হাজীগঞ্জে ৭ মাসে শতাধিক নারী প্রেম-পরকীয়ার টানে ঘর ছাড়ার অভিযোগ

অনলাইন ডেস্ক  কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে গত ৭ মাসে প্রেম-পরকীয়ার টানে প্রেমিকের হাত ধরে প্রায় শতাধিক নারী ঘর ছেড়েছে। এর মধ্যে হাজীগঞ্জ থানায় ৭০ নারী ঘর ছাড়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। এর বেশী ভাগই দেখা যায় প্রবাসীর স্ত্রী ও অবাধ্য পরিবারের মেয়েরা। এসব নারীরা দিন দিন স্বাধীন ভাবে জীবন যাপনের জন্য যৌথ পরিবার ছেড়ে গ্রাম থেকে ছুটে এসে শহর কেন্দ্রীক হচ্ছে। আর এতে করে বাড়ছে পরিবারে অশান্তি ও দূর্ভোগের কালো ছায়া যা কোন ভাবে যেন এদেরকে রোখানো সম্ভব হয়ে উঠছে না। যে কারনে অনেক প্রবাসী বউ মেয়ের টানে প্রবাস জীবনে ইচ্ছে করেও বেশী দিন থাকতে পারছে না।
হাজীগঞ্জ থানা সৃত্রে জানাযায়, ২০১৭ সালের ৩ জানুয়ারি চাঁদপুর সদর ইউনিয়নের কল্যানদী এলাকার রবিউল আলমের স্ত্রী জান্নাত আক্তার (২০) পরকিয়ায় পড়ে প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে যায়। সে হাজীগঞ্জে বাসা ভাড়া করে থাকা অবস্থায় জনৈক ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক করে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ। যার মামলা নং ১২৭। ০৮ জানুয়ারি উপজেলার পৌর এলাকার বলাখাল দাই বাড়ীর শাহীন আক্তার (২১) একই ভাবে পালিয়ে যায়, যার মামলা নং ৩৯৭। ১৩ জানুয়ারি এক সন্তানের জননী উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিন ইউনিয়ন দেশগাঁও গ্রামের খাদিজা বেগম (২৭) নিখোজ হয়,যার মামলা নং ০৮। ১৯ জানুয়ারি সদর ইউনিয়নের দোয়ালিয়া গ্রামের তাহমিনা বেগম (৩২) সন্তানসহ পালিয়ে যায়, যার মামলা নং ১০৮। ২৪ জানুয়ারি বড়কূল পশ্চিম ইউনিয়নের নাটেহারা গ্রামের সখিনা আক্তার (২০) হারিয়ে যায়,যার জিডি নং-১১৩৯। ২৯ জানুয়ারি এক তরুনী প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে যাওয়া পরিবারের পক্ষ থেকে অপহরন মামলা দায়েরের পর অবশেষে পুলিশ উদ্ধার করে পরিবারের হাতে তুলে দেন।
ফেব্রয়ারি মাসের ২ তারিখে পৌর এলাকার মকিমাবাদ থেকে মর্জিনা আক্তার পালিয়ে যায়, যার জিডি নং- ৭৫। উপজেলার বড়কূল পূর্ব ইউনিয়নের দিগছাইল গ্রামের শাহানাজ আক্তার (১৯) যার মামলা নং ২৬৩। ৭ ফেব্রয়ারি এমন আরেকটি হারানো মামলা হয় যা পরে ঐ তরনীকে উদ্ধার করে পরিবারের হাতে তুলে দেয় পুলিশ। ১১ ফেব্রয়ারি উপজেলার কালচোঁ উত্তর ইউনিয়নের পিরোজপুর গ্রামের সন্তারের জননী শিরিনা বেগম (৩০) পালিয়ে যায়,যার মামলা নং ৫৭২। একই তারিখে ফরিদগঞ্জ উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের বাসিন্ধা পৌর এলাকার টোরাগড় গ্রামে ছোট সন্তান নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকত। সেও পরকিয়া প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে যায় বলে পরিবারের পক্ষ হারানো ডায়েরি হয়, যার জিডি নং ৫৭৭। উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিন ইউনিয়নের হোটনী গ্রামের সন্তানের জননী খোদেজা বেগম (৩০) হারিয়ে যায়, যার মামলা নং ১৩৩০। ১৮ ফেব্রয়ারি এমন অভিযোগে আরেকটি নারীর জিডি করা হয় পরে পুলিশ উদ্ধার করে পরিবারের হাতে তুলে দেয়।
