেছা। স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমীন। তাঁর ছয় মেয়ে ও দুই ছেলে।

আবদুস সবুর খান বীর বিক্রম

নির্মাণশ্রমিক থেকে সাহসী যোদ্ধা আবদুস সবুর খানসহ ৩০-৩২ জনের একদল মুক্তিযোদ্ধা নদীর ঘাটে ওত পেতে বসে আছেন। সবার হাত অস্ত্রের ট্রিগারে, দৃষ্টি সামনে প্রসারিত। কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেখানে হাজির হলো ছয়-সাতজন পাকিস্তানি সেনা। তারা ডান-বাঁয়ে দেখতে থাকল। একটু পর আরও ১০-১২ জন পাকিস্তানি সেনা সেখানে এল। পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের নাগালের মধ্যে। আবদুস সবুর খান এবং তাঁর সহযোদ্ধারা সংকেত পেয়ে একযোগে গুলি শুরু করলেন। প্রথম ধাক্কায় যা হওয়ার তা-ই হলো। চারজন পাকিস্তানি সেনা নদীতে গড়িয়ে পড়ল। তিনজন নদীর পাড়ে পড়ে রইল। তাদের কোনো সাড়াশব্দ বা নড়াচড়াও নেই। বোঝা গেল, তাদের দেহে প্রাণ নেই। একটু পর পাকিস্তানি সেনারাও গুলি শুরু করে। মেশিনগান, টু ইঞ্চি, থ্রি ইঞ্চি মর্টার ও রকেট লঞ্চারের গোলাগুলিতে চারদিক প্রকম্পিত হয়ে পড়ল। প্রায় আধঘণ্টা একনাগাড়ে যুদ্ধ চলল। তারপর থেমে থেমে আড়াই ঘণ্টা। এই যুদ্ধে আবদুস সবুর খান অসীম সাহসিকতা প্রদর্শন করেন। তিনি নদীর পাড়ে একবার ডানে, একবার বাঁয়ে, আধমাইল দৌড়াদৌড়ি করে প্রায় তিন ঘণ্টা গুলি চালালেন। আধা মাইলজুড়ে মুক্তিবাহিনী পজিশন নিয়েছে; পাকিস্তানি সেনাদের এ রকম ধোঁকা দেওয়াই ছিল তাঁর মূল উদ্দেশ্য। সে কাজে তিনি পুরোপুরি সফল হলেন। বিশৃঙ্খল পাকিস্তানিরা সেখান থেকে পালিয়ে গেল। এ ঘটনা ১৯৭১ সালের ১৭ জুন সকালে, টাঙ্গাইল জেলার বাসাইল উপজেলার পশ্চিমে কামুটিয়ায়।

আবদুস সবুর খান ছিলেন একজন নির্মাণশ্রমিক। ১৯৭১ সালে টাঙ্গাইলের সন্তোষে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পরে টাঙ্গাইলে কাদেরিয়া বাহিনী গঠন হলে এতে যোগ দেন। তিনি ছিলেন কাদেরিয়া বাহিনীর একজন দুর্ধ্বর্স গেরিলা যোদ্ধা। পরে তাঁকে একটি দলের দলনেতা হিসেবেও দায়িত্ব দেওয়া হয়। টাঙ্গাইলের বেশ কয়েকটি যুদ্ধে তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। এছাড়া পাথরঘাটা, বল্লা, বাথুনি, চাড়ান, এলাসিন, নাগরপুর, বাসাইল, মির্জাপুরের যুদ্ধে অসাধারণ কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য আবদুস সবুর খানকে বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয়েছে।

আবদুস সবুর খানের পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার চর রাঘবরায় গ্রামে। সেখানে তিনি থাকেন না। বর্তমানে বসবাস করেন টাঙ্গাইল জেলা শহরের আদালত পাড়ায়। তাঁর বাবার নাম সুজাত আলী খান, মা আয়েশা খানম, স্ত্রী রাবেয়া বেগম। তাঁদের পাঁচ ছেলে, এক মেয়ে।

আবুল কালাম আজাদ বীর বিক্রম

ডাক নাম কালাম, পিতা মৃত কাশেম উদ্দিন সরকার ওরফে আব্দুল মজিদ। মাতা সালেহা বেওয়া। তিনি টাঙ্গাইল জেলার সদর থানার পারদিঘুলিয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। ৯ মে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। তখন তাঁর বয়স ১৯ বছর। কাদেরিয়া বাহিনীতে যুদ্ধ করেন। যে এলাকায় কাদেরিয়া বাহিনী গড়ে উঠেছিল এ এলাকাটি ছিল ১১ নং সেক্টর এর অধীন। আবুল কালাম আজাদ কমান্ডার ছিলেন। টাঙ্গাইল শহরে অসংখ্য সম্মুখ যুদ্ধে ও গেরিলা হামলায় অংশ গ্রহণ করে প্রশংসনীয় সাহসিকতার পরিচয় দেন।

১৭ আগস্ট ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ টাঙ্গাইল জেলার সদর থানার ভাতকুড়া নগর জলপাই গ্রামে পাকিস্তানী সৈন্যের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে আহত হয়ে ধরা পড়েন। তাঁর সাথী মুক্তিযোদ্ধা বাকু এ যুদ্ধে শহীদ হন। আবুল কালাম আজাদকে গ্রেফতারের পর পাকিস্তানী সৈন্যরা তাকে ঢাকা সেনানিবাসে এনে অমানুষিক অত্যাচার করে, রেডিও টিভিতে জোর করে স্বাক্ষাৎকার দেয়ায়। ২ ডিসেম্বর ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ স্পেশাল মার্শাল ল কোর্টে তাকে ১৪ বছর সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয় এবং ১৫ বার বেত্রাঘাত করা হয়। ডিসেম্বর ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার হতে তিনি মুক্তি পান।

স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রশংসনীয় সাহসিকতার জন্য আবুল কালাম আজাদ বীর বিক্রম উপাধিতে ভূষিত হন।

