রিজার্ভ চুরি: অবশেষে মামলা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক

অনলাইন ডেস্ক  কাগজটোয়েন্টিফোরবিডিডটকম

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে অবশেষে মামলা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ব্যাপারে আজ বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংককে মামলা করতে হবে। তিনি বলেন, ‘মূল আসামি আরসিবিসি হলেও এই ঘটনার সঙ্গে ১০ থেকে ১২টি দেশ জড়িত। এ কারণে তাদেরকেও মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’

২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে সুইফট কোডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরি করে নেয় দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে ২ কোটি ডলার চলে যায় শ্রীলঙ্কা এবং ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চলে যায় ফিলিপাইনের জুয়ার আসরে। এই ঘটনার প্রায় একমাস পর ফিলিপাইনের একটি পত্রিকার সংবাদের মাধ্যমে বিষয়টি বাংলাদেশ জানতে পারে। এ ঘটনা চেপে রাখতে গিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে গভর্নরের পদ ছাড়তে বাধ্য হন ড. আতিউর রহমান। বড় ধরনের রদবদল করা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষপর্যায়ে। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক জোবায়ের বিন হুদা মানি লন্ডারিং আইনে ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরির অভিযোগ এনে ১৫ মার্চ (২০১৬) মতিঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডিকে। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর সিআইডি এ পর্যন্ত ২০ বার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদালতের কাছ থেকে সময় চেয়ে নিয়েছে।

চুরি যাওয়া অর্থের মধ্যে এখন পর্যন্ত ফেরত এসেছে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার। বাকি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার ফেরত পাওয়া যায়নি। বিশ্বব্যাপী আলোচিত এই ঘটনার জন্য তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান পদত্যাগ করলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনও কর্মকর্তাকেই এখন পর্যন্ত শাস্তির আওতায় আনা যায়নি। যদিও এর জন্য দায়ী করা হয়েছে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনকে (আরসিবিসি)।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) উপদেষ্টা দেবপ্রসাদ দেবনাথ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চুরি যাওয়া রিজার্ভের অর্থ ফেরত আনতে ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকের  বিরুদ্ধে মামলা করতেই হবে।   ফিলিপাইনের আদালতও রিজাল ব্যাংককে দায়ী করেছেন। কিছু টাকা তারা বাংলাদেশকে ফেরতও দিয়েছে। কিন্তু বাকি টাকা দিতে গড়িমসি করছে। ফলে টাকা ফেরত আনতে ব্যাংকটির বিরুদ্ধে মামলা করা জরুরি হয়ে পড়েছে।’

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় সরকার গঠিত ফরাস উদ্দিনের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট এখনও প্রকাশ করা হয়নি। একইভাবে রিজার্ভ চুরির ঘটনা নিয়ে  রিজাল ব্যাংকের ওপর করা তদন্ত রিপোর্টও প্রকাশ করেনি ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিএসপি (ব্যাংককো সেন্ট্রাল এনজি ফিলিপাইনস)। ফলে বিশ্বব্যাপী আলোচিত এই ঘটনার ভেতরের অনেক তথ্যই প্রকাশিত হচ্ছে না।

এদিকে ফরাস উদ্দিনের তদন্ত রিপোর্ট আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ না হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনও কর্মকর্তাকেই এর জন্য দায়ী করা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। ২৯ জানুয়ারি মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে তিনি বলেন, ‘রিজার্ভ চুরির ঘটনায় কোনও কর্মকর্তাকে এর জন্য কোনও ধরনের শাস্তির আওতায় আনা হয়নি।’

মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে ফজলে কবির বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এক কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার ফেরত এসেছে। আরও ১২ লাখ ডলার ফেরত আসা চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। এর বাইরে আরও ৫ কোটি ডলার ফেরত আসার বিষয়ে আদালতের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। এছাড়া আরও ৬০ লাখ ডলার আসার ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হয়েছে।’ এই ৬০ লাখ ডলার আনার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সিআইডির একটি দল ২৯ জানুয়ারি ফিলিপাইনে যান। তারা মঙ্গলবার দেশে ফিরেছেন।সূত্র-বাংলা ট্রিবিউন।

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!