নওগাঁর নিয়ামতপুরে সরকারী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে (এনজিও) কর্মীর দৌরাত্ব
ভূপাল চন্দ্র রায়, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম
নওগাঁর নিয়ামতপুরে বিভিন্ন এনজিও কর্মীরা সরকারী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কিস্তি আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নওগাঁ পৌরসভা ও নিয়ামতপুর উপজেলায় ১৫ টি নির্দেশনা দিয়ে লকডাউন ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক হারুন অর রশীদ। সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষা করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকা আদায়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে এনজিও কর্মী। ফলে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে তারা। উপজেলার সদরে অনেক ব্যবসায়ী ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে তাদের ব্যবসা করে আসছে, এছাড়াও অনেকে এনজিও থেকে সাপ্তাহিক কিস্তিতে ঋণ নিয়ে ইজিবাইক, ভ্যান, বিভিন্ন যানবাহন চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে ও ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে আক্রান্তের হার বৃদ্ধি এবং মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় নওগাঁ পৌরসভা ও নিয়ামতপুর উপজেলায় লকডাউন ঘোষণা করে। ফলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এমন পরিস্থিতিতে এনজিও’র ঋণের কিস্তি দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন আয়ের ঋণগ্রহীতারা। অধিকাংশ এনজিও বিবাহিত নারীদের সমিতির মাধ্যমে ঋণ দিয়ে থাকে। এমন সময়ে এ সকল ভুক্তভোগী খেটে খাওয়া ঋণ গ্রহীতা যখন তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
আজ ৮ই জুন সকালে ৮.৩০ ঘটিকায় সরেজমিনে উপজেলার সদর ইউনিয়নের মুড়িহারী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, উদ্দীপন শাখার শাখা ব্যবস্হাপক বেলাল হোসেন, নিজ গাড়ি রেখে হাসনায়ারা বেগমের বাসায় কিস্তি আদায় করছিলেন।
উদ্দীপন শাখার শাখা ব্যবস্হাপক বেলাল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমরা আসলে তাদের খোঁজ খবর নিতে গিয়েছিলাম। কিস্তি আদায় করতে নয়। একই গ্রামে কিস্তি আদায় করতে আসেন ব্রাক এনজিও (দাবী) কর্মী অনিতা। তাকে জিজ্ঞেস করাতে তিনি কর্কশ ভাষায় বলেন আমাদের কাজ আমাদের করতে হবে। যারা কিস্তি দেবে তাদেরগুলো নিব, আর যারা ঋন প্রস্তাব করবে তাদের ফরম পূরন করব। তার কাছে শাখা ব্যস্হাপকের নাম্বার চাইলে দিতে অস্বীকৃতি জানান।
ব্রাক এনজিও (দাবী) শাখা ব্যবস্হাপক গোলাম মোস্তফার সঙ্গে কথা বললে তিনি সাংবাদিককে বলেন, আমাদের কিস্তি আদায় বন্ধ আছে। তিনি তৎক্ষনাৎ ফোনে কর্মী অনিতাকে চলে আসতে বলেন। ভুক্তোভ’গী নিয়ামতপুর সদও ইউনিয়নের মুড়িহারী গ্রামের নাজমা বলেন, এখন নিয়ামতপুরে কঠোর লকডাউন চলছে। গ্রামের লোকজন কাজ করতে পারছে না। কাজ না থাকায় সংসার চালানো নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কিস্তির চাপ দেওয়ায় এখন নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছে।
একই গ্রামের হোসনেআরা বলেন, আমার ছেলে ট্রলিতে কাজ করে। লকডাউনে উপজেলা সদরে ট্রলি ঢুকতে দিচ্ছে না। ফলে আয় বন্ধ হয়ে গেছে। এখন পেট চালাব না কিস্তি চালাবো কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। একই গ্রামের রোজিনা খাতুনের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, আমার স্বামী দিন মজুরির কাজ করেন। লকডাউনে কাজ না থাকায় তিনবেলা খেয়েপরে কোন রকম জীবনধারণ করছি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জয়া মারীয়া পেরেরা বলেন, সকল এনজিও’র কিস্তি আদায় বন্ধ আছে। ইতোমধ্যে ব্রাকের দুজন করোনা আক্রান্ত হওয়ায় তাদেরসহ সকল স্টাপকে নিরাপদ অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে। এমতাবস্থায় কিস্তি আদায় করছে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।