শহীদ সিপাহী খন্দকার রেজানুর হোসেন বীর বিক্রম

শহীদ খন্দকার রেজানুর হোসেনের জন্ম টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটি ইউনিয়নের পাচুরিয়া গ্রামে। তিনি অবিবাহিত ছিলেন। তাঁর বাবার নাম খন্দকার হায়দার আলী এবং মায়ের নাম সৈয়দা রোকেয়া বেগম। তিনি ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে সৈয়দপুর ক্যাণ্টমেন্টের সম্মুখ যুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করে শহীদ হন। বাংলাদেশের সরকার তার এই সাহসিকতার জন্য বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত করেন।

শহীদ মনিরুজ্জামান খান বীর বিক্রম

টাঙ্গাইল জেলার বাসাইল থানার বাথুলী সাদী গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আকমল খান। মাতার নাম আমেনা বেগম। তৎকালীন ই.পি.আর এর সুবেদার পদে চাকুরি করতেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাদের ২৬ মার্চ তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ৩০ মার্চ তিনি কুষ্টিয়ার শহরে পাকিস্তানী সৈন্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন। ঐ দিন ২৫০ জন পাকসেনা নিহত হয়। পরবর্তীতে তিনি ৮ নং সেক্টরের অধীনে বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ করেন। তিনি নিজে একজন কোম্পানী কমান্ডার ছিলেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জুন যশোরের কাশীপুুরে পাকিস্তানী সৈন্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তিনি শহীদ হন।

স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ সাহসিকতার জন্য শহীদ মনিরুজ্জামান খান বীর বিক্রম উপাধিতে ভূষিত হন।

শহীদ আবদুর রকিব মিয়া বীর বিক্রম

গোপন শিবির থেকে বেরিয়ে পড়লেন আবদুর রকিব মিয়াসহ নয়জন নৌকমান্ডো। রাতের অন্ধকারে নদীর তীরে এসে নেমে পড়লেন নদীতে। প্রত্যেকের বুকে বাঁধা লিমপেট মাইন। ভরা নদীতে অনেকক্ষণ সাঁতরে পৌঁছে গেলেন জাহাজের পেছনে। এমন সময় হঠাৎ জাহাজ চলতে শুরু করল। নদীর স্রোত আর জাহাজের প্রপেলারের ঘুর্ণায়মান স্রোতে সেখানে সৃষ্টি হলো ভয়ংকর এক অবস্থা। তলিয়ে গেলেন তাঁরা কয়েকজন। প্রপেলারের বিরাট পাখা আঘাত করল আবদুর রকিব মিয়ার শরীরে। নিমিষে খন্ডবিখন্ড হয়ে গেল তাঁর শরীর। এ ঘটনা ১৯৭১ সালের। ২৫ অক্টোবর। অপারেশনে নেতৃত্ব দেন নৌকমান্ডো আবদুর রকিব মিয়া। শেষ পর্যন্ত এই অপারেশন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

আবদুর রকিব মিয়া চাকরি করতেন পাকিস্তান নৌবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে ফ্রান্সে সাবমেরিনার হিসেবে প্রশিক্ষণরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সেখান থেকে পালিয়ে ভারতে এসে যুদ্ধে যোগ দেন। ফুলছড়িঘাট অপারেশনই ছিল তাঁর প্রথম ও শেষ অভিযান। মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য আবদুর রকিব মিয়াকে বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয়। আবদুর রকিব মিয়ার পৈতৃক বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার সখীপুর উপজেলার শোলাপ্রতিমা গ্রামে। তাঁর বাবার নাম হাতেম আলী মুন্সি। মা হালিমা বেগম। সাত ভাইবোনের মধ্যে চতুর্থ। অবিবাহিত ছিলেন। আবদুর রকিব মিয়ার মা-বাবা জানতেন না তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছেন। ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান নৌবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর থেকে মা-বাবার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল না। স্বাধীনতার ৪৪ বছরেও শহীদ আবদুর রকিব মিয়ার পরিবার রাষ্ট্রীয় কোনো সুবিধা পায়নি।

মোহাম্মদ আবদুর রহমান আবিদ বীর বিক্রম

১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের মহান মুক্তিযুদ্ধে নৌ কমান্ডারদের মধ্যে যে কয়েক জন নৌ কমান্ডার সাহসিক ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন মোহাম্মদ আবদুর রহমান আবিদ বীর বিক্রম। তিনি ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ৭ নভেম্বর নাগরপুর উপজেলার সলিমবাদ ইউনিয়নের সলিমবাদ (তে-বাড়িয়া) গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শফিকুর রহমান ওরফে সাহেদ আলী খান।

নৌ বাহিনীতে যোগদানের মাধ্যমে কর্ম জীবনের শুরু। চাকুরিরত অবস্থায় ফ্রান্সের বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের শেষের দিকে তুলোন ও ব্রেস্ট সাব-মেরিন পোর্টে এক বৎসর ছয় মাস প্রশিক্ষণ লাভ করেন। একই বৎসর ২৯ এপ্রিল ভারত চলে আসেন। ভারতে স্বল্প কালিন প্রশিক্ষণ শেষে ভিসা থাকায় জেনেভা হয়ে মাদ্রী গমন করেন। পরবর্তীতে আবার ভারতের সিটিজেন পেয়ে হযরত নিজাম উদ্দিন রোডস্থ একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন এবং কমান্ডার প্রশিক্ষণ লাভ করেন।

১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় নৌ বাহিনীদের সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পাক-বাহিনীকে খতম করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। তাঁরা ভাগীরথী নদী, পলাশীর যুদ্ধের স্থানে সি, ২ পি সাংকেতিক নামে একটি নৌ কমান্ডার ক্যাম্প গড়ে তোলেন এবং এটাই একমাত্র আত্মঘাতি বাহিনী হিসেবে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক স্বীকৃতি লাভ করেন। মোহাম্মদ আবদুর রহমান আবিদ এর স্বাধীনতা যুদ্ধে রয়েছে বিরাট অবদান। এই অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত করেছেন।

