যুবলীগের দুই নেতা হত্যায়ও সাংসদ আমানুরের নাম

অনলাইন ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

টাঙ্গাইলে পাঁচ বছর আগে নিখোঁজ দুই যুবলীগ নেতা ওই সময়ই খুন হয়েছিলেন। এ মামলায় গ্রেপ্তার দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানিয়েছেন এ তথ্য। তাঁদের জবানবন্দিতে এ ঘটনায়ও নাম এসেছে সাংসদ আমানুর রহমান খান ও তাঁর ভাই জাহিদুর রহমান খানের।

২০১২ সালে খুনের শিকার দুজন হলেন সদর উপজেলার বাঘিল ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মোহাম্মদ শামীম (২৮) এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন মিয়া (২৫)। এ মামলায় গ্রেপ্তার দুই আসামি শাহাদত হোসেন ওরফে সাধু (৪৫) ও খন্দকার জাহিদুল ইসলাম (৩৮) টাঙ্গাইল বিচারিক হাকিম আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এর মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন শাহাদত হোসেন। গত শনিবার জবানবন্দি দেন খন্দকার জাহিদুল ইসলাম। জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম রূপম কান্তি দাশ দুজনের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন।

জাহিদুলকে গত শুক্রবার এবং শাহাদতকে গত বুধবার টাঙ্গাইল শহরের বিশ্বাস বেতকা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। জাহিদুল বিশ্বাস বেতকা এলাকার খন্দকার নুরুল ইসলামের ছেলে এবং শাহাদত একই এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে।

জেলা আওয়ামী লীগের নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সাংসদ আমানুর। একই হত্যা মামলার আসামি সাংসদের তিন ভাই টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি জাহিদুর রহমান খান, টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট সানিয়াত খান বাপ্পা। তিনজনই পলাতক।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাঘিল ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মোহাম্মদ শামীম (২৮) এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন মিয়া (২৫) ২০১২ সালের ১৬ জুলাই নিখোঁজ হন। ওই দিনই দুজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার পর লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয় বলে জবানবন্দিতে জানিয়েছেন দুই আসামি।

নিহত দুজনের পারিবারিক সূত্র জানায়, ঘটনার পর তাঁরা মামলা করার সাহস পাননি। ২০১৩ সালের জুন মাসে টাঙ্গাইল শহরে তুহিন নামে এক যুবককে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর বিশ্বাস বেতকা এলাকার আব্দুর রহিমের ছেলে ও যুবলীগ নেতা মো. মোর্শেদ আত্মগোপন করেন। তখন ছেলে নিখোঁজ হওয়ার প্রায় এক বছর পর মামুন মিয়ার বাবা আব্দুল আজিজ ২০১৩ সালের ৯ জুলাই টাঙ্গাইলের বিচারিক হাকিমের আদালতে মোর্শেদসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামুন ও শামীমকে হত্যা এবং তাঁদের লাশ গুম করার অভিযোগ এনে মামলা করেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। সদর থানার পুলিশ ওই বছর ২১ সেপ্টেম্বর মামলাটি নথিভুক্ত করে। পরে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি)।

পুলিশ সূত্র বলেছে, যুবলীগ নেতা বলে পরিচিতি পেলেও দলে মোর্শেদের কোনো পদ ছিল না। সাংসদ আমানুরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলেও তিনি পরিচিত ছিলেন। তাঁর নামে চারটি হত্যাসহ অন্তত ১০টি মামলা রয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অশোক কুমার সিংহ বলেন, মামলার এজাহারভুক্ত আসামি জাহিদুল ও শাহাদতকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। পরে দুজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং আদালত সূত্র জানায়, জাহিদুল ও শাহাদত জবানবন্দিতে বলেন, মামুন ও শামীমকে হত্যার কিছুদিন আগে সাংসদ আমানুরের ভাই জাহিদুর তাঁর কার্যালয়ে মোর্শেদসহ কয়েকজনকে ডাকেন। তাঁদের পাঁচ লাখ টাকা এবং একটি রিভলবার দিয়ে বিশ্বাস বেতকার বাসিন্দা ও যুবদল নেতা আহমেদুল হক শাতিলকে হত্যার ব্যবস্থা করতে বলেন। জাহিদুরের নির্দেশে শাতিলকে হত্যার জন্য মামুন ও শামীমকে ডাকেন মোর্শেদ। এর জন্য দুটি মোটরসাইকেল, সাত লাখ টাকা ও দুটি রিভলবার তাঁদের দেন মোর্শেদ।

জবানবন্দিতে হত্যার বর্ণনায় দুই আসামি বলেন, ২০১২ সালের ১৬ জুলাই বিশ্বাস বেতকায় মোর্শেদ তাঁর কার্যালয়ে শামীম ও মামুনকে ডাকেন। সে সময় তাঁরা বলেন, শাতিলকে তাঁরা হত্যা করতে পারবেন না। টাকা ও অস্ত্র ফেরত চাইলে তাঁরা বলেন, টাকা খরচ হয়ে গেছে এবং মোটরসাইকেল ও অস্ত্র ফেরত দেবেন না। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে কার্যালয়ের মধ্যেই কুপিয়ে ও পিটিয়ে শামীম ও মামুনকে হত্যা করা হয়। লাশ বস্তায় ভরে বাসাইল উপজেলার নথখোলায় নিয়ে ওই দিন সন্ধ্যায় লাশ দুটির মাথা বিচ্ছিন্ন করে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। রাতে মোর্শেদ ও তাঁর সহযোগীরা সাংসদ আমানুরের সঙ্গে দেখা করেন। আমানুর তাঁদের কিছুদিনের জন্য আত্মগোপনে থাকতে বলেন।

উৎস: প্রথম আলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!