পঞ্চগড় জুড়ে বাসের টিকিট মূল্য বেশি; নেই প্রশাসনের তদারকি

নাজমুস সাকিব মুন, পঞ্চগড় প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

ঈদকে সামনে রেখে পরিবহণ সেক্টরে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। সিন্ডিকেটের কাছে সাধারণ মানুষ কার্যত অসহায় হয়ে পড়েছেন। ঈদের ছুটিতে প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটাতে ঢাকা থেকে ফিরছে সাধারণ মানুষ। ঈদের স্বল্প ছুটির কারণে আর বাসের আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ায় ঈদের ফিরতি টিকিটে রয়েছে বাড়তি চাপ। ঢাকা থেকে বাসায় ফিরেই এরই মধ্যে ঈদের ফিরতি টিকিট কিনতে ঢাকাগামী কোচ কাউন্টারগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন অনেকেই। অনেকেই ঢাকা থেকে বাসার সদস্যদের অগ্রিম টিকিট কেটে রাখতে বলেছেন। আর ফিরতি টিকিটের এই বাড়তি চাহিদাকেই টার্গেট করছে সিন্ডিকেটটি। টিকিট কিনতে গেলে তাই যাত্রীকে গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। যদিও সেই বাড়তি টাকার অঙ্কটি কৌশলে টিকিটে লেখা হচ্ছে না।

পঞ্চগড় জুড়ে দেখা গেছে এই নৈরাজ্য। জেলার সবকটি উপজেলায় যাত্রীর কাছে ঈদ বকশিশের নামে বাড়তি টাকা নেয়া হচ্ছে। বাড়তি ভাড়া নিয়ে যাত্রীরা আপত্তি জানালেই টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট দিতে অপারগতা প্রকাশ করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে টিকিট থাকার পরও কৃত্রিম সংকট ঘটিয়ে বলা হচ্ছে নির্ধারিত টিকিট বিক্রি শেষ। কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে পরবর্তীতে টিকিটগুলো বেশি দামে বিক্রি করা হবে বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

ঘটনার সত্যতা খুঁজে পেতে প্রতিবেদক যাত্রী বেশে দেবীগঞ্জের টিকিট কাউন্টারগুলোতে খোঁজ নেন। শুধু নাবিল বা হানিফ পরিবহণ নয়। অন্য যে সব বাসে ঈদের আগে স্বল্প মূল্যে ঢাকায় যাওয়া যেত সেসব বাসেও ঈদ পরবর্তী টিকিটে ৩০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত বেশি নেয়া হচ্ছে। দেবীগঞ্জে আনিতা, তয়েজ, শ্যামলী, জিশা পরিবহণের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।

প্রতিবেদক আজ সকালে হানিফ পরিবহণের দেবীগঞ্জ কাউন্টারে ১৩ জুনের দেবীগঞ্জ- ঢাকা দুইটি টিকিট কিনেন। টিকিটের মূল্য রাখা হয় ১৮০০ টাকা। যদিও অফিসিয়ালি প্রতি আসনের মূল্য নির্ধারিত হয়েছে ৭২০ টাকা। এতো বেশি মূল্য রাখা হচ্ছে কেন প্রশ্ন করলে কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা সাজু জানান ঈদ বকশিশ রাখা হচ্ছে। অন্য বাসেও বেশি নেয়া হচ্ছে বলেন তিনি।

টিকিট কেনার পর প্রতিবেদক অতিরিক্ত মূল্যের বিষয়ে দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রত্যয় হাসানকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি ম্যাজিস্ট্রেট পাঠাবেন বলে জানান। কিন্তু ৪০ মিনিটের বেশি সময় ধরে অপেক্ষার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ না আসায় প্রত্যয় হাসানকে পুনরায় মুঠোফোনে ফোন করলে তিনি জানান এই মুহূর্তে তিনি ব্যস্ত আছেন, পরে ফোর্স পাঠাবেন।

হানিফ পরিবহণের ঢাকা-দেবীগঞ্জ রুটের দায়িত্বে থাকা সহকারী ব্যবস্থাপক আনিসুর রহমানকে এ নিয়ে মুঠোফোনে অভিযোগ করলে তিনি কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা সাজুকে ফোন করে টিকিটের অফিস নির্ধারিত মূল্য রাখার নির্দেশ দেন। এরপর টিকিটের বাড়তি মূল্য থেকে ২০০ টাকা ফেরত দিতে ঈদ বকশিশের কথা বলে দুইটি টিকিটের জন্য ১৬০ টাকা রেখে দেন।

টিকিটের অতিরিক্ত মূল্য নিয়ে কথা হয় টিকিট কিনতে আসা হুমায়ুন, শমসের, বিল্লাল, আলিফসহ আরো কয়েক জনের সাথে। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঢাকার মতো এতো বড় শহরেও টিকিটের মূল্য যেন বেশি নেয়া না হয় সে জন্য যানজটের মধ্যেও ভ্রাম্যমাণ আদালাত সব সময় তৎপর আছেন। মাঝে মধ্যেই ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করছেন। আর উপজেলা পর্যায়ে নিরিবিলি পরিবেশেও প্রশাসন নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। যাত্রীরা জানান ঈদের ২/৩ দিনের মধ্যে অধিকাংশ চাকরিজীবীরা ঢাকায় ফিরেন। কিন্তু ঈদের ৭ দিন বা ১০ দিন পরের টিকিটেও অতিরিক্ত মূল্য রাখা হচ্ছে। এই সময় সাধারণত শিক্ষার্থীরা ঢাকায় ফিরেন।

দেবীগঞ্জের নাবিল পরিবহণ এর কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা রসুল বলেন প্রতি ঈদেই টিকিটের মূল্যের সাথে ঈদের বকশিশ হিসেবে কিছু বাড়তি টাকা নেয়া হয়। তবে বাড়তি কত টাকা নেয়া হয় তা তিনি বলেন নি।

সদর, বোদা, আটোয়ারী ও তেঁতুলিয়া থেকে ঢাকাগামী বাস কাউন্টারগুলোতেও ঈদের ফিরতি টিকিটের অতিরিক্ত মূল্য নেয়ার প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু কর্মস্থলে ফেরার তাগিদে আর বাধ্যবাধকতা থাকায় উচ্চ মূল্যেই টিকিট কিনছেন যাত্রীরা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রত্যয় হাসানকে এই বিষয়ে আরেকবার মুঠোফোনে ফোন করা হলে তিনি জানান, ঈদের ফিরতি টিকিটে অতিরিক্ত মূল্য নেয়ার ব্যাপারে একজন মৌখিক অভিযোগ করেছেন। এরপর আমি থানায় কথা বলেছি। অল্প সময়ের মধ্যে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!