সেলিনা জাহান প্রিয়ার গল্প: ‘অ-মানব’-সপ্তম পর্ব

‘অ-মানব’-সপ্তম পর্ব
——————–সেলিনা জাহান প্রিয়া
আকাশের দিকে চেয়ে বলে হে আকাশ এই মানুষ গুলো কি জানে এই মহা আকাশের শেষ নেই । এই মহাকাশের ধুলি কনার চাইতে এই পৃথিবী অনেক ছোট ।। চোখ বড় বড় করে একটা নক্ষত্রের দিকে আঙুল তুলে বলে জ্বলে জ্বলে এমন করে কি দেখ ।। আমাদের এই গ্রহ এর কত দিন বাকি আছে সব সবুজ পড়ে আগুন হতে । বাকি আছে । বাকি আছে । হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ । বাকি বলে একটু জুড়েই হেসে উঠল ।।

মিলি খালার বাসার কাজের মেয়ের নাম জোছনা । তখন বেদের মেয়ে জোছনা সিনামে খুব মার্কেট পায় । জোছনার বাপে নতুন বিয়ে করে। সেই নতুন বউ কে নিয়ে কিশোর গঞ্জ রঙ মহল এ বেদের মেয়ে জোছনা সিনেমা দেখে । সিনেমা দেখে তারা দুজনেই বলে তাদের মেয়ে হলে নাম রাখবে জোছনা । তাদের প্রথম মেয়ে হয় । তাঁর নাম রাখে জোছনা ।

জোছনার চোখ গুলো অনেক  সুন্দর । তাঁর চেয়ে সুন্দর তাঁর কথা বলার ধরন । মিলি খালা কে সে মামি ডাকে । মিলি খালা জোছনা কে বলে — যা তো মা পাগল টারে এক বালতি গরম পানি দিয়ে আয় । এর দেখত তোর খালুর কোন কাপড় টা হয় । আর না হয় পায়জামা আর ফতুয়া দিয়ে আয় । আর বল গোসল যেন তারা তাড়ি সেরে নেয় ।
জোছনা ভয়ে ভয়ে ছাদে আসে । এদিক সেদিক ভাল করে দেখে । এই শীতের মধ্য আকাশের দিকে চেয়ে আছে । জোছনার আবার পাগল কে খুব ভয় পায় । কারন জোছনার নানা মরার আগে পাগল হয়ে মরছে । জোছনা তাঁর নানার কাছে গেলে জোছনার হাত ধরে কাপড় দিত । ছেপ দিত । থুথু দিত । তাই জোছনা পাগল কে খুব ভয় পায় । গরম পানির বালতি গোসল খানায় রেখে । ভয়ে ভয়ে বলে
— এই যে পাগল । পাগল ওর দিকে চেয়ে হেসে বলে
— চাঁদের আলো ।
— না । আমার নাম বাপে মায়ে সখ করে জোছনা রাখছে । অন্য কোন নামে ডাকলে আমার কষ্ট
লাগে । আমারে আমার নামেই ডাকবেন ।
— আচ্ছা বাবা তাই হবে । তবে আমাকে ভয় পেও না । আমি কিন্তু ভুত না।
— আমি কিন্তু ভুত ডরাই না। পাগল ডরাই ।
— ভুত ভয় পাও না। কিন্তু পাগল ভয় পাও কেন?
— পাগল দেখছি কিন্তু ভুত দেখি নাই । তাই ভুত কে ভয় পাই ।
— তাই বুঝি গো
— হ্যা তাই । আমি ভুত যা দেখি না তা কিন্তু ভয় পাই না।
— আল্লাহ্‌ কে কি ভয় পাও জোছনা ।
— না আল্লাহ্‌ কে ভয় পাব কেন । আমার নানি জান কইছে আল্লাহ্‌ যার সাথে আছে তাঁর কোন
ভয় নাই । কারন আল্লাহ্‌ আমাদের অনেক ভাল বাসেন ।
— তাহালে আল্লাহর জন্য কি করেন ।। এই যে আপনি আচার চুরি করে খেয়ে অন্য ছেলেদের নাম
দেন এটা কি আল্লাহ্‌ আপনাকে সাজা দিবে না জোছনা ।।
— হ্যা । সাজা দিবে , তাই মাঝে মাঝে আমার আল্লাহ্‌ কে ভয় হয় ।
— তাহালে আপনি আল্লাহ্‌ কে না দেখে ভয় পান ওকে
— ওকে পাগল ভাই
— কিন্তু আমাকে ভয় পাবে না । কেমন । তোমার চুরি করা আচার ছাদের রুমের খাটের নিচে ।
আমি ঐ খান থেকে একটু খেলাম । এটা কি খালাকে বলব ।
— না পাগল ভাই বলো না। তুমি সব খেয়ে নাও । আর গরম পানি দেয়া আছে গোসল করে
নাও ।এই নাও কাপড় । আমি যাই । বলে চলে গেল জোছনা ।।

