পঞ্চগড়ে জন্ম নিবন্ধন সনদ উত্তোলনে গুনতে হচ্ছে বাড়তি ফিঃ সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষিত

 

 

নাজমুস সাকিব মুন, পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি  কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

পঞ্চগড়ে শিশুদের স্কুলে ভর্তির জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদ নিতে ২৫ টাকার নিবন্ধন সনদ দু থেকে পাঁচ শত টাকা বাড়তি গুনতে হয় । স্কুলে নতুন ভর্তি ইচ্ছুক শিশুদের অভিভাকরা আদরের সন্তানকে স্কুলে ভর্তির জন্য জন্ম সনদ নিতে কয়েক ধাপে দায়িত্বরত কর্তাদের দিতে হয় বাড়তি টাকা। টাকা ছাড়া মিলছে না যেমনি জন্ম সনদ তেমনি স্কুলে ভর্তি হতে পারছেনা অনেক শিশু। টাকার বিনিময়ে জন্ম সনদ, শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হাজার হাজার শিশু।

শিক্ষা বান্ধব বর্তমান সরকার শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে ঝড়ে পড়া শিশুদের স্কুলমূখী রাখতে বিনা মূল্যে বই, উপবৃত্তি প্রদানসহ নানামূখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তাই সরকার স্কুলে ভর্তির জন্য বাধ্যতামূলক জন্ম নিবন্ধন সনদ, সরকারি ফি পাঁচ বছরের নিচে ২৫ টাকা ও পাঁচের উপরে ৫০টাকা নির্ধারণ করেছে। যাতে করে সারাদেশে খেটে খাওয়া দিনমুজুর সহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষ তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারে।

কিন্তু সরকারের এমন উদ্যোগকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে পৌর/ ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র/ মেয়র/ চেয়ারম্যান ও দায়িত্বরত সচিবরা নানান অযুহাতে জন্ম নিবন্ধন সনদের জন্য জোরপূর্বক অভিভাকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে নির্ধারিত সরকারি ফির চেয়ে অনেক বেশি টাকা। সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে হবে, আদরের সন্তান শিক্ষিত হয়ে একদিন অনেক বড় হবে তাই মধ্যবিত্ত পরিবারের অভিভাবকেরা কষ্ট করে হলেও টাকা মিটিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু খেটে খাওয়া দিনমুজুর, শ্রমিক, লেভার যাদের আয় দেড়’শ থেকে দু’শ টাকা দিন কামিয়ে দিন খায় তাদের পক্ষে এতটাকা দেয়া সম্ভব না হওয়ায় তাদের সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে পারছেন না।

গোটা জেলায় এমন বাড়তি টাকা আদায়ের ঘটনায় অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। যেন দেখেও দেখার কেউ নেই। অভিভাবকদের অভিযোগ তথ্য সেবা কেন্দ্রের কর্তাকে দু’শত টাকা দিয়ে দু- চার দিন ঘুড়ে মিলছে জন্ম সনদ, স্বাক্ষর করানোর জন্য সচিব নিচ্ছে তিন’শত টাকা। কেউ বলছে আমার কাছে নিয়েছে তিন’শত টাকা আবার কেউ বলছে আমার লেগেছে পাঁচশ থেকে হাজার টাকা। জানা গেছে কাউকে এ টাকার রশিদ দেওয়া হলেও আবার কাউকে দেওয়া হয় নি।

সরেজমিনে জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়ন ঘুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভর্তি কৃত ছাত্র ছাত্রীদের অভিভাবক সাহেদা, সারমিনা, নাজিমা, তরিকুল, আলম, রবিউল ইসলাম বাংলাদেশ সংবাদকে জানান, আমরা দিন কামায়, দিন খাই। আমরা শ্রমিক বলে আমাদের সন্তাকে শ্রমিক বানাতে পারিনা, তাই সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদ নিতে গেলে তিন শত থেকে পাঁচ’শ টাকা দিতে হয়েছে। তারা বলেছে এই টাকা নাকি সরকারি ফি দিতেই হবে। অপর দিকে কয়েকজন দিনমুজুর শ্রমিক জুমারদ্দীন, আসিয়া, বুলবুলি, রৌশনারা, শপিকুল, জলিল জানান, এতটাকা দিয়ে জন্ম সনদ নিতে পরবো না। তাই সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে প্রয়োজন মনে করি না।

ভজনুর এলাকার হোটেল শ্রমিক ছায়দার বাংলাদেশ সংবাদকে জানায় আমি প্রতিদিন মুজুরী পাই ৮৫ টাকা । আমার চার বছরের মা হারা প্রতিবন্ধী সন্তানের জন্য সনদ নিতে গেলে কোন রশিদ ছারা দু শত টাকা নিয়ে আরো দু শ টাকা চেয়েছে।

এমন ঘটনা জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিবেদকে মুঠো ফোনে একাধিক অভিযোগ জানানো হয়েছে। জেলার আটোয়ারী, বোদা, দেবীগঞ্জ, পঞ্চগড় সদর সহ তেঁতুলিয়া উপজেলায় এই অভিযোগের সংখ্যা একটু বেশি।

তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বরত সচিব শ্রীঃ আসুতোস বার্তি টাকা নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ সংবাদকে জানান, আমরা আগের নিয়মে জন্ম সনদের টাকা আদায় করছি। নতুন নিয়মের কোন চিঠি আসেনি। কিন্তু কত আগের নিয়মে দু থেকে তিন’শত টাকা আদায় করছে তা জানতে চাইলে এর সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। জন্ম সনদের আদায় কৃত টাকা সব সরকারি খাতায় জমা হয়। তথ্য সেবা কেন্দ্রে টাকা কিভাবে আদায় করছে আমার জানানেই।

এ বিষয়ে পঞ্চগড়ের নবাগত জেলা প্রশাসক মোঃ জহিরুল ইসলাম বাংলাদেশ সংবাদকে জানান, বিষয়টি গ্রুতর, ৫ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে এমন অভিযোগে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের ফি ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়েছে সরকার। গত ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭ সোমবার নিবন্ধন ফি কমিয়ে পুনর্নির্ধারন করে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে। জানানো হয়েছে জন্ম বা মৃত্যুর ৪৫ দিন পর্যন্ত কোনো ব্যক্তির জন্ম বা মৃত্যুর নিবন্ধনে কোনো প্রকার ফি ছাড়াই করা যাবে, ৪৫ দিন পর থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত জন্ম বা মৃত্যুর নিবন্ধন ফি ২৫ টাকা পাঁচ বছর পর ৫০ টাকা। জন্ম তারিখ ছাড়া নাম, বাবার নাম, মায়েল নাম, ঠিকানাসহ অন্যান্য তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন ফি ঠিক করা হয়েছে দেশে ৫০ টাকা, জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্যও নতুন করে আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা। বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় মূল সনদ বা তথ্য সংশোধনের পর সনদের কপি এখন থেকে বিনামূল্যে সরবরাহ করা হবে।


কাগজটুয়েন্টিফোর বিডি ডটকম এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!