টঙ্গীতে ট্রেন দুর্ঘটনা: ভুল সিগন্যালে প্রাণ গেল ৫ জনের

অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

গাজীপুরের টঙ্গীতে ঢাকাগামী জামালপুর কমিউটার ট্রেন দুর্ঘটনায় পড়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। ভুল সিগন্যালের কারণে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৩২ জন। তাদের মধ্যে সাত জনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা পাঠানো হয়েছে।

রোববার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে টঙ্গীর নতুনবাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শী, ফায়ার সার্ভিস ও রেলওয়ে স্টেশন সূত্র জানায়। ফলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে কেবল নারায়ণগঞ্জ ছাড়া সারাদেশের ট্রেন চলাচল পাঁচ ঘণ্টা বন্ধ ছিল।

সংশ্নিষ্টরা জানান, টঙ্গী স্টেশন থেকে আধা কিলোমিটার দক্ষিণে নতুন বাজার এলাকায় যাত্রীবাহী জামালপুর কমিউটার ট্রেনটি দ্রুতগতিতে দুই নম্বর লাইন দিয়ে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। হঠাৎ করেই ট্রেনচালকের কাছে সিগন্যাল আসে লাইন পরিবর্তনের। এ সময় ঢাকা থেকে একটি ডেমু ট্রেন এক নম্বর লাইন দিয়ে আসছিল। স্টেশন থেকে আচমকা দেওয়া এমন সিদ্ধান্তে দুই নম্বর লাইন থেকে এক নম্বরে পরিবর্তন করতে গিয়ে দ্রুতগামী কমিউটারের পেছনের চারটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে যায়। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন ট্রেনের চালক। লাইনচ্যুত বগিগুলোর গতির কারণে ট্রেনটির দুটি বগি বেশ দূরে সরে যায়। একই ট্রেন বিভক্ত হয়ে পৃথক দুটি লাইনে গিয়ে উঠে পড়ে। ট্রেনের ছাদে থাকা যাত্রীরা ভয়ঙ্কর এমন দৃশ্য দেখে আত্মরক্ষার জন্য লাফিয়ে মাটিতে পড়তে থাকেন। লাফিয়ে মাটিতে পড়ে যাওয়ার পর পেছনের বগিটি তাদের কারও কারও শরীরের ওপর দিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ৩ যুবক। হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও ২ জনের মৃত্যু হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী, ফায়ার সার্ভিস ও রেলওয়ে স্টেশন সূত্র জানায়, টঙ্গী রেলস্টেশনে ট্রেনটি লাইন ক্রসিং করার সময় ভুল সিগন্যালের কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে স্টেশন মাস্টার হালিমুজ্জামান বলেন, এটা নিছকই একটা দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত না করে বলা যাবে না।

দুর্ঘটনার পর ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন হাজার হাজার যাত্রী। দুর্ঘটনার পরপরই উদ্ধারকারী একটি ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করে। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর ফের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত আলমগীর, শরীফ, ইসরাফিল, বাদল, মনির, হালিমা ও সামাদকে ঢাকায় পাঠানো হয়। এ ছাড়া বিপ্লব, শাহীন, ফিরোজ, লিয়াকত, রাজ্জাক, নজরুল ও আবু সাঈদ টঙ্গী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর শাহাদাত হোসেন নামে একজনের মৃত্যু হয়। তার বাবার নাম হামিদ হোসেন। শাহাদাতের বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার মশাখালী এলাকায়। বাড়ি থেকে গিয়ে তেজগাঁও এলাকায় রিকশা চালাতেন। নিহত আরও দু’জনের বাড়ি গফরগাঁও উপজেলায় বলে জানা গেছে। নিহত অন্যদের পরিচয় জানা যায়নি।

তদন্ত কমিটি গঠন : দুর্ঘটনার পরপর টঙ্গী এলাকায় ছুটে আসেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, হতাহতদের সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। কী কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটল, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। বাংলাদেশ রেলওয়ের (পূর্ব) চিফ ইঞ্জিনিয়ার মো. আরিফুজ্জামানকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটিকে আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ প্রমুখ। এরপর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্ল্লা খান প্রমুখ।(সূত্র-সমকাল)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!