দুর্গোৎসব : সংখ্যালঘু ও কিছু সংশ্লিষ্ট কথা

 

 

দুর্গোৎসব : সংখ্যালঘু ও কিছু সংশ্লিষ্ট কথা
রণেশ মৈত্র
সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ

গত বছর ২০১৬ সালে দুর্গোৎসবের সময় ছিলাম অষ্ট্রেলিয়ার সিডনীতে। স্ত্রী, পুত্র, পুত্রবধূ, নাতি-নাতনী নিয়ে দু’দিন ধরে ঐ উৎসব প্রত্যক্ষ করলাম। ওখানে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবাংলার অদিবাসী বাঙালিরা সাকুল্যে ১০/১২ টি পূজার আয়োজন করে থাকেন-এই আয়োজনের সংখ্যা-ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে। গতবারের আগে (অন্ত:ত ৭/৮ বছর আগে। দেখেছিলাম ৬/৭ টি প্রতিমা) যা ইতোমধ্যে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
সিডনীতে বাংলাদেশ বা পশ্চিম বাংলার মত পাঁচদিন ধরে পূজার আয়োজন হয় না। আগে তো একদিন মাত্র। এখন বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই দু’দিন করে আয়োজন হতে দেখলাম। আগামীতে এটা আরও বাড়বে কি না জানি না-কারণ পূজার আয়োজন সেখানে হয়ে থাকে Weekend এর দু’দিন অর্থাৎ শনি ও রবিবারে। আর সে আয়োজন দু’দিনই দেখা যায় সকাল ১০ টায় শুরু হয়ে রাত দশটা অবধি নানা আকর্ষণীয় কর্মসূচীর মাধ্যমে পরিচালিত হতে। এই যে ১২ ঘন্টা ব্যাপী অনুষ্ঠান তাতে অংশ গ্রহণকারী প্রায় সকলেই নিজ নিজ বাড়ী থেকে স্নানাদি সেরে বৌ-ছেলে-মেয়ে নিয়ে নিজ নিজ গাড়ী ড্রাইভ করে চলে আসেন-ফিরে যান রাত্তিরের আহারাদির পর।
এই দীর্ঘ সময় মন্দিরে (ভাড়া করা হল ঘর) পূজা, ভোগ, আরতি, সকালের প্রাঃতরাশ দুপুরের ম্যধাহ্নভোজ, বৈকালিক চা ও নৈশ আহারাদি চলে। তার সাথে আলোচনা সভা, শিশুদের নানাবিধ প্রতিযোগিতা, নৃত্যানুষ্ঠান (গণ নৃত্যও মাতিয়ে তোলে অংশগ্রহণ কারী বিপুল সংখ্যক নারী পুরুষকে এবং দর্শকদেরকেও)। সাস্কৃতিক অনুষ্ঠান, র‌্যাফেল ড্র প্রভৃতি।
দুদিনে ২৪ ঘন্টার এই ধর্মীয় উৎস কিন্তু বাস্তবে ধর্মকে সামনে রেখে এক অসাম্প্রদায়িক সামাজিক মিলনোৎসব যেন। ওখানে যেমন উপস্থিত হন হিন্দুরা, তেমনই মুসলিম, খৃষ্টান ও বৌদ্ধরা। খৃষ্টান বাদে বাদ-বাকী সকলেই তো সেখানে মাইনরিটি-সংখ্যালঘু। কিন্তু তেমন বোধ কাউকেই মুহুর্তের জন্যও তাড়িত করে না। সবাই আলোচনায়, নাচে-গানে, খাওয়া দাওয়া প্রভৃতিতে। শুধুই পূজার আনুষ্ঠানিক অংশ বাদে।
শনিবারে ও রবিবারে পূজার আয়োজন হয় আগেই বলেছি। ঐ শনি – রবিবার পঞ্জিকা নির্ধারিত দিনে হতেও পারে না-ও পারে। হয়তো বা ঐ নির্ধারিত মধ্যে, নয়তো তার ঠিক আগে বা পড়ে। তবে অত্যন্ত কাছাকাছি।
