অচল ইমরুল আর ভুলে যাওয়া অলকে জিতল কুমিল্লা

comilla

অলক কাপালি। মনে পড়ে? বাংলাদেশের ক্রিকেটে প্রায় ভুলে যাওয়া একটি নাম। একটি আক্ষেপ, হাহাকার! ইমরুল কায়েস? ‘ও ওয়ানডেতেই চলে না, আর টি-টোয়েন্টি!’
চার বছর ধরে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলে ব্রাত্য থাকা সেই অচল ইমরুল টানা দুই ম্যাচে খেললেন দুর্দান্ত। গত ম্যাচে ৬৭ করে কুমিল্লাকে ফাইনালে নিজের কাজ শেষ ভাবেননি। আজ আজ ৩৭ বলে ৫৩ করে ভিত্তি গড়ে দিলেন জয়ের। রান তোলার স্নায়ুচাপে একের পর এক উইকেট হারাতে হারাতে সমীকরণ কঠিন করে ফেলা কুমিল্লাকে ২৮ বলে অপরাজিত ৩৯ রানের ইনিংসে জেতালেন সেই ভুলে যাওয়া কাপালি।
শেষ বল পর্যন্ত রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচে বরিশাল বুলসকে ৩ উইকেটে হারিয়ে ভিক্টোরিয়ানস নামটি সার্থক করল কুমিল্লা।
লড়াইটা ছিল দুই ম-এরও। মাশরাফি বনাম মাহমুদউল্লাহ। এবাবের বিপিএলে মাশরাফির অধিনায়কত্ব এত আলোচিত হয়েছে, অনেকটা আড়ালেই পড়ে গেছেন তিনি। অবশ্য মাহমুদউল্লাহ এমনই, আড়ালে থাকতেই তাঁর স্বাচ্ছন্দ্য। নীরবে নিজের কাজটা করে যাওয়াতেই আনন্দ। না হলে কুমিল্লা যতটা চমক উপহার দিয়েছে, বরিশাল বুলসও কোন দিক দিয়ে তার চেয়ে কম! ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্বও দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। আজও নেতৃত্ব দিলেন বরিশালের এই ‘নেতা’। সঙ্গে থাকলেন বরিশালের ঘরের ছেলে শাহরিয়ারের নাফীস (৪৪)। বরিশাল পেয়েছিল ১৫৬ রানের পুঁজি।
কিন্তু তার পরও জয় হলো মাশরাফিরই। কুমিল্লাকে বিপিএলের নতুন চ্যাম্পিয়ন বানালেন এই আশ্চর্য জাদুকর। ব্যক্তিগতভাবে মাশরাফির এটি শিরোপার হ্যাটট্রিক। এর আগে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের অধিনায়কের ভূমিকাতে প্রথম দুই আসরেও ট্রফি উঠেছিল মাশরাফির হাতেই। কিন্তু আজ বাকি সবাইকে ছাপিয়ে আলোর মঞ্চে অলক।
অলকের ইনিংসটা শুরু বল আর রানের সংখ্যায় ব্যাখ্যা করা যাবে না। অলক তখনো রানের খাতা খোলেননি, খানিকক্ষণ আগে উইকেটে এসেছেন। ১১ ওভার শেষে কুমিল্লার স্কোর ২ উইকেটে ৯০। ৫৪ বলে মাত্র ৬৭ রান দরকার, হাতে ৮ উইকেটের রসদ। খোদ অলকই হয়তো ভাবেননি, মঞ্চটা এভাবে তৈরি হয়ে যাবে তাঁর নায়ক হওয়ার!
পরের ওভার থেকেই মঞ্চটা তৈরি হলো। প্রথম ইমরুল বিদায় নিলেন। একে একে ফিরলেন আসহার জাইদি, স্টিভেনস আর মাশরাফিও। একের পর এক উইকেট পড়েছে, রান আর বলের সমীকরণ ততটাই কঠিন হয়েছে। শেষ দুই ওভারে দরকার ২৩। পর পর দুই বলে উইকেট হারানোর সেই ১৯তম ওভার থেকেই আসল জাদু শুরু অলকের। ১২ বলে ২৩—এর সমীকরণটা টানা তিনটি ডট বলে হয়ে গেল ৯ বলে ২৩। কুপারের ওই ওভারের শেষ তিন বলে দশ রান তুলে মুঠো থেকে বেরিয়ে যাওয়া ম্যাচটি আবারও মুঠোয় ফেরালেন অলকই। শেষ দুই বলে দুটো চার ফেরাল আত্মবিশ্বাসও।
৬ বলে দরকার ১৩। মোহাম্মদ সামি প্রথম বলেই ফেরালেন শুভাগত হোমকে। পরের বলে কুলাসেকারা পড়িমরি করে বাই এক রান নিয়ে স্ট্রাইকে ফেরালেন অলককে। আবারও পর পর দুই বলে চার। তৃতীয় বলেও চারটি হলো না কাভারে অবিশ্বাস্যভাবে বাউন্ডারি ঠেকিয়ে। দৌড়েই দুই রান নিলেন অলক। স্কোর হয়ে গেল সমান। শেষ বলে দরকার ১। তবে কি টুর্নামেন্টের প্রথম টাই? প্রথম সুপার ওভার? পায়ের ওপরে পড়া ফুলটসটা ফ্লিক করলেন, সেই অলক, যাঁর কবজির মোচড়ে আশ্চর্য সৌন্দর্য খুঁজে পেয়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট।
অলকই সমাপ্তি টানলেন। কুমিল্লা, টুর্নামেন্টের শুরুতে অনেকের চোখেই বাতিলের খাতায় পড়ে যাওয়া একটা দল। অলক, অনেকের চোখে বাতিলের খাতায় চলে যাওয়া এক খেলোয়াড়। বিপিএলের এবারের আসরের শেষ বলে এর চেয়ে ভালো সমাপ্তি আর কী হতে পারে।

comilla2

সংক্ষিপ্ত স্কোর
বরিশাল বুলস: ২০ ওভারে ১৫৬/৪ (মারুফ ১১, প্রসন্ন ৩৩, সাব্বির ৯, শাহরিয়ার ৪৪*, মাহমুদউল্লাহ ৪৮, কুপার ৭; আসহার ১/২৬, কুলাসেকারা ১/৩৭, আবু হায়দার ০/৩৫, নাইম জুনিয়র ০/৯, স্টিভেন্স ১/১৯, মাশরাফি ১/২৮)
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস: ২০ ওভারে ১৫৭/৭ (ইমরুল ৫৩, লিটন ৩, শেহজাদ ৩০, অলক ৩৯*, আসহার ১৬, স্টিভেন্স ৮, মাশরাফি ০, শুভাগত ১, কুলাসেকারা ০*; সামি ১/২৪, আল আমিন ০/৩০, মাহমুদউল্লাহ ২/২৩, কুপার ২/৩১, এমরিট ০/২২, প্রসন্ন ০/২০)
ফল: কুমিল্লা ৩ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দ্যা ম্যাচ: অলক কাপালি।
ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট: আসহার জাইদি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!