মহান মুক্তিযুদ্ধের জীবন্ত কিংবদন্তি, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম “বাংলাদেশের জনগণের মালিকানা ক্ষমতাশালীরা দখল করে রেখেছে”

মোঃ দেলোয়ার হোসাইন, গাজীপুর

“সংবিধান অনুযায়ী দেশের মালিকানা মানুষের একথা লেখা থাকলেও ভূমিদস্যু ও লুটেরারা যেভাবে অন্যের জমি দখল করে রাখে, সেভাবে বাংলাদেশের জনগণের মালিকানা ক্ষমতাশালীরা দখল করে রেখেছে। সরকারি অফিস আদালতে গেলেই টের পাওয়া যায় দেশের মালিক কারা।” কৃষক-শ্রমিক জনতালীগের সভাপতি মহান মুক্তিযুদ্ধের জীবন্ত কিংবদন্তী বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম আজ (বুধবার) সকালে ইকবাল সিদ্দিকী কলেজের নতুন একাডেমিক ভবনের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেছেন। তিনি আরও বলেন “বড় বড় মানুষেরা বাংলাদেশের মাথা বিশ্ব দরবারে নিচু করেছে, আর ছোট ছোট ছেলেরা দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে, স্বাধীনতা সম্মাননা পদক থেকেও সরকারি লোকেরা চুরি করে। শিক্ষামন্ত্রী নিজে বলেছেন, তিনি চোর, তার সহকর্মী মন্ত্রীরাও চোর। ভোট ছাড়া যারা সরকারে থাকে, আমি সেই দল করি না, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করি। যৌবনে আমার প্রেম হয়েছে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে, এই দেশের সঙ্গে।”

ভারতের আসামের এক বিধায়কের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, এখন কি হবে তা জানি না, তবে ৭১-এ ভারতের এমন কোনো ক্ষমতা ছিলনা যে তারা বাংলাদেশ দখল করে নেবে। যে বাঙালিকে পিন্ডি বাগে আনতে পারেনি, দিল্লির পক্ষে তাদের পদানত করা সম্ভব ছিলো না। আমরা জয়দেবপুরকে গাজীপুর, বিক্রমপুরকে মুন্সিগঞ্জ বানাতে পারি কিন্তু একটি লঞ্চ ডুবে গেলে উঠাতে পারি না, বিল্ডিং ধসে পড়লে মানুষকে বাঁচাতে পারিনা।” বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, “বঙ্গতাজ তাজউদ্দিনের নাতিকে যেদিন গুলশান থানায় নির্যাতন করা হয়েছে সেদিন প্রকারন্তরে গোটা মুক্তিযুদ্ধকে, মুক্তিযোদ্ধাদেরকে এমনকি আমাকেও নির্যাতন করা হয়েছে অথচ তার কোনো বিচার হয়নি। আমরা নিজের মানুষকে, নিজের ঘরের মানুষকে সম্মান করতে শিখি নাই, সম্মান দিতেও জানি না, তবুও এখানে এই যে প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে তা মানবের হবে, দানবের হবে না। এই প্রতিষ্ঠান যথাযথভাবে ধাবিত হবে, এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সাহসী হবে, দরিদ্রকে ভালোবাসতে শিখবে আবার অত্যাচারীর সামনে সিনা টান করে দাঁড়াবে, সেটাই হবে এই প্রতিষ্ঠানের সার্থকতা। ইকবাল সিদ্দিকী কলেজের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা যদি শতভাগ পাশ করতে পারে, তাহলে আমি বিশ্বাস করি, একদিন এই কলেজ দেশের এক নম্বর কলেজ হবে। তিনি আরও বলেন, এই প্রতিষ্ঠানে যারা পড়ালেখা করবে তারা যেন মানুষ হয়, তারা যেন অমানুষ না হয় কারণ আমাদের দেশে মানুষের বড় অভাব। আল্লাহ যদি অনুমতি না দেন তবে কোনকিছুই হয়না। ইকবাল সিদ্দিকী কলেজ আমার জীবনে গৌরব, আমি যতদিন বেঁচে থাকবো, ততদিন এই কলেজের কথা আমার মনে থাকবে। আমি আল্লাহ তা’য়ালার কাছে প্রার্থনা করি, এই প্রতিষ্ঠানকে তিনি যেন তাঁর ছায়াতলে রাখেন।” সভাপতির বক্তব্যে ইকবাল সিদ্দিকী কলেজের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল ইকবাল সিদ্দিকী বলেন, “যে হাত একাত্তরে দেশ মাতৃকাকে শত্রুমুক্ত করতে হানাদারদের বিরুদ্ধে অস্ত্রের ট্রিগারে ছিলো, যে হাত বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ও প্রতিরোধ করার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামে ছিল মুষ্টিবদ্ধ, যে হাত পাকিস্তানী জেনারেল নিয়াজীর সম্প্রসারিত হাতকে প্রত্যাখ্যান করেছিল ঘৃণাভরে, সেই হাতে, সেই পবিত্র হাতের ছোঁয়া আজ আমাদের প্রতিষ্ঠান পেয়েছে এবং সে কারণে আজকে আমরা আনন্দে উদ্বেলিত, উজ্জীবিত ও শিহরিত। আর ২০১৮ সনের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা সৌভাগ্যবান যে, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের মত মহান মানুষ আজ তাদের সাফল্য কামনায় আল্লাহর দরবারে হাত তুলে দোয়া করছেন।” একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মনিষা দেবনাথের সঞ্চালনায় উক্ত অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর এর সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জনাব এ. কে. এম. বদরুল আলম লিটন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ২২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জনাব মোঃ ছবদের হাসান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা জনাব মোঃ জহিরুল ইসলাম হেলাল, মুক্তিযোদ্ধা ডিগ্রী কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য জনাব মোঃ ফিরোজ মিয়া, ইকবাল সিদ্দিকী কলেজের ম্যানিজিং কমিটির সদস্য জনাব আব্দুর রহমান, ব্রাইট মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক জনাব আফজালুল হক ও কচি-কাঁচা একাডেমির প্রথম ছাত্র মেজর হায়দারের গর্বিত পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা সামছুল আলম, এইচএসসি পরীক্ষার্থী মুক্তাদী রেজা মুন্না ও একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আফরিন আক্তার জুই। এছাড়াও কলেজ ক্যাম্পাসে বঙ্গবীর দুটি গাছের চারা রোপন করেন।
সবশেষে পরীক্ষার্থীদের সাফল্য কামনায় মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন ইকবাল সিদ্দিকী স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক মাওলানা ইসমাঈল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!