উৎসব উপলক্ষ্যে একটি করে স্যুভেনিরও ছাপা হয়-তবে এই স্যুভেনির আশা পূরণ করে না। কারণ অত্যন্ত ক্ষীণ কলেবরের স্যুবেনির। এ দিকটায় জোর দিলে মানসম্পন্ন স্যুভেনির অবশ্যই প্রকাশ করা সম্ভব। তবে কিছুটা ব্যয়-বহুল হতে পারে। কারণ বাংলা মুদ্রণ শিল্প ওখানে আজও অত্যন্ত সীমিত।
নিরাপত্তা? ওদের দেশের তো কোন রাষ্ট্রধর্ম নেই। কিন্তু কি খৃষ্টীয়, কি বুড্ডিষ্ট, কি মুসলিম কি হিন্দু কোন ধর্মীয় উৎসবেই নিরাপত্তা বাহিনীর সাক্ষাত পাই নি একদিনও। কোন হুমকি ধামকি না কোন মসজিদ-গীর্জা-মন্দির বা প্রতিমা ভাংচুরও না। দিব্যি নিশ্চিন্তে পালিত হয় উৎসবগুলি।
সরকারের তরফ থেকে মাইক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের কোন নির্দেশ? না। তাও না। পূজা, ঈদ, বড় দিন, বৌদ্ধ পূর্ণিমা বা ৩৬৫ দিনের দৈনন্দিন ধর্মীয় বা অন্যান্য সামাজিক ক্রিয়াকলাপে মাইক্রোফোন ব্যবহারের একই নিয়ম এবং সবাই সাগ্রহে তা পালনও করে চলেছেন। তাই বাড়তি কোন খবরদারী নেই কোন মহল থেকেই।
অথচ আমাদের রাষ্ট্রধর্ম সামরিক শাসকের অবদান হলেও গণতন্ত্রী এবং বামের একাংশ তাকে দিব্যি মোৎসাহে লালন-পালন করে চলেছেন গুরুত্বসহকারে। ইসলাম হলো সেই রাষ্ট্রধর্ম। কিন্তু দু’টি ঈদ, মোহররম প্রভৃতি ইসলামী ধর্মীয় উৎসবেও কি কঠিন নিরাপত্তা ব্যবস্থাই না নিতে হয় সরকারকে। পুলিশ-র‌্যাবের কী বিপুল অধিক্য দেখা যায় ঈদ জামাতকে ঘিরে। অথচ শতকরা বা ৯০ ভাগই তো মুসলিম -ইসলাম ধর্মাবলম্বী। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম চালু রাখার যৌক্তিকতা কি তা হলে এগুলির মধ্যেই নিহিত?
এবারে আসি আমাদের দেশের দুর্গোৎসব বিষয়ে। হিন্দুদের বড় ধরণের ধর্মীয় উৎসব তো এই একটাই। দেশজুড়ে পূজার আয়োজন হয়। আয়োজনের সংখ্যাও প্রতি জেলাতেই বছর বছর বাড়ছে। পূজার ৫/৬ দিন সকল পূজাপমন্ডপেই পুলিশ-আনসার প্রহরার আয়োজন বাধ্যতামূলক। কারণ বছর জুড়েই বিশেষ করে দুর্গোৎসবের মাসখানেক আগে থেকে শুরু হয় যেমন প্রতিমা নির্মানের ব্যস্ততা তেমনই বেড়ে যায় নির্মীয়মান ও পূর্ব নির্মিত প্রতিমা/মন্দির ভাংচুরের ঘটনাও। এ এক বাৎসরিক আবার নৈমিত্তিক ঘটনাও বটে।
বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, সরকার সর্বদা “আইনের শাসন চালু আছে, ” সকল নাগরিকের সমানাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে,“বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ” প্রভৃতি উক্তি করে সদা-সর্বদা বাজার গরম করলেও বাস্তব ঘটনা হলো সরকারের এ দাবীটি অন্ত: সংখ্যালঘু নির্য্যাতনের ব্যাপারে বা সামগ্রিক অর্থেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও আদিবাসীদের ক্ষেত্রে আদৌ সত্য নয়। উদাহরণ হলোঃ
