আল্লাহর দেখা হোল না, পরকাল ভরসা

আল্লাহর দেখা হোল না, পরকাল ভরসা-
ডা. আওলাদ হোসেন

অনেক চেষ্টা করলাম আল্লাহকে দেখবো বলে অন্য ধর্মের সংগে একানেই হোঁচট খেতে হয় স্রষ্টা না দেখা। আমার বিশ্বাস ছিল আকাশে আল্লাহ আছেন এবং কোন না কোন আকারে আছেন। তার পর মেরাজে নবীজী (দ:) অবশ্যই দেখা করেছেন। দীর্ঘ দিনের আল-কুরআন বাংলায় পড়ে দেখতে পেলাম আল্লাহকে দেখার ব্যাপারটি খুবই কঠিন- (৭ঃ১৪৩) তার পর মূসা যখন আমার নির্ধারিত সময়ে এসে হাজির হল এবং তার সাথে তার রব কথা বললেন, তখন সে বললঃ হে আমার রব! আমাকে আপনার দর্শন দিন, যেন আমি আপনাকে দেখতে পাই। তিনি বললেনঃ তুমি আমাকে কিছুতেই দেখতে পাবে না। তবে তুমি এ পাহাড়ের দিকে দৃষ্টিপাত কর যদি তা স্বস্থানে স্থির থাকে তাহলে তুমি আমাকে দেখতে পারবে। তার পর যখন তার রব পাহাড়ের উপর জ্যোতির বিকাশ ঘটালেন তখন তা পাহাড়টিকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলল এবং মূসা অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। যখন সে জ্ঞান ফিরে পেল তখন বললঃ আপনি পবিত্র মহান, আমি আপনর কাছে তওবা করছি এবং মু’মিনদের মধ্যে আমিই প্রথম। দেখা হোল না। আল্লাহর শক্তি (২ঃ২৫৫) আল্লাহ্ ছাড়া কোন উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সব কিছুর ধারক। তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না তন্দ্রা আর না নিদ্রা। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে তা সবই তার। এমন কে আছে, যে তার কাছে সুপারিশ করবে তার অনুমতি ছাড়া? তাদের সামনে ও পেছনে যা কিছু রয়েছে তা সবই তিনি জানেন। যা তিনি ইচ্ছে করেন তাছাড়া তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না। তাঁর সিংহাসন আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর এদের রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে ক্লান্ত-শ্রান্ত করে না। তিনি মহান, শ্রেষ্ঠ। (৩ঃ২৬-২৭) বলুন হে আল্লাহ্! তুমিই মালিক সার্বভৌম শক্তির। তুমি যাকে ইচ্ছে রাজ্য দান কর এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছে রাজ্য কেড়ে নাও, যাকে ইচ্ছে তুমি সম্মানিত কর এবং যাকে ইচ্ছে অপমানিত কর। সকল কল্যাণ তোমারই হাতে। নিশ্চয় তুমি সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
তুমিই প্রবেশ করাও রাতকে দিনের ভেতরে এবং দিনকে রাতের ভেতরে। তুমিই জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে বের করে আন, আবার মৃতকে জীবিতের ভেতর থেকে বের কর। যাকে চাও তুমি অপরিমিত রিযিক দান কর। পুনরুত্থান (৩৬: ১২, ৭৭) আমিই মৃতদেরকে জীবিত করি এবং আমি লিপিবদ্ধ করে রাখি যা তারা পূর্বে প্রেরণ করে, আর যা তারা পশ্চাতে রেখে যায়। আমি প্রত্যেক বস্তু স্পষ্ট কিতাবে হেফাযত করে রেখেছি। মানুষ কি লক্ষ্য করে না যে, আমি তাকে শুক্রবিন্দু থেকে সৃষ্টি করেছি? অত:পর সে হয়ে পড়ল প্রকাশ্য বিতন্ডাকারী।
ইতিহাসের শিক্ষাঃ- সূরা হুদ (১৪৬) আল্লাহ্ বললেনঃ হে নূহ! নিশ্চয় সে তোমার পরিবারভূক্ত নয়, অবশ্যই সে অসৎকর্মপরায়ণ। অতএব আমার কাছে এমন বিষয়ের আবেদন কর না, যে সম্বন্ধে তোমার জ্ঞান নেই। আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যে, তুমি যেন অজ্ঞদের শামিল হয়ে না পড়।
আর এ “আদ জাতি, এরা অস্বীকার করেছিল তাদের রবের নিদর্শনসমূহ এবং অমান্য করেছিল তাঁর রাসূলদের: তারা অনুসরণ করত প্রত্যেক উদ্ধত স্বৈরাচারীর আদেশ। আর যারা সীমালংঘন করেছিল, এক বিকট গর্জন তাদেরকে পাকড়াও করল, ফলে তারা নিজেদের ঘরে উপুড় হয়ে পড়ে রইল।
