ভাস্কর্য্য অপসারণ: মুক্তিযুদ্ধের চেতনা:বাঙালি সংস্কৃতি

 

 

 

ভাস্কর্য্য অপসারণ: মুক্তিযুদ্ধের চেতনা:বাঙালি সংস্কৃতি
রণেশ মৈত্র

সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ

না। পরাজিত শক্তির কাছে বিজয়ী শক্তি কদাপি পরাজিত হতে পারে না। পারে না কোন বিজয়ী অবনত মস্তকে পরাজিত শক্তির সাথে বিন্দুমাত্র আপোষ করতেও। পারে না ঐ অপশক্তিগুলির সাথে ন্যূনতম সম্পর্ক রাখতে।
কিন্তু তেমন ঘটনা ঘটলো রাতের অন্ধকারে চুপিসারে নিদ্রামগ্ন মানুষের ঘুমন্ত অবস্থার সুযোগ নিয়ে। ঠিক কাপুরুষের মতো, ভীত সন্তস্ত এক দস্যুর মত। তারা বাঙালির সংস্কতির, যে সংস্কৃতি লক্ষ লক্ষ মানুষকে ১৯৭১ এ মহান সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অকাতরে অংশ নিতে, আত্মদান করতে ও বিজয় ছিনিয়ে এনে স্বাধীন সার্বভৌম, জাতীয়তাবাদী, গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও সমাজতান্ত্রিক এক আধুনিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশ নামক নতুন এক আধুনিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় উজ্জবিত, অনুপ্রাণিত হয়েছিল হাজার বছরের সমৃদ্ধ সেই অসাধারণ শক্তিময় ও প্রাণ প্রাচুর্য্যে ভরা বাঙালী সংস্কৃতির বুকে কুঠারাঘাত করা হলো। চুপিসারে সরিয়ে নেওয়া হলো ন্যায় বিচারের প্রতীক হিসেবে স্থাপিত ভাস্কর্য্যটি। ওটা একটি বিশাল শিল্পকর্ম কোন মূতি নয় কেউ ভাস্কর্য্যটিকে পূজাও করে না।
এহেন ঘটনা ঘটতে পারলো মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের ৪৬ বছর পরে। সত্তরের দশকের শেষার্ধে এক সামরিক স্বৈরাচারের আমলে দেখেছি এমন কিছু কিছু ঘটনা ঘটতে অপ্রকাশ্যে। এমন কি শহীদ মিনারও আক্রান্ত হয়েছে তখন বহুস্থানে। কিন্তু জানা মাত্র তার প্রতিবাদ হয়েছে-প্রতিরোধ হয়েছে। রাষ্ট্রের গোপন উৎসাহে তখন সেই ঘটনাবলী ঘটেছিল। মুক্তিযোদ্ধারা বসে থাকেন নি চুপ করে থাকেন নি-নির্বাক দর্শকের ভূমিকাও তাঁরা পালন করেন নি সেদিন। প্রতিবাদ করেছেন রাজপথ কাঁপিয়ে তুলেছেন এবং শেষ পর্যন্ত ঐ স্বৈরশাসকের আমলেই তা বন্ধও করতে সক্ষম হয়েছেন।
কিন্তু এবার? এই ২০১৭ সালে? এবারও তো মাত্র সামান্য কিছু ঘন্টা বা কয়েকটি মাত্র দিন আগে বাঙালি সংস্কৃতি ধ্বংসের চক্রান্তকারীদের কাছে মাথা নত ও আপোষ করা রাষ্ট্রের চাপে ঐ সর্বোচ্চ আদালতের চত্বর থেকে ভাস্কর্য্যটি অপসারণ করে ভয়াবহ আঘাত হানা হলো। আজই যদি, এই মুহুর্তেই যদি সকল প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা-বিপ্লবী ঐতিহ্যবাহী আমাদের যুব সমাজ ব্যাপকতম ঐক্য গড়ে তুলে তা পুন:স্থাপনের উদ্যোগ না নিতে পারেন তবে রক্তের স্ব্রোত ধারায় সৃষ্ট বাংলাদেশ নামক আমাদের প্রিয় রাষ্ট্রটি যে পাকিস্তানীকরণের প্রক্রিয়াজাত আঘাতে মুখ থুবড়ে পড়বে। প্রকত মুক্তিযোদ্ধারা তরুণ-তরুণীরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শটি কোটি কোটি বাঙালী কিন্তু তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে মাঠে নামবেন তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকার কোন কারণ নেই।