২০০১ সালে অনুষ্ঠিত সংসদীয় নির্বাচনের আগে ও পরে দেশজুড়ে সংঘটিত একতরফা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার হাজার হাজার মর্মান্তিক ঘটনা ঘটলেও এ যাবত ঐ ঘটনাবলীর ব্যাপারে কোন বিচারকার্য্য অনুষ্ঠিত হওয়াতো দূরের কথ, একটি মোকর্দমাও কোন থানায় বা আদালতে দায়ের করা হয় নি।
এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতের শরনাপন্ন হাইকোর্ট একটি বিচার-বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে তার তদন্ত শেষে কমিশনের সুপরিশের ভিত্তিতে মোকর্দমা দায়ের করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিচারের নির্দেশ দিলে অবসর প্রাপ্ত জেলা জজ শাহাবুদ্দিন চুপ্পুর নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করে তদন্ত করার ব্যবস্থা করা হয়। উক্ত কমিশন একটি বছর ধরে সারা দেশ সফর করে ঘটনাবলীর উপযুক্ত তদন্ত করে কম পক্ষে তিন সহস্াধিক মোকর্দমা দায়ের করা যেতে পারে-তাদের সাক্ষ্যপ্রমাণ সবই অক্ষুন্ন আছে। অন্ত: আট থেকে দশ হাজার ঘটনা দীর্ঘ কয়েক বছর আগে ঘটেছিল কিন্তু সেগুলি এতকাল পর উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণ অভাবে ঠিকমত বিচার হয়তো সম্ভব নাও হতে পারে তবে তিন সহ¯্র মোকর্দমার ক্ষেত্রে সেজাতীয় কোন সমস্যা নেই।
তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, রিপোর্ট তিনি পেয়েছেন এবং যথাসময়ে মামলাও দায়ের করা হবে। অত:পর এলেন নতুন স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তিনিও অনুরূপ কথাই বললেন। এভাবে দেখতে দেখতে ৫/৭ বছর অতিক্রান্ত হলো এখন আর কারও মুখে কোন কথা নেই মোকর্দমা দায়ের বা অপরাধীদের শাস্তি তো দূরের কথা। তারা দিব্যি বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে দখল করা হিন্দু সম্পত্তি দিব্যি ভোগদখল করে খাচ্ছে শাসকদলের লেবাসে চেয়ারম্যন মেম্বার ও অনেকে নির্বাচিত হচ্ছে আর অপরদিকে হাজার হাজার হিন্দু সহায়-সম্পদ মান-সম্ভ্রম হারিয়ে দেশত্যাগী হতে বাধ্য হয়েছেন এবং হচ্ছেন।
ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি বাড়ীঘর দখল প্রক্রিয়া আজও অব্যাহত। তার গতি কখনও কোন কারণে তীব্র হয় কখনও বা নিখিল হয় কিন্তু বন্ধ হয় না কখনও।
তাদের মন্দির ভাঙ্গ-মূর্তি ভাঙ্গাও থামে না-থামে নি কখনও।
আচ্ছা, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মাননীয় আইন মন্ত্রী – আপনারা বলুন তো- এ ঘটনাবলীর দ্বারা আদৌ কি হিন্দুদের ধর্মের উপর অবমাননা হয়? না কি শুধু ইসলাম নিয়ে কোন তির্য্যক মন্তব্য বা আকার-ইংগিতে আপত্তিকর কোন ভাব দেখালে ধর্মের অবমাননা হয়ে থাকে? কি বলে এতৎসংক্রান্ত আইনটা?