শহীদ লেফ্টেন্যান্ট খন্দকার আজিজুল ইসলাম বীর বিক্রম

খন্দকার আজিজুল ইসলাম টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানার বানিয়ারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা কলেজে বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি। খন্দকার আজিজুল ইসলাম দুই নম্বর সেক্টরের সদর দপ্তর মেলাঘরে ১৯৭১ সালের জুন মাসের মাঝামাঝি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসার হিসেবে নির্বাচিত হন। প্রশিক্ষণ শেষে ৯ অক্টোবর তিনি সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশন্ড হন। তাঁর পোস্টিং হয় নবম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট।

সেকেন্ড লে. খন্দকার আজিজুল ইসলাম ২২ নভেম্বর, ১৯৭১ সালে এই চন্দ্রপুর যুদ্ধে সম্মুখ লড়াইয়ে শাহাদাৎবরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর আত্মদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তাঁকে বীর বিক্রম উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

(টাঙ্গাইলের ৯ জন বীরবিক্রম মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে চারজন বীরমুক্তিযোদ্ধা বিভিন্ন সেক্টরে যুদ্ধ করে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে দেশ মাতৃকার জন্য শহীদ হয়েছেন)

বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত ১৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা হলেন-

ফজলুল হক বীর প্রতীক

স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।
ফজলুল হকের জন্ম টাঙ্গাইল জেলা শহরের বেতকা কলেজ পাড়ায়। তাঁর বাবার নাম ওসমান গনি তালুকদার এবং মায়ের নাম লাইলি বেগম। তাঁর স্ত্রীর নাম নাজমা হক। তাঁদের দুই মেয়ে, এক ছেলে।

জাহাজ মারা যুদ্ধে ফজলুল হকের বিশেষ ভুমিকা ছিল। ১৩ আগস্ট পাকিস্তান সেনাবাহিনী জাহাজ মারা যুদ্ধের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য মাটিকাটায় বিমান হামলা চালায়। তখন ফজলুল হক আহত হন।

আবদুল গফুর মিয়া বীর প্রতীক

স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে
আবদুল গফুরের জন্ম টাঙ্গাইল জেলার বাসাইল উপজেলার কাউলজানী গ্রামের চরপাড়ায়। তাঁর বাবার নাম গজনভী মিয়া এবং মায়ের নাম বাছাতন বেগম। তাঁর স্ত্রীর নাম লাইলি বেগম। তাঁদের দুই মেয়ে, চার ছেলে।

আবদুল গফুর চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। ছুটিতে বাড়িতে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। পরে কাদেরিয়া বাহিনী গঠিত হলে এতে যোগ দেন। তাঁকে একটি দলের নেতৃত্ব দেওয়া হয়। ভূঞাপুর, ধলাপাড়া, দেওপাড়া, বল্লাসহ আরও কয়েকটি যুদ্ধে অংশ নেন। আবদুল গফুর স্বাধীনতার পর সেনাবাহিনীর চাকরিতে আর যোগ দেননি।

১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি বা তার কয়েক দিন পর টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার মাকড়াইয়ে সকালবেলায় আবদুল গফুরের অবস্থান। পাকিস্তানি সেনারা এসেছে। আবদুল গফুরের সঙ্গে আছেন ৪০-৪৫ জন সহযোদ্ধা। দলনেতা তিনি নিজেই। তিনি সংকেত দেওয়ার আগে কেউ যেন গুলি না করেন সে ব্যাপারে বলে দিলেন সহযোদ্ধাদের। অল্পক্ষণের মধ্যে শত্রু পাকিস্তানি সেনা আর রাজাকাররা আবদুল গফুরের দলের মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রের আওতায় চলে এল। তিনি সংকেত দেওয়া মাত্র তাঁর সহযোদ্ধারা একযোগে গুলি শুরু করলেন। নিমিষে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার। বাকিরা ছোটাছুটি শুরু করে দিল। রাজাকাররা দিগবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে যে যেদিকে পারে পালিয়ে যায়। পাকিস্তানি সেনারা পজিশন নিয়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। শুরু হয়ে গেল তুমুল যুদ্ধ। ঘটনাচক্রে কাদেরিয়া বাহিনীর সামরিক প্রধান আবদুল কাদের সিদ্দিকীও কয়েকজন সহযোদ্ধাসহ সেদিন মাকড়াইয়ের কাছাকাছি ছিলেন। তিনিও ওই যুদ্ধে অংশ নেন। সেদিন মাকড়াইয়ের যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। কয়েকজন নিহত ও অনেক আহত হয়। প্রায় এক ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলে। এরপর পাকিস্তানি সেনারা নিহত ব্যক্তিদের ফেলে এবং আহতদের নিয়ে পালিয়ে যায়।

ফয়েজুর রহমান ফুল বীর প্রতীক

ফয়েজুর রহমানের ডাক নাম ফুল। টাঙ্গাইল জেলার সদর থানার দিঘুলিয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা মরহুম হাজী মনসুর রহমান। মাতা মরহুমা মাহফুজান নেছা। ৩ এপ্রিল ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। ১১ নং সেক্টরের কাদেরিয়া বাহিনীতে যুদ্ধ করেন। দেশের অভ্যন্তরে অস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ফয়েজুর রহমান কাদেরিয়া বাহিনীতে থেকে বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানী সৈন্যের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে সাহসিকতার পরিচয় দেন। হাবিবুর রহমান তাঁর গ্রুপ কমান্ডার ছিলেন।

৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল থানায় পাকিস্তানী সৈন্যের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে ফয়েজুর রহমান আহত হন। স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহসিকতার জন্য ফয়েজুর রহমান ফুল বীর প্রতীক উপাধিতে ভূষিত হন।

