খানসামায় কালবৈশাখী ঝড়ে ২৩ টি পরিবারের ঘর-বাড়ি লন্ডভন্ড

ভূপেন্দ্র নাথ রায়, দিনাজপুর প্রতিনিধি  । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

দিনাজপুরের খানসামায় কালবৈশাখী ঝড়ে ২৩ পরিবারের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে লন্ডভন্ড হয়েছে।

গতরাত ৩টায় হঠাৎ ঝড়বৃষ্টিতে আত্রাই নদীর কোল ঘেষে উপজেলার খামারপাড়া গ্রামের ২৩ পরিবারের থাকার ঘর, রান্নাঘর, গোয়ালঘর কারো উড়ে গেছে কিংবা ভেঙ্গে পড়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, খামারপাড়ার মেম্বারপাড়ায় কারো ঘর ভেঙ্গে পড়েছে আবার কারো ঘর উড়ে গিয়ে অন্যত্র গিয়ে পড়ে আছে। ৬৭ বছরের বৃদ্ধ ব্রজেন রায়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তার ২টি শোয়ার ঘর, ১টি রান্না ও গোয়াল ঘর ভেঙ্গে পড়ে আছে। গোয়াল ঘরে মৃত হয়ে পড়ে আছে তার শেষ সম্বলের গাভী। অবশিষ্ট আর একটি গরু প্রচন্ড আঘাত পাওয়ায় স্থানীয় কসাইয়ের কাছে বিক্রি করেছে বলে জানান ব্রজেন রায়। ব্রজেন রায় জানান, আমার কোন জমিজমা নেই। এই বয়সে অন্যের জমিতে কাজ করার পাশাপাশি গাভীগুলোর দুধ বিক্রি করে সংসার চালাই। এখন তো থাকার জায়গা টুকুও রইলো না।

ব্রজেনের ছেলে হিরম্ব রায় জানান, আমি ১ টা ঘরেই থাকি ও গবাদি পশু পালন করি। ঝড় আমার সেই ঘরটাও উড়ে নিয়ে গেল।

বিধবা বিশোবালা রায় বলেন, আমার স্বামী অনেক আগেই মারা গেছে। নেই কোন ছেলে সন্তানও। ৪ মেয়ে তাদেরও বিয়ে দিয়েছে এলাকার লোকজন। শেষে দশের লোকজন মিলে হরিবাসরের পার্শ্বে থাকার জন্য একটি ঘর করে দেয়। ইউনিয়ন পরিষদ হতে প্রাপ্ত বয়স্ক ভাতার কার্ড ও মানুষের বাড়িতে কাজকর্ম করে নিজেই চলি। কিন্তু গতরাতের ঝড় দশের লোকজনের দেওয়া ঘরটুকুও উড়ে নিয়ে গেছে। আজ রাতটি কোথায় থাকব তা নিয়েই ভাবছি।

ভূমিহীন অতুল রায় (৭৭) বলেন, আমার স্ত্রী রেনু বালা মাটি কাটার কাজ করে সংসার চালায়। আমি তো কিছু করতে পারি না। তার ওপর ঝড় আমার থাকা ও রান্না ঘর টুকু উড়ে নিয়ে গেল।

খামারপাড়া গ্রামের মেম্বার ও দাস পাড়ার ভ্যানচালক টংক রায়, দীলিপ, পুরঞ্জয় রায়, খোচা রায়, চন্দন, রুহি দাস, সুরেশ, গজেন, বাবু, নুর রতন ও হামিদুল সহ ২৩ জনের বাড়িতে ঘুরে ঘুরে দেখা যায়, কারো ১ টা আবার কারো ২ টা কিংবা কারো ৩/৪ টা ঘর পর্যন্ত ঝড়ে ভেঙ্গে পড়েছে নতুবা উড়ে গিয়ে অন্যের বাড়িতে, ক্ষেতে কিংবা খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে। বাড়িঘরের পাশাপাশি উপড়ে পড়েছে মোটা মোটা আমের গাছ। করলা ও ভুট্টা ক্ষেত মাটির সাথে মিশে রয়েছে। সকালের দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম ও খামারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান সাজেদুল হক সাজু ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলো পরিদর্শন করেন ও আর্থিক ভাবে সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। পরে দুপুর ২টার দিকে উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ সহিদুজ্জামান শাহ ও ইউপি চেয়ারম্যান মিলে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের মাঝে ব্যক্তিগত ভাবে আর্থিক সহযোগিতা করেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম জানান, উপজেলার খামারপাড়া ইউপির খামারপাড়া গ্রামে প্রায় ২৩ জনের বাড়ি ঘর ভেঙ্গে যায়। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের মাঝে দ্রুত সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!