চলছে মিয়ানমারে ভায়াবহ জাতিগত নির্র্য্যাতন যাকে বলা হয়ে থাকে বঃযবৎ পষবধৎরহম. এ নিয়ে সবাই মিয়ানমারের উপর ক্ষুব্ধ। বাধ্যতামূলকভাবে লক্ষ লক্ষ দেশত্যাগী রোহিঙ্গা মানবিক কারণে এ দেশে সাময়িকভাবে আশ্রয় খাবার ও নিরাপত্তা পাচ্ছেন। এতে দেশবাসী গর্বিত। কিন্তু ভয়ের ও গভীর উদ্বেগের বিষয়, রোহিঙ্গাদেরকে “মানুষ” মনে না করে শুধুই “রোহিঙ্গা মুসলমান” বলে চিহ্নিত করায় বেনিফিশিয়ারী হতে চলেছে কিন্তু দেশ-বিদেশের উগ্র ও জঙ্গীরা। অতিমাত্রায় সক্রিয় আই.এস.আই., পাকিস্তান, তুরস্ক প্রভৃতি জঙ্গী জন্মদাতা দেশগুলি। তার সাথে স্বাভাবত:ই যুক্ত হচ্ছে জামায়াত, হেফাজত, বি.এন.পি ও জাতীয় পার্টি। এদের অতি দরদ কিন্তু ভয়াবহ পরিণতিও ডেকে আনতে পারে। তাই যত সত্বর এবারে আসা এবং অতীতে দফায় দফায় এসে বাংলাদেশে থেকে যাওয়া সকল রোহিঙ্গা ( যাদের মোট সংখ্যা ৮ থেকে ১০ লাখ পর্য্যন্ত হতে পারে।) নর-নারীকে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো – অপরদিকে সকল সাম্প্রদায়িক শক্তি, উগ্র ধর্মান্ধতা ও জাঙ্গীবাদীদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান জোরদার কারা অতীব জরুরী।
অপরদিকে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন কেন আজ ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের জন্যে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে বিজয়ী হওয়া বাংলাদেশে ইসলামী জঙ্গীবাদের উত্থান ও প্রসার ঘটলো? এর জন্যে যেমন রয়েছে আফগানিস্তানের মৌলবাদীদের ছায়া প্রশিক্ষিত বাঙালি তালেবান সৃষ্টি ও আন্তর্জাতিক জঙ্গীর আত্মপ্রকাশ তেমনি রয়েছে বাংলাদেশর রাষ্ট্রীয়ভাবে মৌলিক আদর্শের সাংবিধানিক বিচ্যুতি। এগুলির উত্থান যদিও বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী সামরিক শাসকদের দ্বারা, কিন্তু আজও তা অব্যাহত রাখায় ওই অপগোষ্ঠীগুলি অনুকূল আইনগত সুবিধে পেয়ে যাচ্ছে যাকে উপেক্ষা করলে মারাত্মক ভূল হবে।
খোলামেলাভাবে বলতে গেলে যা দাঁড়ায় তা হলো জিয়া কর্তৃক সামরিক আইনে সংবিধান সংশোধনের নামে “বিসমিল্লাহ” সংযোজন , জামায়াতে ইসলামী ও ধর্মাশ্রয় দলগুলির বৈধতা প্রদান এবং অপর সামরিক শাসক কর্তৃক একইভাবে “রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম” সংযোজন করায় সাম্প্রদায়িক শক্তিসমূহ যে অনুকূল সংবিধানিক ও আইনগত সুযোগ পেয়ে যায়-তাই ডালপালা মেলে আজ এতটা বিস্তার লাভ করতে সর্মথ হয়েছে।
আর সেই পরিবেশের ফলে একদিকে যেমন বাহাত্তরের মূল সংবিধানটির মৌল লীতির মৌলিক পরিবর্তন ঘটলো-তেমনই আবার বঙ্গবন্ধুর লালিত ও মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত আদর্শ থেকে রাষ্ট্রটি বিচ্যুত হলো। ফলাফল খুবই মারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে-আজ তা রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশ-বিদেশের সকল উগ্র ধর্মান্ধ জঙ্গীবাদীদের প্রকাশ্যে ও গোপনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগও তৈরী করেছে।
