ছেঁড়া লুঙ্গিতে জীবন কাটে ধনমনির

এস কে রায়, নীলফামারী প্রতিনিধি  । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

পুরাতন ছেঁড়া লুঙ্গি কাপড় পড়ে কষ্টের মধ্যে দিন কাটছে ধনমনি বালার। গোসল করার পর কাপড়ের এক মুড়ো ঘেরার গায়ে ঝুলিয়ে রৌদ্রে দেন। অপর মুড়ো গায়ের সাথে জড়িয়ে রাখেন। এক মুড়ো শুকিয়ে গেলে গায়ের সাথে জড়িয়ে অপর মুড়ো শুকাতে থাকেন।
এমনিভাবে কষ্টে দিন কাটছে নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার নাউতারা ইউনিয়নের শালহাটি গ্ৰামের মৃত বালাচাদ রায়ের স্ত্রী ধনমনি বালার (৫৫)।
বিয়ের পর ভালো চলছিল ধনমনির সাজানো সংসার। কোন রকমে দিন মুজুর দিয়ে বালাচাদ রায় ও ধনমনির সংসার চলতে থাকে। কিছুদিন যেতে না যেতেই স্বামী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। শিশু ছেলে ধনেশ্বরকে সাথে নিয়ে চলতে থাকে তার লাগামহীন সংগ্রামের জীবন। দিন দিন বয়স বাড়তে সাথে, সেই কারণে এক পর্যায় রোগ বালাই যাপটে ধরে ধনমনিকে। ভিটেমাটি না থাকায় এক পর্যায়ে শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে তারিয়ে দিলে বোন জোসনার ঘরে আশ্রয় নেয়।
অসুস্থ ধনমনির সংসারের হাল ধরে এক মাত্র শিশুপুত্র ধনেশ্বর রায়। কিছু দিন যেতেই ধনেশ্বর বিয়ের পর অসুস্থ হয়ে পড়েন। অভাবের সংসারে ইতিমধ্যে দুই সন্তানের জনক হন ধনেশ্বর। কিন্ত ভাগ্য যেন তাদের কে বার বার বিপাকে ফেলতে থাকে। বছর ঘুরে আবারও দুটি যমজ সন্তান হয়। আরো কষ্টের মধ্যে দিন চলতে থাকে তাদের।
কিন্তু চার ছেলে সন্তানকে নিয়ে যখন দিশেহারা তখন মায়ের জন্য  হাজারো টান থাকলেও ধনেশ্বের কিছুই করার থাকেনা। শেষে অভাব ঠেকাতে জমজ দুই ছেলে সন্তানকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন।
এর মধ্যে দ্বিতীয় শিশু ছেলে ঘরে অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার অভাবে মারা যায়।
যমজ সন্তান বিক্রির বছর ঘুরে আবার এক ছেলে সন্তানের জন্ম দেয় তরুবালা।
নবজাতক শিশুকে নিয়ে না খেয়ে কাটতে থাকে দিন। শেষে শিশু সন্তানের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে ভিক্ষা করা শুরু করেন।
বহুদিন না খেয়ে থাকায় পাগল হয়ে যায় তরুবালা। সবার আড়ালে একদিন হারিয়ে যায় তরুবালা তাকে এখনো খুঁজে পায়নি স্বামী ধনেশ্বর।
এদিকে ধনেশ্বর নানাবিধ চিন্তায় সেও অসুস্থ হয়ে পড়েন। বর্তমানে ধনেশ্বর অসুস্থ ও মা ধনমনি শ্রবণ প্রতিবন্ধী। এলাকার জনপ্রতিনিধি তাদের খোজই রাখেনা।
ধনেশ্বরের ঘর ঢুকে দেখার মত কিছুই নেই।
দুই ছেলে ও অসুস্থ মাকে নিয়ে এক ঘরের মাটিতে ঘুমান। ঘাঠ পালংক কিছুই জুটেনি তার কপালে।
মায়ের কষ্টের কথা বলতে বলেন, মা’কে এখনো নতুন কাপড় দিতে পারিনি। তাহলে কি পড়েন জানতে চাইলে জানান, আমার দুই একটা পুরাতন ছেঁড়া লুঙ্গিতে বছর পার হয়ে যায়।

  • কাগজ টুয়েন্টিফোর বিডি ডটকম এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!