৪ মার্চ শাহারাস্তি উপজেলার ধোপল্লা গ্রামের ফাতেমা আক্তার (১৫) হারিয়ে যায়, যার মামলা নং ১৬১। ৭ মার্চ উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের মরিউম বেগম (২৫) হারিয়ে যায়, যার মামলা নং ৩১৫। একই তারিখে পৌর এলাকার রান্ধনীমুড়া গ্রামের ঝরনা আক্তার (১৭) ও আফছানা আক্তার (১৫) হারিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। যার মামলা নং ৩০৫ ও ৬। একই তারিখে আরেকটি হচ্ছে পৌর এলাকার ধেররা গ্রামের দিলরুবা আক্তার (২৯) যার মামলা নংয় ৩১৯। ৮ মার্চ উপজেলার কালচোঁ গ্রামের নাছিমা বেগম (২৮) হারিয়ে যায়, যার মামলা নং ৩৫১। ৯ মার্চ এমন অভিযোগ পড়লে সেই নারীকে উদ্ধার করে পুলিশ। ১১ মার্চ উপজেলার দেশগাঁও গ্রামের রোকসানা আক্তার (২২) হারিয়ে যায়, যার মামলা নং ৫১৬। একই তারিখে আরো একজন হারিয়ে যায় যার মামলা নং ৫১৫। ১২ মার্চ উপজেলার বেলঘর এলাকার ইসরাত জাহান (১৭) হারিয়ে যায়, যার মামলা নং ৫২০। ১৪ মার্চ উপজেলার মাড়ামুড়া গ্রামের শিল্পী বেগম (২৮) হারিয়ে যায়, যার মামলা নং ৬৮৩। ২৯ মার্চ বড়কূল পশ্চিম ইউনিয়নের নাটেহারা গ্রামের সুমি বেগম (২৫) হারিয়ে যায়, যার মামলা নং ১৪২১।
গত ১১ এপ্রিল উপজেলার বড়কূল পশ্চিম ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের আয়েশা বেগম (২২) হারিয়ে যায়, যার মামলা নং ৫২৯। ২৩ এপ্রিল মতলব দক্ষিন উপজেলার শিল্পী রানী (২৭) হাজীগঞ্জ থেকে হারিয়ে যায়, যার মামলা নং ১১২।
২ মে পৌর এলাকার বলাখাল গ্রামের সন্তানের জননী নুরুন্নাহার নিলা (৩০) হারিয়ে যায়, যার মামলা নং ৬১। ৯ মে উপজেলার দক্ষিন শ্রীপুর আশা আক্তার (২০) হারিয়ে যায়। যার জিডি নং ৪০৮। ১৩ মে মাড়ামুড়া গ্রামের মজুমদার বাড়ীর সীমা বেগম (২২) হারিয়ে যায়। যার জিডি নং ৬১১। ১৫ মে কচুয়া উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার বসবাসরত অবস্থায় হাওয়া বেগম (২৫) হাওয়া হয়ে যায়। যার জিডি নং ৬৯৩। ১৭ মে পৌর এলাকার ধেররা বিজয় দাশের বাড়ীর সংগীতা রানী দাশ(১৯) হারিয়ে যায়। যার জিডি নং ১০১৪। ২০ মে হাটিলা গ্রামের টোরাগড় বসবাসরত অবস্থায় এ এন নাছরিন (২১) নামের এ নারী সন্তান রেখে পালিয়ে যায়। যার মামলা নং ১১২০। ২২ মে মকিমাবাদ গাজী বাড়ীর নূসরাত জাহান পিংকি (১৭) হারিয়ে যায়। যার জিডি নং ১২২২। একই তারিখে সদর ইউনিয়নের ভাউরা হাজী বাড়ীর শাহিনা আক্তার (১৮) প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে যায়। যার জিডি নং ১২২৯।
