পঞ্চগড়ে ধানের দাম কেড়ে নিয়েছে কৃষকের মুখের হাসি

নাজমুস সাকিব মুন, পঞ্চগড় প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

পঞ্চগড়ে চলতি বোরো মৌসুমে ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রোগবালাই কম হওয়ায় ধানের উৎপাদন হয়েছে বাম্পার। কিন্তু ধানের এই বাড়তি উৎপাদন কৃষকের মুখে হাসি ফুটাতে পারছে না। উৎপাদন ব্যয় বেশি ও বিক্রয়মূল্য কম হওয়ায় চলতি বোরো মৌসুমে তাই কৃষকের মাথায় হাত।

গত কয়েক বছর ধরে ধানের দাম কম হওয়ায় কৃষকরা ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে। তাই যাদের ধান চাষের জমি বেশি আছে তারা জমি বর্গা দিচ্ছে ক্ষুদ্র কৃষকদের। সীমিত সঞ্চয় থাকায় ধান চাষে তাই ক্ষুদ্র কৃষকদের অন্যতম ভরসা বিভিন্ন এনজিওর ঋণ ও গ্রাম্য মহাজনের নিকট থেকে দাদন।

ধানের দাম কম হওয়ায় এবং উৎপাদিত ধানের নির্দিষ্ট অংশ জমির মূল মালিককে দেয়ার পর জমি বর্গা নেয়া কৃষক তাই উৎপাদন ব্যয় ঠিক ভাবে উঠাতে না পেরে দীর্ঘ মেয়াদী ঋণের কবলে পড়ছে।

ধানের উৎপাদন ব্যয়ের সাথে সঙ্গতি রেখে সরকার প্রতি মণ ধানের দাম ১ হাজার ৪০ টাকা নির্ধারণ করলেও সরকারি ভাবে এখনো পঞ্চগড়ে ধান সংগ্রহ শুরু হয় নি। পরিবারিক ও উৎপাদন ব্যয় মিটাতে এবং ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য তাই বাধ্য হয়ে কৃষকেরা অল্প দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। আর যারা বেশি দামের আশায় ধান মজুত করছেন তারাও রয়েছেন শঙ্কায়। কারণ শেষ পর্যন্ত দাম নাও বাড়তে পারে।

পঞ্চগড়ের আবহাওয়া ও মাটি ধান চাষের অনুকূল হওয়ায় তাই পুরো জেলা জুড়ে ধান চাষ হয় ব্যাপকহারে। কিন্তু প্রতি বছর ধানের দাম নিম্নমুখী হওয়ায় কৃষকরা বর্তমানে ধান বাদে ভুট্টা, গম, মরিচ, সবজিসহ অন্যন্য রবি শস্য চাষে ঝুঁকে পড়ছে। এমনি ভাবে চলতে থাকলে জেলায় আশঙ্কাজনক ভাবে ধানের উৎপাদন কমে যাবে।

সরেজমিনে জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার ভাজনী, সোনাহার, ভাউলাগঞ্জ, খুটামারা, লক্ষ্ণীর হাট এলাকায় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক বছরের মতো এবারও ধান উৎপাদনে বীজ, সার, কীটনাশক, জ্বালানি, কৃষি শ্রমিকের মুজুরিসহ আনুসাঙ্গিক খরচ মিলিয়ে যা ব্যয় হয়েছে তা বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী অনেক বেশি। আর সরকারি ভাবে ধান সংগ্রহ শুরু না হওয়ায় তাই হাঁড় ভাঙ্গা পরিশ্রমের পরও ধান গোলায় তুলে কৃষকের মুখে নেই হাসি।

জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায় প্রতি মণ ধান মাত্র ৪৫০-৫০০ টাকায় বেচা কেনা হচ্ছে। যা উৎপাদন ব্যয়ের তুলনায় অনেক কম। কৃষকদের দাবি মণ প্রতি ৮০০-৯০০ টাকা দামে বিক্রি করতে পারলেও তারা খুশি।

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ- পরিচালক মোঃ আবু হানিফ জানান, এবার জেলার ৫ উপজেলায় ধান চাাষাবাদ হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!