সেলিনা জাহান প্রিয়ার-ভালোবাসার শেষ আবদার (১ম পর্ব)

 

ভালোবাসার শেষ আবদার

————————- সেলিনা জাহান প্রিয়া

 

ঘরে ঢুকতেই বাবার কর্কস কন্ঠ কায়েস শোনো, আমার পছন্দের মেয়ে কে তোমার বিয়ে করতে হবে এটাই আমার শেষ কথা । আমার সন্তানদের মধ্যে তুমিই সবার বড় । তুমি যদি আমার কথা অমান্য কর তাহলে বাকিরাও তাই করবে । মনে রেখ আগের হাল যেই দিকে যায় । পরের হাল সেই দিকেই যাবে ।
আমার ছেলে হিসাবে তোমার কাছে আমার কোন চাওয়া নেই । এটা আমার আদেশ । আমার বাড়িতে থাকতে হলে । আমার কামাই খেতে হলে । আমার কথাই চুরান্ত হিসাবে মানতে হবে । মনে রেখ আমি আমার বাবার সাথে কোন দিন মাথা উচু করে কথা বলি নাই । আমিও চাই আমার ছেলে ঠিক আমার সামনে মাথা নিচু করে থাকবে । আর তাছারা তোমার সরকারী চাকুরী ঐ মেয়ের বাবার ইচ্ছার উপরে নির্ভর করছে । আজ কাল তোমার জন্য আমি ছাড়া কেউ কিছুই করবে না। তাই তোমার ভবিষ্যৎ ভাল মন্দ চিন্তা করেই আমি তোমার জন্য এই সিদ্বান্ত নিয়েছি । আগামী সপ্তাহে তোমার বিয়ে রিয়ার সাথে । আর রিয়া তার বাবার একমাত্র মেয়ে । তুমি সব দিক দিয়েই লাভ বান হবে । আমি আর কিছু বলতে চাই না। তুমি তোমার রুমে যাও।
কায়েসের বাবা যাই বলে তাই করে। সে কারো কাথা শুনবে না । কায়েসের মা কায়েস কে বলল তোমার বাবার কথায় যথেষ্ট যুক্তি আছে । রিয়া কে আমারও পছন্দ হয়েছে । তুই বাবা আর অমত করিস না ।
——- মা তুমি তো জান আমার মনের অবস্তা । আমি ছাত্র হিসাবে খুবেই ভাল । চাকুরী আমার এমনেই হবে । আর চাকুরী না হলে ঢাকা গিয়ে ব্যবসা শুরু করব ।
কিন্তু মা আমি রিয়া কে বিয়ে করতে চাই না। শুধু চাকুরী আর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমাকে এখনিই এমন সিদ্বান্ত নেয়া ঠিক হবে না। ।
——- দেখ কায়েস তোর বাবা কেমন জানিস তো । তাঁর সিদ্বান্তই চুরান্ত । রিয়ার বাবা তোর চাকুরীটা দিয়ে দিচ্ছে । তোর ছোট দুই ভাইয়ের ও ভাল কিছু হবে । রিয়ার মামারা সরকারী উচ্চ পদে চাকুরী করে । বাবা আমার তুমি রাজি হয়ে যাও ।
——– মা আমি পারব না। পারু কে আমি কথা দিয়েছি । পারুকেই আমি বিয়ে করব। পারুর সাথে আমি বেঈমানি করতে পারব না। আমাকে ক্ষমা কর মা । আর মা  আমি তোমাদের কে অসম্মান করতে চাই না। আমি তোমাদের দু জন কে সম্মান করি । আমার মনের অবস্থা একবার চিন্তা কর । মা আমিওতো মানুষ । আমিও তো তোমাদের সন্তান আমার কথা একবার চিন্তা কর।মা আমি তোমাদের সব কথা রাখব কিন্তু আমার একটা কথা তোমারা রাখ ।
——- কায়েস তুই যা ভাল মনে করিস বাবা । তুই আমার দিক থেকে পরিষ্কার কিন্তু
তোর বাবা কি আমার কথা রাখবে মনে করিস ? রাখবে না বাবা । তাই বলছি তুই তোর বাবার মনে কষ্ট দিস না বাবা ।
