হযরত ওমর (রা:) এর তাকওয়া

⇒ হযরত ওমর (রা:) পবিত্র কাবা শরীফ তোয়াফ করার সময় হাজরে আসওয়াদ পাথরকে লক্ষ্য করে বললেন, তুমি একটি পাথর ব্যতীত আর কিছুই নহো। মানুষের মঙ্গল ও অমঙ্গল করার কোনই ক্ষমতা নাই। আমি তোমাকে কখনও চুম্বন করতাম না। যদি আমার নবী (সা:) তোমাকে চুম্বন না করতেন।

⇒ হুদাইবিয়ার সন্ধির আগে একটি গাছের ছায়ায় ছাহাবীগণ নবী করীম (সা:) এর হাত ধরে বায়াত করেছিলেন। পরবর্তীতে মুসলমানগণ ঐ গাছকে বরকতময় মনে করে গাছের নিচে দাঁড়াইতো এবং নীরবতা পালন করত। পরে হযরত ওমর (রা:) ঐ গাছটিকে কর্তন করে ফেললেন।

⇒ ২৭ রজব তারিখে মেরাজের দিবস হিসাবে রোজাদার এক ব্যাক্তিকে জোর করে কিছু খাওয়ায়ে রোজা ভাঙ্গাইয়া ছিলেন।

⇒ এক ইহুদী ও মুসলমানের মধ্যে ঝগড়া হল। তখন ইহুদী মুসলমানকে বলল, চল ইহা মীমাংসার জন্য তোমাদের নবীর নিকট যাই। ইহাতে উভয়ে রাজী হয়ে হুজুর (সা:) এর নিকট হাজির হল, নবী করীম (সা:) ইহুদীর পক্ষে রায় দিলেন। ইহাতে মুসলমান লোকটি মনক্ষুন্ন হয়ে হযরত আবু বকর (রা:) এর নিকট বিচার প্রার্থনা করল। হযরত আবু বকর (রা:) বললেন, রাসূল (সা:) যে বিচার করেছেন, সে বিচারের সানি বিচার করা আমার পক্ষে সম্ভব নহে। তখন লোকটি ধারনা করল যে হযরত ওমর (রা:) ইহুদীদের উপর খাপ্পা, তাই তাঁর কাছে গেলে আমার পক্ষে রায় পাব। তাই সে হযরত ওমর (রা:) এর নিকট গিয়ে বিস্তারিত বলে বিচার প্রার্থনা করল। হযরত ওমর (রা:) বললেন দাঁড়াও আমি বাড়ির ভিতর হতে আসি। তারপর একটি তলোয়ার নিয়ে এসে এক আঘাতে লোকটিকে দ্বিখন্ডিত করে বললেন, এত বড় সাহস নবী করীম (সা:) এর বিচারের সানি চায়।

⇒ একবার হযরত ওমর (রা:) বাতি জ্বালিয়ে কাজ করছিলেন, তখন হযরত আলী (রা:) সেখানে গেলেন। সাথে সাথে হযরত ওমর (রা:) বাতি নিভিয়ে দিলেন। হযরত আলী (রা:) বিস্মিত হয়ে কারণ জিজ্ঞেস করলেন। হযরত ওমর (রা:) বললেন, এতক্ষণ আমি বায়তুল মালের কাজ করছিলাম, তাই বায়তুল মালের বাতি ব্যবহার করছিলাম। কিন্তু আপনি আসায় যেহেতু আমরা আমাদের ব্যক্তিগত কাজে লিপ্ত হবো, তাই এখন আর বায়তুল মালের বাতি ব্যবহার করা বৈধ হবে না।

⇒ হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা:) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আমীরুল মুমেনীন হযরত ওমর (রা:) বলেছেন, তিনটি বিষয়ে আমি আমার প্রভুর সাথে ঐক্যমতে পৌঁছেছি, যা নিম্নরুপ

(১) আমি হযরত নবী করীম (সা:) কে বলেছিলাম, যদি আমরা মাকামে ইব্রাহীমকে নামাজের স্থান হিসাবে নির্দিষ্ট করতাম, অতপর কোরআনে আয়াত অবতীর্ন হয়েছে:- তোমরা মাকামে ইব্রাহীমকে নামাজের স্থান হিসাবে গ্রহন কর।

(২) অমি এক সময় আরজ করলাম, হে আল্লাহ্র রাসূল (সা:) যদি আপনি উম্মাহাতুল মুমিনীনদের পর্দা করার আদেশ করতেন। যেহেতু অনেক নেককার ও বদকাররা তাদের সাথে কথা বলে থাকে। তখনই পর্দার আয়াত অবতীর্ন হয়।

