নাজির আহমেদ চৌধুরী রনজু’র কবিতা- বাংলাদেশ

 

 

বাংলাদেশ

-নাজির আহমেদ চৌধুরী রনজু

 

তুমি ভোরের সূর্য দিগন্তের উজ্জ্বল আলোবাতি

হালকা নীল আকাশে ভেসে বেড়ানো

একগুচ্ছ সতেজ শুভ্র মেঘ গহীন সমুদ্রে

রঙিন পালতোলা ধাবমান বিস্মিত আবেগ।

 

তুমি রাতের আকাশে পুষ্পিতা একফালি চাঁদ

তুমি স্নিগ্ধ ঝরনার বহমান উচ্ছল স্রোতধারা

তুমি পাখির কলকাকলি হারানো দিনের গান

তুমি আজন্ম হৃদয়ের গীতাবলী আকাশখোলা প্রাণ।

 

সদ্য প্রস্ফুটিত গোলাপ পাপড়িতে

অসংখ্য শিশিরবিন্দু তোমাকে করেছে সিক্ত

তুমি জুঁই গাদা চামেলি তুমি হাসনাহেনা রক্তজবা

গোধুলির আবীরে ভালো লাগা আরক্তিম ভালোবাসা।

 

তুমি সবুজ শ্যামল কান্তির ছায়া

তুমি গভীর অরণ্যের মায়াবী প্রচ্ছায়া

তুমি ধ্যানী মৌন গিরি পাহাড়

তুমি হৃদস্পন্দন ধূসর মরুভূমি

তুমি শান্ত স্নিগ্ধ সলিল আঁধার

তুমি অনামিকা নামের ফুলের বাহার।

 

তুমি সতত বহমান এক নদী

যৌবন উপচে পড়া উচ্ছ্বাসে ভাসমান তোমার

দু-কূল তুমি ভৈরবী আনন্দের নিখাদ সুর

বাহুতে মাদল পায়েতে নিক্কন নূপুর।

 

তুমি অপরাজিতা নাম না-জানা

এক সুন্দর ঘাসফুল তুমি শীতের সকাল

কুয়াশায় ঘেরা অতীত সুদূর তুমি উষ্ণতায়

ভরা অলস উদাস গ্রীষ্মের দুপুর।

 

তুমি শালিক শ্যামা ফিঙে

মাছরাঙার রঙে রাঙানো তোমার মন

তুমি সাগরের বেলাভূমিতে পড়ন্ত সূর্যের

আবির মাখানো ধূসর সবুজ বন।

 

বসন্তের উদাস হাওয়ায় কোকিলের

ডাকে ভাঙে তোমার ঘুম

ঝরা পাতার নিঃশব্দ বেদনায়

কাটে অসংখ্য রাত নির্ঘুম।

 

তুমি রবিঠাকরের হেমাঙ্গিনী

শরৎ বাবুর বিলাসিনী

শত প্রতিকূলতায় নিয়ত ব্যাকুল

তুমি প্রকৃতির দানে এক নৈসর্গিক

ছবি-গ্রীক  ভাস্কর্যের পটভুমিতে

ছড়াতে সুবাস তুমি সতত আকুল।

 

তুমি নজরুলের স্পন্দিত সুরে

বিপ্লবী বাঁকা বাঁশের বাঁশরী

সুকান্তের গদ্যময়তায় একফালি রুটি

তুমি জীবনানন্দের অপরূপ ধানসিঁড়ি নদী

পদ্মা মেঘনা যমুনা বহমান তোমার বুকে

ভাঙ্গে তীর গড়ে নীড় স্বজনহারার দুর্বিনীত শোক।

 

প্রকৃতি এখানে উদার জমিনে সাজায়

সবুজ শ্যামল বন রুদ্রতায় কাল বৈশাখেীর

প্রলয়ন্কারী ঘূর্ণি সাগরে জাগায় উর্মি

শরতের স্নিগ্ধতা শীতের নির্জীবতা

বসন্তের অপরূপময়তা শোনায় কোকিলের গান

মরমে মরমী জেগে ওঠে উদাস বাউল প্রাণ।

 

কাল ও প্রবাহের চিহ্ন মহাস্থানগড়

ময়নামতির বিশাল বনরাজি

শিমুল কৃঞ্চচূড়ার বন্যায় ভাসমান উদাসী

অপরূপ সাগর সৈকত বিশ্বের বিশাল

ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন চিত্রিত চিত্রাহরিণ

মুদ্রিত রয়েল বেঙ্গল করে বিচরণ।

 

তুমি একুশের সকাল নগ্নপায়ে

তোমার পাশে হেঁটে হেঁটে অনায়াসেই

পাড়ি দেয়া যায় ত্রিকাল

তুমি একাত্তরের রেসকোর্স ময়দান

অসংখ্য উখিত হাতের স্পর্শে

কান পাতলেই শোনা যায় বজ্যকন্ঠ বিশাল।

 

মোঘল মোঘল ইংরেজ বেনিয়া বণিকের

পদভারে বারে বারে লুন্ঠিত হয়েছে

তোমার সম্ভ্রম ঈশা খাঁ তিতুমীর

সিরাজের শোণিত স্রোতে শুচিশুদ্ধ

তোমার অঙ্গণ পশ্চিমা হায়েনাদের

দম্ভকে করে চূর্ণ তুমি আজ অর্গলমুক্ত।

 

তুমি অজয় অমর চির বন্দনাময়ী

শাশ্বত রূপসী বাংলা তোমার বুকেে

উড়ে আজ সবুজ জমিনে রক্তাক্ত

লাল সূর্য পতাকা শত শহীদের আত্মত্যাগেে

উজ্জীবিত তোমার প্রাণ সবুজের সমারোহ

প্রকৃতির দান তোমাকে করেছে আরও মহান।

 

তুমি আমার কবিতা ধমনীতে বহমান

উষ্ণ রক্তধারা বিশ্বাসে তুমি

প্রশ্বাসে তুমি নির্গত লাভা অগ্নিঝরা

তুমি অনিন্দিতা চিরশাশ্বত রূপসী বাংলা

অন্তরে তুমি বন্দনায় তুমি

তুমি চিরজাগ্রত ভালোবাসা।

 

তুমি মাতৃভূমি চিরচেনা মায়ের মুখ

তুমি স্বর্গাদপি গরীয়সী তোমার মিলনে

চির উন্মখ তুমি জননী জন্মভূমি গরবিনী

আদরের ধন তোমাতেই শুরু তোমাতেই

বিলীন উৎসর্গীকৃত আমার মন।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!