শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮২তম জন্মদিন।

সম্পাদকীয় ডেস্ক । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এর ৮২তম জন্মবার্ষিকী।

আজ ১৯শে জানুয়ারি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮২তম জন্মবার্ষিকী। স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার, বহুদলীয় গনতন্ত্রের প্রবর্তক শহীদ জিয়া ছিলেন বাংলার আকাশের সবচেয়ে উজ্জল নক্ষত্র। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শুধু একটি নাম নয়, তিনি একটি ইতিহাসও বটে। স্বাধীনতা উত্তর দুর্ভিক্ষ পিড়িত জনগন জাতির পিতা শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর যখন শুধু অনিশ্চয়তা আর হতাশা ছাড়া আর কিছুই চোখে দেখছিলনা, ঠিক তখনই জিয়া জালিয়েছিলেন আশার আলো, বাংলাদেশের জনগন বুকে বেধেছিল অনেক বড় স্বপ্ন।

কিন্তু দেশ বিরোধী ঘাতক চক্র বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা’র সহযোগীতায় নির্মম ভাবে শহীদ করে প্রেসিডেন্ট জিয়াকে। তার শাহাদাতে জাতি কলংকিত। সেদিনই আমরা সেই কলংক থেকে মুক্ত হতে পারব, যেদিন আমরা গড়তে পারব জিয়ার স্বপ্নের সেই সোনার বাংলাদেশ।

তোমার জন্মবার্ষিকিতে আমাদের শুধু মহান প্রভুর কাছে দোয়া করা ছাড়া আর কিছু করার নাই। হে মহান নেতা আমাদের যে আজ হাত পা বাধা। প্রার্থনা করি সৃষ্টিকর্তা যেন আমাদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে তোমার মত সিংহ সাহস দেন।

আসুন, আমরা আবার শহীদ জিয়া সম্পর্কে কিছুটা জানি।

জন্ম ও শৈশব

জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের ১৯শে জানুয়ারি বাংলাদেশের বগুড়া জেলার বাগবাড়ী গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল মনসুর রহমান এবং মাতার নাম ছিল জাহানারা খাতুন ওরফে রানী। পাঁচ ভাইদের মধ্যে জিয়াউর রহমান ছিলেন দ্বিতীয়। তাঁর পিতা কলকাতা শহরে এক সরকারি দপ্তরে রসায়নবিদ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর শৈশবের কিছুকাল বগুড়ার গ্রামে ও কিছুকাল কলকাতা শহরে অতিবাহিত হয়। ভারতবর্ষ বিভাগের পর তাঁর পিতা পশ্চিম পাকিস্তানের করাচি শহরে চলে যান। তখন জিয়া কলকাতার হেয়ার স্কুল ত্যাগ করেন এবং করাচি একাডেমী স্কুলে ভর্তি হন। ঐ স্কুল থেকে তিনি ১৯৫২ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন এবং তারপর ১৯৫৩ সালে করাচিতে ডি.জে. কলেজে ভর্তি হন। একই বছর তিনি কাকুল মিলিটারি একাডেমীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন।

পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে জিয়া

১৯৫৩ সালে তিনি কাকুল পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশন প্রাপ্ত হন। সামরিক বাহিনীতে তিনি একজন সুদক্ষ প্যারাট্রুপার ও কমান্ডো হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করেন এবং স্পেশাল ইন্টেলিজেন্স কোর্সে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। করাচীতে দুই বছর চাকুরি করার পর ১৯৫৭ সালে তিনি ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে বদলি হয়ে আসেন। তিনি ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করেন। ঐ সময়ই ১৯৬০ সালে পূর্ব পাকিস্তানের দিনাজপুর শহরের বালিকা খালেদা খানমের সঙ্গে জিয়াউর রহমান বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে একটি কোম্পানির কমান্ডার হিসেবে খেমকারান সেক্টরে তিনি অসীম বীরত্বের পরিচয় দেন। যুদ্ধে দুর্র্ধষ সাহসিকতা প্রদর্শনের জন্য যেসব কোম্পানি সর্বাধিক বীরত্বসূচক পুরস্কার লাভ করে, জিয়াউর রহমানের কোম্পানি ছিল এদের অন্যতম। এই যুদ্ধে বীরত্বের জন্য পাকিস্তান সরকার জিয়াউর রহমানকে হিলাল-ই-জুরাত খেতাবে ভূষিত করে। এছাড়াও জিয়াউর রহমানের ইউনিট এই যুদ্ধে বীরত্বের জন্য দুটি সিতারা-ই-জুরাত এবং নয়টি তামঘা-ই-জুরাত মেডেল লাভ করে। ১৯৬৬ সালে তিনি পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে পেশাদার ইনস্ট্রাক্টর পদে নিয়োগ লাভ করেন। সে বছরই তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের কোয়েটার স্টাফ কলেজে কমান্ড কোর্সে যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে তিনি মেজর পদে উন্নীত হয়ে জয়দেবপুরে সেকেন্ড ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড পদের দায়িত্ব লাভ করেন। এডভান্সড মিলিটারি এন্ড কমান্ড ট্রেনিং কোর্সে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য তিনি পশ্চিম জার্মানিতে যান এবং কয়েক মাস বৃটিশ আর্মির সাথেও কাজ করেন। ১৯৭০ সালে একজন মেজর হিসেবে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং চট্টগ্রামে নবগঠিত অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড পদের দায়িত্ব লাভ করেন।

স্বাধীনতার ঘোষণা

চট্টগ্রাম শহরে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করে। অস্ত্র বোঝাই জাহাজ সোয়াতের বিরুদ্ধে গড়ে তোলা হয় প্রবল প্রতিরোধ। অস্ত্র খালাস করে যাতে পশ্চিমা সৈন্যদের হাতে না পৌঁছতে পারে সে জন্য রাস্তায় রাস্তায় তৈরি করা হয় ব্যারিকেড। এই ব্যারিকেড সরিয়ে রাস্তা পরিষ্কারের কাজে লাগানো হয় বাঙালি সৈন্যদের। রাত ১০টা পর্যন্ত চলে এই ব্যারিকেড সরানোর কাজ। রাত ১১টায় চট্টগ্রামস্থ অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট’র কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল আবদুর রশীদ জানজুয়া আকস্মিকভাবে সেকেন্ড ইন কমান্ড মেজর জিয়াউর রহমানের কাছে নির্দেশ পাঠান এক কোম্পানি সৈন্য নিয়ে বন্দরে যাওয়ার জন্য।
রাত প্রায় সাড়ে ১১টায় জানজুয়া নিজে এসে মেজর জিয়াকে নৌ-বাহিনীর একটি ট্রাকে তুলে ষোলশহর ক্যান্টনমেন্ট থেকে বন্দরের দিকে রওনা করিয়ে দেন। সঙ্গে একজন নৌ বাহিনীর অফিসারকে (পশ্চিম পাকিস্তানি) গার্ড হিসেবে দেয়া হয়। রাস্তায় বিভিন্ন জায়গায় ব্যারিকেড সরিয়ে যেতে তাঁর দেরি হয়। আগ্রাবাদে একটা বড় ব্যারিকেডের সামনে বাধা পেয়ে তাঁর ট্রাক থেমে যায়, তখনই পেছন থেকে একটি ডজ গাড়িতে ছুটে আসেন ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান। গাড়ি থেকে নেমেই তিনি দৌড়ে যান মেজর জিয়াউর রহমানের কাছে। হাত ধরে তাকে রাস্তার ধারে নিয়ে যান। জানান, ক্যাপ্টেন অলি আহমদের কাছ থেকে বার্তা নিয়ে এসেছেন। পশ্চিমারা গোলাগুলি শুরু করেছে। শহরে বহু লোক হতাহত হয়েছে। এতে চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন মেজর জিয়াউর রহমান। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে দৃঢ়কণ্ঠে তিনি বলে ওঠেন— ‘উই রিভোল্ট।’ সঙ্গে সঙ্গে তিনি খালেকুজ্জামানকে ষোলশহরে ফিরে গিয়ে ব্যাটালিয়নকে তৈরি করার জন্য কর্নেল অলি আহমদকে নির্দেশ দিতে বলেন। আর সেই সঙ্গে নির্দেশ পাঠান ব্যাটেলিয়নের সমস্ত পশ্চিমা অফিসারকে গ্রেফতারের। এই রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল জানজুয়াসহ সব পশ্চিমা অফিসারকে গ্রেফতার করা হলো।