মোঃ খোরশেদ আলম তালুকদার বীর প্রতীক

মোঃ খোরশেদ আলম তালুকদার টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল থানার বীর ঘাটাইল গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতার নাম মরহুম মনির উদ্দিন তালুকদার। মাতা মরহুমা কুলছুম বেগম। ১৯ এপ্রিল ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। ভারতে অস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষ করে ১১ নং সেক্টরে কাদেরিয়া বাহিনীতে যোগ দেন। মোঃ খোরশেদ আলম তালুকদার কাদেরিয়া বাহিনীতে একজন কোম্পানী কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। খোরশেদ আলম তালুকদার ও তাঁর কোম্পানীর অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারা টাঙ্গাইল এলাকার বিভিন্ন যুদ্ধে যুদ্ধ করে সাহসিকতার পরিচয় দেন।
১৪ আগস্ট ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল থানার গর্জনা গ্রামে পাকিস্তানী সৈন্যের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে মোঃ খোরশেদ আলম তালুকদার আহত হন। স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহসিকতার জন্য বীর প্রতীক উপাধিতে ভূষিত হন।

স্বাধীনতা যুদ্ধে মোঃ খোরশেদ আলম তালুকদার বীর প্রতীক এর অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। দেশ স্বাধীনের পর হতে ৪২ কলেজ পাড়া, থানা পাড়া রোড, থানা সদর টাঙ্গাইলে বসবাস করছেন।

মোঃ হাবিবুর রহমান তালুকদার বীর প্রতীক

বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। মো. হাবিবুর রহমান তালুকদারের জন্ম টাঙ্গাইল জেলার বাসাইল উপজেলার হাবলা গ্রামে। তাঁর বাবার নাম মোবারক আলী তালুকদার এবং মায়ের নাম মাহফুজা বেগম। তাঁদের এক মেয়ে।

মো. হাবিবুর রহমান তালুকদার ১৯৭১ সালে টাঙ্গাইলের করটিয়া সা’দত কলেজের এইচএসসির ছাত্র ছিলেন। ছাত্ররাজনীতিও করতেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। টাঙ্গাইলের সশস্ত্র প্রতিরোধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রবল আক্রমণে টাঙ্গাইলে তাঁদের সশস্ত্র প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে। তখন তাঁরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। পরে তিনি কাদেরিয়া বাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের ১৪ জুন টাঙ্গাইল জেলা সদর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে করটিয়া-সখীপুর সড়কে ছিলো বাসাইলের অবস্থান। কাদেরিয়া বাহিনীর ট্রেনিং ক্যাম্পসহ সকল কর্মকান্ডের নিয়ন্ত্রণস্থল ছিল সখীপুর। মে-জুন মাসে যুদ্ধের প্রয়োজনে অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহের জন্য কাদেরিয়া বাহিনী বেশ কয়েকটি থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি আক্রমণ করে। কাদেরিয়া বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে দখল করলেন বাসাইল থানা। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে দখলকৃত থানা পুনরুদ্ধারে যেকোনো সময় আক্রমণ করতে পারে। এ জন্য বাসাইল থানার পাঁচ কিলোমিটার পশ্চিমে টাঙ্গাইল-বাসাইল সড়কের বাথুলী নামক স্থানে অবস্থান নিলেন মো. হাবিবুর রহমান তালুকদারসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা। তারপর কেটে গেল দুই দিন। ১৭ জুন ভোরে বাথুলীতে হাজির হলো এক দল পাকিস্তানি সেনা। তারা আক্রমণ করল মো. হাবিবুর রহমান তালুকদারদের দলের ওপর। মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা আক্রমণ চালালেন। মো. হাবিবুর রহমান ও তাঁর সহযোদ্ধারা সাহসিকতার সঙ্গে পাকিস্তানি আক্রমণ প্রতিহত করতে থাকলেন। যুদ্ধ চলতে থাকল। এর মধ্যে আবদুল কাদের সিদ্দিকীও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দিলেন। তাঁর সঙ্গেও ছিলেন বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। মো. হাবিবুর রহমান ও তাঁর সহযোদ্ধারা এতে দমে গেলেন না। বীরত্বের সঙ্গে পাকিস্তানি আক্রমণ প্রতিহত করলেন। এমন সময় পাকিস্তানিদের ছোড়া শেল এসে পড়ে মো. হাবিবুর রহমান তালুকদারের কাছে। নিমেষে বিস্ফোরিত শেলের টুকরো এসে লাগল তাঁর পায়ে। আহত হয়েও তিনি দমে গেলেন না। অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করতে থাকলেন। কিন্তু বেশিক্ষণ পারলেন না। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে পড়লেন। সহযোদ্ধারা দ্রুত মো. হাবিবুর রহমান তালুকদারকে উদ্ধার করে পাঠালেন চিকিৎসকের কাছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাঁকে পাঠানো হয় হেডকোয়ার্টার চিকিৎসাকেন্দ্রে। বাথুলী যুদ্ধে আহত মো. হাবিবুর রহমান তালুকদার পরে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে আর অংশ নিতে পারেননি। পুরোপুরি সুস্থ হতে তাঁর প্রায় তিন মাস সময় লাগে। এরপর তিনি কাদেরিয়া বাহিনীর বেসামরিক বিভাগে কাজ করেন।