আল্লাহর পরিচয়ঃ সূরা নূর
আল্লাহ আসমান ও জমিনের জ্যোতি, তাঁর জ্যোতির দৃষ্টান্ত যেন একটি তাক, তাতে আছে একটি প্রদীপ, সে প্রদীপটি একটি কাঁচের ফানুসের মধ্যে রয়েছে, কাঁচের ফনুসটি যেন একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র, সে প্রদীপ জ্বালানো হয় পূত-পবিত্র যয়তুন বৃক্ষের তৈল দিয়ে, যা পূর্বমুখীও নয় এবং পশ্চিমমুখীও নয়; অগ্নি তা স্পর্শ না করলেও যেন তার তেল নিজেই উজ্জ্বল আলো দিচ্ছে, জ্যোতির উপর জ্যোতি। আল্লাহ্ যাকে চান নিজের জ্যোতির দিকে হেদায়ত দান করেন। আল্লাহ মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত সমূহ বর্ণনা করেন। আর আল্লাহ প্রতিটি বস্তু সম্বন্ধে খুব ভালরূপে অবগত আছেন। আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন পৃথিবীর সবকিছু পরকালের জন্য সবই সৃষ্টি করে রেখেছেন পার্থক্য শুধু এ পার আর ঐপার মধ্যে সংক্ষিপ্ত জীবন যা আমরা ভোগ করি আর অপরটি শুধু পরীক্ষার অপেক্ষায়। সত্যবাদীরা পুরস্কৃত হবে প্রতিশ্র“ত সময়ে কিন্তু কুরআনের জ্ঞানের অভাবে এবং প্রাচুর্যে পৃথিবীটাই ভোগের বস্তু হয়ে গেছে অপরটি শুণ্যের কোঠায় অবশ্য কোঠা নিধারণ করাই আছে যা জন্ম মৃত্যুকে একই পর্যায়ের রাখা হয়েছে।
(১১ঃ৩১) আর আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ধন-ভান্ডার আছে, আর আমি গায়েব জানি এ দাবিও করি না, আর এ কথাও বলি না যে, আমি ফেরেশতা। তোমাদের দৃষ্টিতে যারা হেয় আমি তাদের সম্বন্ধে বলি না যে, আল্লাহ্ তাদেরকে কখনও কল্যাণ দান করবেন না। আল্লাহ্ ভাল জানেন যা আছে তাদের অন্তরে। অতএব, এরূপ কথা বললে আমি সীমালংঘনকারীদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে পড়বো।
(১১ঃ৪১) সে বলল-এস, তোমরা নৌকায় আরোহন কর, আল্লাহ্র নামে এর গতি ও স্থিতি। নিশ্চয় আমার রব পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(৬ঃ৭৫) আর এরূপেই আমি ইব্রাহীমকে দেখিয়েছি আসমান ও জমিনের অত্যাশ্চর্য বস্তুসমূহ, যেন তিনি দৃঢ় বিশ্বাসীদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যান।
(৬ঃ৭৯) নিশ্চয় আমি একাগ্রচিত্তে শুধু তাঁরই দিকে আমার মুখ ফিরাচ্ছি যিনি সৃষ্টি করেছেন আসমান ও জমিন, আর আমি মুশরিকদের দলভূক্ত নই।
(১১ঃ৮২) অবশেষে যখন আমার আদেশ এসে গেল, তখন আমি সে জনপদকে উলটিয়ে দিলাম এবং তার উপর ক্রমাগত বর্ষণ করলাম কাঁকর, পাথর-
(১৫ঃ৭১-৭৬) লূত বলল- তোমরা যদি কিছু করতে চাও, তবে এই আমার কন্যারা আছে।
আপনার জীবনের কসম, তারা তো আপন নেশায় মত্ত রয়েছে।
তারপর সূর্যোদয়ের সাথে সাথে তাদেরকে পাকড়াও করল এক বিকট আওয়াজ; তার পর আমি সে জনপদটিকে উল্টে দিলাম এবং তাদের উপর বর্ষণ করলাম পোড়া মাটির প্রস্তর। নিশ্চয় এতে রয়েছে অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন লোকদের জন্য নিশ্চিত নিদর্শন।
(২৮ঃ৩০) যখন মূসা উক্ত আগুনের কাছে পৌছলেন, তখন উপত্যকার ডান দিক থেকে সেই পবিত্র স্থানটির একটি বৃক্ষ থেকে ডেকে বলা হলঃ হে মূসা! আমিই আল্লাহ্, জগত সমূহের পালনকর্তা। (২৬ঃ৬০-৬৬) ফেরাউনের লোকেরা সূর্যোদয়কালে তাদের পশ্চাতে এসে উপস্থিত হল। অত:পর যখন উভয় দল পরস্পরকে দেখল তখন মূসার সঙ্গীরা বললঃ আমরা তো ধরা পড়ে গেলাম। মুসা বললেন: কখনও নয়; আমার রব তো আমার সাথে আছেন, তিনিই আমাকে এখনই পথ দেখাবেন। অত:পর আমি ওহীর মাধ্যমে মূসাকে আদেশ করলাম তোমার লাঠি দিয়ে সাগরে আঘাত কর। ফলে তৎক্ষণাত সাগর বিদীর্ণ হয়ে গেল এবং প্রত্যেক ভাগই বিরাটকায় পর্বতের মত ছিল; আর সেখানে আমি পৌছিয়ে দিলাম অপর দলটিকে এবং আমি মূসাকে ও তার সঙ্গীদের সবাইকে উদ্ধার করলাম। অত:পর দলটিকে নিমজ্জিত করলাম।