কায়েস খুব চিন্তায় পড়ে গেল । কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। কলেজ জীবন থেকে পারুর সাথে তাঁর সম্পর্ক । না পারু কে সে কষ্ট দিতে পাড়বে না। সারা রাত খুব চিন্তা করলো সকালে মাকে বলে দিল সে রিয়া কে বিয়ে করবে না। কায়েসের বাবা এই কথা শুনে কায়েস কে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলল । যে তাঁর কথা শুনবে না। তাঁর এই বাড়িতে থাকার কোন অধিকার নেই । কায়েস কাপড় আর দরকারি জিনিস সব গুছিয়ে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হতে যাবে এমন সময় তাঁর বাবা বলল- কায়েস তুমি আমার কথা অমান্য করছো তাই আমার বাড়ি থেকে কোন কিছু  নিতে পাড়বে না। সব জামা কাপড় আর তোমার সকল পরীক্ষার সনদ রেখে যাও । মনে রেখ কেউ তোমার জন্য গরম ভাত রান্না করে রাখে নাই । কায়েস চুপ করে রইল । কাপড়ের ব্যাগ আর সার্টিফেকেট তাঁর মায়ের হাতে দিল । কায়েসের বাবা অবাক হয়ে ছেলের দিকে দেখছে । রাগে তাঁর মাথায় রক্ত উঠেছে কিন্তু এত বড় ছেলে কে আর মারা যায়না । তাই আরও রেগে বলল কায়েস
তুমি আর কোন দিন এ বাড়িতে এসো না। এমন কি আমারা মারা গেলাও না। আর মনে রেখ তোমার মা যদি ছেলে ছেলে বলে কান্না করে তাকেও এ বাড়ি ছেড়ে যেতে হবে । কায়েস আর কিছুই বলে না। চুপ করে খালি হাতে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায় ।
মনে মনে বলে আমিও মরে গেলেও এ বাড়িতে আর আসব না। জীবন কোন দিন কারো
না কারো কঠিন সময় আসে । সেই সময় গুলো হয়ত মানুষের কথা গুলো মনে রাখা ভাল। হয়ত এটাই নিয়ম একটা সময় আসে মানুষের জিবনে ঝড় হয়ে সব কিছু বদলে দিতে । কিন্তু কোথায় যাবে এমন চিন্তা কেন করছে কায়েস ।
কায়েসের বাড়ি থেকে পারুদের বাড়ি অনেক দূর । কিন্তু পারু কে সব জানানো দরকার । না হয় সে চিন্তা করবে । রাত আট টা বাজে পারুদের বাড়িতে এসে তাদের বসার ঘরে বসল । পারুর মা এসে কায়েস কে বলল – কায়েস গত কাল তোমার মা বাবা দু জনেই আমাদের বাড়িতে এসেছিল । অনেক বললাম দুপুরে খেয়ে যেতে কিন্তু তারা কিছুই খেলেন না । পারুর সাথে কিছু কথা বলল কিন্তু পারু কে না বলে আমাকে বললে ভাল হতো । হাজার হলেও আমি মেয়ের মা। হয়ত তোমার বাবার মতো আমাদের টাকা নেই কিন্তু আমার মেয়ে দেখতে শুনতে তো খারাপ না। লেখাপড়া করছে । তোমার বাবা মা এমন কিছু বলেছে কাল থেকে আমার মেয়ে কিছুই খায় নাই । তুমি এসে ভালই করেছ । তোমার কথা পারু শুনলে , পারুর দুঃখ কষ্ট দূর হয়ে যাবে । তুমি বস বাবা তোমার মুখটাও কেমন জানি শুকিয়ে আছে । আমি তোমার জন্য কিছু খাবার নিয়ে আসি । কায়েস পারুর মায়ের মুখের দিকে তাকায় আর মনে মনে বলে মায়েরা মনে হয় এমনি হয় । সব সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে মনের সব কথা বুঝে যায় । পারু শুয়েছিল মন খারাপ করে । কায়েসের কথা শুনে পারু তাঁর মাকে বলল
