সেলিনা জাহান প্রিয়ার ধারাবাহিক গল্প- অ- মানব -প্রথম পর্ব

অ- মানব -প্রথম পর্ব
—————— সেলিনা জাহান প্রিয়া
 

শীতের রাত ২ টা কাওরান বাজারে কিছু পুলিশ তাদের ডিউটি করছে। একজন পকেট মার ওয়ালাকে ধরেছে। ঠিক পুলিশের সামনে দিয়ে একজন যুবক খালি পায়ে পাতলা একটা জামা গায়ে হেটে যাচ্ছে। একজন পুলিশ ডাক দিল —–
— কি ভাই খালি পায়ে কেন এত রাতে শীতের মধ্য হাঁটছেন। আপনাকে দেখে আমার খুব হাসি পাচ্ছে আপনি কি মানুষ না অন্য কিছু। শীতের মধ্য একটা একটা জামা পড়ে থাকে! আপনার কি শীত লাগে না।
— আমার শীত গরম সব সমান। তবে আপনার হাসি আমাকে চিন্তায় ফেলে দিল?
— কেন?
— পৃথিবীতে সরল ও বোকা মানুষেরা সব সময় হাসে।
— আমি যে পুলিশ মানুষ তোমার এত রাতে আমাকে ভয় লাগে না।
— দেখুন আপনি পুলিশ। আমি কে তা নাই বললাম। কিন্তু আপনি যে খুব সুখি না এটা আপনাকে দেখে বুঝা যায়।।
— আপনি তাহালে সুখি পায়ে জুতা নাই। শরীরে শীতের কাপড় নাই। দাড়ি চুল দেখে মনে হয় আজ কিছুই খাবার খান নাই।।
— দেখুন পুলিশ ভাই। এত যে গাছ তাদের কোন শীতের জামা আছে। দুনিয়ায় কত পশু পাখি তাদের কি পায়ে জুতা আছে। একবার চিন্তা করে বলেন?
— দেখুন পাগল ভাই। তাদের আর মানুষের কথা এক না।
— তাহালে পুলিশ ভাই বলতে চান তারা প্রানি না।
— তারা প্রানি কিন্তু মানুষ না।
— হ্যা পুলিশ ভাই ঠিক ধরেছেন। আমিও প্রানি কিন্তু মানুষ না।
— ঐ মিয়া পাগল! তোমার তো জ্ঞান আছে। তা আমাকে অসুখি মনে হয় কেন?
— এই যে আপনি বোকার মত কথায় কথায় হাসেন। যারা কথায় কথায় হাসে তারা কাউকে সুখি করতে যেয়ে নিজেরাই অসুখি হয়।।
— তা পাগল ভাই কি খেলে আজ সারা দিন।
— পুলিশ ভাই এই যে সাগরের মাছ তাদের কে খাবার দেয়। রাস্তার কুকুর তাদের কে খাবার দেয়। ঐ যে পাখি তাদের কে খাবার দেয়।।
— পাগল ভাই তাদের আল্লাহ্‌ দেয়।
— তাহালে আমি তো তাদের মত আমার খাবার দায়িত্ব তার।
— পাগল ভাই আপনার কথা গুলো অনেক ভাল লাগলো। আসেন চা খাই।
— পুলিশ ভাই আমাকে কেউ খাবার দিলে না করি না। তা শুধু চা না সাথে একটা
বনরুটি দিবেন।
— পাগল ভাই তোমার যা মনে চায় খাও।
— আমি বললাম না পুলিশ ভাই। এই যে আমার মত একটা পাগল কে আপনি যে মায়া করলেন এটাই ধর্ম।
— পুলিশ ভাই। আপনার মনে অনেক দুঃখ। তা কিন্তু আপনার জন্য আপনি দুখি।
— তা কি করে বুঝলে পাগল।
–এই যে আপনি কথায় কথায় হাসেন। হাসির মধ্য কারন ছাড়া দুঃখ থাকে।
— হ্যা পাগল ভাই ঠিক বলেছেন। আমি খুব দুখি। ছোট বেলায় বাবা মারা যায়।
দেশে যুদ্ধ শেষ হলে পুলিশে চাকুরি নেই। ছোট ভাই বোন কে লিখা পড়া শিখাই। বিয়ে সাদি করি। এখন আমার তিন জন ছেলে মেয়ে। স্ত্রী খুব অসুখ। বাচ্চাদের লিখা পড়া। আবার স্ত্রী অপারেসান। যে টাকা বেতন পাই। তা দিয়ে ঢাকা শহর থাকা ও বাসাভারা দিয়ে চলা খুব কষ্ট। ভাইদের বললাম তারা কোন সাহায্য করলো না।
— পুলিশ ভাই! আপনি যার কাছে সাহায্য চাওয়া দরকার তার কাছে না চেয়ে ভুল জায়গায় চাইছেন।।
— পাগল ভাই ঠিক বুঝলাম না।
— পুলিশ ভাই। টাকা হলে কি সব সমাধান হবে আপনি মনে করেন।
— পাগল ভাই। টাকা ছারা কি করে সম্ভব।
— পুলিশ ভাই এখানেই আপনি মানুষ আর আমি প্রানি।
— ঐ যে পকেট মার লোক কে ধরলেন। গাড়িতে রাখলেন। তাকে তো চালান করবেন। তাই না।
— হ্যা মানি ব্যাগটা কি ফেলে দিবেন।
— হা টাকা তো স্যারেরা ভাগ করে নিয়ে নিল। খালি কিছু কাগজ আছে তা রেখে কি লাভ।
— পুলিশ ভাই। চিন্তা করুন তো বেশী খারাপ কে? ঐ চোর না আপনারা।
—পাগল ভাই এত কিছু দেখে কি লাভ। কাল কে চালান দিলে আবার বের হয়ে পকেট মারবে। মানি ব্যাগের লোক কে খুজতে গেলে। সে আবার মামলা দিবে না। পুলিশের সব ঝামেলা।
— যাই হোক পুলিশ ভাই আমার একটা কথা রাখবেন এই পাগলের।
— কি কথা পাগল ভাই বল।
— আপনি আমাকে চা রুটি খাইয়ে ঋণী করছেন। তাই কাল আপনি ঐ মানি ব্যাগটা ফেরত দিয়ে আসবেন। আর সাহায্য আল্লাহর নিকট চাইবেন। আমি আসি।

