খানসামায় “রেটুন ক্রপ” পদ্ধতিতে ধানচাষ

খানসামা(দিনাজপুর) প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

দিনাজপুরের খানসামায় বেশ কয়েক বছর ধরে রেটুন ক্রপ পদ্ধতিতে ধান উৎপাদন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এ পদ্ধতিতে ধান উৎপাদন হচ্ছে। চাষিরা ইরি বোরো কাটার পর পড়ে থাকা ধান গাছের নাড়া (ধান গাছের গোড়া, মুড়া) থেকে ‘রেটুন ক্রপ চাষ’ পদ্ধতিতে পুনরায় ধান উৎপাদন করে বাড়তি ফসলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। এতে কৃষকের মনে ভীষণ আনন্দও দেখা যাচ্ছে।

গত বুধবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার পাকেরহাট, ছাতিয়ান গড়, আঙ্গারপাড়া, দুবলিয়া, ভেড়ভেড়ী, গোবিন্দপুর, গোয়ালডিহি, কাচিনীয়া, আগ্রা, চকরামপুর, বালাডাঙ্গী, জুগীরঘোপা সহ বেশ কিছু গ্রামে চাষীরা চলতি বছরে রেটুন ক্রপ পদ্ধতিতে ধান উৎপাদন করেছেন।

এর মধ্যে উপজেলার আঙ্গারপাড়া গ্রামের কৈ পাড়ার কৃষক মন্তোষ চলতি বছর ইরি বোরো মৌসুমে আড়াই বিঘা জমিতে ব্রি ধান-২৮ চাষ করেন। মে মাসের শুরুতে এসব ধান কেটে ঘরে তোলেন। আবহাওয়া জনিত কারনে এ বছর ধানের ফলন অন্যান্য বছরের তুলনায় কম হয়েছে। কিন্তু তিনি জমিতে পড়ে থাকা ধান গাছের নাড়া নষ্ট না করে পুনরায় ধান উৎপাদন করতে যত্ন নেন এবং ধান গাছের গোড়া কাঁচা থাকায় দ্রুত নতুন কুশি বের হয়। তবে কোন প্রকার সেচ ছাড়াই ধানের মাঝারি ফলন পেয়েছেন। তিনি ধান পেয়েছেন প্রায় ১২ মণ।

এছাড়াও ঐ এলাকার অনেকের পড়ে থাকা জমিতে নাড়া যত্ন করে ধান পেয়েছেন বেশ কয়েকজন কৃষক। এর মধ্যে কৈ পাড়ার বিধান রায় ১২ মণ, হরেন চন্দ্র রায় ১০ মণ, বিমল সরকার ৩ মণ, কুমোদ রায় ৬ মণ ধান সংগ্রহ করেছেন। আবার অনেকে এ পর্যন্ত ধান কাটেন নি। তবে তারাও প্রত্যেকে ৫-১২ মণ ধান সংগ্রহ করবেন বলে জানান। তারা বলেন, আমরা তো আগের এসব ধানের চারা কেটে গরু ছাগলকে খাওয়াতাম। কিন্তু এ বছর কাটা ধান গাছের গোড়া থেকে নতুন চারার ধান দেখে অবাক হয়েছি। অনেকে এ ধান সংগ্রহ করে লাভবান হয়েছেন।

অপরদিকে গোয়ালডিহি গ্রামের এছাড় পাড়ার ইউনুস আলী ১০ মণ, আঃ সামাদ ৬ মণ, মন্ডল তেলী ৬ মণ, সালেহা বেগম ২ মণ, ছেড়া মুন্সিপাড়ার সাহিদুল হক ৪ মণ, কাচিনীয়া গ্রামের শামীম হোসেন ১২ মণ, রবিউল ইসলাম ৪ মণ, অবিনাশ চন্দ্র ৫ মণ, নলবাড়ি গ্রামের বর্গাচাষী আবুল কালাম আজাদ ৪ মণ, মাহির উদ্দীন ২ মণ, ফয়জার রহমান ২ মণ, পাকেরহাট গ্রামের দুলাল চন্দ্র ১০ মণ, তপন চন্দ্র ৮ মণ, সুকারু চন্দ্র ৯ মণ, ভেড়ভেড়ীর নগেন রায় ৭ মণ, নরেশ চন্দ্র রায় ১০ মণ ধান সংগ্রহ করে লাভবান হয়েছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ আফজাল হোসেন বলেন, এটিকে ‘রেটুন ক্রপ’ বলা হয়। এ পদ্ধতিতে ধান চাষ করা যায়। বিশেষ করে ব্রি ধান-২৮ ও ২৯ ধানের গোড়া কাঁচা থাকে। তাই ধান কাটার পর এসব ধান গাছের নাড়া (গাছের মুড়া) থেকে কুশি বের হয়। আর এসব কুশি থেকে পুনরায় ধান উদৎপাদন সম্ভব। এ বছর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের অনেক কৃষক “রেটুন ক্রপ” (নাড়া থেকে ধানচাষ) করছেন। আমি তাদেরকে স্বাগত জানাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!