(৩) এক সময় উম্মাহাতুল মুমিনীনগণ স্বীয় আত্ম-মর্যাদা বোধের উপর একত্রিত হয়েছিলেন। তখন আমি তাদেরকে বলেছিলাম, যদি হযরত নবী করীম (সা:) তোমাদেরকে তালাক প্রদান করেন, হতে পারে তাঁর প্রভু তোমাদের চেয়েও অতি-উত্তম এবং অনুগত্যশীল মহিলাদেরকে তাঁর স্ত্রী হিসাবে প্রদান করতে পারেন। তখন এ সম্পর্কে কোরঅনের আয়াত অবতীর্ন হয়।(বোখারী শরীফ)

⇒ হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রা:) কর্তৃক বর্ণিত, আব্দুল্লাহ্ ইবনে উবাইয়ের মৃত্যু হলে তার পুত্র হযরত নবী করীম (সা:) এর খেদমতে এসে নিবেদন জানাল, আপনার পিরহানটি দান করুন, এতেই তাকে কাফন দিব এবং আপনি তার জানাজা পড়বেন ও তার জন্য মাগফিরাত চাইবেন। হযরত নবী করীম (সা:) তাকে নিজের পিরহানটি দান করলেন এবং বললেন, আমাকে সংবাদ দিলে আমি তার জানাজা পড়ব। অতপর নবী করীম (সা:) কে খবর দিলে তিনি তার জানাজা পড়তে উদ্যত হলেন। এমন সময় হযরত ওমন (রা:) তাঁর জামা ধরে টেনে বললেন, মোনাফিকের জন্য দোয়া করতে আল্লাহ্ কি আপনাকে নিষেধ করেননি? উত্তরে তিনি বললেন, দোয়া করা না করা আমার ইচ্ছাধীন (উভয়ই সমান)। তিনি বলেন, আল্লাহ্ বলেছেন, “তুমি তাদের জন্য মাগফিরাত কামনা কর আর নাই কর, যদি সত্তুর বারও তাদের জন্য মাগফিরাত কামনা কর তবুও আল্লাহ্ কখনও তাদেরকে ক্ষমা করবেন না।” এ বলে তিনি তার জানাজা পড়লেন। তৎক্ষণাত আয়াত নাযিল হল:- যার অর্থ, “আপনি আর কখনও তাদের কারো ওপর জানাজা পড়বেন না এবং তাদের কবরের পার্শ্বেও দাঁড়াবেন না।” বোখারী শরীফ)

⇒ হযরত আবু হুরাইরা (রা:) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূল (সা:) এক রাত্রিতে স্বপ্ন দেখলেন যে তিনি কুপ থেকে বালতি দিয়ে পানি উঠাতে লাগলেন, কিছুক্ষণ পর হযরত আবু বকর (রা:) সেখানে উপস্থিত হয়ে পানি উঠাতে লাগলেন কিন্তু খুব দুর্বলতার সাথে পানি উঠাতে ছিলেন। এমন সময় হযরত ওমর (রা:) সেখানে উপস্থিত হলেন এবং তার নিকট থেকে বালতি নিয়ে পানি উঠাতে লাগলেন। হযরত ওমর (রা:) এমন ভাবে পানি উঠাতে লাগলেন যে সমস্ত মানুষ, জীব-জানোয়ার, গাছপালা সবাই উপকৃত হলেন। (বোখারী শরীফ)

⇒ মহানবী (সা:) এরশাদ করেছেন, “আমার পর আল্লাহ্ যদি কাউকে নবীরুপে প্রেরন করতেন সে হতো ওমর ইবনুল খাত্তাব।” (তিরমিযী)

⇒ হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসে নবী করীম (সা:) হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা:) এর উদ্দেশ্যে এরশাদ করেছেন, “হে ওমর! যার হাতে আমার প্রাণ আমি সেই প্রতিপালকের শফত করে বলছি, শয়তান যখন কোন রাস্তা দিয়ে তোমাকে যেতে দেখে তখন সে তোমার ভয়ে রাস্তা পরিবর্তন করে বিকল্প রাস্তা দিয়ে পলায়ন করে।” (সহীহ মুসলিম)

মো: ফজলুর রহমান
সাবেক প্রধান শিক্ষক
হুগড়া হাবিব কাদের উচ্চ বিদ্যালয়
হুগড়া, টাঙ্গাইল সদর, টাঙ্গাইল।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!