প্রহেলা জুন উপজেলার সাকসিপাড়া থেকে পান্না আক্তার (১৮) পালিয়ে যায়। যার জিডি নং ২৪। ১১ মে মুকুন্দরার গ্রামের জান্নাত খাঁন (১৭) পালিয়ে যায়। যার জিডি নং ৪৪৬। একই দিনে পূর্ব কাজিরগাঁও গ্রামের হাসিনা বেগম (৩৫) সন্তানসহ পালিয়ে যায়। যার জিডি নং ৪৬৪। ২৪ জুন মালাপাড়া পাঠান বাড়ীর মাহজুবা আক্তার (১৯) পালিয়ে যায়। যার জিডি নং ১০১১।
প্রহেলা জুলাই উপজেলার ছৈয়ছিলা গ্রামের মাছুমা আক্তার (২১) হারিয়ে যায়। যার জিডি নং ২৪। ৩ জুলাই উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামের সুলতানা আক্তার পালিয়ে যায়। যার জিডি নং ১৬৪। একই দিনে কচুয়া কুসমপুরের বাসীন্ধা খাদিজা আক্তার জলি (৩০) হাজীগঞ্জ থেকে পালিয়ে যায়। যার মামলা নং ১৪৭। ঐ তারিখে উপজেলার কাঠালী গ্রামের রুমা আক্তার (২৪) নামের এই নারীও পালিয়ে যায়। যার জিডি নং ১৪৮। ৭ জুলাই মাতৈন গ্রামের মমতাজ বেগম (২৭) এই নারী সন্তানসহ পালিয়ে যায়। যার জিডি নং ৩৩৫। ৮ জুলাই মুকুন্দসার গ্রামের হাজেরা বেগম (২০) পালিয়ে যায়। যার জিডি নং ৩৬৫। ৯ জুলাই ভাটরা শিবপুর এলাকা থেকে লাভলী আক্তার (২৮) পালিয়ে যায়। যার মামলা নং ৪২৯। ১৬ জুলাই বলাখাল এলাকার মিতু আক্তার (১৭) পালিয়ে যায়। যার মামলা নং ৭২৫। একই দিন ধেররা এলাকার রাবেয়া আক্তার (১৬) পালিয়ে যায়। যার জিডি নং ৭৪১। ১৮ জুলাই নাসির কোট এলাকার আকলিমা বেগম ( ২৪) ৬ বছরের মেয়ে আফসানাকে নিয়ে পালিয়ে যায়। যার জিডি নং ৮১৮। একই তারিখে পৌর এলাকার খাটরা বিলওয়াই আয়েশা বেগম (২৫) ৩ বছরের ছেলে রাহিমকে নিয়ে পালিয়ে যায়। যার মামলা নং ৮২৪। ২৫ জুলাই সদর ইউনিয়নের বাড্ডা মজুমদার বাড়ীর সুবর্ণা আক্তার (১৫) প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে যায়। যার জিডি নং ১১৫১। ৩০ জুলাই হাজীগঞ্জ বাজারের প্রফেসর পাড়ার রহিমা আক্তার সুমাইয়া (১৫) হারিয়ে যায়। যার জিডি নং ১৩৯৫। একই দিনে পাতানিশ গ্রামের আখি বেগম (২০) পালিয়ে যায়।
গত ৭ মাসে হাজীগঞ্জ থানায় এ ৭০ নারী অভিযোগ দায়ের হলেও এর বাহিরেও আরো ৩০ জন নারী প্রেম-পরকিয়ার টানে প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে গেছে বলে জানা যায়। এ ভাবে চলতে থাকলে সমাজে আরো অসামাজিকতা বাড়বে ভেবে অনেক পরিবারের স্ত্রী মেয়েদের নিয়ে পরিবারগুলো চিন্তিত রয়েছে। এসব প্রেম-পরকিয়ার বৃদ্ধির প্রধান কারন হচ্ছে মোবাইল ফোন, যাতে রয়েছে ফেইসবুক, বাইভার, ইমুসহ নানা যোগাযোগ মাধ্যম। তাছাড়া গ্রাম গুঞ্জের অনেক বিদেশী নারীরা সন্তানের ভাল পড়াশুনার নাম করে হাজীগঞ্জ বাজারে বাসা বাড়া নিয়ে একাকিত্ব জীবন-যাবনে উদাসীন হয়ে পড়েছে। তাই এখানকার সচেতন মহল মনে করেন, পরিবারের পাশাপাশি সামাজিক ভাবে এর প্রতিরোধ এখন থেকে বিকল্প কোন উদ্যোগ না নেওয়া হলে দিন দিন এসব অসামাজিকতা বৃদ্ধি পাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!