১-৭ম শিক্ষক নিবন্ধিতদের তথ্য লোপাট!

 

ভূপেন্দ্র নাথ রায়, দিনাজপুর প্রতিনিধি  । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

মহামান্য হাইকোর্ট বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১ম থেকে ১২তম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সনদধারীদের মেধাতালিকা প্রস্তুত ও প্রকাশের নির্দেশে এনটিআরসিএ সারা দেশের বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২২ হাজার ৫৬৭টি শূন্য পদের তালিকা হাইকোর্টে দাখিল করেছে। একইসঙ্গে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৮ম থেকে ১২তম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সনদধারীদের মেধাতালিকাও আদালতে দাখিল করা হয়েছে। সূত্র জানায়, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যায়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কর্তৃক অ্যাফিডেভিট আকারে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যায়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক মো. লোকমান হোসেন স্বাক্ষরিত এই প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন ব্যারিস্টার কাজী মাইনুল হাসান। রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. হুমায়ুন কবির।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেলা শিক্ষা অফিসারদের মাধ্যমে সংগৃহীত দেশের সব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পদ ও বিষয় ভিত্তিক ২২ হাজার ৫৬৭টি পদের একটি তালিকা আদালতের বিবেচনার জন্য পেশ করা হলো। প্রায় প্রতিদিন প্রতিমাসে অবসর, মৃত্যু, চাকরি ত্যাগ ইত্যাদি নানাবিধ কারণে শূন্যপদের সংখ্যা পরিবর্তিত হয়।
প্রতিবেদনে উত্তীর্ণ সনদধারীদের মেধাতালিকা সম্পর্কে বলা হয় ১ম থেকে ৭ম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের উপজেলা ও জেলা ভিত্তিক কোন কোন তথ্য এনটিআরসিএ-এর দফতরে সংরক্ষিত না থাকায় ওই ৭টি নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মেধা তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। এরপরও আদালত প্রয়োজন মনে করলে ১ম থেকে ৭ম নিবন্ধন এবং বিশেষ নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ২ লাখ ৪৩ হাজার ৬৮৩ জন প্রার্থীর জেলা, উপজেলার তথ্য নতুন করে সংগ্রহ করে একটি মেধা তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ৮ম থেকে ১২তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের উপজেলা, জেলা ও জাতীয় ভিত্তিক মেধাক্রম অনুযায়ী বিষয় ভিত্তিক মেধা তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। উল্লখ্য, গত ২৮ মে  একইসঙ্গে ৩০ জুলাই ‘র মধ্যে বাংলাদেশের সকল বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের শূন্যপদের তালিকা চাওয়া হয়।
সাধারণ নিবন্ধিতদের সাথে কথা হলে তারা জানায়, এই অসম্পূর্ণ শূণ্যপদের লিস্ট নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। তদের অভিযোগ গত লিস্টে শূন্যপদ ছিল প্রায় ৫২ হাজার। এর মধ্যে তিনটি ধাপে প্রায় ১২হাজার নিবন্ধিত প্রার্থী নির্বাচিত হয়। স্বভাবতই ৪০ হাজার পদ শূন্য থাকার কথা সেখানে এনটিআরসিএ মাত্র ২২৫৬৭ টি পদ হাইকোর্টে দাখিল করে। তাহলে এটা পুরোপুরি প্রতারণা — এ বলে অভিযোগ করেছেন নিবন্ধিতরা আবার  এনটিআরসিএ দায়িত্ব অবহেলা কিংবা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ১-৭ম শিক্ষক নিবন্ধিতদের তথ্য উপাত্ত লোপাট করেছে বলে অভিযোগ করেছে বঞ্চিত নিবন্ধিতরা। এ ব্যাপারে  ১-৭ তম নিবন্ধিত কয়েকজন প্রার্থী এনটিআরসিএ’র বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ তোলেন।
