এম এস ইসলাম আকাশ এর কবিতা- যন্ত্রণাদগ্ধ প্রহরের কথকথা

যন্ত্রণাদগ্ধ প্রহরের কথকথা
-এম এস ইসলাম আকাশ

অন্তহীন নৈশব্দে কাটুক যন্ত্রণাদগ্ধ প্রহর
অসীম শূণ্যতায় মুখ থুবরে পড়ে থাক সব
অযাচিত দুঃস্বপ্নগুলো।

আমি আশায় বাঁধি বুক
চেয়ে চেয়ে দেখি শুধু বিরামহীন ঝরে পড়া
পাতাদের পানে
সুসময় একদিন আসবেই।

ভাবি একটু একটু করে
কাটবে যন্ত্রণার প্রহর কাটবে অমানিশা,
কাটবে অমানিশার অন্ধকার।
কাটবে বিবর্ণতা,কাটবে বিষন্নতা।

কালি ঘোলা আধাঁর চিঁড়ে
আসবে আলোর ঝর্ণাধারা

আকাশের অসীমতায় উজ্জ্বল হয়ে গেঁথে থাকা তারার মতো!

জানি একদিন তুমি আসবেই।

কার্ফিউ পড়ুক শহরে অথবা
হরতালে শুনশান হয়ে যাক
বোমায় বোমায় চূর্ণ হোক হায়েনার বুকের পাজর
গলির মুখে পুলিশের প্রতিবন্ধকতায় প্রতিহত হোক আততায়ীর বুলেট

জানি তুমি আসবে।

ঠিক যেমন রাত পেরিয়ে দিন আসে
নিয়ত সকাল যেথায় হাসে
ধরায় আসে শান্তির শান্তনা।

অবাঞ্চিত কষ্টগুলো নির্বাসনে যাক
নির্বাপিত হোক সকল যন্ত্রণার বিষাদ।
নির্জলা দুঃস্বপ্নগুলো ভেসে যাক
প্রমত্তা পদ্মায় খড়কুটোর মতো।

আর কেউ না জানুক
না শুনুক হৃদয়ের আর্তনাথ
একজন অবশ্যই জানে
নির্ঘুম কাটিয়েছি কত রাত
কত রাত পথ চলেছি জোনাকির আলোয়।

কত দিন রোদের মাঝে
খুজেছি মেঘের ছায়া
অসহায়ত্বে মাথার উপর তুলে দিয়েছি শূন্য হাত।
কত বৃষ্টির ফোটায়
মিশে গেছে অশ্রুজল।
কত রাত কত দিন
বালিশ ভিজেছে লোনা জলে
কেউ না জানুক,অন্তত একজন তা জানে।
কষ্টগুলো বুকের মাঝে পাথর চাপা দিয়ে
অন্যের আনন্দে ভেসেছি কতদিন

আর কেউ না জানুক
আমি জানি, তুমি তা জানো।

বুকের বা’পাশটায় চিনচিনে ব্যাথা হলেও
কাউকে বুঝতে দেইনি ব্যথার দুর্ভোদ্যতা
এইতো সেদিন সবার অগোচরে যখন মেডিকেলে গেলাম
চিকিৎসক বললেন প্রাথমিক স্টেজ
সাবধান হোন
বলিনি কাউকে,কারন চাইনি কেউ জানুক আমার যন্ত্রণা

শান্তনা ধরেছি বুকে,ভেবেছি
আর কেউ না জানুক একজনতো জানে।

জন্ম থেকে অদ্যবধি
একাকী পথচলায় অথবা জনবেষ্টিত একাকী শূণ্যতায়
কত কথা বলেছি… এখনো বলে যাচ্ছি পরম বিশ্বস্থতায়

আর কেউ না জানুক তুমিতো জানো।

স্কুল, কলেজে পড়াকালীন সেই সময়গুলো
মনে পড়ে কি?
সবাই যখন টিফিনে ব্যস্ত থাকতো
আমি তখন টিউবয়েলের ঠান্ডা জলে
মুখ ধোয়ার বাহানায় খেয়ে নিতাম দু’আজলা জল
তাকাতাম এদিক ওদিক
দেখতাম কেউ দেখেনি
কিন্তু আমিতো জানি, তুমি তা জানো।

সেদিন পাড়ার ছেলেদের সাথে আড্ডায়
নানা কথায় যখন ফেসে গেলাম
বিচার বসলো আমতলায়
নির্দোষ হয়েও গালমন্দ খেলাম
লজ্জায় লাল হলো গাল
রক্তহীন সাদা হলো হাত পা

তবুও প্রমান করতে পারিনি
আমি নির্দোষ।
সেদিন দু’হাতে খামচে ধরছিলাম নিজের অক্ষমতাকে

আর কেউ তা না জানুক—
আমিতো জানি…তুমি তা জানো।

সে দিন উন্মুক্ত আকশের বুকে আমি ছিলাম শিকার
আর ওরা ছিলো নির্মম শিকারী
কথা বলতে না দেওয়ায় ওদের ছিলো ধনুভাঙ্গা পণ
আমি সেদিন পারিনি বলতে

আর কেউ না জানুক
আমি জানি…. তুমি তা জানো।

আমি জানি তুমি আসবে একদিন
তোমার স্বমহিমায়
ভাসিয়ে দিবে অন্ধকার আলোর ঝর্ণাধারায়।

আবার আমি নিঃশ্বাস নেবো
মেঘমুক্ত আকাশের নীচে
বৃষ্টি ধোয়া কোন এক সকালে অথবা
অবগাহিত হবো রুপালী জোস্নায়

সেদিন ঠিক সেদিন
আমার কষ্টগুলো উড়িয়ে দেবো
অনন্ত আকাশে সুতো কাটা ঘুড়ির মতো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!