গরিবের হাসপাতাল

গরিবের হাসপাতাল
মোল্লা মোঃ জমির উদ্দিন (লেখক, কবি ও সাহিত্যক)

হাসপাতাল সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা আই এস সি পরীক্ষার ৭দিন আগে থেকেই কারন আগে হাসপাতালে যাবার দরকার খুব একটা পরেনি পরীক্ষার ৭দিন আগে এপেন্ডিকসের ব্যাথা নিয়ে ভর্তি হই টাঙ্গাইল জেলা সদর হাসপাতালে, একটু অতিরিক্ত সেবা পাই ছাত্র হিসেবে পরীক্ষার আগের দিন কোন রকমে জোর করেই ছুটি নিয়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করি। এ যাত্রায় কাটা ছিরা না করে ফিরলেও পরের বছর আবার হাসপাতালে, এবার সার্জন ডাক্তার মৃনাল কান্তি ঘোষণা করলেন সার্জারী না করলে বাঁচানোই অসম্ভব।

কলেজ থেকে বন্ধুরা নিয়ে গেছে যেই বন্ধু ভর্তি করেছিল আবুসামা আকন্দ, সে আজ আর জীবিত নাই তার জন্য দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের বাসিন্দা করেন আমিন। আমি খাতায় স্বাক্ষর করে প্রস্তুতি নিলাম কেউ সাথে নাই ও আমায় রেখে বাড়ি চলে গেছে যাহোক ওটিতে গেলাম এর পর মুখে একটা মাক্স পরালে পরে আর জানিনা কিন্তু যখন ওটি টেবিল থেকে ডিল মেরে নামায়ে দিল তখন বুঝলাম কাজ শেষ। খরচ খরচা কীভাবে মিটলো মনে নাই। তখনও হাসপাতাল এবং চিকিৎসা ব্যবস্থায় লুটপাটের বড় খবর ছিল না বাজেট কম ছিল, মানুষের লোভ এত আকাশ সীমা অতিক্রম করে নাই। তখন ছাত্র মানে এরশাদ পতনের আন্দোলনের একজন কাজেই ছাত্র হিসেবে গুরুত্ব একটু বেশী।

এর পর নিজের জীবনেও পরিবর্তন এলো অনেকের সাথে পরিচয় থাকলেও কেন যেন একজন ছাত্রী নার্সের কাছে আটকে গেলাম নাম তার ফারহানা খান সেই থেকে আমরা একসাথেই আছি তিনিও সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান আমার পরিবারের থেকে শিক্ষিত তিন প্রজন্ম বলে যে কথা সেটা তাদের আছে এটাই আকৃষ্ট হবার গুরুত্বপূর্ণ কারন।
যাহোক সেই থেকে হাসপাতাল সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকলেও নিজের চিকিৎসা খুব দরকার পরে নাই তবে ছোট ছেলের জন্মের পর দরকার ছিলো অগ্রাধিকার পেয়েছে কারণ বাচ্চার মা ওখানেই কর্মরত ছিলেন।

এবার নিজের চিকিৎসা নিতে খুব খারাপ সেবা পেয়েছি বলা যাবেনা কারণ স্ত্রীর কর্মস্থল অন্য জায়গায় শিক্ষা স্বাস্থ্য। এরপর ও আমি সন্তস্ট আমার স্ত্রীর মামত ভাই এসোসিয়েট প্রফেসর তিনি ভর্তি এবং সার্জারির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তাকে ধন্যবাদ সে খুবই অমায়িক মানুষ মেধাবী চিকিৎসক ডাক্তার বিজয় ইউরোলজি বিভাগ ডিএম সি এইচ। আবার বিভাগের প্রধানকে বলে দিয়েছেন প্রফেসর ডা: শাহ আলম আমাদের বড় ভাই।