—- মা তুমি ওকে যেতে বল । ও যেন আর আমার সাথে কোন যোগাযোগ না রাখে তাতে ওর ভাল আমারো ভাল । কায়েস কিছু না বলেই চলে যাইতে ছিল কিন্তু পারুর মা যেতে দিল না। বলল- বাবা কিছু না খেয়ে যেতে পাড়বে না। আমার মনে হয় তুমি বাসা থেকে রাগ করে এসেছ । তুমি এই চা খাও আমি পারু কে পাঠাচ্ছি । পারুর মা কায়েস কে খুব পছন্দ করে । কারন কায়েস খুব শান্ত আর সব কিছুতেই ভাল । কোন দিন বেয়াদবি করে নাই । পারুর মা আগে অনেক গাল মন্দ করত । পড়ে দেখল অন্য ছেলেদের চেয়ে কায়েস খুব ভালো । পারু বিছানা থেকে উঠে কায়েসের সামনে আসলো । চেহারা কালো করে বলল-
——- কি বলবে বল । আমার কপাল হল একবার মায়ের কথা শুনা আর এক বার তোমার বাবা মায়ের কথা শুনা । দেখ আমি গরীব ঘরের মেয়ে কিন্তু সামাজিক ভাবে তো আমরা মানুষ ।
——- আচ্ছা থামো । কাজের কথা বলি রাত ১০ টায় আমার গাড়ি আমি সিলেট যাচ্ছি । তোমার সাথে আমি একটা বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই ।
——- বল শুনি কায়েস । আমার তো কাজ কথা শুনা । আর সিলেট কেন ?
——– বাবা বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে ।
——– আমি জানি তোমার চেহারা দেখেই বুঝেছি ।
——— আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই ।
——— না ! ভালবাসলে ই বিয়ে করতে হবে নাকি ? আমি চাই না আমার জন্য তুমি তোমার পিতা মাতাকে ভুলে যাও । তাদের অধিকার আছে তোমার ভাল মন্দ দেখার । আর আমার মা তোমাকে পছন্দ করলেই হবে না । আমার বাবা চায় না আমি তোমাকে বিয়ে করি । তুমি একটু বস বাবা হয়ত চলে আসবে । দরকার হলে কাল সকালে সিলেট যাবে । আমাদের গরীব বাড়িতে তুমি থাকলে এই গরীব মানুষ গুলোর ইজ্জত চলে যাবে না।
——– তুমি দেখি আমার বাবার মতো আজ কাল কথা বলছ ।
——-কারন তোমার বাবা এক দিনে যা শিখিয়েছে সারা জীবনে আর কিছু না সিখলেও হবে।
——–কায়েস একা একা কিছু সময় হেসে বলল পারু আমি তোমার কাছ থেকে একটা কথা শুনতে চাই । তা হল আমি আজকেই তোমাকে বিয়ে করতে চাই । তুমি দু বছরে অনার্স টা শেষ কর । আমি তোমার লেখাপড়ার খরচ এই খানে পাঠিয়ে দিব । দু বছরে আমি সব গুছিয়ে তোমাকে আমার কাছে নিয়ে যাব ।
——- পারু চুপ করে থেকে বলল আমি দুই বছর কেন দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করতে পারব না। আর তোমাকে বিয়ে করলে তোমার বাবার টাকার পাগলামি তেঁ আমাদের দম বন্ধ হবে ।