এরপর অন্যান্য ব্যাটেলিয়নের বাঙালি সেনা কর্মকর্তাদের ফোন করলেন, কিন্তু অনেককেই পেলেন না। এ পর্যায়ে তিনি বেসামরিক বিভাগে টেলিফোন অপারেটরকে ফোন করে ডিসি, এসপি, কমিশনার, ডিআইজি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের জানাতে অনুরোধ করেন যে, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অষ্টম ব্যাটালিয়ন বিদ্রোহ করেছে। টেলিফোন অপারেটর মেজর জিয়ার এ অনুরোধ সানন্দে গ্রহণ করেন।

এ পরিস্থিতিতে মেজর জিয়া অষ্টম ব্যাটেলিয়নের অফিসার, জেসিও জোয়ানদের জড়ো করলেন। ২৬ মার্চে তিনি ঐতিহাসিক স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন। ঘোষণায় বললেন, “আমি মেজর জিয়াউর রহমান প্রভিশনাল প্রেসিডেন্ট ও লিবারেশন আর্মি চিফ হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি এবং যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য দেশবাসীকে আহ্বান জানাচ্ছি। বাংলাদেশ স্বাধীন। আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে অবতীর্ণ হলাম। আপনারা যে যা পারেন, সামর্থ্য অনুযায়ী অস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন। আমাদেরকে লড়াই করতে হবে এবং পাকিস্তানি বাহিনীকে দেশ ছাড়া করতে হবে।”

মেজর জিয়া ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রে যান। বেতার কর্মীরা মেজর জিয়াউর রহমানকে পেয়ে উত্ফুল্ল হয়ে ওঠেন। কিন্তু কি বলবেন তিনি? একটি করে বিবৃতি লেখেন আবার তা ছিঁড়ে ফেলেন। এদিকে বেতার কর্মীরা বারবার ঘোষণা করছিলেন যে, আর পনের মিনিটের মধ্যে মেজর জিয়াউর রহমান ভাষণ দেবেন। প্রায় দেড় ঘণ্টায় তিনি তৈরি করেন তাঁর ঐতিহাসিক ঘোষণাটি। সেটা তিনি বাংলা এবং ইংরেজিতে পাঠ করেন। এই ঘোষণা ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ দিল্লির ‘দি স্টেটস্ম্যান’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

জিয়াউর রহমান ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন এনিয়ে কোনো বিতর্কের কোন সুযোগ নেই। জিয়াউর রহমান সেদিন সাত কোটি বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বাংলাদেশের স্বাধীণতার ঘোষনা তৎক্ষালীন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ দেওয়ার কথা থাকলেও তা দিতে তারা ব্যর্থ হয়েছিলেন। এ জন্য ২৬ মার্চ জিয়াউর রহমান এই ঘোষনা দিয়ে জাতিকে মুক্তি সংগ্রামের দিকে দাবিত করেছিলেন।

মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা আছে বিশ্বজুড়ে। ততকালীন মেজর জিয়া পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ ত্যাগ করে একাত্তরের ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ নিজ কানে শুনেছেন জিয়ার কন্ঠে ঘোষিত স্বাধীনতার বাণী। শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নয় বর্হিবিশ্বের গোয়েন্দা নেটওয়ার্কেও জিয়াউর রহমানের দেয়া স্বাধীনতার ঘোষণা ধরা পড়ে। আর সেভাবেই সন্নিবেশিত হয় তাদের নথিতে। অবমুক্তকৃত সিআই এর গোপন দলিলে সেই সত্যটিই প্রকাশ পেয়েছে মাত্র। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার, ভারতের প্রেসিডেন্ট মোরারজী দেশাইও জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক বলে উল্লেখ করেছেন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে এবং বিভিন্ন সময় উচ্চারিত হয়েছে এ প্রসঙ্গটি। জিয়াউর রহমান একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা লগ্নে চট্টগ্রামের কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ মার্চ নিজ দায়িত্বে এবং ২৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার কথা ১৯৮২ সালে নভেম্বর মাসে প্রথম প্রকাশিত স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রের ১৫ খন্ডে উল্লেখ রয়েছে। জিয়ার কণ্ঠে স্বাধীনতার অমোঘ ঘোষণা সিআইএর মত লন্ডনের সাপ্তাহিক গার্ডিয়ান সহ গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ও সংবাদ মাধ্যম লিপিবদ্ধ করে রেখেছে। জিয়ার তেজোদীপ্ত কন্ঠের ঘোষণা শুনেছেন এমন লক্ষ লক্ষ মানুষ এখনো বাংলাদেশের মুক্ত বাতাসে নি:শ্বাস ফেলছেন। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেনানায়ক ও আওয়ামী লীগ নেতা জেনারেল কেএম শফিউল্লাহ, মেজর রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, সৈয়দ আলী আহসান, ব্যারিষ্টার আমিরুল ইসলাম, আনিসুজ্জামান, রাও ফরমান আলী, মেজর জেনারেল সুখবন্ত সিং, মেজর জেনারেল লছমন সিং, লে. জেনারেল মতিন, জেনারেল সুবিদ আলী ভূঁইয়াসহ অনেকেই তাদের নিজগৃহে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জিয়ার কন্ঠে স্বাধীনতা ঘোষণা প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন। জিয়া একাত্তরের ২৬ মার্চ সন্ধ্যা ৭:৪৫ মিনিটে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙ্গররত অবস্থায় একটি জাপানী জাহাজ থেকে অষ্ট্রেলিয়া রেডিওতে জিয়ার ঘোষণার বার্তাটি পাঠানো হয়। অস্ট্রেলিয়া রেডিও জিয়ার ঘোষণাটি প্রথম প্রচার করে। এরপর বিবিসি’তে প্রচারিত হওয়ার পর তা পর্যায়ক্রমে ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে।

জিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণার প্রমাণ মিলে ভারতের ততকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বক্তব্যেও। ‘ইন্ডিয়া সিকস’ নামক বইতে ইন্দিরা গান্ধীর এ বক্তব্যটি সংকলিত হয়েছে। ১৯৭৮ সালে ভারত সফরকালে দিল্লিতে জিয়াউর রহমানের সম্মানে আয়োজিত ভোজ সভায় ভারতের ততকালীন প্রেসিডেন্ট নীলম সঞ্জীব রেড্ডি জিয়াকে বলেন, সর্বপ্রথম স্বাধীনতা ঘোষণা করে আপনি বাংলাদেশের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন। প্রয়াত ঔপন্যাসিক হুমায়ুন আহমেদ তার ‘জোসনা ও জননীর গল্প’ উপন্যাসের (১৮২-১৮৩) পাতায় জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে লিখেছেন। এরকম অনেক উদাহরণ ও প্রমাণ রয়েছে দেশে বিদেশে বইপুস্তকে-দলিল দস্তাবেজে, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিদের উক্তিতে।

জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সিপাহশালার। তিনি ছিলেন, এগার হাজার প্রতিরোধকারী সেনার কমান্ডার। সেটাই ১০ এপ্রিল ১৯৭১ সালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরবর্তীতে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ জাতির উদ্দেশে একটি বক্তব্য দেন, যেটি প্রচারিত হয় ১১ এপ্রিল ১৯৭১ স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে। সেখানে তাজউদ্দীন আহমদ বলেন First announced through Major Ziaur Rahman, to set up a full Fledged operational base from which it is administering the liberated areas. (Bangladesh Documents, Vol-I, Indian Government, page 284).

বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ (মরহুম) অলি আহাদ তার ‘জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৭-৭৫’ বইয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে লেখেন, “…আমি জনাব আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর সহিত নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করিতাম তাহার বাসায় রাত্রিযাপন করিতে গিয়ে তাহারই রেডিও সেটে ২৭ মার্চ চট্টগ্রাম বেতারকেন্দ্র হইতে মেজর জিয়াউর রহমানের কণ্ঠস্বরে স্বাধীন বাংলার ডাক ধ্বনিত হইয়াছিল। এই ডাকের মধ্যে সেই দিশেহারা, হতভম্ব, সম্বিতহারা ও মুক্তিপ্রাণ বাঙালি জনতা শুনিতে পায় এক অভয়বাণী, আত্মমর্যাদা রক্ষার সংগ্রামে ঝাঁপাইয়া পড়িবার আহ্বান, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের লড়াইয়ের সংবাদ।”
ভারতে সরকারী ওয়েব সাইটে বলা আছে “While the where abouts of Mujib remained unknown, Major Ziaur Rahman announced the formation of the provisional government of Bangladesh over radio Chittagong. আর মার্কিন ষ্টেট ডিপার্টমেন্টের বিবৃতি On march 27 the clandestine radio announced the formation of a revolutionary army and provisional government under the leadership of Major Ziaur Rahman”.

