নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন চেয়ে মার্কিন কংগ্রেসে উত্থাপিত বিল পাশ

ইউএস, বিশেষ প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

বাংলাদেশে নিরপেক্ষ, অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার লক্ষ্যে মার্কিন কংগ্রেসের ফ্লোরে উত্থাপিত বিলটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে।

বুধবার ১২ ডিসেম্বর, যুক্তরাষ্ট্র স্থানীয় সময় দুপুর ২:৪৫ মিনিটে বিলটি মার্কিন কংগ্রেসের ফ্লোরে উত্থাপন করেন ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান কংগ্রেস ওয়েম্যান এবং মার্কিন কংগ্রেসের ফরেইন অ্যাফেয়ার্স কমিটির প্রভাবশালী সদস্য এলিয়েনা রস লেথটইনেন।

তিনি বলেন, মার্কিন কংগ্রেসের ফরেইন অ্যাফেয়ার্স কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে বিলটির প্রতি আস্থা পোষণ করেছে। তাই তিনি ফরেইন অ্যাফেয়ার্স কমিটির পক্ষে বিলটি কমিটি থেকে খারিজ করে কংগ্রেসের ফ্লোরে পেশ করার জন্য মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কংগ্রেসের স্পিকার বিলটি গ্রহণ করে ফ্লোরে অন্যান্য সদস্যদের ভোটের জন্য পেশ করলে সর্বসম্মতিক্রমে বিলটি পাশ হয়।

১১৫তম মার্কিন কংগ্রেসের শেষ অধিবেশনে কংগ্রেসম্যান ও ওয়েম্যানরা বাংলাদেশে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন চেয়ে কংগ্রেসের ফ্লোরে সমালোচনার ঝড় তুলেন। এতে যোগ দেন সর্বসাকল্যে বিভিন্ন অঙ্গ রাজ্যের কংগ্রেসম্যানরা।

বিলটিতে ভোটারদের ইচ্ছের প্রতি সম্মান জানাতে এবং সকল বাংলাদেশী যেন মুক্তভাবে আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে ও নির্বাচন যেন নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয় তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বিচারিক কর্তৃপক্ষকে তাড়া দেওয়া হয়েছে।

রেজ্যুলেশনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রাজনৈতিক সহিংসতা এবং বাক ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি চ্যালেঞ্জসহ বহু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে বলে মতামত ব্যক্ত করা হয়।

অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনকে প্রতিটি গণতন্ত্রের ভিত্তি বলে অভিহিত করে কংগ্রেসের রেজ্যলুশনে বলা হয়, মৌলিক স্বাধীনতায় শ্রদ্ধাশীল বৈধ নির্বাচন চিহ্নিত হয় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, নিরাপত্তা ও ভোটারদের জন্য অভিগম্যতা দ্বারা। কিন্তু গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ওপর আঘাত বাংলাদেশী জনগণের ত্যাগ এবং মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতি দেশটির অঙ্গীকারকে খাটো করছে।

বিএনপির ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচন বর্জনের কারণ হিসেবে নির্বাচন প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা নিয়ে তাদের উদ্বেগেকেই দায়ী করেছেন কংগ্রেস সদস্যরা। রেজ্যুলেশনে বাক ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি সম্মান জানাতে এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার অনুরোধে সাড়া দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

তবে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিয়ে রেজ্যুলেশনে নানাবিধ উদ্বেগের কথা বলা হলেও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য এতে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের প্রশংসা করা হয়।

উল্লেখ্য গত শুক্রবার (৭ ডিসেম্বর) বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে উপস্থাপিত এইচ. আরইএস. ১১৬৯ রেজ্যুলেশনটি কংগ্রেসের ছয়জন রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। পরবর্তীতে বিলটির সাথে একত্তা প্রকাশ করে ৭তম কংগ্রেসম্যান হিসাবে বিলটিতে সমর্থন করেন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা এলাকার মার্কিন কংগ্রেসে প্রতিনিধিত্বকারী প্রভাবশালী কংগ্রেসম্যান ড্যারেন সোটো।

ফরেইন অ্যাফেয়ার্স কমিটির এশিয়া অ্যান্ড দ্যা প্যাসিফিকের চেয়ারম্যান কংগ্রেসম্যান টেড ইয়োহো, কংগ্রেসম্যান ইলিয়ট এন্গেল, কংগ্রেসম্যান ব্র্যাড শেরম্যান, কংগ্রেসম্যান স্টীভ শ্যাবট, কংগ্রেসম্যান জেরি কনলি, কংগ্রেসম্যান ড্যারেন সোটো ও নিজের পক্ষে বিলটি উপস্থাপন করেন কংগ্রেসম্যান বিল কিটিং এবং আজ মার্কিন কংগ্রেসে বিলটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হওয়ার পূর্বে কংগ্রেসের ফ্লোরে বিলটি পেশ করেন কংগ্রেস ওয়েম্যান এলিয়েনা রস লেথটইনেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বিদ্যমান পরিবেশ ও পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে গত মঙ্গলবার ১১ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের আর্মড সার্ভিস কমিটির চেয়ারম্যান ও হাউজ অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য জু উইলসন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর কাছে এ চিঠি পাঠায় কংগ্রেসম্যান জু এর দফতর।

জু উইলসন উল্লেখ করেন, সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রকাশিত মানবাধিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কার্যকরভাবে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলের কার্যকর অংশগ্রহণের যেকোনো উদ্যোগকে সরকারি দল ব্যাহত করতে পারে এমন উদ্বেগ থাকার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

তিনি আরো উল্লেখ করেন, গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে বাংলাদেশে অবশ্যই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বা বিরোধীদলের অস্তিত্ব বজায় রাখার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

উল্লেখ্য, কংগ্রেসম্যানের প্রত্যেকেই মার্কিন কংগ্রেসের ফরেইন অ্যাফেয়ার্স কমিটির প্রভাবশালী সদস্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!