পাবনায় কিশোরের মাথার চুল কেটে গলায় জুতার মালা পরিয়ে ঘোরানোর অভিযোগ; গ্রেপ্তার-৩

সৈয়দ আকতারুজ্জামান রুমী, পাবনা প্রতিনিধি । কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

পাবনায় এক কিশোরকে মধ্যযুগীয় কায়দায় মাথার চুল কেটে, গলায় জুতার মালা পড়িয়ে ঘুরানোর অভিযোগ উঠেছে। স্কুলছাত্রীকে উত্যক্ত করার অভিযোগে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ গ্রাম্যপ্রধানরা শালিসের মাধ্যমে কিশোরকে এ সাজা দেন বলে অভিযোগ। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ মামলা নথিভুক্ত করে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।

স্থানীয়রা জানান, গত ১৬ সেপ্টেম্বর সকালে পাবনা সদর উপজেলার ভাড়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে জড়িয়ে ধরে একই গ্রামের মুন্নাফ হোসেন নামের এক কিশোর। পরে ছাত্রীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে মুন্নাফ পালিয়ে যায়। ঘটনার দু’দিন পর গত ১৮ সেপ্টেম্বর স্কুল মাঠে শালিস বৈঠক করেন স্কুল কমিটির সভাপতি আনিছুর রহমান, স্কুলের প্রধান শিক্ষক ওহিদুর রহমান ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান সহ গ্রাম্যপ্রধানরা। শালিসের রায় অনুযায়ী মুন্নাফকে বেত্রাঘাত করেন তার বাবা। এরপর মাথার চুল কেটে ও গলায় জুতার মালা পড়িয়ে স্কুল মাঠে ঘুরানো হয়।

এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে টনক নড়ে পুলিশের। গত বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) মুন্নাফের বাবা মঞ্জু শেখ বাদী হয়ে সদর থানায় সাতজনকে অভিযুক্ত করে মামলা করেন। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) মামলার প্রধান তিন আসামি স্কুল কমিটির সভাপতি আনিছুর রহমান, স্কুলের প্রধান শিক্ষক ওহিদুর রহমান ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ। ঘটনাটিকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন ও অমানবিক বলে মনে করছেন স্কুলছাত্রী, শিক্ষক সহ স্থানীয়রা।

যোগাযোগ করা হলে ছেলেটির বাবা মঞ্জু শেখ জানান, তিনি গ্রামের সাধারণ মানুষ। প্রধানদের উপরে কথা বলার ক্ষমতা তার নেই। তাই তিনি প্রথমে চুপ করেছিলেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে তিনি মামলা করেন। তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে ছেলেটা অসুস্থ্য। ছোট একটা ভুলের জন্য এত বড় শাস্তি হবে ভাবতে পারি নাই। কিশোরের মা বলেন, ছেলে একটা ভুল করেছিল। শাস্তি পাইছে। ছেলের বাবাই তাকে শাসন করছে। আমাদের আর কিছু বলার নাই।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে স্কুলের সহকারি শিক্ষক আজমত আলী বলেন, মুলত গ্রামের প্রধানরা মিলে এই সালিশ বৈঠকের আয়োজন করেন। এখানে স্কুলের কারো কিছু বলার ছিলনা। তবে শালিশের রায়টি ছিল মধ্যযুগীয়। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় এমনটি করা ঠিক হয়নি। স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, শালিস বা মারধর এসব ঘটনার সাথে স্কুলের শিক্ষকরা কেউ জড়িত না। মুলত বিচারটা করছে গ্রামের প্রধানরা।

পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছিম আহমেদ জানান, তারা আইন হাতে তুলে নিয়ে ঠিক কাজ করেননি। তারা পুলিশ প্রশাসনকে জানাতে পারতেন। শালিস করার এখতিয়ার তো তাদের নেই। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পরে অভিযুক্ত প্রধান তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!