পারুর মা এসে বলল এত কথা বলিস না। মেয়ে মানুষ এত বড় কথা বলতে হয় না। এখানে কায়েস কোন ভুল করে নাই । কায়েসের বাবা রাগী মানুষ । রাগের মাথায় কি বলেছে তা মনে রেখে লাভ নেই । দুই দিন বাদে সেই বাপ ছেলে । শোন পারুল আমি চাই তোর বাবা আশার পড় তোর বিয়েটা আজই দিয়ে দেই কায়েসের সাথে । কায়েস খুব ভাল ছেলে । তুই জিবনে এমন ভাল ছেলে পাবি না। পারু বলল মা চুপ করো
আমি আমার ভাল মন্দ বুঝি । কিন্তু কায়েসের বাবা কোন দিন কায়েস কে মেনে নিবে না। আজ পর্যন্ত কি কায়েসের বোন কে মেনে নিয়েছে । কায়েসের বোন এখন সিলেট থাকে । সে সেই বোনের কাছেই যাবে । আর কায়েস তাঁর বাবা ছাড়া জিবনে কিছুই করতে পাড়বে না। আমি মেয়ে মানুষ আমি ওর মতো পুরুষ মানুষ না। আমাকে বিয়ে করে রেখে যেতে হবে কেন ? আমি কি পালিয়ে যাব । ওকে বল আমি আজ থেকে ঠিক দুই বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করব । ঠিক ২৪ মাস এই সময়ে যদি সে একটা কাজ যোগার করে আমাকে এসে সবার সামনে বিয়ে করে নিয়ে যায় । এই কথা বলে চোখের পানি মুছে পারু অন্য ঘরে চলে যায় । কায়েস আর পারুর বাবার জন্য অপেক্ষা না করে বিদায় নেয় ।
কায়েসের মা রোজ ছেলের জন্য কান্না করে । মায়ের মন বলে কথা । কায়েসের বাবা খবর নিতে থাকে ছেলে কোথায় ? শেষ পর্যন্ত খবর পায় যে তাঁর বড় মেয়ের কাছে সিলেটে আছে । কায়েসের মা কে বলে চিন্তা কর না তোমার ছেলে সেই তোমার মেয়ের কাছেই আছে । মনে রেখ এক চোরের বন্ধু কিন্তু অন্য চোর হয় । কায়েসের মা সংবাদ শুনে একটা ফোন দিল মেয়েকে । মেয়ের সাথে কথা বলে চোখের পানি মুছে বলল ওর
কাছে কোন টাকা পয়সা নেই একটু খেয়াল রাখিস । জামাই বাবা কে বলিস একটা ভাল কাজে যেন সহযোগিতা করে । মায়ের মন একটু শান্তি পেল । যাই হউক আপন বোনের কাছে থাকা আর মায়ের কাছে থাকা সমান । রিয়ার বাবার সাথে দেখা করতে যায় কায়েসের বাবা ।               রিয়া খুবেই আধুনিক মেয়ে কায়েসের বাবা কে দেখে বলে —
—– আঙ্কেল সালাম নিবেন কেমন আছেন ? খালামনি ভাল আছে ?
—— হ্যা মা ভাল আছে ।
—— আমি তো আপনার কাছে একটু যেতে চেয়েছিলাম ?
—— তা যেতে মা । কেন গেলে না ?
——- কিভাবে যাব ? আব্বু তো নিয়ে গেল না। যাই হউক আপনি এসেছেন ভালই হল
আপনার সাথে বিষয়টা নিয়ে একটু আলোচনা করি । আব্বু আশার আগেই ।
——- ঠিক আছে মা বলল ।
——- আঙ্কেল চলুন আমার ঘরে গিয়ে বলি । কারন আমার ঘরে একটা জিনিস আছে আপনি দেখবেন ।
——- ঠিক আছে মা চল ।
——- আঙ্কেল আপনি এই চেয়ারে আরাম করে বসুন । আমার খুব গরম লাগে তাই আব্বু এই এসি টা কিনে আমার রুমে লাগিয়ে দিয়েছে । আপনি আরাম করে বসুন আমি একটু আসছি । কাজের মেয়ে হিমু কে ডাকে বলল এই হিমু ভাল করে চা বানা ।
—— আপা ইনি কি আপনার হবু বরের বাবা ।
——- হ্যা রে হিমু । খুবই ভাল মানুষ বাবার বন্ধু একটু লোভী আর কি ? কথাটা এমন ভাবে বলছে যেন কায়েসের বাবা শুনতে পায় ।
——- আপা লোভী বলেন কেন ?