মোঃ সাইদুর রহমান বীর প্রতীক

২৯ মার্চ ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। তখন তার বয়স ১৮ বছর। ১১ নং সেক্টরের অধীন থেকে কাদেরিয়া বাহিনীতে যুদ্ধ করেন। ২৭ নং হিরু কোম্পানীতে ছিলেন। নিজে গ্রুপ কমান্ডার। কাদেরিয়া বাহিনীতে তাঁর অস্ত্র প্রশিক্ষণ হয়। টাঙ্গাইল জেলার চারান, বল্লা, দেও পাড়া, ধলাপাড়া, অর্জুনা, ভূঞাপুর, বাথুলী ঘাটা, করটিয়া, নাইটাপাড়া, মির্জাপুর, গোড়াই, নাগরপুর, এলাসিন ও জামালপুর জেলার বেওলীতে পাকিস্তানী সৈন্যের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে সাহসিকতার পরিচয় দেন। ১২ জুন ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী থানার বল্লা যুদ্ধে সাহসিকতার জন্য প্রশংসা অর্জন করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহসিকতার জন্য মোঃ সাইদুর রহমান বীর প্রতীক উপাধিতে ভূষিত হন। টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী থানার কামার্থী গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা মরহুম সিরাজুল ইসলাম, মাতা- মরহুমা বসিরন নেছা। যুদ্ধের সময়কার স্মরণীয় ঘটনা- টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর থানার এলাসিন যুদ্ধে অনেক পাকিস্তানী সৈন্য নিহত এবং এ যুদ্ধে পাকিস্তানী সৈন্য পিছু হটতে বাধ্য হওয়া। এদিন যুদ্ধে সাইদুর রহমান এর সাথী মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সবুর পাকিস্তানী সৈন্য মনে করে তার উপর অনুমান ১০ গজ দূর থেকে চাইনিজ হালকা মেশিনগানের গুলি বর্ষণ করে। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় একটি গুলিও তার গায়ে লাগেনি। তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে যান।

খসরু মিয়া বীর প্রতীক

খসরু মিয়া টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল এলাকার সাধারণ এক কৃষক পরিবারের সন্তান ছিলেন। ১৯৭১ সালে তাঁর বয়স ছিল ২৫ বছর। সে সময় কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের পর টাঙ্গাইলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে প্রতিরোধে ছাত্র-যুবক-জনতার সমন্বয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে ওঠে। খসরু মিয়াও এই বাহিনীতে যোগ দিয়ে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। পরে কাদেরিয়া বাহিনীতে যোগ দিয়ে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নেন। খসরু মিয়া ৭ আগস্ট টাঙ্গাইলের কালিহাতী থানার (বর্তমানে উপজেলা) শয়া পালিমায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দল ও তাদের সহযোগী রাজাকার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধ করে খ্যাতি অর্জন করেন। এই যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। শয়া পালিমা ছাড়াও টাঙ্গাইলের গোপালপুর, ভূঞাপুর, ধলাপাড়া, বানিয়াপাড়া ও পাবনার নগরবাড়িতে তিনি পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগী রাজাকার বাহিনীর বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। কাদেরিয়া বাহিনীর খোরশেদ আলম তালুকদারের কোম্পানিতে তিনি গ্রুপ কমান্ডার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতার জন্য খসরু মিয়া বীর প্রতীক খেতাব পেয়েছেন। ১৯৮১ সালে তিনি মারা যান। খসরু মিয়া বীর প্রতীকের স্থায়ী ঠিকানা- গ্রামঃ রতনপুর, উপজেলা: ঘাটাইল, জেলা: টাঙ্গাইল। তাঁর বাবার নাম রুকুনুদ্দীন মিয়া, মায়ের নাম খ্যাতিমন। তিনি বিবাহিত ছিলেন। তাঁর স্ত্রীর নাম হালিমা খাতুন। তাঁদের এক ছেলে ও দুই মেয়ে।

হামিদুল হক বীর প্রতীক

স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করেন। হামিদুল হকের জন্ম টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর উপজেলার কচুয়া গ্রামে। তাঁর বাবার নাম হাবিল উদ্দিন এবং মায়ের নাম কছিরন নেসা। তাঁর স্ত্রীর নাম রোমেচা বেগম। তাঁদের চার মেয়ে এক ছেলে। হামিদুল হক ১৯৭১ সালে উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। দেশের অভ্যন্তরে টাঙ্গাইলে গঠিত কাদেরিয়া বাহিনীতে যোগ দিয়ে বল্লাসহ আরও কয়েক স্থানে যুদ্ধ করেন। পাশাপাশি কাদেরিয়া বাহিনীর বেসামরিক বিভাগেরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯০ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়ে তিনি পাঁচ বছর উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সৈয়দ গোলাম মোস্তফা বীর প্রতীক

স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। তার জন্ম টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতি উপজেলার পাইকরা ইউনিয়নের গোলরা গ্রামে। তাঁর বাবার নাম সৈয়দ ইউনুস আলী এবং মায়ের নাম সৈয়দা সেতারা খাতুন। তাঁর স্ত্রীর নাম সুফিয়া খাতুন। তাঁদের চার মেয়ে। তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যোগ দেন যুদ্ধে। টাঙ্গাইলে কাদেরিয়া বাহিনীর অধীনে যুদ্ধ করেন। তিনি একটি দলের দলনেতা ছিলেন। স্বাধীনতার পর জাতীয় রক্ষী বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হন। ডেপুটি লিডার ছিলেন। ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসের পর রক্ষী বাহিনী বিলুপ্ত করে এর সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে। কিন্তু তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেননি। ১৯৭৮ সালের ১ জানুয়ারি কথিত গণবাহিনী (চরমপন্থী) তাঁকে অপহরণ করে। এর পর থেকেই তিনি নিখোঁজ।