আদর্শিক বিজচ্যুতি ইচ্ছে করলেই দ্রুত সংশোধন করা যায়। সংসদের পরবর্তী অধিবেশনে নতুন একটি সংশোধনী এসে “বিস্মিল্লাহ” ও জামায়াতে ইসলামী সহ সকল ধর্মাশ্রয়ী দলের বৈধতা বাতিল এবং “রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম” সংক্রান্ত বিষয়ও পূরোপূরি বাতিল করে দেশকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মতে বাহাত্তরের সংবিধান অবিকল পুনরুজ্জীবন করে ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের বিকাশে কণ্টকমুক্ত করা হোক এবং এ ব্যাপারে সাংবিধানিক অসঙ্গতি সমূহও দূর করা হোক।
কথা বলছিলাম আসন্ন দুর্গোৎসব সম্পর্কে। পাবনা জেলায় প্রায় সাড়ে তিন শত প্রতিমার পূজা সমসংখ্যক মন্দিরে অনুষ্ঠিত হবে। এটা গত বছরের চাইতে বেশী। ২০০১ এর পরে দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে কোন প্রতিমা ভাঙচুর এই জেলায় ঘটেনি। সরকারী কর্তৃপক্ষও তৎপর থাকেন-এবারও থাকবেন বলে নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে। অর্থাৎ ধর্মীয় উৎসব রাষ্ট্রধর্মের দেশে পুলিশী নিরাপত্তা ছাড়া অনুষ্ঠিত হতে পারে না। দুটি ঈদ মোহররমও তাই।
দুর্গোৎসবের ব্যাপারে আরও একটি পীড়াদায়ক ব্যাপার ঘটে চলেছে ১৯৮৮ বা ১৯৮৯ সাল থেকে। তখন স্বৈরাচারী এরশাদ ক্ষুমতায়। তিনি মুসলিমদের মধ্যে সক্রিয়তা অর্জনের লক্ষ্যে “রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম” প্রবর্তন করলেন কুখ্যাত অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে। স্বাভাবিকভাবেই ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা প্রতিবাদে ফেটে পড়লেন। হিন্দুরা সিদ্ধান্ত নিলেন দুর্গাপূজা করবেন না।
এরশাদ পরের বছর থেকে ভিন্ন কৌশল নিলেন। দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে চাল, গম, টাকা প্রতিটি পূজা ম-পের জন্য অনুদান দেওয়া সুরু করলেন। টোপটা ভালই কাজ দিল। যদিও এ উপটোকন সরকারীভাবেই ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের খয়রাতি সাহায্য হিসেবে দেওয়া হয় – যেন ভিক্ষুককে ভিক্ষা প্রদান। আজ মন্দিরের পূজারীরাও সেই থেকে দিব্যি দুর্গাকে ভিক্ষুকের সারিতে দাঁড় করিয়ে ফেললেন। শাসক বদলায় কিন্তু খয়রাতি থাকে। খয়রাতি থাকে না শুধু বছর বছর তার পরিমাণও বাড়ে।
যাহোক, ভালমন্দ মিলিয়ে দুর্গোৎসব যেমন সর্বত্র নিরাপদে নির্বিঘেœ উদযাপিত হোক এমন কামনা করি তেমনই কামনা করি আগামী বছর থেকে এই নোংরা অনুদান পর্বের সমাপ্তি ঘটুক।
সত্য বটে, ক্ষীয়মান হিন্দুদের পূজার ব্যয় নির্বাহ দুরূহ। কিন্তু সরকারের কৃপা প্রার্থী তার জন্য হওয়ার বিন্দুমাত্র প্রয়োজন নেই। কারণ ধর্মে মূর্তিপূজা বাধ্যতামূলক নয়।
দ্বিতীয়ত: সমগ্র দেশে যে বিপুল পরিমাণ দেবোত্তর সম্পত্তি বে-আইনীভাবে বেদখল ও অধিকারহীন মালিকানাহীনদের নামে রেকর্ড হয়েছে সেগুলো উদ্ধার করে তহবিল গঠন করলে তার মাধ্যমে বর্তমানের চাইতে দশগুণ বেশী পূজার আয়োজন করা সম্ভব হবে। নেতারা ও সরকার কি সে পথে হাঁটছে?


কাগজ টুয়েন্টিফোর বিডি ডটকম এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।


  • প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। কাগজ২৪-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য কাগজ২৪ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!