একথা কেউ যেন না ভাবেন যে দল-বিশেষ যা করে তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সেটাই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ। এমন ধারণা অবিলম্বে পরিত্যজ্য। কারণ দীর্ঘ ৪৬ টি বছরের মধ্যে বড় দলগুলিতে বহু পচন ধরেছে, বহু সুবিধাবাদ ঢুকেছে। বে-আইনী পন্থায় কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিকানা অর্জন করেছে এবং ঐ সম্পদ রক্ষায় তারা কখনও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের, কখনও বা বিপক্ষ শক্তির সাথে হাত মেলাচ্ছে। এটা যতটা ভোটের আশায় তার চাইতে বেশি অবৈধ পন্থায অর্জিত সম্পদ রক্ষার উদ্দেশ্যে।
তার অর্থ এ নয় যে দলটি পূরাপূরি স্বাধীনতা বিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ন হয়েছে। না, তা-ও ঠিক নয়। যতি তা ঠিক হতো তবে বঙ্গবন্ধ হত্যার বিচার হতো না-বিচারের রায় কার্য্যকরও হতা না। চার জাতীয় নেতা হত্যার বিচারও হতো না এবং সে হত্যা মামলার রায়ও কার্য্যকর হতো না। সর্বোপরি, কুখ্যাত এবং শীর্ষ পর্য্যায়ের যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার করে মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে কঠোরতম শাস্তির রায় বের করে আনতো না বা সেই রায় দেশী-বিদেশী প্রবল চাপ উপেক্ষা করে কার্য্যকরও করতো না। এই পদক্ষেপগুলি তাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাশ্রয়ী কাজ নি:সন্দেহে।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংক্রান্ত যে সকল দাবী সরকারী দল করছেন তাকে অস্বীকার করা নয় বরং এই উন্নয়নের ফলাফল যে দেশের গরীব ও সাধারণ মানুষেরা না পেয়ে তা কতিপয় ধনিক-বণিক ও নেতা-এমপি, মন্ত্রীর পকেট ভারী করছে সেদিকটা বিবেচনায় নিয়ে জাতীয় আয় জাতির বা শোষিত, বঞ্চিত-দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধিতে ব্যয় করার দাবী সংগঠিতভাবে উত্থাপন করা প্রয়োজন। সে কারণে প্রয়োজন কৃষক-ক্ষেতমজুর, দিনমজুর, শ্রমিক-মেহনতিমানুষ ও মধ্যবিত্ত-নিম্নধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর সম্মিলিত ও ধারাবাহিক আন্দোলন সংগ্রাম। শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে এর কোন বিকল্প নেই।
কিন্তু এই কয়টির সাথে পদ্মা সেতু নিজস্ব তহবিল থেকে নির্মাণের সাহসী সিন্ধান্ত ও তার দৃঢ় বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া যেমন প্রসংসার তেমনই দৃঢ়তার সাথে বলা প্রয়োজন যে রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা বা দেশটির মৌলিক আদর্শ বিবর্জিত হলে তার অর্থনতিক অগ্রগতি বাধাগ্রস্থ হতে বাধ্য।
যে পশ্চাৎপদ মধ্যযুগীয় ধর্মান্ধ রাজনীতির কাছে ক্ষমতাসীনেরা আত্মসমর্পণ করে দেশের রাজনীতিকে সাম্প্রদায়িকীকরণ বা পাস্তিানীকরণের দিকে অস্বাভাবিক দ্রুততার সাথে ঠেলে দিচ্ছেন তার পরিণতি তাঁদের জন্যও সুখকর কিছু যে হবে না-তা আজই চোখ বুঁজে বলে দেওয়া যায়।
বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতিকে পেছন দিকে, দক্ষিণ পন্থার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। যে দিক সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধণী সংসদে পাশ করিয়ে বাহাত্তরের সংবিধানের বঙ্গবন্ধু নির্দেশিত রাষ্ট্রীয় চার মৌলনীতি নামকাওয়াস্তে উল্লেখ করে জেনারেল জিয়ার “বিসমিল্লাহ” “জামায়াতে ইসলামী ও ধর্মাশ্রয়ী দল গঠনসহ তাদের কার্য্যকলাপে বৈধতা প্রদান এবং এরশাদের “রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম” সন্নিবেশিত হলো সংসদে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার চূড়ান্ত অপব্যবহার করে সেদিনই ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়ের পশ্চাদপসরণ প্রক্রিয়া জোরেসোরে শুরু হলো। দিন দিনই সেই প্রক্রিয়া দ্রুতগতি সম্পন্ন হয়ে উঠছে।
হেফাজতিদের দাবী মেনে শিক্ষা ব্যবস্থার সাম্প্রদায়িকীকরণ, তাদেরই দাবীতে কওমী মাদ্রাসার ডিগ্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাষ্টার্স ডিগ্রীর সমতুল্য বলে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংশের কিনারায় ঠেলে দিচ্ছে। আধুনিক মননশীল অভিভাবকেরা এখন বাধ্য হবেন তাদের সন্তানদেরকে বিদেশে শিক্ষার জন্য পাঠাতে। দেশ তাতে মাদ্রাসা শিক্ষার কবলে আরও বেশী বেশী করে পড়বে। দেশের প্রশাসনও রাজনীতি থেকে শুরু করে বিচার বিভাগসহ সকল কিছুই মাদ্রাসার ছাত্রদের তথা হেফাজতদের দখলে চলে যাবে। এটাই হোলো তাদের নীতিনকশা এবং তাতে সায় দিয়ে আওয়ামী লীগ আত্মহননের পথে পা দিল আদর্শগতভাবে।
২৫ মে গভীর রাতে যে কতটি ঘটানো হলো জাষ্টিসিয়া নামক ভাস্কর্য্য সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গন থেকে অপসারণ করে তা বাঙালি সংস্কৃতির উপর নজির বিহীন আক্রমাণ দেশের সকল মানুষই টেলিভিশন দেখেচ্ছে তেঁতুল হুজুর আল্লামা শফি প্রধানমন্ত্রীর পাশে বসে তাঁকে ঐ ভাস্কর্য্য অপসারণের কথা বলার সাথে সাথে তিনি তাতে শুধু সায়ই দিলেন না সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন, প্রতিবেশীর ঐ মূর্তি কে বসালো তা তিনি জানেন না। তাঁকে কেউ জানায়নি। তিনি অবাক কিভাবে গ্রীক দেবীর মূর্তি বাংলাদেশে এলো তাতেও আবার শাড়ী পড়িয়ে। অত:পর বললেন এ ব্যাপারে তিনি প্রধান বিচারপ্রতির সাথে শীঘ্রই কথা বলবেন।
এরপর থেকে প্রতি শক্রবারে জুমআর নামাযের পর মিছিল করে তারা ঐ ভাস্কর্য্যটির দ্রুত অপসারণ দাবী করেছে। পরিশেষে তারা রমজানের আগেই যেন অপসারণ করা হয় এমন হুমকিও দিতে পরোয়া করে নি। এর মাধ্যমে প্রধান বিচারপতিসহ সুপ্রিম কোর্টের বিচার প্রতিদেরকেও প্রকারাস্তরে হুমকি দেওয়া হয় কিন্তু পুলিশ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে নি হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে কোন মন্ত্রী টু-শব্দটিও উচ্চারণ করেন নি বা প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে ভাস্কর্য্যরে ব্যাপারে আইন হাতে তুলে না নেওয়ার কোন আবেদনও জানান নি।
