সেলিনা জাহান প্রিয়ার গল্প: ‘অ-মানব’- (১৮তম পর্ব)

 

‘অ-মানব’- (১৮তম পর্ব)

—————————সেলিনা জাহান প্রিয়া

 

রাতের বেলা বক্স দেখে খুব ভয়ে আছে । পাগল মানুষ মানুষ টা চাপ কলের পানি দিয়ে মনের সুখে গোসল করছে । নাদিয়া বলে আল্লাহ্‌ কি আপনাকে ডর ভয় কোন কিছু দেয় নাই । এত রাতে কে এই কাদা মাখা পুকুরে নামে । ভাইয়া এত সাহস কিন্তু ভাল না । নাজু আপা বকা দিলেই আর নামতে না। কুকুর কি এক রাতে মারা জাইতো ।
— পাগল বলে কুকুর তো আর মানুষ না । তবে তোমাকে এই পুকুরে নামালে বুঝা যেত , শীতে না মরলেও ভয়ে মরে যেতে ।
— আমি তো মরলে বাচি ।
— মরার খুব ইচ্ছা হলে একটা পরীক্ষা করে দেখতে পারি ।
— কি রকম পরীক্ষা ।
— দাড়াও অনেক কাদা আগে শরীরের কাদা সবান মেখে পরিষ্কার করে নেই ।।
তুমি যদি মরতে চাও । তাহলে আগামী কাল থেকে লিখা শুরু কেন মরতে চাই ।
উপযুক্ত করান দেখাতে পাড়লে বলব যে মরার অধিকার তোমার আছে । নাদিয়া
নাজ তোমার ছোট কিন্তু একটা বিষয় নাজ রোজ কোচিং এ যায় । যাওয়ার সময়
প্রায় খুব তাড়াতাড়ি করে । আর মনে মনে হাসে । ওর দিকে একটু খেয়াল রাখ ।
—- আপনার কি কোন কারনে তাকে সন্দেহ হয় ।
—- মানুষ এমন একটা প্রাণী যে সব সময় মনে করে সে যা করছে তাই টার রাইট ।
—- আপু ও দুলাভাই আপনাকে ডাকছে । এটা খুলতে চায় না।
—- কেন বক্স খুলতে চায় না?
—-সত্যি যদি কোন জীন ভুত থাকে ।
—- শুন জীন ভুত হাজার বছর বাচে । যদি এটাতে কোন জীন ভুত আটকানো
থাকে । তাহলে কি এত দিন জীন ভুতের বাপ মা ভাই বোন তাকে খোজত
না ! তোমাদের ছেলে মেয়ে এক ঘণ্টা চোখের আড়াল হলে পাগল
হয়ে যাও । আর জীন ভুতের ছেলে মেয়ের কোন মুল্য নাই । এই সব
গল্প কাহিনীতে মানায় ।
—- আরে ভাইয়া আপু বলল কাল হুজুর ডেকে দোয়া করে ফু দিয়ে টার পর খুলবে ।
—- খুব ভাল । হুজুরের ফুতে এত ক্ষমতা তার পর ও মানুষকে লিখা পড়া
করে ডাক্তার হতে হয় । হুজুর হলেই তো ভাল হত ।
গোসল শেষ করে ঘরে এসে দেখে কুকুরটা রান্না ঘরের চুলার পাশে শুয়ে আছে কিন্তু পাগল মানুষটার দিকে একটা মায়া ভরা চোখে চেয়ে আছে । পাগল একটু হাসি দিল । কুকুরটা তার মাথা নিচু করে শুয়ে গেল ।