১৯৭১ সালের ১৫- ১৬ জুলাই টাঙ্গাইল জেলা সদরের উত্তরে কালিহাতী উপজেলার দক্ষিণ প্রান্তে বল্লায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাদেরিয়া বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবিরাম যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে অংশ নেয় কয়েকটি দল। একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন সৈয়দ গোলাম মোস্তফা। ১৫ জুলাই সকালে মুক্তিযোদ্ধারা বল্লায় পাকিস্তানি সেনাদের তিন দিক থেকে ঘেরাও করেন। তাঁদের সাঁড়াশি আক্রমণে পাকিস্তানি সেনাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এক পর্যায়ে হতোদ্যম পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগীরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন মুক্তিযোদ্ধারা তাদের অবরোধ করেন। গোলাম মোস্তফা ও তাঁর সহযোদ্ধাদের দুর্বিনীত সাহস ও অসীম মনোবলে পাকিস্তানিদের পালিয়ে যাওয়ার সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। সেদিন তাঁর সাহস ও বীরত্বে সাহসিকতায় উজ্জীবিত হন সহযোদ্ধারা। অবরুদ্ধ পাকিস্তানি সেনাদের উদ্ধারে নতুন একদল পাকিস্তানি সেনা বল্লার দিকে অগ্রসর হয়। বিপুল অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তারা নৌকাযোগে বল্লায় আসছিল। তখন তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে এগিয়ে যান পাকিস্তানি সেনাদের আসার পথে। তাঁরা চারান নামক স্থানে নতুন পাকিস্তানি সেনাদের অতর্কিতে আক্রমণ করেন। হতবিহ্বল পাকিস্তানি সেনারা নৌকার মধ্যে ছোটাছুটি শুরু করলে নৌকা ডুবে যায়। এতে সলিলসমাধি হয় কয়েকজন পাকিস্তানি সেনার। বাকি সেনারা তীরে উঠে বল্লার দিকে রওনা হয়। এদিকে বল্লায় অবরুদ্ধ সেনারা নতুন সেনাদের মুক্তিযোদ্ধা মনে করে বৃষ্টির মতো গুলি ও মর্টারের শেলিং শুরু করে। এতে নিজেদের হাতে তারা নিজেরাই হতাহত হয়। সন্ধ্যায় নতুন আরেক দল পাকিস্তানি সেনা বল্লার দিকে অগ্রসর হয়। তখন মুক্তিযোদ্ধাদের অপর দল পাকিস্তানি সেনাদের নতুন দলকে আক্রমণ চালায়। তীব্র যুদ্ধ চলতে থাকে। সন্ধ্যায় আগত পাকিস্তানি সেনাদের দল যথেষ্ট শক্তিশালী ও বেপরোয়া ধরনের ছিল। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক আক্রমণের মধ্যেই অগ্রসর হয়ে অবরুদ্ধ পাকিস্তানি সেনাদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়। তবে এ জন্য তাদের মূল্য দিতে হয় অনেক। মুক্তিযোদ্ধারা পরে গ্রামবাসীর মাধ্যমে জানতে পারেন, দুই দিনের যুদ্ধে অনেক পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়েছে। গ্রামবাসী হতাহত সেনাদের ট্রাকে করে নিয়ে যেতে দেখেছেন।

মোঃ শহীদুল ইসলাম শহীদ (লালু) বীর প্রতীক

বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত সর্বকনিষ্ঠ বীর মুক্তিযোদ্ধা টাঙ্গাইল এর শহীদুল ইসলাম লালু । বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৬৭৬ জন। তার মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ বীর মুক্তিযোদ্ধা হলেন টাঙ্গাইলের গোপালপুর পৌর এলাকার সুতিপলাশ গ্রামের শহীদুল ইসলাম লালু। মাত্র ১৩ বছর বয়েসে স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখে বীরপ্রতীক খেতাব পান তিনি। শহীদুল ইসলামের বাবা মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, মা আমিনা বেগম। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই ছিলেন অত্যন্ত সাহসী ও দুরন্ত। মুক্তিযুদ্ধের সময় গোপালপুরে পাক হানাদার বাহিনী ফায়ারিং শুরু করলে স্থানীয়রা প্রাণভয়ে এলাকা ছাড়া শুরু করেন। কিশোর শহীদুলও স্বজনদের সঙ্গে পালিয়ে বর্তমান ধনবাড়ী উপজেলার কেরামজানীতে আশ্রয় নেন। কেরামজানী বাজার ও স্কুলমাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পরিচয় ঘটে তার। মুক্তিযোদ্ধারা তাকে যুদ্ধে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব দিলে তিনি রাজি হয়ে যান। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাজী হুমায়ুন আশরাফ বাঙ্গাল ও আনোয়ার হোসেন পাহাড়ি কাছে ডেকে নিয়ে ঠিকানা জানতে চান। তারপর থেকেই তিনি মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে কাজে লেগে পড়েন।

মুক্তিযোদ্ধাদের চা-পানি খাওয়ানোর পাশাপাশি মাঝেমধ্যে অস্ত্র পরিষ্কারের কাজও করতেন। এভাবেই অস্ত্র ধরা শেখেন কিশোর শহীদুল। সপ্তাহখানেক পর মুক্তিযোদ্ধা দলের সাথে ট্রেনিং করার জন্য ভারত চলে যান। ভারতে গিয়ে অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে ট্রেনিংয়ে অংশ নিয়ে অস্ত্র হিসেবে স্টেনগান ও গ্রেনেড পান। আর পোশাক হিসেবে হাফপ্যান্ট, গেঞ্জি ও মাথার ক্যাপ। ট্রেনিংয়ের সময় ভারতের তুরা ক্যাম্পে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণকালে ব্রিগেডিয়ার সামসিং শহীদুল ইসলামের নামের সাথে লালু নামটি যুক্ত করে দেন। সেই থেকে শহিদুল ইসলামের নাম হয়ে যায় শহিদুল ইসলাম লালু। যুদ্ধের পর লালু নামেই পরিচিতি লাভ করেন তিনি। তুরা ক্যাম্পে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ চলাকালে প্রতিদিন তিনি সকাল-সন্ধ্যায় হুইসেল বাজিয়ে সব মুক্তিযোদ্ধাদের লাইনে দাঁড় করিয়ে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে পতাকা উঠাতেন ও নামাতেন। এই কাজের সঙ্গে তাকে সহযোগিতা করতেন শ্যামল চন্দ্র দে ওরফে ভুলু। শ্যামল চন্দ্র দে সে সময় ভোলাভালা নাদুস-নুদুস থাকায় তিনিও ব্রিগেডিয়ার সামসিংয়ের কাছ থেকে সে ভুলু নামে অখ্যায়িত হয়েছিলেন।