লেখাটা এজন্য লিখছি দেশ অনেক এগিয়ে গেছে কিন্তু রুগী এত বেশী তিল ধারনের জায়গা নাই আমি যে সেবাটা পেলাম সেটা স্পেশাল যেখানে হাজার হাজার রোগী সিটতো দূরে থাক ভিতরের রাস্তাগুলোতে হাটার অবস্থা নাই।ঔষধ সরবরাহ মোটামুটি ভালো আছে মনে হলো একজন নবজাতকের সার্জারী হয়েছে বাবা রিকশা চালক ও সন্তানের পেছনে সর্বশ্য হারা হয়েছে তার সন্তানের জন্য আইসিও দরকার কিন্তু খালি নাই লোকটার আহাজারি আমাকে খুব নাড়া দিয়েছে হাসপাতাল সাদ্যমত সেবা দিয়ে তাকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ঢাকার মধ্যে যে কয়েকটি হাসপাতাল তার সবগুলোর অবস্থায় কোন ব্যাতিক্রম নয়। সিঙ্গেল সিট পেইংবেড বা কেবিন কোনটাই এত সহজ প্রাপ্য নয় আমার স্ত্রী যেহেতু স্বাস্থ্য বিভাগের লোক ডেপুটেশনে শিক্ষায় থাকলেও পোস্ট অপারেটিভ এ এক রাত থাকার সুজোগ পেয়েছি, যাইহোক আন্ডার লাইন করতে চাই এখানে আমাদের দেশ বলে কথা নয় বিশ্বের সবখানে যেকোনো সময় ঝড় বৃষ্টি হতে পারে জরুরি বিভাগের সামনের জায়গায় ছাউনি থাকলে রোগী ওঠানামার সুবিধা হবে এটা কেন কতৃপক্ষের নজর পরে না, আমি সার্জারী রোগী হয়েও অনেকটা কাকভেজা হয়ে গাড়িতে ঊঠলাম, আমদের মনে রাখা উচিৎ এটা গরিবের হাসপাতাল অবহেলায় রেখে উন্নত দেশের চক চকে স্ট্রাকচারে খুশীর বন্যা শুধু অল্প সংখ্যক ধনীক শ্রেণির চোখে মুখে থাকবে।

মৌলিক চাহিদার অন্যতম স্বাস্থ্য এ ব্যবস্থাটা রাস্ট্রীয়ভাবে সার্বজনীন এবং উন্নত হওয়া অত্যন্ত জরুরি কারণ মানুষ হাসপাতালে যান ফিরে আসবেন কিনা আশংকা থাকে মনের মধ্যে এবং বাস্তবতা এড়িয়ে যাওয়া কারো সাদ্যের মধ্যে নাই তবে যাবার বেলা যদি একটু ভালো সেবা পায় জীবনে না পাওয়াগুলো হয়ত ভুলে যাবে এটা আমার অনুভূতি।

যে যাই বলুক কৃষিই আমাদের প্রধান অবলম্বন। সেখান থেকে উঠে আসা শিক্ষিত চোরগুলো বাপের কথা ভুলে গেছে বাপ লেংটি পরে ক্ষেতে কাজ করত মা এক কাপড়ে ভিজাত এবং পরনেই শুকাতো তার ছেলে থাকো বাড়িধারা গুলশানে অসুবিধা নাই টাকা বাইরে না নিয়ে দেশে রাখার কি ব্যবস্থা আছে সেগুলো দেখো। শুধু নিজের কথা না ভেবে যাদের পেছনে ফেলে এসেছো তাদের কথা ভেবে দেখো।

আমার আপনার দুই কলম লেখা বকা দেয়ায় তাদের আসবে যাবেনা বিভাগীয় শক্তিশালী প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে জবাবদিহিমুলক ব্যবস্থা রাষ্ট্রের সব জায়গায় গড়ে তুলতে হবে, তৃনমুল শিক্ষাব্যবস্থায় সৎ চরিত্র গড়ে তুলতে হবে কারণ দেশ পরিচালনায় ওখান থেকেই উঠে আসে এ জন্য এ সরকার সময় ডেড় পেলেও সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ তবে চেস্টা চালাতেই হবে যাতে আগামী দিন সৎ চরিত্রবান প্রশাসন গড়ে উঠে এ আশা নিয়েই বাঁচতে হবে এগিয়ে যেতে হবে।

শেষ কথা বলে রাখতে চাই তা হলো সরকারের সকল হাসপাতাল সেবামুখি করতে হবে, মানুষের পৃথিবীতে আসাটা যেমন আনন্দের বন্যা বয়ে দিবে এবং বিদায়টাও তেমন সস্তিদায়ক এবং অনেক না-পাওয়ার ব্যাথা ভুলে চির বিদায় নিতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!