অবশেষে মাননীয় প্রধান বিচারপ্রতি ও তাঁর সহকর্মীদরকে আদালতের নিরাপত্তা রক্ষার্থে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাধ্য হয়ে ভাস্কর্য্যটি অপসারণ করার ব্যবস্থা করতে বাধ্য হন।
কিন্তু কোটি কাটি মানুষ সংস্কৃতি ও রুচিবান মানুষ হেফাজতদের ঐ দাবীর ও প্রধান মন্ত্রীর তাদের কাছে সরাসরি আত্মসমর্পণের বিরুদ্ধে ছিলেন। সামাজিক মাধ্যগুলি বরাবর এমনই প্রমাণ রেখেছে।
অত:পর যখন ভাস্কর্য্যটি অপসারণ করাই হলো দেশের প্রগতিশী ছাত্র-যুব সমাজ বিক্ষোভে ফেটে পড়লেন সমগ্র তরুণ সমাজ, গণজাগরণ মঞ্চ, বুদ্ধিজীবিগণ ও প্রিন্ট ও ইলেজট্রনিক মিডিয়াসমূহ তার প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন যা আজও ব্যাহত আছে।
বাঙালি সংস্কৃতি পৃথিবীর যেখানে যা কিছু ভাল তাকে গ্রহণ করা সম্মান দেওয়া শিখিয়েছে। সে কারণেই বঙ্গবন্ধু পশ্চিম বাংলা বা ভারতে জন্ম দেওয়া কবি নজরুলকে তাঁর জীবনের শেষ লগ্নে বাংলাদেশে তাঁকে নাগরিকত্ব প্রদান করেন-মৃত্যুর পর বাংলাদেশের মাটিতেই তাঁকে সমাধিস্থও করেন।
এই সরকারই তো বিদেশী যাঁরাই নানাভাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য সহযোগীতা করেছেন বা অংশ গ্রহণ করেছেন তাঁদের সকলকে এদেশের মাটিতে আমন্ত্রণ জানিয়ে এনে সম্মানিত করেছেন। ফলে বাঙালি জাতিই সম্মানিত হয়ছেন।
এখন দেখছি বাঙালি সংস্কৃতির চাকাটিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে কি এবারের বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধে “স্মরণীয়” ও “তাৎপর্য্যপূর্ণ” অবদানের জন্য তেঁতুল হজুর আল−ামা শফিকে স্বধীনতা পুরস্কার দিয়েও সম্মানিত করা হবে?
সর্বাপেক্ষা অবাক কান্ড, ভাস্কর্য্যটি অপসারণের পর যখন তরুণ সমাজ বিক্ষোভে ফেটে পড়লো তখন গাজীপুর থেকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়েদুূল কাদের ভাস্কর্য্য অপসারণের সিদ্ধান্ত সরকারের নয়-সুপ্রিম কোর্টের বলে অদ্ভুত বক্তব্য দিলেন। কি বুঝাতে চাইলেন তিনি? সরকার কি তাহলে ভাস্কর্য্যটি অপসারণের বিরুদ্ধে? যদি তা সত্য হয় তবে অবিলম্বে তা পুন:স্থাপনের ব্যবস্থা করা হোক। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সেদিনকার বক্তব্যও প্রত্যাহার করুন। কাদের সাহেব এভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবেন না-তাঁদেরকে বোকাও ঠাওরাবেন না। কেন ছাত্রলীগ-যুবলীগ-মহিলালীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ওলেমালীগ সহ সহ¯্র লীগ ভাস্কর্য্য অপসরাণের বিরুদ্ধে পথে নামছেন না? নামতে বলুন। দেখান যে সরকার হেফাজতের সাথে আপোষ কর নি বা তার প্রশ্নই আসে না।
ভোটের কাঙাল হয়ে ফেফাজতীদের কাছে এমন আত্মসমর্পনের ফলে কার্য্যত: এখন, আওয়ামী লীগ-বিএনপি জাতীয় পার্টির মধ্য আদর্শগত ফারাক কিছু থাকলো কি? দলটির গৌরবোজ্জল ঐতিহ্যই বা কাথায় গেল?