——– থাক সব কিছু জানতে নেই । তুই ভাল করে চা বানাবি । আর ভাল করে কিছু ফল কেটে নিয়ে আয় ।
——— আপা যেই লোকটারে বিয়ে করবেন তাঁকে একদিন দেখলাম না কেন ?
———- কারন ঐ ছেলে জেনে গেছে রাজত্য আর রাজ কন্যা পেয়ে গেছে । আমি ঐ ছেলে কে ওর বাবার সাথে তিন চার বার দেখেছি । একটু হাবা গোবা টাইপের ছেলে । আমার এমন ছেলেই দরকার । না হয় সব সময় আমার সাথে হুকুমদারি করবে । আমার বাড়িতে থাকবে আমার চাকরের মতো
——- হিমু একটু হেসে বলে আপু তোমার অনেক বুদ্ধি । আর যাই হউক হাবা গোবা হলে আমার খুব ভাল হবে ।
——–তোর ভাল হবে কি ভাবে ?
——– আরে আপু তোমার অর্ধেক কাজ তো সেই করবে ? আমার একটু রেহাই হবে রিয়া চা নিয়ে এসে দেখে কায়েসের বাবা নেই । রিয়া মনে মনে বলে মানুষ এত লোভী হয় ছিঃ । নিজেই চা খেতে লাগলো । রিয়ার বাবা এসেই বলল কি রে রিয়া কেউ এসেছিল ?

———-হ্যাঁ তোমার বন্ধু এসেছিল মিঃ কাসের বাবা ।
——— তা কোথায় ? একটা খুব খারাপ নিউজ আছেরে মা।
——— কি নিউজ বাবা ? আর আঙ্কেল তো চলে গেছে ।
——— চলে গেছে ? তাঁর ছেলেটা একটা গবেট মনে হয় ।
———- কেন বাবা ?
——— আজ তাঁর জয়েন্ট করার কথা ছিল । জানিস মা ইন্টার ভিউ খুব ভাল করেছিল । আমি তোর মামার কাছে গিয়ে শুনলাম তদবির ছারাই সে সিলেক্ট । তোর মামা বলল আর টাকা লাগবে না। আমি আবার কায়েসর বাবা কে বললাম ৭ লাখ টাকা দিয়ে কিন্তু চাকুরী দিচ্ছি । কিন্তু ছেলেটা জয়েন্ট ই করলো না।
——– বাবা তুমি একটা কাজ কর এই বিয়েটা ভেঙে দাও । আর ছেলের বাবা কে
চাপ দিয়ে ৭ লাখ টাকা নিয়ে নাও ।
——- খুব বুদ্ধি মানের মত কথা বলেছিস দেখি । কাল সকালেই যাচ্ছি । সাথে লোক জন নিয়ে যাব । যে ছেলে এত সুন্দর চাকুরীতেঁ জয়েন্ট করে না। তাঁর সাথে কি আমার মেয়ের বিয়ে দেই । আমাকে কি পাগল মনে করে । কত পরিশ্রম করেছি । একটা ভাল রেজাল্ট করা ছেলে এমন কাজ করে ।
কায়েস তাঁর বোন কে বলল আপা আমার ঢাকা যেতে হবে । একটা বিদেশী সিমেন্ট কোম্পানি তে ভাল অফার এসেছে । আমি ঢাকা যাচ্ছি । আপু দোয়া কর । কায়েসের বোন বলে মার সাথে একটু ফোনে কথা বলে নে ভাই কয়মাস হয়ে গেল । মা রোজই ফোন করে । কায়েস বলল না আপু মায়ের জন্য আমার মন কাঁদে । মায়ের উচিৎ ছিল বাবার কাছে আমার অধিকার নিয়ে কথা বলার । কিন্তু মা সব সময় বাবার পক্ষে কথা বলেছে । তুমি মাকে বল আমি ও আমার বাবার মতো এক রোখা । আপু বাবা আগে তোমাকে মেনে নিতে হবে পড়ে আমার বিষয়টা চিন্তা করব । আমার ছোট দুই ভাই তাদের জন্য আমাকে একটু কঠিন হতে হবে ।। এই কথা বলে সিলেট থেকে বিদায় নিয়ে কায়েস ঢাকা চলে আসে।