(৩৬ঃ৫৫-৫৮) নিঃসন্দেহে বেহেশতবাসীরা এদিন আনন্দে মশগুল থাকবে। তারা এবং তাদের সঙ্গিনীরা সুশীতল ছায়াতলে, সুসজ্জিত পালঙ্কের উপর হেলান দিয়ে উপবিষ্ট থাকবে। সেখানে তাদের জন্য থাকবে প্রত্যেক প্রকার ফলমূল এবং যা কিছু তারা চাইবে তা সবই। তাদেরকে বলা হবে ‘সালাম’, পরম দয়ালূ আল্লাহ্র তরফ থেকে।
(৩৬ঃ৭৭-৭৯) মানুষ কি লক্ষ করে না যে, আমি তাকে শুক্রবিন্দু থেকে সৃষ্টি করেছি? অতঃপর সে হয়ে পড়ল প্রকাশ্য বিতণ্ডাকারী। আর সে আমার সম্পর্কে অভিনব কথা বর্ণনা করে, অথচ সে নিজের সৃষ্টির কথা ভুলে যায়। সে বলে: কে জীবিত করবে এ হাড়গুলোকে, যখন তা পঁচে-গলে যাবে? বলুনঃ তিনিই এগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করবেন, যিনি তা প্রথমবারে সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি সর্বপ্রকার সৃষ্টি সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন।
নৈশ ভ্রমণঃ
(১৭ঃ১)-তিনি পবিত্র মহিমাময়, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাতের বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন, মসজিদে হারাম থেকে মসিজদে আকসা পর্যন্ত, যার চতুষ্পার্শ্বকে আমি বরকতময় করেছি-যাতে আমি তাকে দেখাই আমার কুদরতের কিছু নিদর্শন; নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। সময়জ্ঞানঃ
(৭৬ঃ১-২) অবশ্যই মানুষের উপর কাল প্রবাহের এমন কিছু সময় অতিবাহিত হয়েছে, যখন সে কোন উল্লেখযোগ্য বস্তুই ছিল না। আমি তো মানুষকে মিশ্র শুক্রবিন্দু থেকে সৃষ্টি করেছি তাকে পরীক্ষা করার জন্য; এ কারণে আমি তাকে করেছি শ্রবণশক্তি সম্পন্ন ও দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন। এ ধরনের কাহিনী এবং আয়াত আছে হাজার হাজার। অতএব দেখা যাচ্ছে যে, পৃথিবীতে আল্লাহকে দেখার কোন পথই খোলা নেই, গায়েব। পরকালে দেখা হবে। এখন মানুষ সৃষ্টি সম্বন্ধে ২/১টি কথা বলতেই হয়। মন প্রতিটি মানুষের পৃথক বস্তু কোথায় থাকে দেখা যায় না। যেমন আত্মা থেকে আল্লাহর ভাষায় কুল আমিনু বিহী আওলাতুমিনু অথবা অবিল হাক্কে আনযালনাহু ওয়াবিল হাক্কি নাযাল। প্রকৃতিতে যেমন বৈচিত্রের খেলা, দেশ-কালপাত্র অথবা বাগানে ফুলের রাজা, বনে পশুর রাজা, মানুষের মধ্যে একেক দেশে একেক ধরনের রাজা এবং প্রজা দেখা যায়, বাঁশ ঝাড়, পাহাড়-পর্বত, নদী-সাগর, গুচ্ছগ্রাম বা শহর দেখা যায়। মানুষের মস্তিস্কও ঠিক অনুরূপভাবে গড়া যা স্রষ্টা পরিচালনা করে থাকেন মানুষকে কিছু করতে হয় না। শুধু ফাঁদে পা দেয়া মাত্র। পরিণতির জন্য মানুষই দায়ী সুখে অথবা দু:খে। প্রকৃতির বন্দনাকারীরা শুধু আভরন নিয়েই ব্যস্ত কিন্তু প্রকৃতির স্রষ্টাকে রাত্রির অন্ধকারের জন্য বুঝতে পারে না। সূর্য ওঠে আর ডুবে, কে উঠালো এবং কে ডুবালো তা কেউ দেখতে পায় না। দুর্ভাগ্য বাঙালির তাদের পরিচয় কোনটি? প্রতিটি মুসলমান এবং মুসলিম রাষ্ট্রে বিপদ আশে সতর্ক করার জন্য কারণ পরকালে শুধু তাদেরই বিচার হবে এবং পরকালে আল্লাহকে দেখা যাবে পৃথিবীতে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!