— তা পাগল ভাই আপনার নামটা বলে গেলেন না। দুনিয়াটা খুব ছোট আবার দেখা হলে নাম বলব।
শীতের রাত লোকটা হাঁটছে। পুলিশ অবাক হয়ে দেখছে। শীত বলতে কি সে জানে না। তবে তার কথা গুলো অনেক ভাল লাগেছে।
সকালে পুলিশের লোকটা মানি ব্যাগ নিয়ে ঠিকানা মত গেল। বনানি ১১ রোড। সাত তলায় লিফটে উঠল। দেখল ঠিক অফিসে আসেছে। অনেক বড় একটা অফিস। রিসিপসনে একজন ভদ্র মহিলা বসা।
— সালাম আপা।
— কে আপনি? কি চান? কার কাছে এসেছেন?
— জি আমি সামছু, পুলিশের চাকুরি করি। আমি গত রাতে একটা মানি ব্যাগ পাই। তবে তাতে কোন টাকা নাই। কিছু কাগজ আর মনে হয় কিছু দামি কার্ড। ইংলিশ তো তাই সব পড়তে পাড়ি নাই।
— বলেন কি মিঃ?
— আপনি বসুন। পিলিস বসুন।
— মেয়েটি ফোন তুলে তার স্যার কে বলল – স্যার খুবই খুশির খবর। আপনার মানি ব্যাগ পাওয়া গেছে।
যার মানি ব্যাগ সে মিঃ রায়হান খান। একটা আন্তর্জাতিক কোম্পানির কান্ট্রি চিপ। তারাতারি এসে মানি ব্যাগটা এসে হাতে নিল। ভাল করে দেখল। বলল আল্লাহ্‌ তোমাকে ধন্যবাদ। তা ভাই আপনি আসুন আমার রুমে।
— কোথায় পেলেন। কি করেন আপনি। বসুন। এখানে কফি দাও।
— স্যার আমি একজন পুলিশ। তবে অফিসার না সিপাহী।
— তা ঠিক আছে। আপনি আমার কোম্পানির একটা অনেক বড় উপকার করেছেন। যা আপনি চিন্তা করতে পারবেন না। বলুন আপনি কি চান?
— স্যার একটা চামড়ার মানি ব্যাগ কি তার মুল্য।
— মিঃ এটার ভিতরে এটা কি চিনেন?
— না স্যার।
— এটা একটা মাইক্রো চিপিস। যা তে এই কোম্পানির একটা বিশাল নীল নকসা আছে।
আমার কাছ থেকে এটা হারিয়েছে একটা ফাইভ স্টার হোটেলের সামনে থেকে। যাই হোক
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার ঠিকানা লিখে দিয়ে যান। গাড়ি আপনাকে বাসা পর্যন্ত
নামিয়ে দিয়ে আসবে।।
চলমান————

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!