টাঙ্গাইলে চলন্তবাসে প্রতিবন্ধি নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় সুপারভাইজার গ্রেফতার ॥ ধর্ষিতার ডাক্তারী পরিক্ষা সম্পন্ন॥ ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে

মো. রাশেদ খান মেনন (রাসেল), টাঙ্গাইল, বিশেষ প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

টাঙ্গাইলে বাসে প্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় বাসের সুপারভাইজার পলাতক এরশাদকে (৪০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ৩ সেপ্টেম্বর সোমবার ভোরে কালিহাতী উপজেলার বেনুকুর্শা গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সুপারভাইজারকে টাঙ্গাইলের আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশিকুজ্জামান মঙ্গলবার রিমান্ড আবেদনের শুনানীর দিন ধার্য করেন। একই সঙ্গে প্রতিবন্ধী ধর্ষিতা ওই নারীকে আদালতের নিরাপত্তা হেফাজত থেকে তার ভাইয়ের হেফাজতে দেয়ার আদেশ দেন। এর আগে প্রতিবন্ধী নারীর ভাইয়ের পক্ষে অ্যাডভোকেট শাহিন সিদ্দিকী আদালতে বোনকে ভাইয়ের জিম্মায় দেয়ার জন্য আবেদন করেন।

ওই নারীর ভাই ও বড় ভগ্নিপতি জানান, কোরবানির ঈদের ২০ দিন আগে ওই প্রতিবন্ধী নারী কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় তার বোনের বাড়িতে বেড়াতে আসে। ঈদের পরদিন কাউকে কিছু না বলে বোনের বাসা থেকে চলে যান। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও না পেয়ে তার বোন বাদী হয়ে ঢাকার সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ১ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল থেকে পুলিশের বার্তা পেয়ে কুষ্টিয়ার মিরপুর থানার পুলিশ তাদের বাড়িতে গিয়ে খবর দেয়। খবর পেয়ে শনিবার রাতেই তারা বঙ্গবন্ধুসেতু পূর্ব থানায় চলে আসেন। সেখানে ছবি দেখে ওই নারীকে সনাক্ত করেন। পরে রবিবার টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা ওই নারীর সঙ্গে তারা সাক্ষাৎ করেন।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের কোর্ট ইন্সপেক্টর মো. আনোয়ারুল ইসলাম জানান, বাদী পক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবন্ধী ওই নারীকে পরিবারের হেফাজতে দেয়ার আদেশ দেন। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশিকুজ্জামান আবেদনের উপর শুনানীর পর এ আদেশ দেন। এছাড়া আগে গ্রেফতারকৃত বাসের হেলপার নামুলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানিতে বাসের সুপারভাইজার এরশাদের নাম বেড়িয়ে আসে। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করে ৫দিনের রিমান্ড আবেদন করে। আদালত মঙ্গলবার রিমান্ড আবেদনের শুনানীর দিন ধার্য করেন।

টাঙ্গাইল বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে ইব্রাহিমাবাদ রেলস্টেশনের কাছে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের ঘটনায় প্রতিবন্ধি ঐ কিশোরী ডাক্তারী পরিক্ষা সম্মন্ন হয়েছে। ডাক্তারী পরিক্ষায় ধর্ষণের প্রাথমিক আলামত পাওয়া গেছে। ০১ সেপ্টেম্বর শনিবার দুপুরে টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ধর্ষিতার ডাক্তারী পরিক্ষা সম্পন্ন করেন ডা. রেহেনা পারভীন।

উল্লেখ্য বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মোশারফ হোসেন বলেন, ৩০ আগস্ট বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২ টার দিকে টাঙ্গাইল থেকে ছেড়ে যাওয়া একটি বাস যাত্রী নিয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু পুর্বপার বাস স্ট্যান্ডে যাচ্ছিল। রাতে যাত্রী কম থাকায় পথিমধ্যে যুবতী যাত্রী ছাড়া সকল যাত্রী তাদের গন্তব্যস্থলে নেমে যায়। এ সুযোগে যুবতী একা থাকায় ড্রাইভার, সুপারভাইজার ও হেলপার মিলে তাকে ধর্ষণ করে। মেয়েটির চিৎকারে মহাসড়কে টহলরত পুলিশ শব্দ শুনতে পেয়ে বাসটিকে ফলো করে বঙ্গবন্ধু সেতু পুর্বপার বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে হাতে নাতে হেলপারকে ধরতে সক্ষম হয়। বাকি দুই জন পালিয়ে যায়। পরে যুবতীকে উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে রাখে। যুবতী তার নাম আর কুষ্টিয়াতে তার বাড়ি ছাড়া আর কিছু না বলতে না পারায় তাকে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
৩১ আগস্ট শুক্রবার বিকালে আদালতের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গ্রেফতারকৃত হেলপারকে টাঙ্গাইল জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে টাঙ্গাইল কোর্ট ইন্সপেক্টর মো আনোয়ারুল ইসলাম জানান।

প্রসঙ্গত, ৩০ আগস্ট রাত ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধুসেতুর পূর্বপাড়ে টহলরত পুলিশের দল ওই এলাকার নৈশপ্রহরীর মাধ্যমে জানতে পারে বাসের ভেতর এক নারীর কান্না শোনা যাচ্ছে। এ খবর পেয়ে ওই টহল দল বাসটিতে গিয়ে প্রতিবন্ধী এক নারীকে উদ্ধার করে। এ সময় ওই নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে পুলিশকে জানায়। পরে পুলিশ ওই বাসের চালকের সহকারী নাজমুলকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরদিন এসআই নুরে আলম বাদি হয়ে বাসের চালক আলম খন্দকার ও আটক নাজমুলকে আসামি করে নারী ও শিশু নিযার্তন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় বাসের চালক আলম খন্দকারের বিরুদ্ধে ওই নারীকে ধর্ষণ এবং সহকারী নাজমুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহায়তা করার অভিযোগ আনা হয়।

ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!