আজিজ মিয়া ঘরে প্রবেশ করে মিলি কে বলল তোমার পাগল কি গেছে ? নাকি এখনো আছে । পাগল থাকলে আমি যাই । মিলির মা বলল – বাবাজি রাগ করে কি হবে । পাগল , পাগলের জায়গায় । তুমি তোমার জায়গায় । তুমি শিক্ষিত মানুষ । পাগলের সাথে রাগ করে বাড়ী ছারলে মানুষ তোমাকে পাগল বলবে । জোছনা -বলে হে নানু ঠিক বলেছে । আসলে লোকটা পাগল না। মনে হয় ।মনের কষ্টে বাড়ী থেকে পালাইছে । আমার নানাও একবার নানিরে রেখে পালাইছিল । অনেক দিন পর নানা জান আসে । কিন্তু পাগলের মতো ফিরে আসে । মিলি একটু রেগে বলল – জোছনা বেশী কথা বলিস । যা রান্না ঘরে যা । খাবার গরম কর । আর মা তোমার জামাই কে বলে দাও । ঐ দিন সারা রাত কোথায় ছিল । তাঁর কোন অভিনয় আমার কাছে মুল্য নেই । আর এটা কোন নাট্য মঞ্চ না। যে অভিনয় শেষ সাবজেক্ট
শেষ । আর বল যেন চুপচাপ কাপড় চেঞ্জ করে যেন খাবার টেবিলে আসে । এর পর যদি এর কোন কথা বলে তাহালে ওর বেরিয়ে যেতে হবে না। আমিই বের করে দেব । এবং পুলিশ দিয়ে আমি ধরিয়ে
আনব । মিলির মা বলে – দু জন মিলে এক পাগলের কথায় সারা ঘর পাগল করলে তো হবে না।আজিজ মিয়া দেখল পাগল ঘরে নাই । চুপ চাপ কাপড় চেঞ্জ করে । খাবার টেবিলে । জোছনা কিছু খাবার নিয়ে ছাদে যাবে কিন্তু মিলি কে বলে খাবার রাখ আমিই নিয়ে যাব । এর তুই যেয়ে দেখ পাগল টা গোসল করেছে কি না ? জোছনা বলল – জী মামি আমি দেখে আসছি । আজিজ মিয়া বলল ছাদের রুম টা ভারা দিতে দিলে না। এখন পাগলের আড্ডা খানা বানালে । মিলি বলে- মিঃ ভয় পেয়েন না। আমার বাড়ী আমি ভাড়া দিব নাকি পাবনা বানাব সেটা আমার ব্যাপার ।
আজিজ মিয়া চিন্তায় পড়ে গেল । কিন্তু পাগলের সাথে হাজত খানায় সে তো কোন কথা বলে নাই । এর কেন সে থানায় ধরা পরেছিল তা তো হাজত খানায় কেউ জানে না। মনে মনে আজিজ মিয়া বলে যে ভাবেই হউক , মামালা টা শেষ করতে হবে । মিলি যদি জানে তাহালে আমার চাকুরি আর আরামে থাকা সব শেষ । কিন্তু মিলির আগে ঐ পাগল ব্যাটারে সামলাইতে হবে । কারন মিলি সহজে কোন কিছু ভুলে না।
মিলি ছাদে এসে অবাক বাহ ছেলেটা গোসল করার পর তো অনেক সুন্দর লাগছে । আসলেই ওর চেহারায় একটা মায়া আছে । মিলি কে দেখে হেসে বলল –
— আরে খালা আপনি কেন কষ্ট করলেন । জোছনায় খবার আনলেই হতো ।
— না বাবা । তুমি আজ প্রথম এই বাড়িতে । তাছারা তোমাকে আমি ভাবলাম পাগল । কিন্তু
তোমার মধ্য কোন পাগলামিই যে দেখি না।
— আসলে আপনি তো আর পাগলের ডাক্তার না। ডাক্তার হলে ধরতে পারতেন ।
— কি যে বল । আমি কে পাগল আর কে ভাল মানুষ টা চিনতে পারি ।
— হ্যাঁ খালা মনি টা ঠিক । আপনি পাগল চিনতে পারেন কিন্তু সব পাগল না। এই যে আমি সবার
চোখে পাগল কিন্তু আপনি বলছেন আমি ভাল । এই দেখুন কি শীত কিন্তু আমার শীত লাগেনা।
আপনার গরম পানি ছাড়াই গোসল করেছি । আপনার দেয়া ফতুয়া পড়েছি ।কিন্তু শীত তো
লাগছে না।
— হ্যাঁ । তোমার শীত না লাগার কারন কিন্তু আমি জানি ।
— কি জানেন খালা মনি ।
— যাদের সাথে জিন থাকে তাদের শীত লাগে না। গরম লাগে না। খুদা লাগে না। তোমার মত
