আসুন প্রিয়জনদের পাশে দাড়াই হতাশা এবং আত্মহত্যা থেকে বাচাই

ইমরান হোসাইনঃ- সময়ের প্রেক একটি বিষয় অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ “হতাশা এবং আত্মহত্যা।” আসলে দীর্ঘদিনে ধরে জমা কষ্ট/ক্ষোভ, প্রিয়জনদের অবহেলা/অপমান, প্রত্যাশা-প্রাপ্তির ফারাক, ব্যার্থতা কিংবা কোন অপরাধবোধ মানুষের মধ্যে খুব ধীরে-ধীরে হতাশার জন্ম দেয়। আরো বহুবিধ কারনে একজন মানুষের মাঝে হতাশার জন্ম নিতে পারে। তবে একজন মানুষের মধ্যে এই হতাশার অধ্যায়টি বেশির ভাগ সময় প্রিয়জন, কাছের মানুষ, এমনকি আমাদের সবার অজান্তে অথবা চোখের অন্তরালেই স্লো পয়জিনের মতো প্রবেশ করে। কিন্তু আমরা সেই মানুষটির হতাশার রূপটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে তখনই আবিষ্কার করি, যখন কোন অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির উদ্ভব হয় অথবা একটি দুর্ঘটনা ঘটে যায়।

কিন্তু আমরা যদি একটু সচেতন হই, একটু যত্নবান হই আমাদের প্রিয়জন বা কাছের মানুষগুলোর প্রতি; একটু সহযোগীতা/সহানুভূতি এবং স্নেহ-মমতার হাত বাড়িয়ে দেই; তবে কিন্তু খুব সহজেই বেশির ভাগ অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি রোধ করতে পারি। মনে রাখবেন কোন হতাশাগ্রস্থ মানুষকে নিয়ে কখনোই মজা করবেন না। যদি এ কাজটি করেন, তবে জেনে রাখুন আপনি তার বাচার ইচ্ছা এবং পথটিকে আরো সংকুচিত করে দিচ্ছেন।

আর এতে করে যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে, তার দায় কিন্তু আপনি এড়াতে পারেন না; অন্তত নিজের বিবেকের আদলতের কাছে। একজন মানুষ একদিনে এবং ইচ্ছা করেই হতাশাগ্রস্থ হয়না। চারপাশের পরিবেশ-পরিস্থিতি তাকে হতাশাগ্রস্থ হতে কখনো-কখনো বাধ্য করে। হতাশাগ্রস্থ একজন মানুষকে তাই কখনো অপ্রয়োজনীয় জ্ঞান দিতে যাবেন না।

“তুমি তো অনেকের চেয়ে ভালো আছ” অথবা “তোমার কিসের অভাব?” এ টাইপের জ্ঞান একজন হতাশাগ্রস্থ মানুষের কোন প্রয়োজন নেই; কখনোই নেই। এগুলো পক্ষান্তরে ঐ মানুষটির হতাশকে আরো বাড়ায়।

কিন্তু ঐ মানুষটির প্রয়োজন তখন নিজের মনের অনুভূতি বা কথাগুলো শেয়ার করার মতো নির্ভরযোগ্য মানুষের। আপনি সে ক্ষেত্র এগিয়ে যান অথবা সে যদি নির্ভরযোগ্য মনে করে আপনার কছে তার কথা বা অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে আসে, তবে মনযোগ দিয়ে তার কথাগুলো শুনুন। এতে করে সে অনেক হালকা হয়ে যাবে এবং তার ভিতরকার বোঝা কিছুটা কমবে। পাশাপাশি আপনি ঐ মানুষটির খুব ভালো বন্ধুতে পরিনত হোন। হতে পারে আপনি ঐ মানুষটির মা/বাবা, ভাই/বোন, সন্তান, স্বামী/স্ত্রী, কোন আপনজন, বন্ধু অথবা পরিচিতজন।

তাকে নতুন ভাবে বাচার স্বপ্ন দেখতে সহায়তা করুন; নতুন করে ঘুরে দাড়ানোর প্রেরনা যোগান। জীবনটা যে নিছক মূল্যহীন নয়; এই অনুভূতিটুকু তার মধ্যে জাগ্রত করুন। কোন কিছুর অপ্রাপ্তি, কোন ব্যার্থতা অথবা একটি মাত্র ভুলেই যে জীবনের সবকিছু শেষ হয়ে যায়না; এ কথাটি তাকে যথার্থ ভাবে বুঝিয়ে দিন। তাকে নতুন উদ্যমে পথ চলার সাহস যোগান।

তার ভিতরকার নেগিটিভ চিন্তাধারা এবং ইমোশনকে দূর করার চেষ্টা করুন। তাকে উপলব্ধি করতে বুঝিয়ে দিন, নেগেটিভ যে কোন ‘ইমোশন এবং চিন্তা’ তার অথবা তার পাশের মানুষগুলোর ক্ষতি ছাড়া কোন উপকার কখনোই বয়ে অনতে পারেনা। তাকে এমন কিছু করতে অনুপ্রানিত করুন, এমন একটা অবস্থান তৈরি করতে বলুন/সাহস যোগান, যা দেখে/যাতেকরে তার হতাশা এবং কষ্টের কারনের পিছনে থাকা মানুষগুলোর মুখে ছাই পড়ে।

পাশাপাশি তার ভিতর ধর্মীয় এবং নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করার চেষ্টা করুন। ধর্মীয় এবং নৈতিক মূল্যবোধ অনেক হতাশা এবং কষ্টকেই প্রশমিত করে; পাশাপাশি অনেক অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে সাহায্য করে। তবে তা হঠাৎ করেই একসাথে, একদিনেই অথবা খুব দ্রুত করতে যাবেন না। এতে হীতে বিপরীত হবার সম্ভবনাই বেশী। বরং সময় নিয়ে খুব ধীরে ধীরে এই কাজটি করুন। এভাবে আপনি ঐ মানুষটির আপনজনদের আপনজনে পরিনত হোন।

নিজের হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে তাকে শুধু খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলুন; দেখবেন কিছুটা সময় পর সে নিজেই ঘুরে দাড়িয়ে দৃঢ়ভাবে পথ চলতে শিখে গেছে।

ইমরান হোসাইন , সাইকলজিস্ট

০১৯১২২৩৮৭৬৯

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!