প্রথম পছন্দ তাবিথ আছে বিকল্পও

 

অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উপনির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি। নির্বাচন নিয়ে নানামুখী সংশয়ের মধ্যেও ভোটযুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। বিগত নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল এবারও মেয়র পদে মনোনয়নের প্রথম দাবিদার। দলীয় অবস্থান থেকেও প্রার্থী হিসেবে তার নাম  রয়েছে সবার উপরে। কিন্তু সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বিকল্প প্রার্থী রাখার কথাও ভাবছে বিএনপি। অবশ্য ডিএনসিসি নির্বাচন নিয়ে সংশয় রয়েছে বিএনপির। দলের একাধিক সিনিয়র নেতা ও সংশ্লিষ্ট সূত্র এমন তথ্য জানিয়েছেন। দলটির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানান, আইন অনুযায়ী, মেয়র পদ শূন্য ঘোষণার ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। তবে এই করপোরেশনে ১৮টি নতুন ওয়ার্ড যুক্ত হওয়ায় নির্বাচন নিয়ে কিছু আইনগত জটিলতা তৈরি হয়েছে। ফলে ইসি ডিএনসিসি নির্বাচন করতে পারবে কিনা বা শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হবে কিনা সে সংশয় উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। এদিকে দলের বিকল্প প্রার্থীর চিন্তার পরিপ্রেক্ষিতে ডিএনসিসি উপনির্বাচনে বিএনপি থেকে বেশ কয়েকজন নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন- দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম, ক্রীড়া সম্পাদক ফুটবলার আমিনুল হক ও সহ-প্রচার সম্পাদক ব্যবসায়ী শাকিল ওয়াহেদ সুমন। সম্ভাব্য সব প্রার্থীই নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার লক্ষ্যে নিজ নিজ বলয় থেকে তৎপরতা চালাচ্ছেন। তবে নির্বাচনী মাঠের জরিপ, নেতাকর্মীদের প্রাথমিক মতামত ও রাজধানীর ভোটারদের মনোভাব বিবেচনায় বিকল্প প্রার্থীদের মধ্যে সবার চেয়ে এগিয়ে আছেন এমবিএ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব শাকিল ওয়াহেদ সুমন। বিগত নির্বাচনের প্রার্থী তাবিথ আউয়াল নিজে বা তার পক্ষে এখন পর্যন্ত শুরু হয়নি দৃশ্যমান প্রচারণা। অন্য প্রার্থীরাও এখন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রয়েছেন আলোচনায়। বিএনপির সম্ভাব্য বিকল্প প্রার্থীদের মধ্যে দৃশ্যমান প্রচারণার মাঠে নেমেছেন শাকিল ওয়াহেদ সুমন। ‘আসুন গড়ি বিশ্বমানের নগর’ স্লোগানকে সামনে রেখে তার ছবিযুক্ত পোস্টারিং হয়েছে রাজধানীজুড়ে। কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানান, ডিএনসিসি উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাই নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। ফলে সরকারসমর্থিত প্রার্থী প্রধানমন্ত্রীর সবুজ সংকেত পেয়ে গণসংযোগ শুরু করলেও বিএনপি এখন পর্যন্ত প্রার্থীই চূড়ান্ত করতে পারেনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বৈঠকের একটি অন্যতম এজেন্ডা ডিএনসিসি উপনির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী মনোনয়ন। তবে এখনই প্রার্থীর নাম প্রকাশ করতে চায় না বিএনপি। প্রস্তুতি নিয়ে রাখলেও নির্বাচনের তফসিল এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণার পর নিজেদের প্রার্থীর নাম প্রকাশ করতে চায় দলটি। তবে এখন পর্যন্ত কাউকেই চূড়ান্তভাবে সবুজ সংকেত দেয়া হয়নি। সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনের ব্যাপারে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছে হাই কমান্ড। উপনির্বাচনের তফসিল ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নাম ঘোষণার পরই সবকিছু খোলাসা হবে।
