অর্ধশত প্রকল্প উদ্বোধনে পাবনায় যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

সৈয়দ আকতারুজ্জামান রুমী,পাবনা প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

দেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎ প্রকল্প ‘রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প’র দ্বিতীয় ব্যাচে কংক্রিট ঢালাইয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করতে আজ শনিবার (১৪ জুলাই) পাবনায় যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর এদিন বিকেলে প্রধানমন্ত্রী পাবনা জেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত পুলিশ লাইন মাঠে জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন। আর এই মঞ্চ থেকেই তিনি পাবনার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
সরকার গঠনের পর দ্বিতীয়বারের মতো পাবনায় প্রধানমন্ত্রীর আগমন জনমনে নাড়া দিচ্ছে নানা প্রাপ্তির বিষয় । সরব অবস্থায় রয়েছেন এ জেলার দলীয় নেতৃবৃন্দ। পাশাপাশি জনমানুষের মাঝে বিরাজ করছে নানা চাওয়া পাওয়ার হিসাব নিকেষ।

প্রধানমন্ত্রী পাবনায় আসছেন এমন দিনক্ষণ ঠিকঠাক হওয়ার পরপরই নড়েচড়ে বসেছেন জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন। আর সজোরে নড়ছেন দলীয় নেতৃবৃন্দ। অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে নির্বাচনী জনসভায় আখ্যায়িত করেছেন। আর তৃণমূল নেতাকর্মিরা বিশেষ করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তৎপরতাও অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।

আওয়ামীলীগের জেলা কমিটি, উপজেলা কমিটি, পৌর কমিটি এমনটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি পর্যায়ে সভা সমাবেশ উঠন বৈঠক চলছে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করতে। পাড়া মহল্লা, হাটবাজার ও রাস্তাঘাটে দৃশ্যমান বড়বড় প্লাস্টিক সাইন বোর্ড, প্যানাসাইন, তোড়ন, ব্যানার, ফেস্টুন। চলছে মাইকযোগে ব্যাপক প্রচারণা। সাটানো হয়েছে পোষ্টার। প্রধানমন্ত্রী আগমন ঘিরে দলের অঙ্গসংগঠনগুলো সরব অবস্থায় রয়েছে। আনন্দ শোভাযাত্রা, র‌্যালী বের করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর এই সফর ঘিরে জনদূর্ভোগের শিকার পথচারীদের একটু স্বস্তির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ভাঙ্গা চোড়া, গর্ত ভরা রাস্তাঘাট। পাবনা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কসহ পাবনা-ঈশ্বরদী, পাবনা-পাকশী রূপপুর, পাবনা-চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, আটঘরিয়াসহ বিভিন্ন সড়কগুলোতে চলছে রিপেয়ারিংয়ের কাজ। খানাখন্দ হচ্ছে ভরা। তবে এ কাজের মানে সন্তুষ্ট নন সাধারণ মানুষ। সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং সরকারি বিভিন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নয়ছয় করেই কাজ করে যাচ্ছেন। তবুও এই কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হবে না এমন দাবী সাধারণ মানুষের।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী এ দিন পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশীস্থ রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের দ্বিতীয় কংক্রিক ঢালাই কাজের উদ্বোধন করবেন। এরপর তিনি পাবনা পুলিশ লাইন মাঠে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন। এ সময় তিনি ঈশ্বরদী-পাবনা-ঢালারচর রেললাইন, ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, জেলার বিভিন্ন উপজেলার বেশ কয়েকটি ভূমি অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীনিবাস, বিভিন্ন সড়ক, বড়াল নদীর উপর ব্রীজ নির্মাণ কাজের উদ্বোধনসহ প্রায় অর্ধশতাধিক নানা প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দলীয় নেতাকর্মিদের আলাপকালে তারা বলেন, পাবনাবাসীর স্বপ্নের নিমার্ণাধীন ‘ঈশ্বরদী-পাবনা-ঢালারচর’ রেলপথ আর একই জেলায় দেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্প রূপপুরের আলোয় সারাদেশ আলোকিত করার প্রত্যয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাবনায় আসছেন। তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় দফায় পাবনা আগমনে এ জেলাবাসীর মাঝে বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনা বিরাজ করছে। বইছে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী সহ দলের তৃণমূল পর্যায়ে নেতা ও কর্মিদের মধ্যে আনন্দের বন্যা। চারিদিকে সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। চলছে মঞ্চ তৈরি, তোরণ নিমার্ণ, আলোকসজ্জা, রাস্তা ও সার্কিট হাউজ সংস্কারের পাশাপাশি চলছে সৌন্দর্য্য বর্ধণ কাজ। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে নিশ্চিত করা হয়েছে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার বলয়।

তথ্যমতে, রাশিয়ান রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি কর্পোরেশন (রসাটমের) নেতৃত্বে ২০১৩ সালে শুরু হয় দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প কাজ। রূপপুর প্রকল্পে রিঅ্যাক্টর ঘিরে রয়েছে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বলয়। এ প্রকল্প নির্মাণে প্রতিদিন রাশিয়ার বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশি মিলে প্রায় ১ হাজারের বেশি কর্মী কাজ করছেন। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালুর সম্ভাব্যদিন ২০২৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে জাতীয় গ্রিডে বাড়তি ২,৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাবনার জনসভা ঘিরে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন ও সংবর্ধনা দেওয়ার পাশাপাশি দলীয় সভা, জনসভাকে সাফল্যমন্ডীত করতে দলীয় কার্যালয়ে, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রস্তুতি সভা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। পাবনাবাসী এখন প্রধানমন্ত্রীকে সাদরে গ্রহণের অপেক্ষায় রয়েছেন।

জনসভা ঘিরে পাবনার পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির পিপিএম বলেন, গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে, ব্লক রেড চেক পোষ্ট জোড়দার করা হয়েছে। এসএসএফ, পিজিআর থাকছে, পাশাপাশি রূপপুর পারমানবিক কেন্দ্রটি একটা কেপিআই অন্তর্ভূক্ত থাকায় সেনাবাহিনীর একটা ভূমিকা তো থাকছেই। তিনি বলেন, এছাড়া জেলা পুলিশের বাইরেও অন্য জেলা থেকেও পুলিশ ফোর্স আনা হয়েছে। মূলত: আগামী ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর আগমন কে ঘিরে নিশ্চিত করা হয়েছে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার বলয়।

প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে জেলার বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের মধ্যে রয়েছে নানা চাওয়া পাওয়ার হিসেব। অনেক দিয়েছেন, তারপরও এ দাবী যেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে মায়ের কাছে সন্তানের চাওয়ার মতো। জেলার সুজানগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, পৌর মেয়র আলহাজ্ব আব্দুল ওয়াহাব বলেন, প্রধানমন্ত্রী অনেক দিয়েছেন, তারপরও ঢাকার সাথে এ অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ ও দ্রুত করতে কাজীরহাট-আরিচা-দৌলতদিয়া ওয়াই প্যাটানের ব্রীজ নির্মাণ এখন সময়ের দাবী।
আসন্ন নির্বাচন ঘিরে প্রধানমন্ত্রী এই সফর সাধারণ মানুষ, দলীয় নেতৃবৃন্দসহ সুধীজনের মধ্যে বিরাজ করছে নানামুখি কল্পনা। কি দেবেন, কি দেওয়া প্রতিশ্র“তি আর আসন্ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তি যোগ বিয়োগের হিসাব কষছেন অভিজ্ঞনেরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!