শিলা সকালে ডাকছে জিনিয়াস মামা । শিলা দেখে ঘরে নাই । পাগল টা পুকুর পারে শিমুল গাছটায় হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। রইস মিয়া এসেই বলল – লোক জন সব ঠিক আজ থেকেই পুকুরে চার পাশ ঠিক করা হবে । শিলার বাবা শিলা কে বলে মা তোমার জিনিয়াস মামা কে আসতে বল – শিলা বলে আব্বু মামা তো ঐ শিমুল গাছ তলে পুকুরে কোনায় দাড়িয়ে । আচ্ছা রইস মামা ডাকবে তুমি ঐ দিকে যেও না। হুজুর আসছে । এই খানে হুজুর কে সবাই মিয়াছাব ডাকে । মিয়াছাব মানুষ টা অনেক
কঠিন । সবাই জানে মিয়াছাবের সাথে জীন আছে । সবাই তার কাছ থেকে পানি পড়া ও তাবিজ নেয় । মিয়াছাবের হাসিটা খুব সুন্দর গত ২০ বছর এই এলাকায় ।
পাগল মানুষটা ঘরে আসতেই মিয়াছাব তার দিকে একটু আড় চোখে তাকায় । কারন মিয়াছাব কে সবাই ছলাম দিয়েছে , এই একমাত্র যে তাকে সালাম দেয় নাই। মিয়াছাব
মনে মনে বলে মনে হয় লন্ডন থেকে আসছে । মিয়া ছাব সবার খুঁজ খবর নিয়ে নাজ কে বলে এক গ্লাস পানি দে নাজ । মুখের পানের ছাবা টা কুলি করে পরিষ্কার করি । নাদিয়া মাথায় কাপড় দিয়ে হুজুর কে পা ছুয়ে চলাম করে । শিলা কে দেখে বলে কি
নাতি দেখলে তো বলে ছিলাম না ভাল হয়ে যাবে । তোমার বাবা কে বলবে বেশী করে দান করতে দানেই পুন্যতা আছে । বেশী করে মসজিদ মাদ্রসায় দান করতে হবে ।
পাগল মিয়াছাবের কথা শুনছে । নাজু বলল – হুজুর আমাদের পুকুরে গত রাতে এই
কাঠের বক্স টা পাওয়া গেছে । অনেক মজবুত কাঠের বক্স । বক্সের উপরে আবার পিতলের পাত দিয়ে নকশি করা । বক্সটা দেখলেই মনে হয় ইরানি বা তুর্কি হবে ।
মিয়াছাব দেখল বেশ ওজন । এবার মিয়াছাব চোখ বন্ধ করে হাতের তজবি উঁচু করে
বলল- হে আল্লাহ্‌ তুমি এই বাক্সের খতির হাত থেকে পরিবার কে রক্ষা কর । এই বাড়ির মালিকের একটি মাত্র মেয়ে । এই বাক্স খুলে যেন কোন বিপদ না হয় । হে আল্লাহ্‌ তুমি ভাল মন্দের মালিক । অনেক ক্ষণ দোয়া পড়ে হজুর বলল – এটা না খুলে বরং নদীতে ফেলা দেয়ায় ভাল । বাক্স টা হাত দেয়ার পর মনে হল এটা ভাল কিছু না।
আর পুকুরের জিনিস তো এত দিন টা জিনের হেফাজতে ছিল । তোমাদের পুকুর টা ভাল না । আমি চার টা তাবিজ দিব পুকুরের চার দিক ঠিক হলে তাবিজ গুলো গেরে দিলে সব ধরনের আছর থেকে পুকুর হেফাজত হবে । টা শুনলাম দুই লাখ টাকার উপরে মাছ বিক্রি করেছ । ঐ টাকা থেকে কিছু জাকাত মসজিদে দিও । আল্লাহ্‌ সবাই ভাল রাখুন । হুজুরের সামনে নানা জাতের ফল রাখা হয়েছে । শিলার বাবা পাগল
কে বলল – মিঃ জিনিয়াস কি বল মিয়াছাব বলছে এটা নদীতে ফেলে দিতে । পাগল বলল আমি কি হুজুর সাথে কথা বলতে পারি । হজুর বলল- কি বলবে বল ।
—- এই যে আপনি পুকুরের চার পাশে তাবিজ দলে আছর কেটে যাবে । তাহলে এই
বাক্সে সেই তাবিজ দেন । বদ আছর কেটে গেলে একটু খুলে দেখি কি আছে ।
—- না এটা খোলা ঠিক হবে না।
— আচ্ছা মানুষের জীবন মরণ তো আল্লাহর হাতে তাই না।
—- হ্যা
—- তাহলে এটা খুললে শিলার কেন বিপদ হবে ।
—- শিলা এই বাড়ির একমাত্র মেয়ে ।
—- আপনি কি করে জানলেন যে শিলার বিপদ হবে । শিলার বাবা ও তো এই বাড়ির বর্তমানে একমাত্র ছেলে । কি বলেন রইছ মামা ? আপনি যদি বিপদের কথা বলতে পারেন তাহলে এই বাক্সের মধ্য কি আছে বলতে পারবেন ।
