নওগাঁর নিয়ামতপুরে শেষ মুহুর্তে ঈদের বাজারে উপচে পড়া ভিড়, মানা হচ্ছে না বিধি নিষেধ

ভূপাল চন্দ্র রায়,  নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

দেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা। প্রতিনিয়ত এ আক্রান্তের রেকর্ড ছড়াচ্ছে। আর করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরুতেই এবার রাজশাহী বিভাগ রয়েছে সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ বিভাগের তালিকায়।

বলা হচ্ছে, বাজার ও গণপরিবহন এই দুইস্থান থেকে সংক্রমণ বেশি ছড়াচ্ছে। যদিও গত কয়েকদিন দেশে করোনা রোগীর মৃত্যু ও আক্রান্ত কিছুটা কম হলেও শঙ্কা এখনো কাটেনি।

রাত পোহালেই ঈদ। তাই ঈদ উপলক্ষে নওগাঁর নিয়ামতপুরে বিভিন্ন মার্কেট ও দোকানপাটে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করছেন না ক্রেতা ও বিক্রেতারা। সোমবার  ও মঙ্গলবার ১০ ও ১১ মে সরেজমিনে নিয়ামতপুর উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন বাজার এলাকা, মার্কেট এলাকা, বোর্ডিং মার্কেট, চৌধুরী কমপ্লেক্স, ছাতড়া বাজার ও বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে কোথাও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। ভিড়ের মধ্যেও অনেকের মুখেই নেই কোন মাস্ক।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, লকডাউন শিথিল হওয়ার পর চলতি মাসের ৬ তারিখ থেকে ঈদের বেচাকেনা জমে উঠেছে। ঈদ ঘনিয়ে আসায় সবাই যত শিগিগির সম্ভব কেনাকাটা শেষ করতে চাওয়ায় বাজারে ভিড় বেড়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বোর্ডিং মার্কেটের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘নিয়ামতপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা করতে উপজেলা সদরে আসায় উপজেলা সদরের প্রতিটি মার্কেট ও দোকানে ভিড় বেড়েছে।’ বাজারে ভিড় বাড়লেও এখনও ঈদের কাঙ্খিত ব্যবসা হচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি।

শালবাড়ী এলাকার সেলিম রেজা বলেন, ‘মেয়ের জন্য একটি জামা কেনার জন্য সোমবার দুপুরে নিয়ামতপুর উপজেলা সদর এলাকার একটি দোকানে গিয়ে প্রায় আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর তা কিনতে সক্ষম হই।’

তিনি জানান, বাজারে অধিকাংশ ক্রেতার মুখেই মাস্ক ছিল না। কোনো দোকানেই ছিল না স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা। মেয়ের ইচ্ছা পূরণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকলেও বাজারে যেতে হয়েছে বলেন তিনি।

উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা মহিলা লীগের সভাপতি মোসাঃ নাদিরা বেগম বলেন,  এখন ঈদের মৌসুম। নিয়ামতপুরে অনেক লোকের সমাগম। সেজন্য সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা সম্ভব হচ্ছে না। মাননীয় প্রধানমমন্ত্রীর যে নির্দেশ সবাইকে মাস্ক পরে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। কিন্ত আমরা তা করতে পারছি না। অনেকে পরিবার নিয়ে মার্কেট করতে এসেছে, এটা কিন্তু ঠিক না। তারাও স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। আমাদের সীমাবদ্ধতা বজায় রেখে স্বাস্থ্য বিধি মেনে মার্কেট করা উচিত।

নিয়ামতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়া মারীয়া পেরেরা বলেন, ‘স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি মাথায় নিয়ে প্রতিটি ব্যবসায়ীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা পরিচালনার জন্য বলা হয়েছে।  তবুও ক্রেতা বিক্রেতা অনেকেই মাঝেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মানসিকতা নেই। গত কয়েকদিনে মোবাইল কোর্টে জরিমানা করা হলেও কেউই যেন এসবের তোয়াক্কা করছে না।’ প্রশাসনিক অভিযানে বারবার ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হলেও জনগণের উদাসীনতার কারণে কোন নির্দেশনা কার্যকর হচ্ছে না বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে কেনাকাটায় মানুষের ভিড় বাড়ায় ঈদের পর করোনা সংক্রমণ নিয়ে উদ্বিগ্ন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাঃ মোঃ তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। করোনা পরিস্থিতি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এরপরও আমরা স্বাস্থ্যবিধি মানছি না। আবার কাউকে মানাতেও পারছি না। এ অবস্থা চলতে থাকলে করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলেই আশঙ্কা করছি। এভাবে বেপরোয়া চলাচল আমাদের জন্য আত্মঘাতী হয়ে উঠবে। তাই এই মুহূর্তে সবার ঘরে থাকা এবং সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!