একজন রাজীব এর জীবনী (অভিনেতা) (৭)

একজন রাজীব এর জীবনী (অভিনেতা) (৭)
দেবী গাফফার

দরজা আমিই খুলে দিলাম ।
(দশ মিনিটের মতো কথা হলো, যার বর্নণা আমার জীবনীতে উল্লেখ করেছি। নতুন পাঠকেদের কথা ভেবে আগের লেখা থেকে কিছু অংশ কপি পেস্ট করে দিলাম ।)

আমাকে দেখেই বললেনঃ আপনার খবর পেয়ে মেকআপ উঠানোর মত সময়টুকুও নষ্ট করতে ইচ্ছে করলো না। আবার যদি বাসায় থেকেও নাই বলেন?

আমি ও বললামঃ আপনি আমাকে খুঁজতে কক্সবাজার গেলেন কেনো ?

শুনেন আসল কথায় আসি। আপনি গত দুই বছর ধরে কোন না কোনভাবে আমার পিছনে লেগে আছেন কেনো ?

মেজোমা লজ্জা পান, মেজোমা বলেনঃ বাবা ও এরকমই কিছু মনে করোনা ।
না মেজোমা আমি দেবীকে ভালোবাসি ।
শুনেন আপনি আমাকে বিয়ে করবেন ? জী ।

আমার কিছু কথা আছে, কালকে দেখা করবেন । রাজীব সাহেব বললেন ।
মগ বাজার মোড়ে আমার বন্ধুর চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, টাইকিং ওখানে আসবেন ? ঠিক আছে ।

রাজীব সাহেব চলে গেলেন, এত সুন্দর করে মানুষ কথা বলতে পারে ? দেখতে হুবহু রাজেশ খান্নার মত না ?
অমিতাভ বচ্চনের মত ভয়েস না ? দাড়ানোর ভংগী, বসার স্টাইল সব যেন আলাদা, মন কাড়ে ।
আগে তো চোখে পড়েনি ? অর্ধেক কথা ইংরেজিতে বলেন, তাও ব্রিটিশ এক্সেন্ট ?

পরের দিন উনার সাথে দেখা করি।

কোন সময় না নিয়ে বলা শুরু করি ।
শেষে বলি, আপনি আমাকে বিয়ে করবেন উল্টা যৌতুক দিয়ে, করবেন ?
আপনাকে দেওয়ার মত আমাদের কিছু নেই ।
উনি বিনয়ের সাথে বলেনঃ জী আমার কিছু লাগবে না। কালকে আপনার গার্জিয়ান পাঠাবেন, পরশু বিয়ে হবে ।

আর যদি না পারেন আমি পরশু কক্সবাজার চলে যাবো । জি আমি কালকেই পাঠাবো । আমি মনে মনে চাচ্ছিলাম বিয়ে হলে হবে না হলে আরও ভালো ।

মেস ছেড়ে জাকির হোসেন রোড এ বাসা নিলেন, বাসায় একটা আলমিরা একটা নতুন খাট ।
সেটা ও ধার করে কেনা । এক সেট বেতের সোফা ।
শুরু হলো আমার পথ চলা ।
বিয়ের কিছু দিন পরেই জয় বিজয় পেটে আসে ।
তখনই জানতে পারি, কুলসুম মেম ( রাজীব সাহেব এর প্রথম বউ) রাজীব সাহেব এর বাবা মার সাথেই থাকেন ।
আমি হতভম্ব, কি করবো কার কাছে যাবো । দিশাহারা অবস্থা আমার ।
উনাকে জিজ্ঞেস করি এতবড় প্রতারনা কেন করলেন ?
তখন বললেনঃ সবার চাপে ডিভোর্স এর পেপার উইথড্র করতে বাধ্য হন ।
মাথা নিচু করে বললেনঃ তোমাকে হারানোর ভয়ে ।
আজীবন আমার রাগ ছিলো উনার এই মিথ্যা টুকুর জন্য ।
অনেক বার ক্ষমাও চেয়েছেন ।
আমি উনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি ।

আসলে কুলসুম মেম, রাজীব সাহেব কেও অপরাধী নন । অপরাধ তখনকার সমাজের, তাদের চিন্তা ধারার ।
অন্ধকার সমাজের বলি হলেন, উনারা দু’জন ।

ভালো মন্দ মিলিয়ে দিন পার হয়েই যায় ।
আমরা আবার তাজমহল রোডে বাসা নিই ।
ছোট্ট বাসা, দরজার সামনেই ড্রেন । এই বাসার ভাড়া আঠারোশো টাকা ।
২২শে সেপ্টেম্বর ৮৬ সালে, তাজমহল রোডে জয় বিজয় এর জন্ম হয় ।
বাসায় দাই এর হাতে, কোন ডাক্তার না কোন ঔষধও না ।
ভোর রাতের দিকে ওদের জন্ম হয় ।
সকাল নটা দশটার দিকে তিন চার জন প্রযোজক বাসায় হাজির ।
ঐদিনই চার ছবি এক সাথে চুক্তি বদ্দ হলেন ।
সৌভাগ্যের চাবিকাঠি নিয়ে দুই ভাই এর আগমন ।
আমাদের দিন পাল্টাতে থাকলো ।
বাসায় প্রথম ফ্রিজ আসলো ।
কার্পেট আসলো ।
দুই বাচ্চা একসাথে কাঁদে একসাথে ক্ষিদা লাগে । আমি কংকাল সার হতে থাকি ।

বাচ্চা হওয়ার খবর পেয়ে রাজীব সাহেব এর বাবা মা আসেন ।
বাবা মাকে বেড রুম ছেড়ে দিয়ে আমরা ড্রেন এর পাসে ছোট্ট ড্রইং রুমে ফ্লোরে থাকি ।
দুই বাচ্চা রাত জাগে, সকালে উঠে মা বাবার জন্য রান্না শুরু করি ।
আমার ওজন কমতে থাকে ।
এর মধ্যে মাঝে মাঝে ঝগড়াঝাটি ও হয় ।যা সব সংসারে হয় ।
বাচ্চা হওয়ার আগে, আমার হাতে প্রতিদিন এর বাজার খরচ হিসেবে পঞ্চাশ টাকা দেওয়া হতো ।

বাচ্চাদের জন্মর পর সেটা একশো টাকায় পৌঁছালো ।
ভালোই চলতো ।
মোহাম্মদ পুর বাজারে বাজার করতাম । এক ভাগ মাছ পাঁচ টাকা ।
একশো টাকায় সংসার খরচ হয়ে আমার প্রতি মাসে পাঁচশো টাকা জমতো ।
বাচ্চাদের যখন বয়স আট মাস, তখন আমি প্রথম দুমকি যাই ।
দুইতলা কাঠের বাড়ি, বেশ পুরনো । যে কোন মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে ।
বাড়ি থেকে দুরে বাথরুম । আসলে বাথরুম না, দুটো কাঠের সাঁকোর ওপর বসে কাজ সারা ।

আমিও মফস্বলের মেয়ে, কয়েক বছর ঢাকায় থাকার কারণে অভ্যাস কিছুটা বিগড়ে গিয়েছিলো ।
ঐবার প্রথম কুলসুম মেমকে দেখি ।

চলবে…..

একজন-রাজীব-এর-জীবনী-১

একজন-রাজীব-এর-জীবনী-২

একজন-রাজীব-এর-জীবনী-৩

একজন রাজীব এর জীবনী-৪

একজন রাজীব এর জীবনী (অভিনেতা)-৫

একজন রাজীব এর জীবনী (অভিনেতা)-৬

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!