শতকরা ১০ ভাগ আসবে পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে : পাবনায় প্রধানমন্ত্রী

সৈয়দ আকতারুজ্জামান রুমী,পাবনা প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়ানোর মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০২৩-২৪ সাল নাগাদ এ কেন্দ্রের দু’টি ইউনিট থেকে মোট ২ হাজার ৪শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডে। ২০২৪ সালের মধ্যে আমাদের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের কমপক্ষে শতকরা ১০ ভাগ আসবে এই পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে।

শনিবার দুপুরে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের প্রথম কংক্রিট ঢালাই উদ্বোধন শেষে সংক্ষিপ্ত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পর্কে কোনো কোনো মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এটি নির্মাণে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার গাইডলাইন এবং আন্তর্জাতিক মান অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হচ্ছে। রাশিয়ার সর্বশেষ জেনারেশন থ্রি-প্লাস প্রযুক্তির রিঅ্যাক্টর দিয়ে তৈরী হচ্ছে এ কেন্দ্র। পারমানবিক নিরাপত্তা ও বিকিরণ নিয়ন্ত্রণের সর্বাধুনিক ব্যবস্থা আছে এ রিঅ্যাক্টরে। জনগণের জন্য যাতে কোনো ঝুঁকির সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে গ্রহণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতা। পারমানবিক শক্তির নিরাপদ এবং সুরক্ষিত প্রয়োগ নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ পরমানু শক্তি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ প্রনয়ন করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ছিল জাতির পিতার স্বপ্নের প্রকল্প। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। বন্ধুরাষ্ট্র রাশিয়া এটি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ও যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পূনর্গঠনে রাশিয়া এবং সে দেশের জনগণ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল মাত্র ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় তখন ভয়াবহ লোডশেডিং হতো। আমরা বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর উদ্যোগ হিসেবে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করি। তার ফলে আজ দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১৮ হাজার ৩৫৩ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। কোনো লোডশেডিং নেই। ৯০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন এখনও পৌঁছেনি, সেখানে হোম সোলার সিস্টেম চালু করা হয়েছে। সারাদেশে বর্তমানে ৪৫ লাখ সোলার হোম সিস্টেম আছে। টেকসই বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষে জ্বালাানী নীতিতে জীবাষ্ম জ্বালানীর পাশাপাশি বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারের উপর জোর দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ তেল, গ্যাস, বা কয়লার পাশাপাশি পারমানবিক, সৌর ও বায়ু চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপর গুরুত্ব দিয়েছি।

তিনি বলেন, পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল তৈরীর কার্যক্রম আমরা গ্রহণ করেছি। ইতোমধ্যে জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং তাদের ভারত ও রাশান ফেডারেশনে প্রশিক্ষণ কর্মসূচী শুরু হয়েছে। শুধু পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নয়, স্যাটেলাইট পরিচালনার জন্য আমরা নিজস্ব জনবল তৈরী করছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সোনার বাংলা বিনির্মাণের পথে অনেকদূর অগ্রসর হয়েছি। গত মার্চ মাসে বাংলাদেশ বকটি শর্ত ভালোভাবে পূরণ করে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় প্রবেশ করেছে। এর আগে ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা দেয়। আর্থ সামাজিক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, অনেক উন্নত দেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। বিগত এক দশক ধরে বাংলাদেশ সাড়ে ৬ শতাংশের বেশি হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। যা এবছর ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। মাথাপিছু আয় গত নয় বছরে ৫৪৩ মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ৭৫২ ডলার হয়েছে। দারিদ্রের হার ২০০৬ সালে ৪১.৫ শতাংশ থেকে ২২ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে ৭২ বছর হয়েছে। শিক্ষার হার ৭৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত মে মাসে মহাকাশে আমরা আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপন করেছি। রাজধানীতে মেট্রোরেলের কাজ এগিয়ে চলছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজের প্রায় ৫৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত প্রযুক্তি নির্ভর জ্ঞানভিত্তিক মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করা।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, রাশান ফেডারেশনের উপ-প্রধানমন্ত্রী মি. ইউরি ইভানোভিচ বোরিসভ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন, আইএইএ’র পরিচালক মি. দোহী হান। স্বাগত বক্তব্য দেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: আনোয়ার হোসেন।

এর আগে দুপুর ১১টা ৫০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে রুপপুরে আসেন। ১২টার দিকে রাশান ফেডারেশনের উপ-প্রধানমন্ত্রী মি. ইউরি ইভানোভিচ বোরিসভকে সাথে নিয়ে দ্বিতীয় ইউনিটের কংক্রিট ঢালাই উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১২টা ৪০ মিনিটে কংক্রিট ঢালাই কাজের ফলক উন্মোচন করেন।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৩০ নভেম্বর ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প’র প্রথম চুল্লির প্রথম কংক্রিট ঢালাই এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!