কুষ্টিয়ায় অটিস্টিক শিশুদের বিশেষ শিক্ষা কেন্দ্র ‘এনডিডি প্রটেকশন অব সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার’ স্কুলের কার্যক্রম চলছে

এস এম জামাল, কুষ্টিয়া, বিশেষ প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

কুষ্টিয়া শহরের আমলাপাড়ায় অবস্থিত অটিজম শিশুদের জন্য বিশেষভাবে পরিচালিত স্কুলটি গেলো বছরে অটিষ্টিক শিশুদের জন্য এ স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। মোট ৩৫ জন শিশু নিয়ে এ স্কুলের যাত্রা শুরু।

শিশু কেন্দ্রিক পরিকল্পনা অনুসারে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় অটিষ্টিক শিশুদের শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে।শিক্ষকদের সহযোগিতায় ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে এই বিশেষ শিশুরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, লেখাপড়ার পাশাপাশি শিক্ষকদের পরিশ্রম আর ভালোবাসায় আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি গাওয়া, ছবি আঁকা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে শিশুরা। কেউবা লিখছে, কেউবা খেলছে।

এই স্কুলের সহকারী শিক্ষক সাইফ আল আজাদ বলেন, “এখানে ভর্তির ৩৫ জনের মধ্যেই ৩৫ রকম সমস্যা। এক একজনের বুদ্ধির লেভেল একেক রকম হওয়ায় সে অনুযায়ী আমরা তাদের শেখানোর চেষ্টা করে থাকি। এজন্য আমরা ৬ মাস ব্যাপী প্রশিক্ষণ নিয়েছি। কিভাবে এই অটিষ্টিক শিশুদের পাঠদান করাবো। তাদের সাথে কিভাবে আচরণ করবো। কিভাবে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবো।

এনডিডি প্রটেকশন অব সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ আফসানা বেগম জানান, নিজের ছেলের অটিজম চিহ্নিত হওয়ার পর তাকে স্কুলে ভর্তি করতে গিয়ে পড়েছিলেন নানা ঝামেলায়। সেখান থেকে নিজেই তার সমাধানের জন্য এই মহৎ উদ্যোগ নেন বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, “নানা কারণে বাংলাদেশে বাড়ছে অটিস্টিক শিশুর সংখ্যা। সে তুলনায় স্কুলের সংখ্যা খুবই কম। সেই সংখ্যা বাড়াতে কাজ করছি আমরা। “এই স্কুলের প্রধান উদ্দেশ্য বিশেষ শিশুদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া।

আটিজম শিশুদের জন্য পরিচালিত এ স্কুলটিতে প্রতিটি বাচ্চার সব সময় বিশেষ যত্ন নেওয়া হয়। আমরা চাই সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ এ সব শিশুদের পাশে এগিয়ে আসুক। ভালবাসার হাত বাড়িয়ে দিক”। তিনি বলেন, আমাদের এই প্রতিষ্ঠানে শহরের বিভিন্ন এলাকার ৩৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এছাড়াও মোট ১০ জন শিক্ষক কর্মচারী আছে।

সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি অটিস্টিক শিশুর বিভিন্ন থেরাপির প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমাদের এ প্রতিষ্ঠানে সেরকম থেরাপীর ব্যবস্থা নেই। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আরও বেশি পরিমানের থেরাপীসহ তাদের চিত্তবিনোদনের জন্য আরও কিছু আনুসঙ্গিক ব্যবস্থা করতে।

অভিভাবক সেলিম রেজা জানান, আমার ছেলে বয়স ৬ বছর।বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেভাবে বা যে হারে কথা বলা স্বাভাবিক, সেই অনুযায়ী তার ছেলের উন্নতি চোখে পড়ছিল না। এছাড়া আচার-আচরণেও বড় ধরণের পার্থক্য চোখে পড়ে তার। তিন বছর পর জানতে পারি সে অটিষ্টিক। এরপর অনেক চিকিৎসা সেবা দিয়েও ব্যার্থ হই। এখানে ৬ মাস এখানে আনার পর শিক্ষকদের আন্তরিকতায় অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। আগে কথা বললে শুনতো না। কিন্তু এখন অন্তত কথা বললে সে শুনছে।

কুষ্টিয়া শহর সমাজসেবা সমন্বয় পরিষদের সভাপতি মোঃ গাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে বাবা-মায়েরা কত অসহায়। প্রতিটি ক্ষেত্রে এই শিশুটির জন্য তাঁদের হাত-পা বাঁধা। এই শিশুদের কাছে পৌঁছাতে হবে। তবে তা বিচ্ছিন্নভাবে নয়, সঠিক পরিকল্পনা ও সঠিক দায়িত্ব বণ্টনের মাধ্যমে এই শিশুদের জন্য কাজ করতে হবে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের কাছে আমরা, অর্থাৎ বিশেষ সন্তানের মা-বাবারা বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যা বা অটিজমের বিষয়টি সায়মা ওয়াজেদের কারণেই আজ প্রচার পেয়েছে। আমরা অটিজমদের নিয়ে কুষ্টিয়ায় শুরু করেছি। ইতিমধ্যেই অনেকের বেশ পরিবর্তনও এসেছে।

তিনি বলেন, “শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ। অটিজম শিশুদের মধ্যে আনন্দ পৌঁছে দিতে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি তাদের শিক্ষাদান এবং মেধা বিকাশে কাজ করছি। তিনি মনে করেন, সমাজের সবাই এগিয়ে এলে এসব শিশুরাও সাধারণ শিশুদের মতো জীবনযাপন করতে পারবে। আমাদের সবারই উচিত এসব শিশুদের বন্ধু হয়ে তাদের পাশে থাকা তাদের মানসিক ও শারীরিক সাপোর্ট দেওয়া”।

অটিজম নিয়ে কাজ করা মাজনুল কবীর পান্না বলেন, গ্রামের একজন মা যখন বুঝতে পারেন যে তাঁর সন্তানটি অন্য শিশুদের থেকে আলাদা, তখন তিনি একেবারে অসহায় হয়ে পড়েন। কারণ তিনি কিন্তু জানেন না কী করতে হবে। তিনি হয়তো প্রথমে কোনো স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র বা সদর হাসপাতালে যাবেন। কিন্তু সেখানকার স্বাস্থ্যকর্মীরা অটিজমের মতো জটিল মানসিক ব্যাধি সম্পর্কে কতটুকু জানেন বা বোঝেন। শিশুর বেড়ে ওঠার যে ধাপগুলো আছে, সেগুলো অটিজমে আক্রান্ত শিশুর জন্য প্রযোজ্য কি না, তা স্বাস্থ্যকর্মীরা অনেকেই জানেন না। তাই একটা নির্দিষ্ট স্থান হলে যাতে করে সহজেই বুঝতে পারে তার সন্তান অটিজমে আক্রান্ত। তাহলে তার চিকিৎসা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!