টানা বর্ষনে দিনাজপুরের চাষীরা মহাবিপাকে

দিনাজপুর প্রতিনিধি  । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

ঝড়বৃষ্টির কারনে দিনাজপুরের কৃষকরা মহাবিপাকে পড়েছে। টানা বৈরি আবহাওয়ায় তাদের কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে হিমশিম খাচ্ছে। কৃষি নির্ভর এ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় রবি ও খরিপ-১ শস্য চাষীরা মহা বিপাকে পড়েছে। এ জেলার রবি ও খরিপ মৌসুমের প্রধান ফসল রসূন, গম, পেঁয়াজ, ভুট্টা, শসা, ইরি, পাট। কোনমতে রবি শস্য ঘরে তুলতে না তুলতেই আবার বৃষ্টিপাত, বৈরি আবহাওয়া।

দিনাজপুরের বিস্তর এলাকা বীরগঞ্জ, কাহারোল, সেতাবগঞ্জ, সদর, চিরিরবন্দর এবং খানসামায় ব্যাপকভাবে ভুট্টার চাষ করা হয়। এই ভুট্টা নভেম্বর/ডিসেম্বর মাসে রোপন করা হয়। যদিও মার্চ থেকে ভুট্টা সংগ্রহ শুরু হয়েছে, এপ্রিল মাস ভুট্টা সংগ্রহ করার মূল সময়। এ সময় বেশীর ভাগ ভুট্টা পরিপক্ক হয়ে মোঁচা শুকিয়ে গেছে। অনেক চাষী বৃষ্টির ফাঁকে ভুট্টার মোঁচা সংগ্রহ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কিন্ত রোদ না ওঠার কারনে সংগৃহিত মোঁচা রোদে শুকাতে পারছেনা। প্রতিদিন প্লাস্টিক কাগজ দিয়ে মোঁচার (ভুট্টা) গাদা ঢাকা দেওয়া হচ্ছে। আবার আকাশ একটু ভালো হতেই খুলে দেওয়া হচ্ছে। এ যেন গাধার খাটুনি। তারপরও তারা  পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তাদের কষ্টার্জিত ফসল ঘরে তুলতে।

কিছু চাষী অতি বৃষ্টির ফলে তাদের ভু্ট্টা সংগ্রহ করতে পারছে না। ভুট্টার মোঁচা গাছ থেকে সংগ্রহ করা না হলে কালো হয়ে যাচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে মোঁচা থেকে চারা গাছ বের হচ্ছে। ভুট্টা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় না শুকানো হলে খৈ ফুটে না। খৈবিহীন এ ভুট্টা গো- খাদ্য ছাড়া আর কিছু হয় না। খানসামার ভুট্টা চাষী মজিবর, রহমান, ময়নুল, আছির, সুবাস, ছকি এর সাথে কথা বললে সুবাস জানায়, ‘ভুট্টার মোকছা ১০ দিন আগে পাকিসে, কিন্তু ঝড়বৃষ্টির জন্য ভুট্টা ছিড়ির পাচ্ছি না’। আবহাওয়া খারাপের কারনে কাচা ভুট্টা মাত্র ১৮-২০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

দিনাজপুর সদর আমবাড়ীর জাহাঙ্গীরের সাথে কথা বললে সে জানায়, তুমুল ঝড়বৃষ্টির কারনে ইরি ধানের পরাগয়নে সমস্যা হচ্ছে। ইরিধান বাতাসে হেলে পড়ছে।  এ বিষয়ে চিরির বন্দর উপজেলার কৃষকরা বিশেষ করে যারা ইছামতি নদীর দুপাশে ইরির চাষ করছে, তারা গভীর উৎকন্ঠায় আছে। কারন যে কোন মুহূর্তুতে তাদের ইরি পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে।

এদিকে সেতাবগঞ্জের রবিউল ইসলামের সাথে কথা বলে জানা যায়, এবার তার আমবাগান ও লিচুবাগানে প্রচুর মুকুল এসেছে। কিন্তু অতি বৃষ্টি এবং ঘনঘন ঝড়ের কারনে আম, লিচুর মুকুল ঝড়ে যাচ্ছে। লিচু ব্যবসায়ী লিটন জানান, ‘প্রথমে গাছে প্রচুর মুকুল আসায় আমি খুবই আপ্লুত।  ভাবছিলাম এবার লিচুতে লাভ হবে কিন্তু আবহাওয়া প্রতিকুলের কারনে মনে হয় আসল টাকা উঠবে না’

এদিকে বীরগঞ্জের কৃষক ভবতোষ, হাসু, খানসামার রমানাথ, রহিদুল, দুলাল, অহিমুদ্দিন, চিরিরবন্দরের তুষার, আফসার উদ্দীন জানান, তারা গম, আলু, রসূনের জমিতে পাট চাষ করেছেন কিন্তু পাটক্ষেতে হাটু পরিমাণ পানি জমেছে। কোন দিকে পানি বের করার উপায় নেই। ফলে পাটের কচি চারা পঁচে যাচ্ছে।

টানা বৈরি আবহাওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে গেছে। এইসএসসি শিক্ষার্থীরা মহাবিপাকে পড়েছে। দিনাজপুর পল্লীবিদ্যুত সূত্রে জানা যায়, পচন্ড ঝড়বৃষ্টিতে গাছের ডাল- পাতা বিদ্যুতের তারে হেলে পড়ে, ভেঙ্গে পড়ায় বিদ্যুত প্রবাহে সমস্যা হয়। আবার বজ্রপাতে বিদ্যুতের মাত্রা কয়েশগুন  বেড়ে যায়, তাই আবহাওয়া খারাপে বিদ্যুত প্রবাহ বন্ধ রাখা হয়।

কৃষকরা দিন গুনছেন কবে আবহাওয়া ভালো হবে, কবে তাদের পরিশ্রমের ফসল ঘরে তুলতে পারবে। এ নিয়ে কৃষকদের উদ্বেগ উৎকন্ঠার অন্ত নাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!