হেফাজতের ভোট শেষতক আওয়ামী লীগ হয়তো পেয়েও যেতে পারে কিন্তু তাতে আওয়ামী লীগের আরও অধ:পতনই ঘটবে কারণ তারা অপ্রকাশ্যে আওয়ামী লীগকে তাদের সকল দাবী মেনে নেওয়ার অঙ্গীকারাবদ্ধ করে নিয়ে তবেই ভোট দেবেন। ফলে আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যবাহী বন্ধুরা দূরে সরে যেতে বাধ্য হবেন এবং শেষতক দেশটাকে হয়তো ইসলামী রিপাবলিক এ পরিণত করা হবে আওয়ামী লীগের মাধ্যমেই।
হেফাজত ভাস্কর্য্য অপসারণের ব্যাপারে প্রধান বিচারপতি বা সুপ্রিম কোর্টকে নয় প্রধান মন্ত্রীকেই অভিনন্দন জানিয়েছে তারা জানে প্রধান মন্ত্রী অনুরোধ না করলে প্রধান বিচারপ্রতি ও সুপ্রিম কোর্ট ঐ ভাস্কর্য্য অপসারণ সম্ভবত: করতেন না কারণ ওটা তো তাঁদের নির্দেশেই স্থাপন করা হয়েছিল। সত্য গোপনের চেষ্টা ওবায়দুল কাদেরকে বলেন, হেফাজতই বরং তাঁর কথা যে সত্য নয় তা দেশবাসীক দিব্যি জানিয়ে দিলেন।
তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আদর্শকে বাঁচাতে হলে ভাস্কর্য্য পুন:স্থাপন করুন, “বিসমিল−াহ” রাষ্ট্রধর্ম প্রকৃতি সংবিধান থেকে বাদ দিন জামায়াত সহ ধর্মাশ্রয়ী দলগুলিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করুন, শিক্ষা কায়িক নাম পূর্বের জায়গায় ফেরত আনুন ও কওমী ডিগ্রী মাষ্টার্সের সমতুল্য বলে দেওয়া ঘোষণা প্রত্যাহার করুন।
লেখাটি শেষ করতে না করতেই জানা গেল, সুপ্রিম কোর্ট এনেকস্ ভবনের প্রাঙ্গনে ২৭ মে দিবাগত রাত্রে ভাস্কর্য্যটি স্থাপন করা হয়েছে-এতে আংশিক বিজয় হয়েছে মাত্র। কিন্তু যেহেতু ভাস্কর্য্যটি সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের প্রাঙ্গনে বসানো হয়েছিল সেখানেই পুন:স্থাপন না করা পর্যন্ত লড়াই অব্যাহত থাকবে আশা করি। কারণ অপসারণ করার দাবীটি ছিল অযৌক্তিক এবং পূরোদস্তর গ্রহনযোগ্য ও হেফাজতের কাছে আত্মসমর্পন মূলক। তেমন একটি দাবীতে তারা যেভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে আচ্ছিল তাতে তাদেরই শাস্তি হওয়া উচিত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় হুমকি দাতা হেফাজতিদের গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তি বিধানে পিছ পা হবেন না আশা করি।
সঙ্গে সঙ্গে দাবী করি ভাস্কর্য্য অপসারণের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী ছাত্র ইউনিয়ন ও উদীচ শিল্পী গোষ্ঠীর নেতাদের বিরুদ্ধে যে যে দারায় মোকর্দমা দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে হত্যা প্রচেষ্টাও রয়েছে (৩০৭ ধারা) যা হোক, কোন ধারাই প্রযোজ্য নয় কারণ ভাস্কর্য্য তো ঐ সুপ্রিম কোর্ট এলাকাতেই আবার স্থাপন করা হলো এবং মিছিল প্রতিবাদ করার অধিকার সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার যা কোনক্রমেই খর্ব করা যায় না। এই গ্রেফতার ও মোকর্দমার মাধ্যমে সরকারের শ্বৈরতন্ত্রী চেহারা মূর্ত হয়ে উঠছে যা আদৌ কাম্য নয়।


 

 

 

  • প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। কাগজ২৪-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য কাগজ২৪ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!