ভালো আছি ভালো থেকো-রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ

২১ জুন রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। আমজনতার মাঝে ভালো আছি ভালো থেকো গানের গীতিকবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ যতটা পরিচিত কবি রুদ্রও তেমনি পরিচিত। রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ সত্তরের দশকের বিশিষ্ট দ্রোহী এবং রোমান্টিক কবি। মাত্র ৩৪ বছর বয়সেই এই মেধাবী সমাজ পরিবর্তন প্রত্যাশী কবি, গীতিকবি মৃত্যুবরণ করেন।
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর আসল নাম শেখ মুহম্মদ শহিদুল্লাহ। পারিবারিক সূত্রে পাওয়া শেখের পরিবর্তে রুদ্র শব্দটি তিনি নিজেই ব্যবহার করেন। ১৯৫৬ সালে ১৬ অক্টোবর বরিশালে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জন্ম। মা শিরিয়া বেগম ও বাবা শেখ ওয়ালীউল্লাহর বড় সন্তান রুদ্র। তাদের স্থায়ী নিবাস বাগেরহাট জেলার মংলা থানার অন্তর্গত সাহেবের মেঠ গ্রামে। রুদ্রর সাহিত্য প্রেম ছেলেবেলা থেকেই। কবিতার প্রতি তার আগ্রহ যেমন ছিল তেমনি দায়বদ্ধতাও ছিল। ১৯৭৩ এ ঢাকা কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকে তিনি নিয়মিত কবিতা লেখা শুরু করেন। কলেজের পাঠ চুকিয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় ভর্তি হন। ছাত্র অবস্থাতেই তার দুটি কবিতার বই বিশেষভাবে আলোচিত হয়। উপদ্রুত উপকূল (ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৯), ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম (ফেব্রুয়ারি, ১৯৮১) দুটো বইয়ের জন্যই তিনি মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার পান। রুদ্রর কবিতায় যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেত তা হচ্ছে দ্রোহ। বিশিষ্ট সাহিত্যিকদেরও তাই মত। এর কবিতায় সমাজ পরিবর্তন, প্রেম, প্রতিবাদ বিষয়গুলো উঠে এসেছে বার বার।
রুদ্রর জীবনের একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে তসলিমা নাসরিন। কবিতা পাঠ করতে গিয়েই তসলিমা নাসরিনের সাথে তার পরিচয় ময়মনসিংহে। তসলিমা নাসরিন তখন সেখানকার মেডিকেল কলেজের ছাত্রী। পরিচয় একসময় রূপ নেয় প্রেমে। দুই পরিবারের অমতেই তারা বিয়ের কাজটি সারেন ১৯৮১ সালের জানুয়ারিতে। দাম্পত্য জীবনের শুরুটা ভালো হলেও ছয় বছর যেতে না যেতেই তাদের বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটে। এ প্রসঙ্গে রুদ্রের বক্তব্য, তাদের মধ্যে এডজাস্টমেন্টের অভাব ছিল। রুদ্রর জীবনের শেষ দিকে তসলিমা নাসরিন আবারও কাছাকাছি এসেছিলেন। রুদ্রর মৃত্যুও পর সমালোচিত এই লেখিকা বই লিখেছেন ‘রুদ্র ফিরে আসুক’।
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ পেপটিক আলসারের রোগী হয়ে শেষ জীবনে হলিফ্যামিলি হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতাল থেকে ফেরার একদিন পরই ২১ জুন, ১৯৯১ রুদ্র তার বাসায় অবস্থানকালে মৃত্যুবরণ করেন। ডাক্তারি ভাষায় তার মৃত্যুর নাম Sudden Cardiac Arrest। কবিতার পাশাপাশি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ সংগীতের বিষয়েও ব্যাপক উৎসাহী ছিলেন। এ কারণেই হয়তো কবিতার পরেই তার লেখা অন্যান্য সাহিত্যকর্মের চেয়ে গানের সংখ্যাই বেশি। এ পর্যন্ত প্রায় ৫৩ টি গান তিনি রচনা করেছেন। এর মধ্যে অনেকগুলোর গানের সুরও তার নিজের করা। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান মধুমতি ইলেকট্রনিক্র থেকে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ’র কথা ও সুরের গান নিয়ে রুদ্রের গান ‘ভালো আছি ভালো থেকো’ শিরোনামে একটি অ্যালবাম প্রকাশ হয়। তার লেখা ও সুর করা সেই গান ‘ভালো আছি ভালো থেকো/ আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখ/ দিও তোমার মালাখানি বাউলের এই মনটারে/ আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছো তুমি রিদয় জুড়ে’। এই গান দিয়েও তার বিশাল পরিচিতি।

এছাড়াও সিনেমায় রুদ্রের গান ‘তোমাকে চাই’ ছবিতে ব্যবহত হয়েছিল ‘ভালো আছি ভালো থেকো’ গানটি। পর্দায় লিপ মিলিয়েছিলেন প্রয়াত সালমান শাহ্। মূলত একটি টিভি অনুষ্ঠানে প্রয়াত সত্য সাহা গানটির সংগীত পরিচালনা করেন। ‘তোমাকে চাই’ ছবির সংগীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল চলচ্চিত্রে পরিবেশনার সময় সংগীত পরিচালনায় নতুনত্ব আনেন কম্পোজিশনে।

সম্পাদনায়-মাহবুব এইচ শাহীন/প্রকাশক ও সম্পাদক/কাগজ২৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!