মুক্তিযুদ্ধের ৫ নাম্বার সেক্টরের কমান্ডার মেজর মীর শওকত আলী (বীর-উত্তম) লিখেছেন, ” অষ্টম বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডার জিয়াউর রহমান বিদ্রোহ ঘোষণা করলে এবং পরে স্বাধীনতাযুদ্ধের ডাক দিলে আমি সানন্দে যুদ্ধে যোগদান করি। “

আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর রফিক-উল ইসলাম (বীর-উত্তম) তাঁর ‘A Tale of Millions’ বইয়ের ১০৫-১০৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, “২৭ মার্চের বিকেলে তিনি (মেজর জিয়া) আসেন মদনাঘাটে এবং স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।”

একজন পাকিস্তানী সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়েছিলেন বলে সম্প্রতি দালিলিক সত্য প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। সংস্থাটির ওয়াশিংটনস্থ সদর দফতর সম্প্রতি বাংলাদেশ বিষয়ক গোপন দলিল অবমুক্ত করলে এ বিষয়ে প্রথম আলো পত্রিকায় সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান এর লেখা একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি সিআইএর গোপন দলিলের বরাত দিয়ে লিখেন- ‘সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হলেও জিয়া ছিলেন ক্যারিশমেটিক নেতা । প্রায় ছয় বছরের নেতৃত্বে এক আশাবিহীন দরিদ্র ও বিশৃংখল অবস্থা থেকে তিনি বাংলাদেশকে সমস্যা মোকাবিলা করার উপযোগী করে তুলেছিলেন।’ ১৯৮২ সালের নভেম্বরে প্রস্তুত সিআইএ’র বাংলাদেশ বিষয়ক হ্যান্ডবুকে দেশের প্রথম দশকের রাজনীতি মূল্যায়ন করে বলা হয়, জিয়াউর রহমানের হত্যাকান্ড বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নতুন অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে।’
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, যিনি সামরিক বাহিনীর উর্দি ছেড়ে নিজেকে বেসামরিক ব্যক্তিতে পরিণত করেছেন। এর আগেও তিনি আরেকবার উর্দি ছেড়েছিলেন, সেটা ২৬ মার্চ উই রিভোল্ট বলার মাধ্যম। জিয়া সৈনিক ছিলেন আজীবন, যে অর্থে একজন সৈনিক সব সময় যিনি যুদ্ধে থাকেন, থাকেন যুদ্ধক্ষেত্রে। সেই যুদ্ধ পাকিস্তানের দুঃশাসন থেকে অবরুদ্ধ বাংলাদেশকে মুক্ত হাওয়ায় শ্বাস নেওয়ার ব্যবস্থা করে। বাংলাদেশ বুক ভরে শ্বাস নেয়। বাংলাদেশকে অস্পষ্ট মেরুদণ্ড থেকে একটা শক্ত মেরুদন্ডের ওপর দাঁড় করান তিনি।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে জিয়ার সামরিক জীবন

স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমানকে কুমিল্লায় সেনাবাহিনীর ব্রিগেড কমান্ডার নিয়োগ করা হয় এবং ১৯৭২ সালের জুন মাসে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ-অফ-স্টাফ নিযুক্ত হন। ১৯৭৩ সালের মাঝামাঝি তিনি ব্রিগেডিয়ার পদে, ঐ বছরের শেষের দিকে মেজর জেনারেল পদে এবং ১৯৭৫ সালের ২৫ শে আগস্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান নিযুক্ত হন। ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হতে অবসর গ্রহণ করেন।