শরীরে ময়লা লাগে না ।।
— খালা মনি আমার কিন্তু খুব খুদা লাগে ।
— হ , অনেক জিন তো আমদের মত গরিব , তারা আবার খাবার দিতে পারে না। আচ্চা বাদ দাও
তোমার সাথে মনে হয় গরিব জিন থাকে ।
— খালা মনি ছেলেদের সাথে জিন থাকে না। পরী থাকে ।
— আমার মনে হয় তোমার সাথে পরী আছে । তবে তুমি জান না । আমাদের মহল্লায় এক মহিলা
গণনা করে বলতে পারে । একশত এক টাকা নেয় ।
— তাই খালা মনি । তাহালে আপনি সকালে গিয়ে তাকে বলবেন । যে আপনার স্বামীর কোন ছেলে
মেয়ে হবে কি না ?
— এত বছর আপনার বিয়ে হয়েছে একটা বাচ্চা নাই । দেখুন কি বলে । আর বলবেন আমার বাসায়
একটা পাগল আসছে তাঁর সাথে যে পরী আছে এটা ভাল না খারাপ ।।
— আচ্ছা বলব নে তুমি খুব বেশী করে খাও । আর সকালে কি নাস্তা খাইবা । হাতের রুটি না
দোকানের পারাটা ।
— হাতের রুটি ই ভাল । একটু চা হলে খারাপ হয় না। এখন কি করবেন ।
— তোমার জন্য চা পাঠাব । আর ভারত পাকিস্তান খেলা হবে । দেখব ।
— আপনি কোন দল করেন ।
— ভারত ।
— আজ কিন্তু ভারত জিতব ।
— কিন্তু ভারত তো অন্য দুই খেলায় হারছে । পাকিস্তান খুব শক্তি !! আজিজ মিয়া তো বাজি ধরতে
চায় । ও ভাল কথা । আমি তো আসল কথা ই ভুলে গেছে । আজিজ মিয়া মানে আমার স্বামী কে
পুলিশে ধরেছিল কেন ?
— আসলে জানলে তো আপনি সব সময় আজিজ সাহেব কে এটা বলে কষ্ট দিবেন ।
— কষ্ট দিব না। কিন্তু জানতে চাই । আমার মনে হয় ও কি জানি সব সময় আমার কাছথেকে
লোকায় ?
— খালা মনি মানুষ যাকে ভাল বাসে তাঁর কাছ থেকেই তাঁর অন্যায় লোকায় । তবে কিছু কিছু
অন্যায় অনেক সময় সুখ বয়ে আনে ।
— বাবা পাগল তোমার কথা ঠিক বুঝলাম না।
— যেমন ধরেন আপনি একটা গাছের ডাল কাটলেন । গাছতা কিন্তু কষ্ট পেল কিন্তু আপনি সেই
কাটা ডালে কলব করলেন । আর কলবের জন্য একটা নতুন গাছের জন্ম হল ।
— আসলেই তো ।
— কিছু জানাতে সুখ থাকে কিছু জানাতে কষ্ট থাকে
— আপনি সুখ চান না কি কষ্ট ?
— আমি পাগল সুখ চাই । সুখ ছাড়া জিবনের মুল্য কি ? তাহালে আর জানতে চাই না কেন আমার
স্বামী কে পুলিশে ধরেছে । আমি জানলে যে ও কষ্ট পাবে । তাহালে না জানাই ভাল ।
— কিন্তু খালা মনি আপনে জানলে খুব খুশি হবেন । কিন্তু তাকে বলবেন না । আমি আপানকে
জানাব । খালু জি কে বলবেন । পাগলটা চুপ আছে । কোন কথা বলে না।
মিলি খালা ঘরে এসে খেলা দেখতে বসল । আজিজ মিয়া খুব ভয়ে ভুয়ে আছে । একবার মিলি কে বলল কি বাজি লাগবা আজ । মিলি বলে তোমার কি মনে হয় ভারত হেরে যাবে ।
— হ্যা , কোথায় পাকিস্তান কোথায় ভারত । খেলার কিছু বুঝ ।
— হ্যা বাজি আজিজ সাহেব । যদি পাকিস্তান জিতে সকালে পাগল বিদায়
— আর ভারত জিতলে তুমি ঐ পাগলে কে আর বের করতে পারবে না। ওকে বাজি
— হ্যাঁ বাজি । আজিজ মিয়া জানে পাকিস্তান খুব ফর্মে আছে জিতবেই পাকিস্তান …………

চলমান………..

 

অ-মানব-প্রথম পর্ব

অ-মানব-চতুর্থ পর্ব

অ-মানব-পঞ্চম পর্ব

অ-মানব- ষষ্ঠ পর্ব

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!