ল্যাংটার মেলা, গাঁজা টানার নিরাপদ স্থান!

 


বিশেষ প্রতিনিধি, চাঁদপুর  ।  কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

অশ্লীল নৃত্য, দেহব্যবসা, গাঁজার রমরমা আসর, ধর্মীয় গান ও মজমা বসায় মধ্য দিয়ে চলছে ল্যাংটার মেলা। প্রতিদিন অশ্লীল নৃত্যের তালে তালে ছিটানো হচ্ছে টাকা। ছোট ছোট খুপরিতে চলছে দেহব্যবসা, স্থানে স্থানে পাগলের ভক্তরা গাঁজার মজমা বসিয়ে গাঁজা সেবন করছে। আর কিছু ভক্তরা মাজার জিয়ারত করছে। এ যেন মেলা নয়, অপরাধীদের নিরাপদ স্বর্গ রাজ্য।

ল্যাংটার মেলাকে কেন্দ্র করে আনন্দের হিল্লোলসহ ল্যাংটা নৃত্য, দেহব্যবসা, গাঁজার রমরমা আসর, ধর্মীয় গান ও মজমা বসায় প্রতিবছর পুণ্যের আশায় ভক্তরা। এ মেলায় দোকান বসে প্রায় ৫ সহস্রাধিক। মেলা চলাকালীন ছোট দোকানে ভাড়া দিচ্ছে ১ সপ্তাহের জন্য ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। মিষ্টির দোকান ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা, খেলনার দোকান ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। এমনিভাবে অসংখ্য টাকা উঠছে মেলা উপলক্ষে। মাজার কমিটি প্রতিবছর ভালো অংকের টাকাও উপার্জন করে থাকে। এ টাকা নিয়ে চলে মারামারি। আর এ মাজারে দেয়া মানতি টাকা চলে যায় কতিপয় কয়েকজনের পকেটে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দলে দলে ভাগ হয়ে গাঁজা টানছে পাগলের ক্ষুদে ক্ষুদে দল। কোথাও নগ্ন নৃত্য করছে লেংটার ভক্তরা। কিছু ভক্ত নৃত্যের তালে তালে টাকা ছিটাচ্ছে। কিছু খুপরিতে দেহব্যবসা চলছে ওপেন সিকরেট। আর এই মেলাকে ঘিরে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পকেটমার, ছিনতাই, মলমপার্টি, হিজড়া, প্রতারকদের তৎপরতা বেড়ে যায়। তবে এ ব্যাপারে প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে।

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সাদুল্যাপুর ইউনিয়নের বদরপুরের বেলতলীতে ১৭ চৈত্র শুক্রবার থেকে শুরু হয়ে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী সোলেমান লেংটার মেলা চলবে। সপ্তাহ ব্যাপী লেংটার মেলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি মেডিকেল টিমও মোতায়েন করা হয়েছে।

স্থানীরা জানান, চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সাদুল্যাপুর ইউনিয়নের বেলতলীর বদরপুর গ্রামে সোলেমান শাহ নামে এক ফকিরের মাজার আছে। এই মাজারই ল্যাংটা ফকিরের মাজার হিসেবে পরিচিত। কথিত আছে, সোলেমান শাহ জীবদ্দশায় একটুকরো কাপড় দিয়ে লজ্জাস্থান ডেকে রাখতেন বলে তাকে লেংটা পাগল ডাকতো সবাই। প্রতি বছর এ অসংখ্য বক্তরাই লেংটার মেলার আয়োজন করে। প্রতি বছর ৩১শে মার্চ শুরু হয় এ মেলা, শেষ হয় ৬ই এপ্রিল।

ক’জন ভক্তরা জানান, মতলব তথা দেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে ল্যাংটা ফকিরের ব্যাপক পরিচিতি ও অগণিত ভক্ত। প্রতিবছর অগণিত ভক্ত এ ল্যাংটা মেলার আয়োজন করে থাকে। ল্যাংটার ভক্ত আশেকানরা আস্তানা নিয়ে বসে ঢোল-কারার মাধ্যমে বাবার উদ্দেশে ধর্মীয় গান ও মজমা বসায় পুণ্যের আশায়। এছাড়া অসংখ্য ভক্ত রয়েছেন তারা ল্যাংটা বাবার মাজার জিয়ারত করে এবং জিকির আজকার করে ঢোল বাদ্য, বাজনা বাজিয়ে মাজার ত্যাগ করে।

মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম জানান, মাজারের পবিত্রতা রক্ষার্থে প্রশাসনের কড়া নজরদারি রয়েছে। মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন মজুমদার জানান, ‘ওরশের পবিত্রতা রক্ষা ও নির্ভিঘ্নে ওরশ পালন করার স্বার্থে কোন প্রকার মাদক বিক্রি করতে দেয়া হবে না। এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক এ ভক্ত জানান, ল্যাংটা ফকির ছিলেন একজন ভালো লোক। মেলাকে ঘিরে যে অপকর্ম হয় তা প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করেছে। তিনি আরো জানান, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভক্তরা যে, লঞ্চ, ট্রলার, বাস, মিনি বাস, ট্রাক, মেক্সি, প্রাইভেটকার যোগে ওরশে আসা প্রতিটি যানবাহন তল্লাশি করলে মণে মণে গাঁজা পাওয়া যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!