শামছুল আলম বীর প্রতীক

টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী থানার কালিয়া গ্রামে ১ জানুয়ারি ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা মরহুম আজিজুর রহমান। মাতা রাইমা খাতুন।১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে সেনাবাহিনীতে যোগদানের মাধ্যমে কর্ম জীবনের শুরু। সুদীর্ঘ কাল চাকুরি জীবনে অনেক সাহসি ও গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে নৈপূণ্যতার স্বাক্ষর রাখেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট ছিলেন।

১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তার অবদান অতুলনীয় ও অবিস্মরণীয়। মেজর জিয়াউর রহমানের সাথে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। চট্টগ্রামের কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জনাব শামসুল আলম ও তাঁর অধীনস্থ সৈন্যরা আগরতলা শালদা নদী সেক্টরে চলে যান। সেখানে পাকবাহিনীর সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে পাকবাহিনীকে পরাভূত করে শালদা নদীর স্থান দখল করে নেন। পরে ২নং সেক্টরের অধিনায়ক মেজর খালেদ মোশাররফ তাঁকে আদেশ দেন হিন্দুস্থান সৈন্যদের সাথে ভৈরব ব্রীজ এবং শুভাপুর ব্রীজ ধ্বংস করার জন্য। তিনি ব্রীজদ্বয় ধ্বংসের সময় ইন্ডিয়ান সৈন্যদের নেতৃত্বদেন। সেই সুবাধে তাঁর নেতৃত্বে শুভাপুর এবং ভৈরব ব্রীজের ক্ষতি সাধন হয়। ব্রীজ ধ্বংসের কারণ হলো যাতে করে ট্রেন চলাচল করতে না পারে। এই ব্রীজ ধ্বংসে তিনি সাহসিকতার পরিচয় দেন। শামসুল আলম এর এই সাহসিকতার জন্য বীর প্রতীক উপাধিতে ভূষিত হন।

মনিরুল ইসলাম লেবু বীর প্রতীক

টাঙ্গাইল জেলার বাসাইল থানার কামুটিয়া গ্রামে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা সাহেব আলী, মাতা লাইলি বেগম। ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তানী সেনা বাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে নায়েক পদে উন্নতি হন। মার্চ মাসে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি লাহোর থেকে পালিয়ে খালেদ মোশারফ এর নেতৃতাধীন দুই নম্বর সেক্টরে মুক্তি বাহিনীতে যোগদান করেন। কুমিল্লা অঞ্চলের বিভিন্ন যুদ্ধে তিনি অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেন। তাঁর ঐ সাহসিকতার জন্য স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করেন। তিনি ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে ওয়ারেন্ট অফিসার হিসেবে সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করে।

নায়েক সুবেদার মোঃ নাসির উদ্দিন বীর প্রতীক

স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। তাঁর জন্ম টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার আন্দিবাড়ী গ্রামে। তাঁর বাবার নাম গেদু শেখ এবং মায়ের নাম রূপজান বেগম। তাঁর স্ত্রীর নাম বুলবুলি বেগম। তাঁদের এক ছেলে ও দুই মেয়ে। তিনি চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১ সালে এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসে। মার্চ মাসের শুরুতে এই রেজিমেন্টে বেশির ভাগ সেনাকে সেনানিবাসের বাইরে মোতায়েন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তাঁরা বিদ্রোহ করে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধ যুদ্ধ শেষে তিনি প্রথমে যুদ্ধ করেন ২ নম্বর সেক্টরে। পরে কে ফোর্সের নবম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধীনে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আগস্ট মাসের শেষে নবম ইস্ট বেঙ্গল গঠিত হয়। ১৯৭৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত তিনি ৩৭ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে নায়েব সুবেদার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালের অক্টোবরের শেষের দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার সীমান্ত এলাকায় ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা আবস্থানগুলো ভেঙে পড়তে থাকল। দিশেহারা পাকিস্তানি সেনারা অবস্থান ছেড়ে পেছনে পালিয়ে গেল। তিন ঘণ্টা যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধা দখল করে নেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কসবার প্রতিরক্ষা অবস্থান। সেদিন যুদ্ধে নাসির উদ্দিন যথেষ্ট বীরত্ব ও সাহস প্রদর্শন করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ২৬ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। আহত হয় ১৮ জন। হস্তগত হয় ১১টি এলএমজি, একটি সিগন্যাল পিস্তল, ৪০টি গ্রেনেড (এইচই ৩৬), তিনটি এনারগা গান, ৪৪টি প্লাস্টিক মাইন, একটি ম্যাপ ও দুটি র‌্যাংক ব্যাজ। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে চারজন শহীদ ও ১৫ জন আহত হন।

মোহাম্মদ আবদল্লাহ বীর প্রতীক

আবদুল্লাহর জন্ম ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার তামাট গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আবদুল কাদের মিয়া এবং মায়ের নাম হামিদা বেগম। তাঁর স্ত্রীর নাম লিলি আক্তার। তাদের দুই মেয়ে ও দুই ছেলে। আবদুল্লাহ ১৯৭১ সালে তৎকালীন মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংকের নিরাপত্তা প্রহরী ছিলেন। কর্মরত ছিলেন টাঙ্গাইলের পাঁচআনি বাজার শাখায়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। পরে তিনি কাদেরিয়া বাহিনীতে যোগ দেন। আবদুল কাদের সিদ্দিকীর নিজ দলে ছিলেন তিনি ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২৭ মার্চ তিনি যোগদেন। ১১ নং সেক্টরের অধীনে কাদেরিয়া বাহিনীতে যোগদেন। কাদেরিয়া বাহিনী থেকে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানী সৈন্যদের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে তিনি সাহসিকতার পরিচয় দেন। টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা ব্রীজে পাকিস্তানী সৈন্যদের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধ হয়। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১১ ডিসেম্বর সেই যুদ্ধে মোঃ আবদুল্লাহ আহত হন। স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর সাহসিকতার জন্য তিনি বীর প্রতীক উপাধিতে ভূষিত হন।

