দুলালের আবিষ্কার লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র

সিরাজগঞ্জের বেলকুচির বজরু দুলাল উদ্ভাবন করেছেন বিদ্যুতের লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণ করার নতুন এক যন্ত্র। উদ্ভাবকের দাবি নতুন এই যন্ত্র দিয়ে বাড়তি কোন খরচ না করে বাণিজ্যিক, আবাসিক সকল বৈদ্যুতিক সংযোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এই যন্ত্রটি ব্যবহার করলে বিদ্যুৎ অপচয় রোধসহ গ্রাহকদের ভোগান্তি কমে যাবে। স্থানীয় পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারাও মনে করেন এই উদ্ভাবনটি কাজে লাগানো গেলে বিদ্যুতের ব্যবহার আরও বাড়ানো সম্ভব। বেলকুচির সুবর্ণসাড়া গ্রামের বজরু দুলাল ছোটবেলা থেকেই ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর উপর ঝোঁক ছিল। তার এই ঝোঁক এক সময় নেশাতে পরিণত হয়। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন সরঞ্জাম দিয়ে নানা প্রযুক্তি দিয়ে ইউপিএস, আইপিএস, সেচ পাম্পের ডিজিটাল পদ্ধতি, মোবাইল দিয়ে সেচ পাম্প চালু ও বন্ধ সহ নানা ধরনের ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক সামগ্রী তৈরি করেছেন। যা তার গ্রামের মানুষ ব্যবহার করে আসছে। সর্বশেষ তিনি উদ্ভাবন করেছেন বিদ্যুৎ লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণ করার এক নতুন যন্ত্র। যার মাধ্যমে একই ফিডারে থাকা বাণিজ্যিক এবং আবাসিক সংযোগের লোডশেডিং আলাদা আলাদা ভাবে দেয়া সম্ভব। এই যন্ত্রটি ব্যবহার করতে নতুন করে কোন তার, খুঁটি বা ট্রান্সফরমার ব্যবহার করতে হবে না। পুরনো সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমেই এই যন্ত্রটি ব্যবহার করে আলাদা আলাদা ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এই যন্ত্রটি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ অপচয় রোধ করাসহ সেই বিদ্যুৎ নতুন গ্রাহকের মাঝে দেয়াও সম্ভব বলে দাবি করেছেন উদ্ভাবক দুলাল। উদ্ভাবকের দাবি কোন এলাকায় নির্ধারিত বিদ্যুতের চেয়ে বেশি পরিমাণ বিদ্যুতের চাহিদা বাড়লে কর্তৃপক্ষ বিদ্যুতের লোডশেডিং করতে বাধ্য হন। লোডশেডিং করার সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। লোডশেডিং করার ফলে একদিকে যেমন গ্রাহকেরা বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে বঞ্চিত হন, অপরদিকে তেমনি বিদ্যুতের অপচয় হয়। লোডশেডিং দেয়ার পরও বিদ্যুতের তারের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ চালুই থাকে কিন্তু তা কোন কাজে আসে না। ফলে সঞ্চালন লাইনে থাকা বিদ্যুৎটুকু অব্যবহৃত থেকে অপচয় হয়। কিন্তু যদি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে তার উদ্ভাবিত ডিভাইসটি ব্যবহার করে বাণিজ্যিক এবং আবাসিক সংযোগ আলাদা করেই লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণ করা হয় তাহলে কোন সময়ই বিদ্যুতের অপচয় হবে না। ডিভাইসটি ব্যবহার করে যে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে তা দিয়ে নতুন সংযোগ প্রদান করে সরকারও আয় বাড়াতে পারবে। সিস্টেম লসের কারণে সরকারের কোন বিদ্যুৎ অপচয় হবে না। এলাকাবাসী জানান, দুলাল ছোট বেলা থেকেই নতুন নতুন জিনিস উদ্ভাবনের চেষ্টায় মত্ত থাকতেন। তার নতুন আবিষ্কারে তারা অনেক খুশি। সরকার সহযোগিতা করলে দুলাল অনেক দূর এগিয়ে যাবে। পল্লী বিদ্যুতের বেলকুচি শাখার উপ-মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান জানান, এ উদ্ভাবনটি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ব্যবহার করা গেলে সরকার লাভবান হবে। পাশাপাশি আবাসিক এলাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের পরিমাণ কমবে। বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, ইতিমধ্যেই স্থানীয় ডিজিটাল মেলায় এই আবিষ্কারটি প্রথম হয়েছে। সরকারের উচ্চ মহলের নজরে আনার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। এই ডিভাইসটি সঠিক ভাবে কাজ করলে তা দেশের বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্রে ব্যবহারের উদ্যোগ নিলে বিদ্যুতের অব্যবহৃত অপচয় রোধসহ আরও বেশি মানুষকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া সম্ভব। এলাকাবাসী সহ বজরু দুলালের প্রত্যাশা তার উদ্ভাবিত যন্ত্রটি সরকারিভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হোক।

সূত্রঃ আমার বাংলাদেশ অনলাইন ডটকম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!