মহান বুদ্ধ অবতার নয়ঃ তিনি মহামানব

ড. এফ. দীপংকর মহাথের 

কারো কারো মতে বুদ্ধ হিন্দুদের দেবতা বিষ্ণুর নবম অবতার। তাদের এই ধারণা ও মতবাদ সম্পূর্ণ ভুল ও প্রমাদের বহিঃপ্রকাশ। কারণ বুদ্ধ অবতার নয়;- তিনি মহামানব। অবতার বাদীরা জানে না যে বুদ্ধবাদ আর অবতারবাদ সম্পূর্ণ ভিন্ন। অবতারবাদের ধর্মতা বা সূত্র হল ক্রমবিবর্তনবাদ বা বারে বারে একই ব্যক্তি ভিন্নরূপ ধারণ করে ধরা-ধামে অবতীর্ণ হওয়া। কারণ- মহাভারতের ভীষ্মপর্বের অংশ বিশেষ শ্রীমৎ ভগবৎ গীতায় বিষ্ণুর অবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন-“যুগে যুগে আমি ধরাধামে অবতীর্ণ হব।’’ তার মানে তিনি তৃষ্ণামুক্ত নন। তিনি জন্ম, জরা, ব্যাধি ও মরণ ধর্মের অধীন।
.
মানবপুত্র বুদ্ধ ত্রিপিটকের অন্তর্গত ধম্মপদে বলেছেন- “জন্মগ্রহণের যে উপাদান তা আমি ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছি। আমি সমূদয় তৃষ্ণার ক্ষয় সাধন করে জন্ম-মৃত্যুর ওপারে উত্তীর্ণ হয়েছি। আমার তৃষ্ণা নির্বাপিত। আমি আর জন্মগ্রহণ করব না,- এটা আমার শেষ জন্ম।’’ বুদ্ধ যেঅবতার নয় এই উক্তি থেকে এটা মেঘমুক্ত আসমানের ন্যায় পরিস্কার। বুদ্ধ অবতার যেমন নন,- তেমন নিজের মুক্তিবলে স্বেচ্ছায় অন্যজনের রক্ষাকারী মুক্তিদাতা বা ত্রাণকর্তাও নন। সকল ধর্মগুরুরা বলেছেন- আমার শরণ গ্রহণ করলে কিংবা আমার কাছে আত্মসমর্পন করলে আমি তোমাদেরকে মুক্তি দেব।
.
ধর্মস্বামী মানব শ্রেষ্ঠ বুদ্ধ বললেন- কেউ কাউকে মুক্তি দিতে পারে না। শুদ্ধি- অশুদ্ধি উভয় যেমন নিজের উপর নির্ভর করে এবং মুক্তি লাভও নিজের উপর নির্ভর করবে। তাই বুদ্ধ মুক্তি লাভের মিথ্যা প্রলোভন না দেখিয়ে শিষ্যদেরকে উপদেশ দিলেন- “You yourselves must strive; the Buddhas only point the way. Those meditative ones who tread the path are released from the bonds of Mara” – তোমাদেরকে মুক্তির জন্য উদ্যমী হতে হবে। তথাগতগণ মুক্তির পথ প্রদর্শক মাত্র। যারা এই মার্গ অবলম্বন করেন, তেমন ধ্যান পরায়ন ব্যক্তি মারের বন্ধন হতে মুক্ত হন।
.
অন্যান্য ধর্মপ্রবক্তাগণের ন্যায় গীতার মধ্যে শ্রী কৃষ্ণ বলেছেন- “সর্ব ধর্ম পরিত্যাগ করে একমাত্র আমাকে আশ্রয় কর। আমি তোমাকে সমস্ত পাপ হতে মুক্ত করব”। বুদ্ধ শিষ্যদের বললেন- তোমরা মুক্তির জন্য আত্ম নির্ভরশীল হও। আত্ম প্রচেষ্টার মাধ্যমে তোমরা মুক্তি লাভ করতে পারবে। মুক্তির জন্য কারো উপর নির্ভরশীল হতে হবেনা। তিনি বললেন- মুক্তির জন্য পরনির্ভরতা বিপরীত এবং স্বনির্ভরতা সম্যক উপায়। অপরের উপর নির্ভরতার অর্থ হচ্ছে আত্মপ্রচেষ্টা ও স্বীয় শক্তিকে বিসর্জন এবং বলি দেওয়া। বুদ্ধ আরো বললেন- তোমরা নিজেই নিজের দীপ হও। নিজেই নিজের আশ্রয় হও. অন্যের মধ্যে আশ্রয় অন্বেষণ করো না। এমনই আত্ম নির্ভরশীলতার শিক্ষা দিয়েছেন গৌতম বুদ্ধ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!