আবদুল হাকিম বীর প্রতীক

হাকিম জয়দেবপুর পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে হাবিলদার পদে চাকুরি করতেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৯ মে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। ১১ নং সেক্টরের অধীনে কাদেরিয়া বাহিনীতে যুদ্ধ করেন। আবদুল হাকিম কাদেরিয়া বাহিনীতে কোম্পানী কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। টাঙ্গাইল জেলার দেওপাড়া, ধলাপাড়া, সাগর দীঘি, ইছাপুর, ঘাটাইল, গোপালপুর, ভূঞাপুর, জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী থানার দুলভিটিতে পাকিস্তানী সৈন্যের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে সাহসিকতার পরিচয় দেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী থানার ইছাপুর গোরস্থানে পাকিস্তানী সৈন্যের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে সাহসিকতার পরিচয় দেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে আবদুল হাকিম এর অবদানের জন্য বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত হন। আবদুল হাকিম বীর প্রতীক জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী থানার মেদুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মাছুম আলী। মাতার নাম মরতোজান নেছা।

মোঃ আনিছুল হক আকন্দ বীর প্রতীক

২৯ এপিল ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। তখন তাঁর বয়স ১৬ বছর। ভারতের লোহার বনে অস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। অস্ত্র প্রশিক্ষণ শেষ করে ১১ নং সেক্টরে যোগদান করেন। নিজে কোম্পানী কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সিলেট জেলার সমশের নগর বারমারী ময়মনসিংহ জেলার ধানুয়া কামালপুর বকসীগঞ্জ, জামালপুর, ময়মনসিংহ শহর ও ঢাকা মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানী সৈন্য ও তাদের তাবেদার বাহিনী রাজাকার, আল শামস, আল বদর বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা ও সম্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন এবং সাহসিকতার পরিচয় দেন। ২ নভেম্বর ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ বক্শীগঞ্জ থানার ধানুয়া কামালপুরে পাকিস্তানী সৈন্যের সেলের টুকরায় আহত হন। স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহসিকতার জন্য মোঃ আনিছুল হক আকন্দ বীর প্রতীক উপাধিতে ভূষিত হন। মোঃ আনিছুল হক আকন্দ বীর প্রতীক এর ডাক নাম সঞ্জু। পিতা আবদুল আজিজ আকন্দ। মাতা মোছাঃ নেয়ামতজান। তিনি টাঙ্গাইল জেলা সংলগ্ন নান্দাইল থানার লংপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন।

টাঙ্গাইলের খেতাব প্রাপ্ত বীর প্রতীকদের মধ্যে ১২ জন বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত হয়েছেন কাদের বাহিনীতে যুদ্ধ করে। এই বীর সন্তানেরা হলেন-
(১) ফজলুল হক বীর প্রতীক, (২) আবদুল গফুর মিয়া বীর প্রতীক, (৩) ফয়েজুর রহমান ফুল বীর প্রতীক, (৪) মোঃ খোরশেদ আলম তালুকদার বীর প্রতীক, (৫) হাবিবুর রহমান তালুকদার বীর প্রতীক, (৬) মোঃ সাইদুর রহমান বীর প্রতীক, (৭) খসরু মিয়া বীর প্রতীক, (৮) হামিদুল হক বীর প্রতীক, (৯) সৈয়দ গোলাম মোস্তফা বীর প্রতীক, (১০) মোঃ শহীদুল ইসলাম শহীদ ওরফে লালু বীর প্রতীক, (১১) আরিফ আহমেদ দুলাল বীর প্রতীক, (১২) নবী নেওয়াজ খান বীর প্রতীক।

এছাড়া টাঙ্গাইল জেলার খেতাব প্রাপ্ত বীর প্রতীকদের মধ্যে ৫ জন বীর প্রতীক খেতাবধারী সেনা বাহিনীর সদস্য ছিলেন। তারা বিভিন্ন সেক্টরে যুদ্ধ করে বীর প্রতীক খেতাব প্রাপ্ত হয়েছেন। এরা হলেন-(১) মনিরুল ইসলাম লেবু বীর প্রতীক, (২) শামসুল আলম বীর প্রতীক, (৩) নায়েক সুবেদার মোঃ নাসির উদ্দিন বীর প্রতীক, (৪) নায়েক সিরাজুল ইসলাম বীর প্রতীক, (৫) ল্যান্স নায়েক আবদুর রহমান বীর প্রতীক। তাছাড়া আনিছুল ইসলাম আকন্দ বীর প্রতীক, আবদুল হাকিম বীর প্রতীক, মোঃ আব্দুল্লাহ বীর প্রতীক ও আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী বীর প্রতীকের বাড়ি টাঙ্গাইলে নয়। তারা টাঙ্গাইলে অস্থায়ী ভাবে থেকেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত হয়েছেন। তা ছাড়াও টাঙ্গাইলের আরো অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম খেতাব প্রাপ্তদের তালিকার দৈনিক কাগজ গুলোতে এসেছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের গেজেটিয়ার ভূক্ত হননি। তবু বীর প্রতীক হিসাবে পরিচয় দেন-১। মরহুম আবদুল বাসেত সিদ্দিকী, ২। কাজী আশরাফ হুমায়ুন বাঙ্গাল, ৩। ফেরদৌস আলম রঞ্জু, ৪। ফজলুর রহমান ফজলু, ৫। আলী আহম্মেদ, ৬। শহীদ জাহাঙ্গীর, ৭। আনোয়ার উল আলম শহীদ, ৮। আবদুল মালেক, ৯। আবদুর রাজ্জাক, ১০। মোঃ লুৎফর রহমান, ১১। আমজাদ হোসেন, ১২। মোকাদ্দেস আলী প্রমূখ।

সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস সেক্টর ১০ ও ১১, দৈনিক প্রথম আলো “বীর যোদ্ধার বীরগাথা” ও “তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না”, একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, উইকিপিডিয়া।

সম্পাদনায়- মাহবুব এইচ শাহীন/সম্পাদক ও প্রকাশক/কাগজ২৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!