বাজারের প্যাকেটজাত ৯৬টি তরল দুধের ৯৩টিতেই সীসা

অনলাইন ডেক্স । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

বাজারে প্যাকেটজাত ৯৬টি তরল দুধের নমুনা পরীক্ষা করে ৯৩টিতেই সীসাসহ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান পেয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।আজ বুধবার, হাইকোর্টে দাখিলকৃত রিপোর্টে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর সীসা ও বিষাক্ত উপাদান পাওয়ার কথা জানায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।

রিপোর্টে বলা হয়, বাজারজাত করা প্যাকেট দুধে সীসা এবং বিষাক্ত পদার্থ মেশানো হয়, হাইকোর্টের দেয়া এমন রুলের জবাবে বিএসটিআই ১৬ সদস্যের কমিটি গঠন করে। দুধে বিষাক্ত উপাদান মেশানোর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

তবে, কোন কোন কোম্পানির দুধে এসব ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে তা সুনির্দিষ্ট না করায় ওইসব কোম্পানির নাম আদালতে উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে।

একই সঙ্গে, দুধ ও দইয়ে ক্ষতিকারক ও রাসায়নিক উপাদান মেশানোর সঙ্গে কারা কারা জড়িত তাদের নাম-ঠিকানা দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামী ১৫ই মে’র মধ্যে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে এই তালিকা দাখিল করতে বলা হয়েছে।

আজ, বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনের বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক জানান, বাজার থেকে সংগৃহীত কাঁচা তরল দুধের ৯৬টি নমুনার মধ্যে ৯৩টিতেই সীসা, অ্যান্টিবায়েটিক অনুজীব পাওয়া গেছে। প্যাকেটজাত দুধের ৩১টি নমুনার মধ্যে ১৮টিতেই ভেজাল পাওয়া গেছে। এছাড়া দুধে ও দইয়ে উচ্চমাত্রার বিভিন্ন রাসায়নিক পাওয়া গেছে। কোন কোন কোম্পানি দুধে এই ভেজাল বা রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর সাথে জড়িত প্রতিবেদনে তাদের নাম-ঠিকানা না দেওয়ায় আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এর আগে গত ১১ই ফেব্রুয়ারি ঢাকাসহ সারাদেশে গরুর দুধ, দুই এবং গো-খাদ্যে কী পরিমান ব্যাক্টেরিয়া, কীটনাশক, সীসা রয়েছে তা নিরূপনের জন্য একটি জরিপ পরিচালনার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ১৫ দিনের মধ্যে খাদ্য সচিব, মৎস্য ও প্রাণী সচিব, কৃষি সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, নিরাপত্তার খাদ্য কর্তৃপক্ষ চেয়ারম্যানসহ সকল সদস্য, কেন্দ্রীয় নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটি এবং বিএসটিআই চেয়ারম্যানকে জরিপের প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আজ মামলাটি শুনানির জন্য আসে। এরপর এই আদেশ দেন আদালত।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গাভির খোলা দুধের ৯৬টি নমুনা পরীক্ষায় ৯৬ শতাংশ দুধেই রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর অণুজীব। ১৫ শতাংশ দুধে মিলেছে মানুষের জন্য গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি সীসা। ১৩ শতাংশে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি টেট্রাসাইক্লিন, ৯ শতাংশে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি কীটনাশক ও ৩ শতাংশে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি আফলাটক্সিনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বাজারে থাকা প্যাকেটজাত দুধের ৩১টি নমুনার ৬৬-৮০ শতাংশে বিভিন্ন অণুজীব, ৩০ শতাংশে একইভাবে মানুষের শরীরের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রার টেট্রাসাইক্লিন, একটিতে বেশি মাত্রার সীসা, কয়েকটিতে সিপ্রোফ্লোক্সাসিন ও এনরোফ্লোক্সাসিন পাওয়া গেছে।

এর আগে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে খবর প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনের আলোকে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে ওই দিন আদেশ দেন।

পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে পুষ্টির অন্যতম প্রধান জোগান হিসেবে বিবেচিত গরুর দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্যে এবার মিলেছে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নানা উপাদান। গরুর খোলা দুধে অণুজীবের সহনীয় মাত্রা সর্বোচ্চ ৪ থাকার কথা থাকলেও পাওয়া গেছে ৭.৬৬ পর্যন্ত। আফলাটক্সিনের সহনীয় মাত্রা ০.৫ হলেও পাওয়া গেছে ০.৯৯৬ পর্যন্ত। টেট্রাসাইক্লিনের মাত্রা ১০০ পর্যন্ত সহনীয় হলেও পাওয়া গেছে ৬৭১.১৩ পর্যন্ত, সিপ্রোফ্লোক্সাসিনের মাত্রা ১০০ পর্যন্ত সহনীয় হলেও পাওয়া গেছে ১৪৮.৩৬ পর্যন্ত। কীটনাশকের মাত্রা ৫ সহনীয় হলেও পাওয়া গেছে ৯.৫০-১৬.২০ পর্যন্ত। প্যাকেটজাত দুধের ক্ষেত্রে টেট্রাসাইক্লিনের সহনীয় মাত্রা ১০০ হলেও দেশীয় প্যাকেটজাত দুধে পাওয়া গেছে ১৮৭.৫৮ পর্যন্ত। আমদানিকৃত প্যাকেটজাত দুধের ক্ষেত্রে এই উপাদানের মাত্রা ৭১৭.৮২ পর্যন্ত পাওয়া গেছে। আর আফলাটক্সিনের সহনীয় মাত্রা ০.৫ হলেও পাওয়া গেছে ১.৯৩ পর্যন্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!