৭ই নভেম্বরের সিপাহী জনতার বিপ্লব

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবর রহমানের হত্যাকান্ডের পর, খন্দকার মোশতাক আহমেদ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তারপরে ঐ বছরের ২৫শে আগষ্ট জিয়াউর রহমান চীফ অফ আর্মী স্টাফ নিযুক্ত হন। ঐ বছরের ৩রা নভেম্বর বীর বিক্রম কর্নেল শাফায়াত জামিলের নেতৃত্বাধীন ঢাকা ৪৬ পদাতিক ব্রিগেডের সহায়তায় বীর উত্তম মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান ঘটান। এর ফলে ৬ই নভেম্বর খন্দকার মোশতাক আহমেদ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রপতি হন। এর পর জিয়াউর রহমানকে চীফ-অফ-আর্মি স্টাফ হিসেবে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয় এবং তাঁর ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের বাসভবনে গৃহবন্দী করে রাখা হয় যা সেনাবাহিনীর মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তার কারনে অত্যন্ত বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। সেনাবাহিনীর চেইন অব কমান্ড ভঙ্গের প্রতিক্রিয়ায় ক্ষুদ্ধ সেনাসদস্যরা বীর উত্তম কর্নেল (অবঃ) আবু তাহেরের নেতৃত্বে ৭ই নভেম্বর সিপাহী জনতার আরেক পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটায় এবং ২য় ফিল্ড আর্টিলারির সেনাসদস্যরা লেঃ কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদের (আর্টিলারি) নেতৃত্বে, জিয়াউর রহমানকে তাঁর ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের গৃহবন্দীত্ব থেকে মুক্ত করে ২য় ফিল্ড আর্টিলারির সদর দপ্তরে নিয়ে আসে। ঐ দিন সকালেই পাল্টা অভ্যুত্থানের প্রতিক্রিয়ায় কর্নেল (অবঃ) আবু তাহেরের অধীনস্থ সৈন্যরা ক্যাপ্টেন জলিল ও ক্যাপ্টেন আসাদের নেতৃত্বে শেরে বাংলা নগরে ১০ম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদর দপ্তরে বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ বীর উত্তম, কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীর বিক্রম এবং লেঃ কর্নেল এ টি এম হায়দার বীর উত্তম কে হত্যা করে।

রাষ্ট্রপতি জিয়া

১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর সিপাহি জনতা বিপ্লবের পর তিনি রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। ১৯শে নভেম্বর ১৯৭৬ সালে তাঁকে পুনরায় সেনাবাহিনীর চীফ অফ আর্মী স্টাফ পদে দায়িত্বে প্রত্যাবর্তন করা হয় এবং উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব দেয়া হয়। জিয়াউর রহমান ১৯৭৬ সালের ৮ই মার্চ মহিলা পুলিশ গঠন করেন, ১৯৭৬ সালে কলম্বোতে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন সম্মেলনে যোগদান করেন এবং বাংলাদেশ ৭ জাতি গ্রুপের চেয়ারম্যান পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৭৬ সালেই তিনি উলশি যদুনাথপুর থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে খাল খনন উদ্বোধন করেন। ১৯৭৬ সালের ২৯শে নভেম্বর তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হন। ১৯শে নভেম্বর ১৯৭৬ সালে তাঁকে পুনরায় সেনাবাহিনীর চীফ অফ আর্মী স্টাফ পদে দায়িত্বে প্রত্যাবর্তন করা হয় ১৯৭৬ সালে গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠন করেন, ১৯৭৭ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি একুশের পদক প্রবর্তন করেন এবং রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত সায়েম এঁর উত্তরসূরি হিসেবে ২১শে এপ্রিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন জিয়া দেশে আবার গণতন্ত্রায়ণের উদ্যোগ নেন। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র চালুর সিদ্ধান্ত নেন।

১৯৭৮ সালের ৩রা জুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জিয়াউর রহমান জয়লাভ করেন। এই নির্বাচনে মোট ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। এখানে উল্লেখ্য যে, এ নির্বাচনে ১১ জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেন। ২ জনের মনোনয়নপত্র বাছাই –এ বাদ পড়ায় বৈধভাবে মনোনীত প্রার্থীর সংখ্যা ৯ জন। ১ জন আপীল দাখিল করায় ও তাঁর আপীল গৃহীত হওয়ায় এবং কোন প্রার্থী প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করায় সর্বশেষ প্রতিদ্বন্দ্বীর সংখ্যা ১০ জন ছিল। এরপর জিয়াউর রহমান মে মাসে ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা এবং আস্থা যাচাইয়ের জন্য ৩০শে মে গণভোট অনুষ্ঠান ও হাঁ-সূচক ভোটে বিপুল জনসমর্থন লাভ করেন।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা

দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিম্নলিখিত ১৯ দফা কর্মসূচি প্রণয়ন করেছিলেনঃ
১। সর্বোতভাবে দেশের স্বাধীনতা, অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা।
২। শাসনতন্ত্রের চারটি মূলনীতি অর্থাৎ সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের সমাজতন্ত্র জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে প্রতিফলন করা।
৩। সর্ব উপায়ে নিজেদেরকে একটি আত্বনির্ভরশীল জাতি হিসেবে গড়ে তোলা।
৪। প্রশাসনের সর্বস্তরে, উন্নয়ন কার্যক্রম এবং আইন-শৃংখলা রক্ষার ব্যাপারে জনসাধারনের অংশগ্রহন নিশ্চিত করা।
৫। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামীন তথা জাতীয় অর্থনীতিকে জোরদার করা।
৬। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ণ করা এবং কেউ যেন ভুখা না থাকে তার ব্যাবস্থা করা।
৭। দেশে কাপড়ের উৎপাদন বাড়িয়ে সকলের জন্য অন্তত মোটা কাপড় সরবরাহ নিশ্চিত করা।
৮। কোন নাগরিক গৃহহীন না থাকে তার যথাসম্ভব ব্যাবস্থা করা।
৯। দেশকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করা ।
১০। সকল দেশবাসীর জন্য নূন্যতম চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা।
১১। সমাজে নারীর যথাযোগ্য মর্যাদা প্রতষ্ঠা করা এবং যুব সমাজকে সুসঙ্গহত করে জাতি গঠনে উদ্বুদ্ধ করা।
১২। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারী খাতে প্রয়োজনীয় উৎসাহ দান।
১৩। শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতি সাধন এবং উৎপাদন বৃদ্ধির স্বার্থে সুস্থ শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক গড়ে তোলা।
১৪। সরকারি চাকুরীজীবিদের মধ্যে জনসেবা ও দেশ গঠনের মনোবৃত্তিতে উৎসাহিত করা এবং তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন করা।
১৫। জনসংখ্যা বিস্ফোরন রোধ করা।
১৬। সকল বিদেশী রাষ্ট্রের সাথে সমতার ভিত্তিতে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা এবং মুসলিম দেশগুলির সাথে সম্পর্ক জোরদার করা।
১৭। প্রশাসন এবং উন্নয়ন ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণ এবং স্থানীয় সরকাররে শক্তিশালী করা।
১৮। দুর্নীতিমুক্ত ন্যায়নীতিভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করা।
১৯। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকল নাগরিকের অধিকার পূর্ন সংরক্ষণ করা এবং জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুদৃঢ় করা।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল(বিএনপি)

১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর জেনারেল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সংক্ষেপে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন।

জিয়া প্রবর্তিত উন্নয়নের রাজনীতির কতিপয় সাফল্য

১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর জেনারেল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে বেগম খালেদা জিয়া এই দলের চেয়ারপারসন। রাষ্ট্রপতি জিয়া এই দলের সমন্বয়ক ছিলেন এবং এই দলের প্রথম চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যাপক এ. কিউ. এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এর প্রথম মহাসচিব ছিলেন। জিয়ার এই দলে বাম, ডান ও মধ্যপন্থীসহ সকল স্তরের লোক ছিলেন। বিএনপির সব থেকে প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল এর নিয়োগ পদ্ধতি। প্রায় ৪৫% সদস্য শুধুমাত্র রাজনীতিতে নতুন ছিলেন তাই নয়, তারা ছিলেন তরুণ। ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টায় রমনা রেস্তোরাঁয় রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র পাঠের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের যাত্রা শুরু করেন। জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঘোষণাপত্র পাঠ ছাড়াও প্রায় দুই ঘণ্টা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। সংবাদ সম্মেলনে নতুন দলের আহবায়ক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি প্রথমে ১৮ জন সদস্যদের নাম এবং ১৯শে সেপ্টেম্বর ওই ১৮ জনসহ ৭৬ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!