কায়েসের বাবার কাল থেকে মেজাজ খুব খারাপ কিন্তু কাউকে কিছুই বলতে পারছে না। এমন সময় রিয়ার বাবা এসে বলল কি ব্যাপার কাল  দেখা না করেই চলে আসলে
——- দেখা না করে ভালই হয়েছে । তোমার মেয়ে আমাকে টাকার গরম দেখায় । তোমার মেয়েকে বানিয়েছ একদম তোমার মত । আমার ছেলে কে বলে হাবা গোবা ।
——–তোমার ছেলে কি মানুষ । আমি সাত লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়েছি তোমার ছেলের চাকুরীর জন্য । কিন্তু তোমার ছেলে জয়েন্ট না করে । আমার অনেক বড় ক্ষতি করেছে । এখন আমার মেয়ের দোষ দিচ্ছ । ঠিক আছে আমার মেয়ে তোমার এত উচু নাক ওয়ালা ছেলের কাছে বিয়ে দিব না। আমি আমার টাকা ফেরত চাই ।
——– টাকা তো তুমি আমার সামনে দেও নাই ।
——– সামনে না দেই । চাকুরী তে সাত লাখ টাকা লাগবে এটা তোমাকে আমি আগেই বলেছি । তুমি বলেছ চাকুরীর জয়েন্ট লেটার হাতে পেলেই আমার মেয়ের সাথে তোমার ছেলের বিয়ে ফাইনাল । আমি তোমাকে জয়েন্ট লেটার তোমার হাতে দিয়েছি কিন্তু তোমার ছেলে জয়েন্ট করে নাই । আমার টাকার কি কোন মুল্য নেই । আমি আমার মেয়ে সরকারী চাকুরী জীবী ছাড়া অন্য কোন ছেলের কাছে বিয়ে দিব না।
কায়েসের বাবা আর রিয়ার বাবার সাথে অনেক সময় ঝগড়া চলতে থাকে । এমন সময় কায়েসের মা এসে বলল আনাদের ব্যাক্তি স্বার্থের জন্য আজ আমাদের ছেলে মেয়েদের কপালে এত কষ্ট । কায়েসের বাবা সমস্যা তুমি পাকিয়েছ । তুমিই শেষ কর । টাকা দেয়ার তারিখ দিয়ে দাও । উনার মেয়ে কে উনি কোথায় বিয়ে দিবে সেটা উনার বিষয় । কায়েসের বাবা বলল ঠিক আছে আমি আগামী সপ্তাহে টাকা দিয়ে দিব ।
কায়েসের মা ঘরে এসে বলতে লাগলো ছেলে মেয়ে কে লিখা পড়া যে হেতু শিখিয়েছ তাহলে তাদের মতামত নিতে হবে । আমি তোমার রাগের জন্য কিছু বলতে পাড়ি না। আমার আর বাচতে ইচ্ছা করে না। কায়েসের বাবা আর কিছুই বলে না। আজ কাল খুব শান্ত হয়ে গেছে ।
কয়েক মাস পড়ে কায়েসের বাবা তাঁর স্ত্রী কে নিয়ে মেয়ে কে আনতে যায় সিলেট । কিন্তু কিছুতেই কায়েস কে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ জানে না । কায়েস কোথায় । কারন কায়েস কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না। পারুর পরীক্ষা শেষ । কিন্তু পারু খুব চিন্তায় পড়ে গেল কারন কায়েসের কোন খবর নাই । তাই খুব সাহস করে কায়েসের বাড়িতে আসে । কায়েসের মা পারু কে জরিয়ে ধরে কাদতে থাকে । বলে মা সেদিন রাগের মাথায় তোমাকে অনেক কিছু বলেছি । যেই ছেলের জন্য এত কিছু বলেছি আজ সেই ছেলেই কোথায় জানি না। কায়েসের বাবা বল্লো কায়েসের মা মেয়েটাকে কিছু খেতে দাও । আমি কত কিছু বলেছি আজ সব ভুলে সে আমার বাড়িতে এসেছে । আমি অনেক খুশি হয়েছি মা, তুমি এসেছ । আমার কাছে মনে হচ্ছে আমার ঘরে  আমার ছেলে এসেছে ।