ডিএনসিসির প্রথম নির্বাচনে বিএনপির মূল প্রার্থী ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। কিন্তু মনোনয়নপত্রে ভুল সংক্রান্ত কারণে নির্বাচনে লড়তে পারেননি তিনি। বিকল্প হিসেবে মনোনয়ন জমা দেয়া তার ছেলে তাবিথ আউয়ালকেই সমর্থন দেয় বিএনপি। পরে ষষ্ঠ কাউন্সিলে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য পদ পান তাবিথ আউয়াল। তিন বছরের মাথায় ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হকের আকস্মিক মৃত্যুতে উপনির্বাচনের বিষয়টি সামনে আসে। কিন্তু উপনির্বাচনে আবদুল আউয়াল মিন্টু না তার ছেলে তাবিথ আউয়াল- কে হচ্ছেন বিএনপির প্রার্থী এ নিয়ে খোদ বিএনপিতেই শুরু হয় গুঞ্জন। তবে মিন্টু পরিবারের একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, অবিভক্ত ডিএনসিসির মেয়র পদে নির্বাচনের আগ্রহ ছিল আবদুল আউয়াল মিন্টুর। ডিসিসিকে দুইভাবে বিভক্ত করার পর তিনি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। তবে ছেলের মনোনয়ন নিশ্চিত করতেই তিনি ডিএনসিসি নির্বাচনে দলের মনোনয়ন নিয়েছিলেন। সূত্র জানায়, এবার হাইকমান্ড থেকেও মিন্টুর কাছে উপনির্বাচনে আগ্রহী কিনা তেমন প্রশ্ন করা হয়েছিল। জবাবে তাবিথ আউয়ালের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি দলের হাইকমান্ডকে জানান, গত নির্বাচনে দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল, তার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়নি। বিগত নির্বাচনে যাকে দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল, তাকে বদল করার কোনো কারণ ঘটেনি। এদিকে বিরোধী জোটের সমর্থনের প্রথম দাবিদার তাবিথ আউয়াল। কিন্তু উপনির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করলেও আশ্চর্যজনকভাবে নীরব তিনি। গণমাধ্যমে তার সম্ভাব্য প্রার্থিতা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলেও দৃশ্যত তার পক্ষে কোনো নির্বাচনী কর্মকাণ্ড শুরু হয়নি। তিনিও অবস্থান করছিলেন বিদেশে। তার এমন নীরবতার ব্যাপারে মিন্টু পরিবার ঘনিষ্ঠরা বলছেন, দলীয় সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। দলের হাইকমান্ডের তরফে সবুজ সংকেত পাওয়ার পর দেশে ফিরেছেন তাবিথ আউয়াল। দলীয় নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন। তার ব্যবসায়িক কার্যালয়েও জমে উঠছে নেতাকর্মীদের ভিড়। সহসাই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তিনি। তার পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবেন তাবিথ আউয়াল। দলীয় সবুজ সংকেত ছাড়া আগাম প্রচারে নামতে চান না তিনি। তার নির্বাচনী অঙ্গীকার নিয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিগত নির্বাচনে ১২ দফার ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন তাবিথ আউয়াল। তিনি বলেছিলেন, মেয়র নির্বাচিত হলে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে গিয়ে সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবেন। ঢাকা উত্তরের নাগরিক সমাজকে বিচ্ছিন্ন নয় বরং উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত এবং অতি দরিদ্ররাও যাতে বসবাসের সমান সুযোগ-সুবিধা পান সে ব্যবস্থা করবেন। তিনি স্বপ্ন দেখেন একটি স্বচ্ছ জবাবদিহিমূলক এবং সকল প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে একটি সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন নগরীর।
এদিকে বিএনপির সহ-প্রকাশনা সম্পাদক শাকিল ওয়াহেদ সুমন বলেন, আমি বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় এবং দলের সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য। ডিএনসিসি উপনির্বাচনের প্রসঙ্গটি আসার পর আমি প্রথমে আমার রাজনৈতিক বন্ধু-বান্ধব ও সহকর্মীদের সঙ্গে আগ্রহের কথা প্রকাশ করেছি। তারপর দলের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর নেতা এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা আমাকে নিশ্চিত করেছে, দল মনোনীত করলে নির্বাচনে সর্বাত্মকভাবে আমার পাশে থাকবেন। পাশাপাশি সুধী সমাজের সঙ্গেও আলোচনা করেছি। সবদিক থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার পর আমি প্রচারণার মাঠে নেমেছি। শাকিল বলেন, তিন দশক ধরে আমি ঢাকাবাসী। রাজধানীতে আমার একটি সামাজিক অবস্থান আছে। সমাজের সকল ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আমার শিক্ষা ও কর্মজীবনের বন্ধু-বান্ধব এবং শুভাকাঙ্ক্ষী আছে। এমবিএ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হিসেবে কর্পোরেট সেক্টর, ব্যবসায়ী মহল, সুধী সমাজের কাছেও ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।সূত্র-মানবজমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!