নাদিয়া বলল ভাইয়া এটা কি বলা কি সম্ভব । নাজু বলল ভাইয়া মিয়াছাব আমাদের ভাল চিন্তা করে কথা বলছে । পাগল বলল নাজু আপা কারো ভাল চিন্তা করে কারো আবেগ ভালবাসা নিয়ে ভয় দেখাতে হয় না। আমাদের স্রষ্টা তিনি আমাদের ভাল মন্দ
সব কিছু জানেন । তিনি যদি মনে করেন তোমার কল্যাণ হবে তাই হবে । তবে এটা তে জীন আছে । এটা জিনের বাক্স । আচ্ছা আপু আমি কি তোমার সামনে থেকে তোমার কোন মুল্যবান জিনিস নিতে পারব ।
— না ! টা কি করে সম্ভব । তখন আমি নিষেধ করব ।
—- তাহলে এটা যদি জিনের হয় । তাহলে জীন নিষেধ করবে । জিনের অনেক ক্ষমতা । যখন আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম তখন জীন নিয়ে যেত ।
শিলা বলল মামা তুমি তো ঘুমাও নেই । আমি দেখেছি রাতে তুমি পুকুর পারে শিমুল গাছ তলে বসে ছিলে । শিমুল গাছের একটা ডাল ধরে ছিলে ।
পাগল বলল হ্যাঁ শিলা মা মনি – এই গাছ গুলো সব দেখে কিন্তু বলতে পারে না। আমি সারা রাত এই গাছ গুলো কে বললাম আমাকে যেন বলে ।
হুজুর হেসে বলে গাছ কথা বলতে পারে ।পাগল বলল – কেন গাছ কি সোলেমান নবীর সাথে কথা বলে নাই । হুজুর বলল আপনি কি নবী । হুজুর প্রতিটা নেক বান্দা আল্লার নবী রাসুল কে অনুসরণ করে । আর তার ফলে কেউ কেউ হয়ে উঠে আল্লার প্রিয় । যেমন মুসা ও বুড়ীর কাহিনী কি জানেন না। আল্লাহ্‌ যিনি সব কিছু মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন । বলুন ঠিক কি না।
— হুজুর বলল হ্যাঁ ।
— তাহলে খারাপ চিন্তা না করে ভাল কিছু চিন্তা করি । কি বলেন ।
— হুজুর বলল যা ভাল মনে করেন তাই করুন । তবে আমাকে না ডাকলেও হতো ।
—- পাগল বলল হুজুর আপনি আসছেন হয়ত আল্লার ভাল ইচ্ছা আছে । পুকুর পারের
ঐ শিমুল গাছটা তাই আমাকে বলল ।
— হুজুর হেসে বলল – এই সব কথা বললে মানুষ আপনাকে পাগল বলবে । দেখে তো মনে হয় রাজ পুত্র । তা বাবাজি গাছ কি বলেছে আমার একটু শুনতে মনে চাচ্ছে ।
— পাগল বলল , আমি যদি গাছের কথা বলি তাহলে এই গাছটা মরে যাবে । তবে
এই গাছটা মরার জন্য খুব চেষ্টা করছে ।
—- হুজুর মনে মনে বলে আসলেই এইটা একটা পাগল । গাছ আবার
কথা বলে ।
শিলার আব্বু হাসতে হাসতে বলে তা শ্যালা জান তোমার গাছ কি বলল শুনি ।
নাদিয়া তার দুলাভাইকে বলল – ভাইয়া যা বলবে তাই হবে । হুজুর বলল পানিতে ফেলতে ভিতরে কি আছে না জেনে পানিতে ফেললে একটা রহস্য থেকে যাবে ।
মিয়াছাব বলল – আচ্ছা আপনার নাম তো জানি না । তাহলে আপনিই বলুন এই
বক্স এ কি আছে ।
পাগল হেসে বলল – এই বাক্সে লুকিয়ে আছে এই পরিবারের অনেক না জানা কথা ।।
যা শুনলে বিশ্বাস হবে না। আর ভুল বুঝাবুঝি শুরু হবে । তবে আমার কথা হল সবার অতীত ইতিহাস মনে রেখে সামনে দিকে চলা ।। তাহলে কি বলব
নাদিয়া নাজ বলে আগে বাক্সে কি আছে বলেন ।
— পাগল বলল এই বাড়ির ১২০ ভরি স্বর্ণ আছে । এতে । আর একটা হিরার আংটি ।
যেটা শিলার দাদা লন্ডন থেকে এনেছিল শিলার দাদুকে বিয়েতে দিয়েছিল ।
শিলার বাবা বলে হ্যাঁ আমি ছোট বেলায় শুনেছি যে মায়ের একটা হিরার আংটি আছে
কিন্তু কোথায় তা জানি না।

চলমান——-

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!