রংপুর গঙ্গাচড়া উপজেলার গণিত বিষয়ের নিবন্ধনধারী ব্রজেন্দ্র নাথ সরকার এ ব্যাপারে বলেন, আমার ৪র্থ ও ৫ম নিবন্ধন করা আছে। এনটিআরসিএ’র শিক্ষক নির্বাচনে দরখাস্ত করে নিজ উপজেলায় শূন্যপদ থাকা সত্বেও নিয়োগ হয়নি বরং আলম বিদিতর উচ্চ বিদ্যালয় এবং কোলকোন্দ মোহাম্মদ আলী মেমোরিয়াল স্কুলে রংপুর সদর ও পীরগাছা থেকে শিক্ষক নেয়। সেখানে আমি গঙ্গাচড়া উপজেলার বাসিন্দা হয়েও শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত হতে পারিনি। এখন এনটিআরসিএ’র দূনীতির জালে মনে হয় সারাজীবন বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে বাঁচতে হবে।
রংপুর সদরের রোখসানা(ছদ্মনাম) নামের এক গৃহিনী বলেন, আমি ১৯৯৭ সালে এসএসসি পাশ করে ২০০৫ এ মাস্টার্স করি। ৭ম নিবন্ধনে পাশ করার পর বসে আছি। এনটিআরসিএ’র আজগুবি গল্পে বিস্মিত না হয়ে পারিনা। একটার পর একটা এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জগা-খিচুড়ি গল্প বানিয়ে যাচ্ছে আর সরকার তা বিশ্বাস করছে।
এদিকে বরিশাল সদর থেকে তারেকুল ইসলাম বলেন, এখন তারা (এনটিআরসিএ) হাইকোর্টে বলে কিছু তথ্য আছে কিছু তথ্য নেই। পৃথিবীর কোন সরকারি অফিস থেকে যারা সার্টিফিকেট দেয়, সার্টিফিকেট খোয়া যেত পারেনা। ইট’স ইমপসিবল, টোটালি ইমপসিবল। এটা ডাকাতি, স্পষ্ট ডাকাতি। এরা আমাদের সাথে স্রেফ প্রতারণা করছে। এটা কোন সুস্থ্য মস্তিষ্ক সম্পন্ন কোন নাগরিক মেনে নিতে পারেনা। আমি ৬ষ্ঠ নিবন্ধনধারী। ২০১২ সালে সার্টিফিকেট ওঠানোর জন্য এনটিআরসিএ’র সাবেক অধিদপ্তর বর্তমান নায়েম ভবনে গেলে জনৈক উপপরিচালক ডাটাবেজে ১-৭ম নিবন্ধিতদের কোন তথ্য নেই। আমি প্রশ্ন করলে তিনি  বলেন, ক্লার্কদের দায়িত্ব দেয়া ছিল কিন্তু তারা কিভাবে যে খুইয়ে ফেলল? মানুষ মাত্রই ভুল হয়। তারেক এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে বলে, সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সরকারের টাকা খাইয়া কিভাবে পাবলিকের আমানত নষ্ট করতে পারে? এরা টাকার বিনিময়ে ৬০ হাজার জাল সার্টিফিকেট দিয়েছে যাদের তারা আজ বহাল তবিয়তে সরকারি এমপিও খাচ্ছে। আমার কাছে তথ্য আছে। এই ব্যাপারে দুদকের বিশেষ টিম মাউশি অধিদপ্তরে গেলে মাউশি কর্মকর্তারা তাদের ঢুকতে দেয়নি।
চাকরির আশায় দিনাজপুর চিরিরবন্দরের আরিফুজ্জামান দিনাজপুরের ৮৩ জনের গ্রুপ থেকে হাইকোর্টে একটি রীট করে। কিন্তু গত ৩০ জুলাইয়ের এনটিআরসিএ’র জবানবন্দিতে হতাশ। এরা ৮-১২ তম নিবন্ধনধারীদের মেরিট লিস্ট জমা দিয়েছে। ১-৭ম নিবন্ধিতদের কোন তথ্য না থাকায় আমাদের কোন লিস্ট করা হয়নি যা হতাশাব্যঞ্জক। এনটিআরসিএ’র দায়িত্ব জ্ঞানহীনতায় কেন আমরা সাফার করব?
দিনাজপুর খানসামার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিবন্ধিতের সাথে কথা হলে জানায়, আমি সপ্তম নিবন্ধন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে নব্বই শতাংশের উপরে মার্কস পাই। ভাবছিলাম কোন প্রকার ডোনেশন ছাড়াই বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হবো। পারিবারিক অসচ্ছতার মধ্যেও ইংরেজি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স পাশ করি। বাপের জমি বিক্রি করে সাহস পাইনি কোন প্রতিষ্ঠানে কিংবা সরকারি কোন অফিসে চাকরি নিতে। ২০০৫ সালে মেধায় সাব ইনস্পেক্টর অব পুলিশ পদে ভাইভা পর্যন্ত গেলেও সংখ্যালঘু বলে সেবার  চাকরি হয়নি। ওইবার ৭৮৬ টি পদের মধ্যে ১২০জন আমরা মেধায় টিকছিলাম। তারপরও ভাগ্যের পরিহাসে চাকরি হয়নি। ঠিক এরকম বাকী গুলোতেও। এখন এনটিআরসিএ’র হুটহাট নিয়মে উপজেলা কোটায় সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া সত্বেও এমপিও শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে যাবে। তিনি ১-৭ম সহ সকল নিবন্ধিতদের ব্যাপারে সুষ্ঠ সমাধান করতে প্রধান মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

  • কাগজ টুয়েন্টিফোর বিডি ডটকম এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!