কায়েসের বাবা রিয়ার বাবা কে সাত লক্ষ টাকা জরিমানা দেয় । রিয়ার বাবা সেই টাকা পেয়ে মহা খুশি । মেয়ে কে বিয়ে দেয় এক কাস্টম অফিসারের কাছে ।।
কিন্তু তিন বছর হয়ে গেল কায়েস কোন খবর নাই । পারুর বাবা বলল পারু আমরা আর অপেক্ষা করতে পারব না। পড়ে কোন ভাল পাত্র পাব না। পারু বলল বাবা আমি জানি তোমারদের অবস্তা । কিন্তু আমার চাকুরীটা হয়ে গেছে । আমি হবি গঞ্জ চলে যাচ্ছি । চাকুরীটা কায়েসের বাবাই ঠিক করে দিয়েছে । আমি একবার কায়েসের মার সাথে দেখা করে এসে তোমাদের সিদ্বান্ত দিব ।। কায়েসের মা বলল পারু মা আর কয়টা দিন দেখ মায়ের মন বলেছে আমার ছেলে আসবে । পারু চলে আসে হবি গঞ্জে । ডি সি অফিসে নিজের মত করে কাজ করে যাচ্ছে ,
সবাই পারু কে খুব রাগী মহিলা হিসাবে জানে । প্রথম দেখাতেই যে কেউ পছন্দ করে । কারন একজন আধুনিক শিক্ষিত আর সরকারী চাকুরী সব কিছু মিলেই অসাধারন । হবিগঞ্জ লন্ডন প্রবাসী একজন তাঁর জমির কিছু ঝামেলা নিয়ে ডি সি অফিসে আসে । তাঁর নাম
আলফাজ । অনেক দিন তাঁর ফাইল নিয়ে সমস্যা । গত বছর শেষ করতে পারেন নাই । বিশেষ কাজে লন্ডন চলে যায় । ফিরে এসে আবার জমির কাজ শেষ করতে ডি সি অফিসে আসে । তিন দিনেই কাজ শেষ করে দেয় পারু । তাঁর কাজের সততা দেখে আলফাজ মুগ্ধ হয়ে যায় । রোজ কোন না কোন বাহানায় একবার আসে । পারু একটু একটু কথা বলে । একদিন পারু কে দাওয়াত দেয় । পারু দাওয়াত গ্রহন করে ।
পারুর বাবা মা পারুর সাথে হবিগঞ্জ থাকে । দাওয়াত খেতে তাই বাবা মা কে নিয়ে যায় । আলফাজের মা খুব খুশি হয় । সবাই এক সাথে খাওয়া দাওয়া করে । আলফাজ পারু কে আর তাঁর বাবা মাকে এক সাথে পেয়ে  তার মা কে দিয়ে পারুর মার কাছে পারুর বিয়ে প্রস্তাব দেয় । পারুর মা বলল আমাদের কোন আপত্তি নাই । যদি পারু রাজি থাকে । পারু বলে খালা মনি আমি আপনার প্রস্তাব কে সম্মান করি
কিন্তু আমি একজনের জন্য অপেক্ষা করছি । আমার চাকুরীটা সেই ছেলের বাবার দেয়া । আমি তাঁর অনুমতি ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে পাড়ি না। আলফাজ আর কোন কথা না বলে কিছু দিন পড় চলে আসে কায়েসের বাড়িতে । কায়েসের মা বাবা কে পারুর কথা বলা হয় । কায়েসের মা বলে মেয়েটা তো অনেক অপেক্ষা করেছে এখন আর দরকার নাই । মেয়েটার তো জীবন আছে । আলফাজ কায়েসের বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে হবিগঞ্জ আসে । পারু ফোনে কথা বলে কায়েসের মা বাবার সাথে ।

চলবে………………………

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!