নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের

অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। শনিবার (১০ নভেম্বর) রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একইসঙ্গে ঐক্যফ্রন্ট ঘোষিত সাত দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলেও জানানো হয়েছে।

ফ্রন্টের একাধিক নেতা জানান, রবিবার (১১ নভেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হবে। এতে ফ্রন্টের অবস্থান তুলে ধরবেন ড. কামাল হোসেন। বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসে ফ্রন্টের ‍মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও এ তথ্য জানান।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়- নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দল ও প্রার্থীদের জন্য লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। আগামী ১২ নভেম্বর স্মারকলিপি ইসিতে পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান ফ্রন্টের দায়িত্বশীল একজন নেতা।

সূত্রের ভাষ্য, স্মারকলিপিতে ১২ নভেম্বর ইসিতে তফসিল পেছানো, সমান সুযোগ সৃষ্টি, রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার, গ্রেফতার-হয়রানি বন্ধ করতে ইসিকে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হবে।

ফ্রন্টের একজন নেতা বলেন, ‘স্মারকলিপি দেওয়ার আগে ইসির সঙ্গে যোগাযোগ করে সুবিধামতো সময় বের করা হবে। ১২ তারিখ না হলে দুই-একদিন হেরফের হতে পারে।’

বৈঠক সূত্র জানায়, সভার শুরুতে ফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে শরিক দলগুলোর নেতাদের কাছে অভিমত চান। এরপর গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য ও কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের প্রতিনিধিরা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে মত দেন।

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু প্রথম নির্বাচনের পক্ষে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেন। এরপর একে-একে প্রত্যেকেই কথা বলেন, তুলে ধরেন নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তার কথা। বৈঠকে কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী দীর্ঘ সময় কথা বলেন।

রাত পৌনে নয়টা থেকে রাত পৌনে এগারোটা পর্যন্ত স্থায়ী এ বৈঠক শেষে বেরিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা জানান, বৈঠকে প্রায় প্রত্যেকের কণ্ঠেই ছিলো নির্বাচনের অংশগ্রহণের যৌক্তিকতা সম্পর্কিত বিবরণ। তারা মনে করেন, গণতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোলনের অংশ হিসেবেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনে অংশ নেওয়া জরুরি। যদিও শনিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে ২০ দলীয় জোটের তিনটি শরিক দল নির্বাচনের বিরুদ্ধে মতামত দেয়।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার ভাষ্য, ‘ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সরকারের আসল আচরণ প্রকাশ হবে। আর একইসঙ্গে নির্বাচন মোকাবিলার নানা কৌশল বের করার চেষ্টা চলবে।’

এক্ষেত্রে ফ্রন্টের নেতার ‍যুক্তি, ‘চাইলেই তিনশ’ আসনে ক্ষমতাসীনরা নিজেদের মতো ভোটের প্রভাব ফেলতে পারবে না।’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচনের বিষয়ে আমরা সবসময়ই ইতিবাচক। বৈঠকে অনেক কিছু নিয়েই আলোচনা হয়েছে। রবিবারের সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যফ্রন্টের অবস্থান আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।’

ফ্রন্টের শরিক গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘সিদ্ধান্ত কী হয়েছে, কাল জানানো হবে।’

জোটের অন্যতম নেতা আবদুল মালেক রতন বলেন, ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলন করাই হয় নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য। আমরা নির্বাচনে বিশ্বাসী। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যে আলোচনা করেছে, তা রবিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হবে।’

ঐক্যফ্রন্ট সূত্র জানায়, সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করা হবে। এই বক্তব্য তৈরির জন্য কয়েকজনকে দায়িত্ব দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সংবাদ সম্মেলনে ফ্রন্টের অন্যতম প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন মূল বক্তব্য তুলে ধরবেন।

বৈঠকসূত্র জানায়, নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা হলেও ফ্রন্টের নির্বাচনি কমিটি গঠন, আসন বণ্টন প্রক্রিয়া, চূড়ান্তকরণ ইত্যাদি বিষয়ে শনিবারের বৈঠকে আলোচনা হয়নি। বৈঠকে বিএনপিকে বলা হয়েছে জোটগতভাবে নির্বাচন করার বিষয়ে ইসিকে চিঠি দেওয়ার জন্য। একইসঙ্গে ফ্রন্টের নিবন্ধিত দল জেএসডি, গণফোরাম ও কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের পক্ষ থেকেও চিঠি দেওয়া হবে। বৈঠকে সব দলই বিএনপিকে সম্মতি জানিয়েছে, ইসিকে দেওয়া চিঠিতে জানাতে যে, এই দলগুলো জোটগতভাবে নির্বাচন করবে। তবে প্রত্যেক দলই জোটগত ও দলীয় প্রতীকের নির্বাচন করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে ইসিকে রবিবারের মধ্যে জানিয়ে দেবে।

ফ্রন্টের একমাত্র অনিবন্ধিত দল নাগরিক ঐক্য বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে বলে জানা গেছে। সূত্র-বাংলা ট্রিবিউন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!