টাঙ্গাইলে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা স্বর্ণপদক প্রদান ও ৩১টি প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

মো. রাশেদ খান মেনন (রাসেল), টাঙ্গাইল, বিশেষ প্রতিনিধি কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে কুমুদিনী কমপ্লেক্সে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা স্বর্ণপদক প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ ১৪ মার্চ বহস্পতিবার বেলা সোয়া ১২টার দিকে চার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে পদক প্রদান করেন তিনি। এর মধ্যে দুই জনকে মরণোত্তর পদক দেওয়া হলো।
এবছর যে চার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা স্বর্ণ পদক দেওয়া হলো তারা হলেন- পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হোসেইন শহীদ সোহরাওয়ার্দী (মরণোত্তর), জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), নজরুল গবেষক প্রফেসর রফিকুল ইসলাম ও বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী শাহবুদ্দীন আহমেদ। সোহরাওয়ার্দীর পক্ষে বঙ্গবন্দু কন্যা শেখ রেহেনা এবং জাতীয় কবির পক্ষে কবির নাতনি খিলখিল কাজী প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে স্বর্ণপদক গ্রহণ করেন।

কুমুদিনী পরিবার ২০১৫ সালে রণদা প্রসাদ স্বর্ণপদক প্রবর্তন করে। প্রসঙ্গত, উপমহাদেশের প্রখ্যাত দানবীর, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, নারী শিক্ষা ও নারী জাগরণের অগ্রপথিক দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা। তার জন্ম টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। আজীবন আর্তমানবতার সেবায় কাজ করেছেন তিনি। টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেছেন একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ দাতব্য চিকিৎসালয়। মহান মুক্তিযুদ্ধেও রয়েছে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদাররা তাকে অপহরণ করে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ গুম করে।

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে কুমুদিনী কমপ্লেক্সে গিয়ে ছোটবেলার স্মৃতিচারণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এখানে একবার এসেছিলাম, সেটা ৫৬ বা ৫৭ সালে। আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মা‘সহ সবাই এসেছিলেন। দীর্ঘ সময় এখানে ছিলেন। এই স্কুলটা, হাসপাতাল সব ঘুরে ঘুরে দেখেছেন তারা। খুব ছায়ার মতো আমার এইটুকু স্মৃতি মনে আছে। তবে মনে আছে এই জায়গা এতো সুন্দর দেখে বাবা বলেছিলেন আমাকে এই কুমুদিনী স্কুলে ভর্তি করে দেবেন। তবে হোস্টেলে রেখে পড়ানো আমার মায়ের খুব একটা মনঃপূত ছিল না। তাছাড়া এরপর ৫৮ সালে মার্শাল ল হয়। আমার বাবাকে জেলে নিয়ে যায়। আমাদের পড়াশোনা এমনিতেই বন্ধ। পরে আর আসা হয়নি। তবে ৮১ সালে দেশে ফেরার পর আমি অনেকবারই এসেছি।’

এসময় কুমুদিনী কল্যান ট্রাষ্টের দুইটি উন্নয়ন প্রকল্প সহ জেলার ৩১টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘এখানে আসতে পেরে আজ সত্যি নিজেকে ধন্য মনে করছি। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে গণহত্যা চালিয়েছিল, মা বোনদের ওপর অত্যাচার চালিয়েছিল, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছিল, সেই একাত্তর সালেই ৭ মে হানাদাররা নারায়ণগঞ্জের কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট থেকে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ও তার একমাত্র পুত্র ভবানী প্রসাদ সাহাকে ধরে নিয়ে হত্যার পর লাশ গুম করে ফেলে। পরিবার আর কখনোই তাদের ফিরে পায়নি। স্বজন হারানোর বেদনা যে কত কঠিন, এই বেদনা যে কত যন্ত্রণাদায়ক, সেটা আমরা বুঝতে পারি।’

দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি এক হাতে অর্থ উপার্জন করেতেন, আরেক হাতে বিলিয়ে দিতেন। মেয়েদের শিক্ষায়, চিকিৎসায় তিনি অর্থদান করেছেন। মানুষকে মানুষের মতো বেঁচে থাকার সুযোগ করে দিয়েছেন। কুমুদিনী ট্রাস্টের মাধ্যমে অনেক কাজ করা হচ্ছে। জনগণের সেবায় সবসময় আমাদের সহযোগিতা থাকবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!